বাস্তব জীবনের কিছু গল্প | বাস্তব জীবনের গল্প

 বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

বাস্তব জীবনের কষ্টের গল্প

সত্য ঘটনা 

নিজেকে সবসময় আমি এটা বলে শান্তনা দিতাম যে আমার নসিবে যা ছিলো তা হয়েছে।। আমি কেন ওর জন্য কান্না করবো। সে তো বেশ ভালো আছে সুন্দরী বউ পেয়েছে। সাথে বাচ্চা পেয়েছে। আমি তো তাকে কোন বাচ্চা উপহার দিতে পারি নি৷। 

কিন্তুু আমরা মেয়েরা অনেক আবেগ প্রবণ যাকে ভালোবাসি তাকে সহজে ভুলতে ও পারি না। 


ভাড়া বাসায় থাকা কালীন নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয়েছে আমাকে। 

আমার বাড়ির মালিক টা অনেক ভালো ছিলো। কারণ সে আমাদের এলাকারই লোক ছিলো। 

আমি আমার বাপের বাড়ির এলাকাতেই বাসা ভাড়া নিয়েছি দূরে কোথাও যায় নি। 

কারণ একা মানুষ কোথায় যাবো। তাছাড়া আমি অন্য এলাকা তেমন চিনতাম ও না। 

আমার চলতে ভীষণ কষ্ট হতো। চেইন বিক্রি করে আমি ৩০ হাজার টাকা পেয়েছি। 

সে টাকা দিয়ে বাসা ভাড়া আর নিজের খাওয়া খরচ। 

খুব হিসেব করে চলতাম আমি। 

সুবিধা মত চাকুরি ও খুঁজেছি। 

দীর্ঘ ২ মাস কোন চাকুরি ও পায় নি আমি।। 

এর মধ্যেই তার সাথে আমার তালাক হয়ে যায়। 

তালাক হওয়ার পরে ও আমি তার খোঁজখবর নিতাম। তার আশেপাশের মানুষ এর কাছ থেকে। 


এর মাঝে আমার মায়ের জরায়ু টিউমার ধরা পড়ে৷ জরায়ু কেটে ফেলতে হবে।। 

আমি আবেগ প্রবণ হওয়াতে এটা শোনার পর আমার মাকে দেখতে যায়। 

দীর্ঘ ২ মাস আমার মায়ের সাথে আমার কোন যোগাযোগ ছিলো না৷ 

২ মাস পর বাসায় গিয়ে দেখি আমার মা খুব অসুস্থ। তার ছেলের বউ ও তার এত সেবা করতে পারে না। 

কারণ আমার বড় ভাবীর ৩ টা ছোট ছোট বাচ্চা। 

ছোট ভাবির ২ টা বাচ্চা এর মধ্যে তিনি প্রেগন্যান্ট। 

আমার মা ছেলেদের নিয়ে অনেক বেশি অহংকার করতো। 

আর আমার বড় আপা সে শশুর বাড়িতে। 

আমি মাকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করেছি মায়ের সেবা করেছি৷ 

এর মধ্যে এলাকায় সবাই জেনে যায় আমার ডিভোর্স হয়ে যায়।। 

আমার মায়ের অসুস্থতা দিন দিন বেড়ে চলছিলো। 

আমার মায়ের অপারেশন সম্পূর্ণ হয়৷ 

মা বাসায় আনা হলো। আমি মাকে ১ গ্লাস পানি ঢেলে ও খেতে দিতাম না। 

সারাদিন যতকিছু নিয়েই বিজি থাকি রাত হলে কবির এর কথা মনে পড়তো। তার সাথে কাটানো সময় গুলো ভীষণ করে মনে পড়তো। 

আমি আল্লাহর কাছে তাহাজ্জুদ পড়ে বলতাম আল্লাহ তুমি আমার জীবনটা বদলায় দাও। 

ভাবি ও অনেক সময় খোঁচা মেরে মেরে কথা বলতো।

কিন্তুু আমার বড় ভাবি কখনওই আমাকে খোঁচা মেরে কথা বলে নি। সে সবসময় আমাকে মনোবল দিতো সাহস দিতো। 

