যে নারীর স্বামী ও পুত্র নেই | অনুচ্ছেদ নারী শিক্ষা

নারী নির্যাতন

নারী নির্যাতন

মেয়েটি প্রেগ'ন্যান্ট হয়ে দিনে ২০-৩০ বার বমি

আর নানান শারীরিক সম'স্যায় ভুগছে।


খেতে বসলে পেটে বাচ্চা লা'থি মারে, খেতে

পারেনা। রাতে ঘুমাতে গেলে যন্ত্র'নায় ছ'টফ'ট

করে,ঘুম আসেনা। সারা দিন শরীরটা কেমন যেন

করে।বসতে গেলে,শুইতে গেলে,হাটতে গেলে

মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে।


আবার মনের ভিতর ভ'য়ও করে। কি হবে? পারবো

তো সব সামলিয়ে উঠতে ?


এভাবে নয় মাস কেটে যায়। হঠাৎ প্রসব বেদনা

উঠে। চারদিকে বিষাদের ছায়া,বাঁচবে তো মেয়েটি,

আর অনাগত শিশুটি ?


.মৃ'ত্যুকে হাতে নিয়ে মেয়েটি শুয়ে পড়ে। জ'রা'য়ু

ছিড়ে স্রোতের মত র'ক্ত ঝরে। চিৎকার করে

উঠে মেয়েটি, যেন পৃথীবিটা তার অবস্থানে নেই।

সে সুর্যের আলো যেন আজ ক্ষীণ দেখাচ্ছে।


প্রচন্ত আলোতেও সব কিছু কেমন যেন আবছা

লাগছে। চারদিকে তাকায়। আপন মানুষগুলোকে

খা'মছে ধরে। যেন মৃ'ত্যুর হাত থেকে বাঁচার

আকুতি জানাচ্ছে।


বাচ্চাটি পৃথীবির মুখ দেখে। সবাই বাচ্চাকে নিয়ে

কত আনন্দ উল্লাস করে। নতুন নতুন জামা

কিনে নিয়ে আসে। বাচ্চাকে নিয়ে হাজারো

স্বপ্নের বীজ বপন হয়।


কে কি নামে ডাকবে তা ঠিক করতে হুলস্থুল

অবস্থা শুরু হয়ে যায়। আত্বীয় কুটুমরা বাচ্চার এ

গালে, ও গালে চুমু খায়।


মেয়েটি বাচ্চার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। কে

জানে সেই হাসির মাঝেও কত বেদনা লুকিয়ে

আছে।


নবাগত অতিথীকে পেয়ে সবাই মেয়েটির কথা

বেমালুম ভুলে যায়।


মেয়েটি সেই ময়লা বেডে শুয়ে থাকে। মুখ ফুটে

তার শরীরের অবস্থার কথা বলতে পারেনা।

কিছুটা ভয়ে, কিছুটা লজ্জায়।


সংসারের সব কিছুর জন্য সবার হাতে টাকা

থাকে, শুধু মেয়েটির চিকিৎসার জন্য কারো

পকেটে টাকা থাকেনা।


ঝরে যাওয়া রক্তের পরিপূর্ণতার জন্য প্যাকেটে

প্যাকেটে দুধ আসেনা। বাচ্চা গর্ভে থাকাকালীনও

মেয়েটি কারো কদর পায়নি। না মায়া–দরদ, না

একটু পুষ্টিকর খাবার। তবু সবার আক্ষেপ

বাচ্চাটা আরেকটু মোটা হলে ভাল হতো।


কেউ বাচ্চার মায়ের কথা ভাবলো না। কি

দিয়েছে বাচ্চার মাকে ??


দুধ,কলা,মাখন,কি পেয়েছে মেয়েটি ?


তিন বেলার ভাত মাছ আর সবজি ছাড়া কতটুকু

পেয়েছে ?


শাড়ি খানা মলিন,মুখখানা আরো মলিন। হাতে

ফো'স'কা ধরে গেছে। আগের মত আর মোলায়েম

হাতখানা নেই বলে স্বামীর কাছেও সে অনাদৃত।


সেই লাবণ্য নেই বলে, শাশুড়ী মাঝে মাঝে

লোকদের কাছে বুড়ি বউ বলে সম্বোধন করে।

দূর থেকে মেয়েটি শুনে। কিচ্ছু বলেনা। কাকে

বলবে ??


স্বামীকে !! সে এসব কথাতে এখন কান দেয়না।

এসব নাকি ন্যা'কামী। দু দিন হতেই শাশুড়ী আর

ননদের আক্ষেপ,বউটা এখনো রান্না ঘরে

আসছেনা কেন?


