যৌতুক নিয়ে গল্প | যৌতুক নিয়ে কিছু কথা

 যৌতুক নিয়ে কিছু কথা

যৌতুক নিয়ে কিছু কথা

' সামান্য টাকার জন্য আমার মেয়েকে মেরে ফেললি। আমি তোদের কাউকে ছাড়ব না৷' 

রহিম মিয়া শার্টের কলার ধরে চিৎকার করে রিয়াদকে কথাগুলো বলেন৷ রহিম মিয়া একজন দিনমজুর। দিন আনেন দিন খান৷ 


সামাজিক নিয়ম মেনেই রিয়াদ আর রেখার বিয়ে হয়৷ বিয়ের কিছুদিন পরই রেখার উপর চলে নির্মম অত্যচার৷ যৌতুকের টাকার জন্য রেখার উপর রিয়াদ বিভিন্ন কারণে হাত তুলে৷ রেখাকে ঠিকমতো খেতে দেয়না৷ রেখা অত্যচার মেনে নিতে না পেরে রহিম মিয়াকে ফোন করে বলল,


--'বাবা আমি মুক্তি চাই৷ আমাকে তারা মেরে ফেলে দিবে৷ যৌতুকের টাকার জন্য প্রতিদিন গায়ে হাত তুলে।'


রহিম মিয়া বুকে পাথর জমা রেখে বললেন,


--'মা রে আর কিছুদিন কষ্ট কর৷ আমি বাবা রিয়াদকে সব টাকা দিব৷ তখন তুই সুখে থাকবি৷ একটু কষ্ট কর৷ তুই যদি সেখান থেকে চলে আসিস তাহলে তোকে আর বিয়ে দিতে পারব না৷ গরিবের মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চায়না৷ ডিভোর্সি মেয়ে হলে বিয়ে অসম্ভব।'


রেখা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ফোন কাটল। বর্তমানে রহিম মিয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো টাকা রোজকার করা৷ মেয়ের মুখে হাসি ফুটানো৷ যৌতুকের কিছু টাকা দিলে রেখার জীবন সুন্দর হবে৷ রিয়াদের কাছ থেকে কিছুদিন সময় চেয়ে নিব বাকী যৌতুকের টাকা দেওয়ার জন্য৷ 

______


দেখতে দেখতে কেটে যায় দু'টি মাস৷ রেখার উপর অত্যাচার বাড়তে থাকে৷ তবুও বাবাকে বলতে পারছে না যৌতুকের কথা৷ কোথা থেকে দিবে টাকা? রহিম মিয়া রিক্সা ভর্তি বাজার নিয়ে রিয়াদের বাড়িতে আসে৷ রিক্সা থেকে নামতেই কানে আসে রেখা বেঁচে নেই৷ রিয়াদের অত্যচার এতটা তীব্র ছিল যে রেখার জীবন দিতে হলো৷ টাকার জন্য রিয়াদ মরিয়া হয়ে রেখার গলা চেপে ধরে। কেউ আসেনা ফিরাতে৷ একসময় রেখা নিস্তেজ হয়ে যায়।


রহিম মিয়ার হাত থেকে বাজারের থলে পড়ে যায়৷ দৌড়ে রেখার নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়৷ যৌতুকের জন্য মেয়েকে হারালেন৷ কি নির্মম পৃথিবী! যেখানে টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না৷ রহিম মিয়া অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,


--'আমার রেখাকে তুই মেরে ফেলছিস। আমি তোকে ছাড়ব না৷ তোর মৃত্যুও এভাবেই হবে৷'


যে হারায় সে বুঝে হারানোর তীব্র কষ্ট। রেখার মতো হাজারও মেয়ে যৌতুক প্রথার স্বীকার হয়ে অকালেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করছে৷ 


-যৌতুক 

-নুর_নবী_হাসান_অধির


এমন আরও গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post