কিন্তুু ছোট ভাবি টা অন্যরকম ছিলো একটু।। 


আমার মায়ের অবস্থা কিছু দিন ভালো থাকে আবার কিছু দিন পর আবার খারাপ হয়ে যায়।

আমার মা আমার জন্য অনেক দোয়া করতো আল্লাহ যেন আমাকে একটি ভালো ঘর মিলিয়ে দেয় সেজন্য। 

আমি ২৬ বছরের জীবনে স্বামী বিতাড়িত নারীর উপাধি পেলাম। 


এর মধ্যে একদিন শুনেছি কবির এর মাকে নাকি তার বউ এ জুতা মেরেছে। 

কারণ সে নাকি তার মা নিয়ে গালি দিয়েছে আর সাংসারিক ঝামেলা নিয়ে। 

আমি মাঝে মাঝে কবির কে কল দিতাম। কিন্তুু কবির সবসময় কল ধরতো না। 

জানি এটা আমার ঠিক হয়নি কিন্তুু আমি তাকে ভুলতে পারছিলাম না। 


২০১৮ সালে আমার জন্য একটি প্রস্তাব আসে। ছেলে প্রবাসী। 

ছেলে ২ টা বিয়ে করেছিলো। আর ২ টা বউই মারা গিয়েছে। 

ছেলের ৩ বোন ২ ভাই সবাই বিবাহিত। ছেলের শুধু একটা বয়স্ক মা। 

আমার পরিবার এ তেমন গুরুত্ব দেয় না কারণ মা অসুস্থ আমি চলে গেলে মাকে কে দেখবে। 

কিন্তুু আমার মা অনেক গুরুত্ব দেয়। 

আমার মা বিয়েতে রাজি হয়। 

কিন্তুু বিয়ের ২০ দিন আগে ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ আমার মা মারা যায়। এজন্য বিয়েটা পিছিয়ে পড়ে। 

আমার মার রুহ আমার হাতের উপর দিয়ে গেছে। মারা যাওয়ার ৫ মিনিট আগে ও মা আমার জন্য দোয়া করে গেছেন আর বলেছেন আমি অনেক সুখি হবো।


আমার মা মারা যাওয়ার পর জীবনে শোকের ছায়া নেমে আসে৷ 

উনার পরিবারের অনেকেই আমার মায়ের জানাযা তে এসেছিলো। এমনকি আমার মায়ের মৃত্যুর ২য় দিন আমাদের ঘরে ভাত পাঠিয়েছিলো। 


আর এদিকে উনার ও ছুটি শেষ হয়ে আসছিলো। সেজন্য আমার মা মারা যাওয়ার ২১ দিন পর উনার সাথে আমার বিবাহ হয়।।

খুব ঘরোয়া ভাবে বিবাহ শেষ হয়৷ 

কাবিন দেয় ২ লাখ টাকা। আর সেটা বিবাহের আসরেই তিনি আমাকে দিয়ে দেন। 

আমাকে দেড় ভরি গহনা দেয়৷ এমনকি ছোট খাটো অনেক উপহার পেয়েছি। 

তার বাড়িতে যাওয়ার দিন রাতেই আমাকে সংসারের সব কিছু বুঝিয়ে দেয় তিনি। কারণ তার মা খুব অসুস্থ বয়স হয়েছে হাঁটতে পারে না সারা দিন বিছানায় শুয়ে থাকে।

আমি বিয়ের পরের দিন থেকেই ঘরের যাবতীয় কাজ শুরু করি

আমার স্বামী আমাকে চোখে হারাতো৷। আমাকে সব কাজে সাহায্য করতেন৷ 

তিনি আমাকে তরকারি কেটে দিতেন আমি রান্না করতাম৷ 

আমার শাশুড়ী কে আমি ভাত খাইয়ে দিতাম৷ এমনকি শাশুড়ীর পাশে গিয়ে শুয়ে ও থাকতাম। 

এতদিনে নিজের একটা সংসার হয়েছে যেখানে শুধু আমার রাজত্ব চলতো। 

শাশুড়ী টা ও ভালো মন্দ কিছু বলতো না। আমি খাবার দিলে খেতো না হলে খেতো না৷ 

আল্লাহর দরবারে আমি খুব শুকরিয়া আদায় করতাম। 

আমার শাশুড়ীর দেখা শোনার জন্য একটা মেয়ে ছিলো। তারপরে ও রাতের বেলা আমি ঘুম থেকে ২ বা ৩ বার উঠে শাশুড়ী কে দেখে আসতাম। এটা আমার নিত্য রুটিন ছিলো। 

