বাস্তব জীবন নিয়ে স্ট্যাটাস | বাস্তব জীবনের গল্প

 বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

সকালে টিউশনি থেকে ফেরার পথে দেখলাম এক বাড়িতে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। আমি ঢিপি মাড়িয়ে আস্তে করে নেমে গেলাম। দেখি কি হয়! 


চল্লিশোর্ধ এক লোক চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে তার স্ত্রীকে বলছে, 'কেবল সন্তান গুলার মুখের দিকে তাকিয়ে তোকে রেখে দিয়েছি। নইলে কবেই তাড়িয়ে দিতাম, আর আমি হারাইয়া যাইতাম।' 


মহিলা আর কম যায় কিসে? সেও বলছে, 'আমি না থাকলে কে খাওয়াতো? কে রান্না করতো? সংসারে না ঢুকলে কবেই দুনিয়া ছাইড়া দিতাম! খালি সন্তান দুইডা আর আপনার মায়ায় কোথাও যাইতে পারি না!' 


আমি বেরিয়ে আসলাম। ধারের ফুলগাছ থেকে ফুল ছিঁড়ে কানে গুঁজে দিলাম। মোবাইল বের করে দুটো ছবি তুললাম। নিজের রূপে আমি নিজেই বোহেমিয়ান। যেন নার্সিসাস হয়ে গেছি। 


আমরা তিনজনেই আটকে গেছি। আমি আটকেছি ফুলসমৃদ্ধ আমার রুপে, ঐ মহিলা আটকেছে সংসারের মায়ায়, আর পুরুষ আটকেছে দায়িত্বে। 


রোগা পাতলা হ্যাংলা টাইপের একটা ছেলে আমার পাশের রুমে থাকে। ওর চেহারা আর ওর গার্লফ্রেন্ড এর চেহারায় আকাশ পাতাল তফাৎ। তবুও মেয়েটা ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে। 


আমি হুট করে একদিন মেয়েটাকে টেক্সট দিয়ে বললাম, 'আপু আপনি কিন্তু চাইলেই আমার বন্ধুর থেকে সুন্দর ছেলের সাথে রিলেশনশিপে যেতে পারেন!' 


মেয়েটা হাসতে হাসতে বললো, 'সুন্দর ছেলে তো পাবোই। তবে এইযে তিনবেলা খেয়েছি কিনা খোঁজ নেওয়া, মাথায় তেল দিয়েছি কিনা, শরীর ঠিক আছে কিনা, গাড়িতে উঠলে দশবার ফোন দেওয়া, রাস্তার ফোন টিপছি কিনা এসব বলার মতো হয়তো কাউকে পাবো না!' 


আমি আর কিছু বলতে পারিনি। আমি জানি মেয়েটা আটকে গিয়েছে। কিসে? যত্নে! মেয়েরা যত্নে আটকায়। ভীষণ ভাবে আটকায়। 


রেস্টুরেন্টে আমি খুব কমই যাই। খুব বেশি বিলাসীতা আমার একদম পছন্দ না। তবুও মাঝে মাঝে যাই প্রিয় মানুষ কে নিয়ে। 


এইতো সেদিনের কথা। অর্ডার দেওয়ার পর আমরা বসে গল্প করছিলাম। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে আসলো খাবার নিয়ে। মেয়েটার মুখ শুকনো। আমরা খাবার শেষ করে বাইরে বের হলাম। বিল নিয়ে আসলো একটা ছেলে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'ঐ মেয়েটা কোথায়?' সে বললো, অসুস্থ একটু। 


আমি বিল পরিশোধ করে ম্যানেজার সাহেবের কাছে জানতে চাইলাম, 'মেয়েটার মুখ শুকনো দেখলাম। আবার ঐ ছেলে বললো অসুস্থ। কোন সমস্যা?' 


- স্যার পায়েলের বাবা অসুস্থ। আমার পাশের বাসায় থাকে। ওর কোন ভাই নেই। তাই আমিই এখানে নিয়ে এসেছি। ওর মনমতো কাজ করে, ওকে কখনো জোর করে কিছু করানো হয় না। 


মানিব্যাগ বের করে দেখলাম ১০৬০ টাকা। বাড়ি যেতে ভাড়া লাগবে আশি টাকা। আমি একহাজার টাকা ম্যানেজারের হাতে দিয়ে বললাম, 'মেয়েটার হাতে দিবেন ওর বাবার জন্য কিছু ফল কিনতে।' 


আমার গার্লফ্রেন্ড আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা আটকেছে আমার সরলতায়, আর পায়েল আটকেছে সংসারের দায়িত্বে!  


নারী-পুরুষ আলাদা করে কোনো জিনিসে আটকায় না। সবকিছু মিলিয়েই জীবন। যে মেয়েটার ভাই নেই, সে নিজেও সংসারের দায়িত্বে অটল। যে ছেলেটার বোন নেই, সেও রাত জেগে মায়ের কপালে জলপট্টি দেয়। আটকানোর বিষয় টা শুধু প্রেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। জাগতিক নিয়মের বাইরেও মানুষ সবকিছু তে আটকায়। 


নারী কিসে আটকায়, পুরুষ কিসে আটকায়, এই চিন্তাভাবনা বাদ দেন। বলেন, মানুষ কিসে আটকায়? 


হ্যাঁ মানুষ আটকায়- যত্নে, মায়ায়, দায়িত্বে!

Previous Post Next Post