রহস্যময়ী নারী
এক গর্ভবতী মহিলাকে জীবিত অবস্থায় নিজের ভাইয়েরা কবরে দাফন দেয়। কিন্তু কেন? শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।
কাহিনীটি মূলত 'নাসির' নামের এক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে। উনার স্বভাব ছিল ভদ্র, নম্র ও শান্ত টাইপের। কিন্তু সে কখনো কখনো দুষ্টমির চলে বন্ধুদের সাথে চুরির মধ্যে সামিল হতেন। একদিন চুরি করে ফেরার পথে পুলিশের সম্মুখীন হতে হয়। তখন সবাই পালিয়ে একেকজন একেক দিকে চলে যায়। কিন্তু পুলিশ যেনো কিছুতেই নাসিরের পিছু ছাড়ছেনা। সেদিন রাত্রে নাসির দৌড়ে কোনদিকে চলে যাচ্ছে নিজেও জানেনা। শেষমেশ, একটা বাসে করে নির্জন জায়গায় চলে আসে। আশেপাশে কারো কোন সাড়াশব্দ নেই। চতুর্দিকে কবরস্থান আর কবরস্থান। এছাড়া তেমন কাউকে দেখাও যাচ্ছেনা। তবে চাঁদের আলোতে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। কবরস্থানের পাশে একটি চাদর পাওয়া যায়। সেটি গায়ে দিয়ে নাসির কোনমতে রাত্রি পার করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ঘন্টাখানেক পর এক মহিলার শব্দ শোনা যায়। 'ভাইয়া আমি কোন দোষ করিনি' আমি গুনাগার নয়'। 'ভাইয়া আমি কোন দোষ করিনি' আমি কোন গুনাগার নয়'। এই শব্দটি শোনার পর নাসির চমকে উঠে। তখন স্পষ্ট দেখা যায়, ৪-৫ জন লোক সেই গর্ভবতী মহিলাটিকে জীবিত অবস্থায় কবর দিচ্ছেন৷ তাদের মধ্যে একজন বলছেন! তোর কি লজ্জাশরম নেয়, আমাদের মানসম্মান নষ্ট করলি। তার উপর পেটের মধ্যে কার জানি নাজায়েজ বাচ্চা। বেহায়া মেয়ে একটা। সমাজের মাঝে তোর জন্য আমরা মুখ দেখাতে পারিনা।
এরপর সেই লোকগুলো কবর দিয়ে দ্রুত চলে যায়। তবে যাওয়ার সময় ভুলক্রমে কুদাল-টি রেখে চলে যায়। তখন নাসির দৌড়ে এসে কুদাল-টি নিয়ে কবর খুঁড়তে শুরু করলেন। একটুখানি পরেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। ততক্ষণে, নাসির অনেক ভয় পেয়ে যায়। হঠাৎ বাচ্চার কান্নার আওয়াজ কোথায় থেকে আসলো? কবর খুঁড়ে দেখেন, মহিলাটি কবরের মধ্যেই বাচ্চা পয়দা করছে। নাসির দিশেহারা হয়ে রাস্তায় ছুটে যায়। একটি গাড়ির সন্ধান পেয়ে নিজের স্ত্রী পরিচয়ে হসপিটালে নিয়ে যায়। আল্লাহর অশেষ রহমতে দু'জন বেঁচে যায়।
তারপর নাসির জিজ্ঞেস করেন! তার সাথে কেন এমনটা করা হয়েছে? মহিলা বলেন...
আমার নাম 'বুসরা'। আমি একজন নেক-ধার্মিক মহিলা। রোজা, নামাজ ও তাহাজ্জুদ পড়তাম। কলেজে পড়াশোনা অবস্থায় একটা ছেলে বারবার আমার পিছু নিতেন। নাম তার 'হামেল'। হামেল আমায় খুবই ভালোবাসতেন।
হামেল আমায় খুবই ভালোবাসতেন। বেশ কয়েকবার নিষেধ করার শর্তেও উনি পিছু ছাড়েননি। পরিশেষে, শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আমিও আবেগের বসতে উনাকে ভালোবাসতে শুরু করি। সেই ভালোবাসায় আমি আল্লাহকে ভুলে যায়। লিপ্ত হয় পাপ কাজে। একদিন আমি বিষয়টি খালাকে শেয়ার করি। উনি বিষয়টি ভাইদের কাছে বলে দেন। ভাইরা যখন হামেলের কাছে জিজ্ঞেস করেন? তখন সে অস্বীকার করে। হামেল বলেন, উনি আমাকে চিনেনা। এছাড়া পেটে বাচ্চাটি কার, তাও সে জানেনা। বিষয়টি তখন সমাজের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। তখন সবাই আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য শুরু করে। সবচেয়ে নিরব ও ধার্মিক মহিলার গোপন তথ্য ফাঁস। কয়জনের সাথে এমনটা করছে কে জানে। ভাইয়েরা এসব শোনার পর অপমান সহ্য করতে পারেনি। এছাড়া খালা সবাইকে আরেকটু মিথ্যা বানিয়ে বলেন। যার জন্য তারা আমাকে করব দেয়। তখন আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ' আমি তোমার পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে নামাজ-কালাম বাদ দিয়ে অপকর্মে লিপ্ত হয়েছি। 'জানি' আমি পাপি ও গুনাগার বান্দা। আমি তওবা করছি, এমন ভুল আর কখনোই হবেনা। শেষবারের মতো ক্ষমা করে একটা সুযোগ দাও। আমি সেই আগের জীবনে ফিরে যেতে চায়। আমার কোন নেক-আমল যদি তোমার পছন্দ হয়। তার উছিলায় আমাকে রক্ষা করো। একদিকে পেটের যন্ত্রণা, অন্যদিকে অক্সিজেন না পেয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। 'ভাবলাম' কেউ আমাকে আর বাঁচাতে আসবেনা। তবে ভাগ্য ভালো ছিল কবরে মাটি বেশি দেওয়া হয়নি। যখনই ছিদ্র দিয়ে কবরে অক্সিজেন ফিরে আসতে শুরু করল, তখনই মনে হচ্ছিলো ভাইরা চলে এসেছে। কিন্তু তা হয়নি। তবে আমি এটা ভেবে আশ্চর্য হলাম। বাচ্চা জন্মানোর পর প্রথম প্রশ্বাস নেয় পৃথিবীতে। কিন্তু আমার বাচ্চাটিকে প্রথম প্রশ্বাস নিতে হয়েছে কবরে। উল্টা হয়ে গেল। সবি আল্লাহর নিয়তি। আমি মহান আল্লাহ তায়া’লা কে ভুলে গেলেও তিনি আমাকে ভুলে যাননি।
এসব শোনার পর নাসির অশ্রু কন্ঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আর দু'জন দু'জনকে বিয়ে করে নিও। নাসিরও তওবা করে চুরি করা ছেড়ে দেয়।
আমরা দুনিয়ার মায়ায় জড়িয়ে মহান আল্লাহকে ভুলে যায়। কিন্তু তিনি আমাদেরকে ভুলে যান না। এর থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। যখন আমরা কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়, তখন তিনি আমাদের রক্ষা করে নতুন জীবন ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা কয়েকদিন পর মহান আল্লাহকে ভুলে দুনিয়াবি মায়ায় জড়িয়ে পড়ি।
সমাপ্ত 🙂