আমার স্বামী ২ মাস ছুটি কাটিয়ে প্রবাসে চলে যায়। 

সে প্রবাসে যাওয়ার পর দিনে ৩ বার ফোন করতো। 


আমি আমার শাশুড়ীর সাথে বেশি থাকতাম সময় কাটাতাম। 

ঘরে অনেক মেহমান আসতো। আর আমি প্রাণ ভরে তাদের আপ্যায়ন করতাম। 

আমাকে সবাই যখন ঘরের বউ বলতো তখন খুব খুশি হতাম। 

আমার সমস্ত না পাওয়া আমার রব আমাকে দিয়েছেন। 

আমার যত আক্ষেপ ছিলো এ জীবনে সব আমি আমার পূরণ হয়েছে। 

আমার জা দের সাথে আমার খুব ভাব হয়৷ তাদের সাথে দৈনিক ফোনে কথা হতো। তারা প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে আসতো শুক্রবার রাতে খেয়ে দেয়ে চলে যেতো। কারণ তাদের বাচ্চা দের স্কুল কলেজ থাকতো। 

আমার শশুর বাড়ির লোকেরা ও আমাকে ছাড়া কিছু বুঝতো না খুব মূল্যায়ন করতো। আর এগুলোর জন্য আমার স্বামীকে আমি তেমন ফোনে সময় ও দিতে পারতাম না। 

সে মাঝে মাঝে রাগ করতো। আবার নিজে থেকেই বলতো মা বুড়ো মানুষ কথা ও বলতে পারে না তুমি ছাড়া আর কে আছে মেহমান দের সাথে কথা বলার জন্য। 

আমি সব দিক দিয়ে পরিপূর্ণ একজন নারী হয়ে উঠেছি।। 


কবির এর খোঁজ আর রাখি নি। তবে ওর একটা রিলেটিভ এর কাছে শুনেছি কবির এর মা এখন মেয়ের বাড়িতে থাকে। ওদের সাথে রাখে নি। আর প্রায় তাদের ঝগড়া হয়। কবির মাঝে মাঝে আফসোস করে আমার জন্য। 

আমার কাছে থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছিলো সে সেটা আর পায় নি। 


এটা শুনে বেশ ভালো লেগেছিলো।। 

কিন্তুু বিষয় টা আর পাওা দি নাই। আমার স্বামী একটা জরুরি কাজে প্রবাস থেকে মাএ ১২ দিনের ছুটিতে এসেছে। 

সে প্রবাসে যাওয়ার ৫ মাস পর। 

১২ দিন ছুটি কাটিয়ে যায় সে।। 

যাওয়ার সময় আমার অনেক খারাপ লাগে। আমাকে কথায় দেয় ১ বছর পর সে আবার আসবে। আমার জন্য একটু হাতের একটি চেইন এনেছিলো। 


ও চলে যাওয়ার পর ওর ছোট বোন আসে। তার বাচ্চা হয়েছে এজন্য সে আমাদের বাসায় ১ মাস থাকবে। 

আমি তার বাচ্চা টাকে সারাদিন কোলে রাখতাম। শুধু খাওয়ার সময় তার কাছে দিতাম। 

আমার ননদ এর ৪ টা বাচ্চা আবার এটা ভুল বশত হয়েছে। 

এজন্য বাচ্চার প্রতি শখ কমে গেছে। আমি আমার ননদ এর অনেক যত্ন করি। 

আর বাচ্চা টাকে কোলে নিলেই আল্লাহর কাছে বলতাম আল্লাহ আমাকে এমন একটি বাচ্চা দিও। 

আল্লাহর রহমতে আমি কনসিভ করি। 

সেদিন আমি এত কেঁদেছি বলার মতো। আল্লাহ আমাকে একটা বাচ্চা দিয়েছে। 


এখন সবাই এসে এসে আমার যত্ন আওি করে যায়। এমনকি আমার জন্য রান্না করে ও পাঠায়৷ এত সুখ আমি কোথায় রাখবো। 