মেয়েটি হাটতে পারেনা।হাটতে গেলে মনে হয় এই

বুঝি পরান পাখি উড়ে গেল।লজ্জাস্থান থেকে

এখনো র'ক্ত ঝরছে। কাতরাতে কাতরাতে মেয়েটি

রান্না ঘরে আসে।


ননদ আর শাশুড়ী হুং'কার দিয়ে বলে, বাচ্চা কি

আমরা জ'ম্ম দেয়নি? শুধু তুমিই মা হয়েছে ?


অসহায় চাতক পাখিটির মত মেয়েটি ভাবে পাখির

ও তো একটা জায়গা আছে। এখানে ভাল না

লাগলে অন্যত্র উড়ে যায়। কিন্তু, আমার!! বাবা

মাকে ছেড়ে আসলাম। ভাইটিও নেই, যাকে একটু

মনের কথা বলবো। স্বামী এখন এসব বুঝে না।

ও নাকি কারো সাথে তর্ক করতে পারবেনা।

সকালে যায় আর রাতে ফিরে।


মেয়েটি রান্না শেষ করে খাটে গিয়ে বুকে বালিশ

দিয়ে টপটপ করে চোখের পানি ফেলে। ইচ্ছে করে

স্বামীর কোলে শুয়ে একটু ঘুমাবে।


কিন্তু, সে তো এখন স্বামী না, বাচ্চার বাবা।

তার অনেক দায়িত্ব। বাবা মাকে খুশি করতে হয়,

অফিসকে খুশি করতে হয়,বন্ধু বান্ধবকে খুশি

করতে হয়


আর আমি? আমি তো স্ত্রী। আমাকে খুশি না

করলেও চলবে। আমি তো আপন কেউ না।


সমাজের মানুষ বলে “পরের মেয়ে”।


ইচ্ছে করে চিৎ'কার দিয়ে কা'ন্না করতে।

পরক্ষণেই মেয়েটি ভাবে ওরা কি ভাববে? শরীরটা

ভাল নেই। খেতে ইচ্ছে করেনা।


বুকে দুধ আসেনা। বাচ্চাটার শুকনো মুখের দিকে

তাকিয়ে পাড়া প্রতিবেশি আলগা দরদ নিয়ে বলে

“মাইয়াডার কারনে বাচ্চাটাও শুকিয়ে যাচ্ছে”।


হায়রে মানুষ, হায়রে সমাজ। শাশুড়ী,ননদ,অমু

কের

বউ বা তমুকের মেয়ে, সবাই তো নারী। অথচ,

কেউ এই মেয়েটির কষ্টের কথা বুঝলো না। কেউ

চিন্তাও করলো না , “মা বাঁচলেই তো বাচ্চা

বাঁচে”।


মেয়েটি অভি'মান নিয়ে শুয়ে থাকে। রাতে খায় না।

স্বামী বাসায় এসে চেঁ'চিয়ে বলে “তোমার কারনে

যদি আমার বাচ্চার কিছু হয়, তাহলে খবর আছে''|


এবার মেয়েটি দাঁত-মুখ খিছিয়ে বলে “হুম,কি খবর

করবে ?

খবর নিয়েছো একবারও আমার ??


এটা শুনেই পাশের লোকরা বলে “কত্ত বড়

বেয়া'দব মেয়ে"।


সব লা'ঞ্চ'না-ব'ঞ্চ'নার পরও মেয়েটি তার

স্বামীকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেনা। দিনের পর

দিন অপেক্ষা করে,কবে তার স্বামীটি তাকে

বুঝবে। কবে তাকে বুকে টেনে নিবে। দিন যায়,

দিন আসে। হতভাগা মেয়েটির আর সুদিন

ফেরেনা।


.এভাবেই অনাদরে, অব'হেলায় একটা মেয়ে তার

জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়।


আমরা মাঝে মাঝে তাদেরকে মায়ের

জাতি,বোনের জাতি,বউয়ের জাতি বলে শান্ত্বনা

দিই। কিন্তু শান্ত্বনায় আর কাজ হয়না।

চল্লিশ বছরের মেয়েটিকে দেখতে এখন পয়ষট্রি

বছরের বুড়ি লাগে। তাতেও সমাজের আক্ষেপ,কেন

এত বুড়ি লাগে !

.

ভাবুন তো, আপনাকে যদি এভাবে অব'হেলা করা

হতো, তবে কেমন লাগতো?

.

ভালবাসার মানুষগুলোকে ভালবেসে কাছে রাখা

যায় না কি?

.

নারীদের প্রতি সহমর্মিতা আর ভালবাসার

মোড়কোম্মচন হোক আপনাকে দিয়ে,আমাকে

দিয়ে। তবেই সমাজ বাঁচবে। বাঁচবে মানবতা।

-নারী

Previous Post Next Post