হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প | বড়দের রোমান্টিক গল্প

 বউ নিয়ে রোমান্টিক গল্প

বউ নিয়ে রোমান্টিক গল্প

আজ টিউশনির প্রথম দিন। বহু কষ্টে এক বড় ভাইকে তেল মে/রে, চা/ম/চা/মি করে একটা টিউশনি যোগাড় করেছি। কিন্তু বড়ভাই সাবধান করে দিয়েছে আমি যেন কোন উল্টা পাল্টা কাজ না করি তাছাড়া আমার ছাত্র না কি এক নাম্বারের ফাঁকিবাজ। তাই আমি যেন খেয়াল রেখে খুব যত্ন সহকারে পড়ায়...


 রাগী রাগী ভাব নিয়ে ছাত্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

--তোমার নাম কি?

ছাত্র মাথা নিচু করে বললো,

~স্যার, আমার নাম ফটিক কিন্তু আমার স্কুলের বন্ধুরা আমাকে আদর করে ফটকাবাজ বলে ডাকে


 প্রথমদিনেই ছাত্রের মুখ থেকে এই কথা শুনার পর বুঝতে পারলাম ছাত্র আমার ১ নাম্বারের টাউটার। আমিও কম যায় না। আমি আমার ছাত্রকে বললাম,

--শুনো ফটিক, আমি খুব রাগী একটা মানুষ।তোমার মত অনেক ফটকাবাজ ছেলেদের আমি পি/টি/য়ে মানুষ করেছি।তাই আমার সাথে কোন চালাকি করবে না। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিনেই শেষ করতে হবে


 ফটিক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

~আমি কি আপনাকে স্যার বলে ডাকবো না কি দুলাভাই বলে ডাকবো?

   ফটিকের মুখ থেকে এমন কথা শুনার পর অবাক হয়ে গেলাম। তারপর জোরে ধমক দিয়ে বললাম,

  --দুলাভাই বলে ডাকবে মানে! ফাজলামি করো? স্যার বলে ডাকবে

 ফটিক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,

~আসলে ২ দিন পর তো আপনি আমার দুলাভাই হবেন তাই আগে থেকে ডাকার অভ্যাস করে নিচ্ছি


  আমি আগের চেয়ে আরো বেশি অবাক হয়ে ফটিককে বললাম,

-- দুলাভাই হবো মানে?

  ফটিক আমার কানের কাছে মুখ এনে আস্তে আস্তে বললো,

~স্যার, আমার ৩ বোন। ২ বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। কিভাবে হয়েছে জানেন?

আমি বললাম,

-- কীভাবে?

 ফটিক বললো,

  ~স্যার আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল না। তাছাড়া বর্তমানে মেয়ে বিয়ে দেওয়া অনেক টাকার ব্যাপার। আমার আব্বু আম্মু খুব চালাক। তারা চালাকি করে ভার্সিটি পড়ুয়া ভাল একটা ছেলেকে আমাকে পড়ানোর জন্য নির্বাচিত করে।তারপর ঐ স্যার যখন আমায় পড়াতে আসে তখন তাকে আমার আব্বু আম্মু খুব আদর যত্ন করে। পড়ানোর সময় আমার আপু খুব সুন্দর করে সেজে স্যারের সামনে ঘুরঘুর করে। তো একদিন আমাকে শিখেয়ে দেওয়া হয় আমি যেন পড়ার সময় মিথ্যা কথা বলে ওয়াশ রুমে চলে যায়। আর আমিও তাই করি। তখন আপু স্যারের রুমে এসে দরজা বন্ধকরে দেয়। আর একটু পরেই আব্বু আম্মু দরজা ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে। তখন আপুই কান্নাভেজা চোখে দরজা খুলে। তারপর আব্বু আম্মু জোর করে ঐ স্যারের সাথে আপুকে বিয়ে করিয়ে দেয়। তখন স্যারের কিছু করার থাকে না কারণ আব্বু আম্মু স্যারকে খুব ভয় দেখায় আর বলে বিয়ে না করলে এলাকার লোকদের জানাবে। তখন স্যার নিরুপায় হয়ে কাঁদতে কাঁদতে আপুকে বিয়ে করে।এতে টাকাও খরচ হলো না আর ভাল ছেলের সাথেও বিয়ে দেওয়া হলো।২ বোনের বিয়ে এভাবেই হয়েছে আর ৩ নাম্বার বোনের বিয়ের জন্য আব্বু আম্মু আপনাকে নির্বাচিত করেছে 