দেখতে দেখতে ১ টা বছর পার হয় আমি পুএ সন্তান এর মা হয়। 

আমার স্বামী ৩ মাস পরে আসবে দেশে। 

আমি ও তার অপেক্ষায় দিন গুণি।। 

দেশে করোনা তে হানা দেয়। আমি সবসময় আমার স্বামীর জন্য দোয়া করতাম আর ফোনে কথা হলে সাবধানে থাকতে বলতাম।

আমার জীবনে আফসোস ছিলো আমার বাচ্চা টাকে আমার স্বামী একটু কোলে ও নিতে পারে নি চেহারা ও দেখতে পারে নি। 


সারা পৃথিবী জুড়ে করোনার ভয়াবহ রুপ। আমার স্বামীদের দেশে লকডাউন দিয়ে দেয়। 

এর মধ্যে ও অনেক অসুস্থ হয়ে যায়। 

করোনার সমস্ত নমুনা ওর মধ্যে দেখা যায়। পরে করোনা টেস্ট করে ওর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। 

তার সাথে ফোনে কথা হলেই আমাকে বলতো একদম চিন্তা করো না আল্লাহ আমাকে ঠিক করে দিবে। 

আর আমার কিছু হলে তুমি বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবে না। ওরা সবাই তোমাকে দেখবে আমি এটা ভরসা রাখি। 

আমি দিন রাত শুধু দোয়া করতাম আল্লাহর কাছে আমার সন্তান এর জন্য হলে ও যেন আল্লাহ উনাকে সুস্থ করে দেয়। 


এর মধ্যে আমার স্বামীকে আই সিউতে নিয়ে যাওয়া হয় তার অবস্থা খুব খারাপ। 

আই সি ইউ তে যাওয়ার আগে আমাকে আর আমার সন্তান কে সে ভিডিও কলে দেখেছিলো। 

আমার শাশুড়ীর সাথে কথা বলে দোয়া চেয়েছিলো। 

কিন্তুু আল্লাহ আমার সহায় হন নি। 

আই সি ইউ তে ২ দিন থাকার পর সিঙ্গাপুর টাইম রাত ৩ টায় আমার স্বামী পরকালে পাড়ি জমায়। 

লাশ দেশে আনতে পারি নি। 

তখন সিঙ্গাপুর এ লকডাউন ছিলো। 

ওখানেই দাফন করা হয়।। শেষ একটি বার দেখেছিলাম কাফন পরা নো অবস্থায়। 

আমার জীবনে সুখ বেশি দিন আর কপালে রইলো না। 

কথায় আছে অভাগী যেদিকে চাই সাগর শুকিয়ে যায়। 


আমার স্বামী মারা যাওয়ার আজ ৭ মাস। আমি বেচে আছি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আর অসুস্থ শাশুড়ী কে নিয়ে। 

আমার শশুর বাড়ির মানুষ জন খুব অমায়িক তারা আমাকে এখন পযন্ত সব দিক দিয়ে সাহায্য করছে। 

এবং আমার ভাসুর রা বলেছে তারা তাদের মৃত্যুর আগ পযন্ত আমাদের দেখবে। 


উনার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছি৷ ইচ্ছে আছে ছেলেকে একদিন সিঙ্গাপুর এ পাঠাবো তার বাবার কবর টা জিয়ারত করতে। একটু হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে। 

আমার স্বামীর ইমুতে আমি এখনও কল দি এসএমএস করি। 

কিন্তুু এসএমএস গুলো সিন হয়না। কল গুলো রিসিভ হয়না। 

কেউ আর আমাকে এখন বউ বলে ডাকে না। আদর করে চুমু ও দেয় না। 


সমাপ্ত


এমন আরও অনেক জীবনের গল্প পড়ুন এখানে ক্লিক।

Previous Post Next Post