  ছাত্রের মুখ থেকে এইসব কথা শুনার পর আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলো। আমি উঠে দাঁড়ানো শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলি।হাত পা আমার থরথর করে কাঁপতে থাকে।

ছাত্র আবারও আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

~স্যার, একটু পর আপু আসবে চা দেবার নাম করে আপনাকে দেখতে


 আমি এইমুহূর্তে কথা বলার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি। ঠিক তখনি দেখলাম কালো একটা মেয়ে মুখে সাদা পাউডার মেখেছে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, লাল টিপ একদম অদ্ভুত খারাপ দেখতে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে আমার কাছে আসছে


ছাত্র তখন আমায় আবার ফিসফিস করে বললো,

~স্যার, আমার আপু। তার সাথেই আপনাকে আব্বু আম্মু জোর করে বিয়ে দিবে


জানি না আমার তখন কি হয়েছিলো। শরীরের সমস্ত শক্তি নিয়ে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালাম।

যখন জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি ছাত্রের মা আমার মাথায় পানি ঢালছে আর ছাত্রের বাবা আমার হাত পা মালিশ করছে।

আমি তখন সোজা ছাত্রের মায়ের পায়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,

-- আন্টি, আমায় মাফ করে দেন। আমি বিয়ে করতে পারবো না। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। আমাকে নিয়ে আমার বাবা মার অনেক স্বপ্ন। তাছাড়া আমি শ্রাবণী নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসি।ও যদি জানে আমি বিয়ে করেছি তাহলে ও আমায় খু/ন করে ফেলবে।


  আন্টি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

~আরে বাবা তুমি আমার পা ছাড়ো। আর কাকে বিয়ে করতে পারবে না?

আমি বললাম,

 -- আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না


ছাত্রের মা আমার কথা শুনে একদম চমকে গেলেন।তারপর আমাকে সোফাই বসিয়ে বললেন,

 ~আমার মেয়ে মানে! আমার তো কোন মেয়ে নেই। আমার তো একটাই মাত্র ছেলে

 আমি অবাক হয়ে বললাম,

--তাহলে ঐ মেয়েটা কে?

  আন্টি মুচকি হেসে বললো,

~ও তো আমাদের বাসার কাজের মেয়ে


 কথাটা শোনার পর আমার মাথায় আকাশ ভে/ঙে পড়লো।শেষে কি না এই পিচ্চি ছেলে আমায় কাঁদিয়ে ছাড়লো।

আমি তখন ছাত্রের মাকে বললাম,

-- আন্টি, ফটিক কোথায়?

 আন্টি আবারও অবাক হয়ে বললো,

~ফটিক কে?

আমি বললাম,

--আপনার ছেলে

 আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

~আমার ছেলের নাম তো হিমেল। আর তুমি অ/জ্ঞা/ন হবার পর হিমেল যেন কোথায় গেল...


 আমার মাথা এখন ঝিমঝিম করছে।এই ছেলে তো মহা টাউটার। এই বয়সেই যে রকম টাউটারি করে বড় হলে না জানি কি কি করবে।

আন্টি তখন আমায় মাথায় হাত রেখে বললো,

~ বাবা তোমার মনে হয় আজ শরীরটা খারাপ। তুমি বরং আজ চলে যাও।কাল থেকে না হয় এসো...


বাসা থেকে বের হয়ে আমি রাস্তাদিয়ে হাটছি আর ভাবছি,

সারাজীবন আমি মানুষদের বোকা বানিয়েছি আর আজ কি না আমার হাটুর বয়সী ছেলে আমায় কাঁদিয়ে ছাড়লো। বেচে থাকতে এই মুখ ঐ ছেলেকে আর দেখাবো না


ফটকাবাজ

আবুল_বাশার_পিয়াস

Previous Post Next Post