বাবা তার মেয়েকে কি বলেছে | মেয়ের প্রতি বাবার ভালোবাসা

 বাবার ভালোবাসার গল্প

বাবার ভালোবাসার গল্প

পড়াশোনার তাগিদে পাবনা শহরে থাকি। মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয় না। খালামণির সাথেই তাদের বাসায় থাকি। রাত আটটার দিকে লাইব্রেরীতে গিয়েছি বই কিনতে, হঠাৎ বাবার নম্বর থেকে কল এলো। বইগুলো রেখেই ফোন রিসিভ করলাম।

--- হ্যাঁ বাবা বলো..

--- কোথায় আছিস রে মা?

--- এই তো বাবা লাইব্রেরীতে আছি, বই লাগতো ওটাই কিনতে এসেছি। আমি তোমাকে বাসায় গিয়ে কল দেই?

--- না না তুই কোন লাইব্রেরীতে তোর খালামণির বাসার পাশের গোলিতে?

--- হ্যাঁ বাবা।

--- তুই ওখানেই দাঁড়া আমি আসছি।

--- তুমি শহরে এসেছো?

--- হ্যাঁ তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই চলে এসেছি।

--- ঠিক আছে এসো।


আমার বাবা এরকমই হুটহাট করেই আমাকে দেখতে চলে আসে। একটু বেশিই ভালোবাসে আমাকে। আমিও আমার বাবাকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।বইটা নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি, কিছুক্ষণ পর বাবা এলো। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।


--- বাবা কাঁদছো! এখান থেকে এখানেই তো থাকি চল্লিশ মিনিট লাগে এখানে আসতে, যখন আমাকে দেখতে ইচ্ছে করবে চলে আসবে। চুপ করো তো, রাস্তায় বাচ্চাদের মতো কাঁদবে না একদম।


--- .........

--- ও বাবা, থামো না..

--- ........ 

--- আচ্ছা চলো বাসায় যাই।


বাবা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন,


--- তোর না খুব ইচ্ছে শহরের অলিতে গোলিতে রাতে হাটবি?

--- হ্যাঁ তাতে কি হয়েছে?

--- চল আজকে আমরা হাটবো।

--- বাবা এখন হাটবে?

--- হ্যাঁ, যা পাশের দোকান থেকে আইসক্রিম নিয়ে আয়, আইসক্রিম খাবি আর হাটবি খুব মজা হবে।

--- বাবা আজকে তোমার কি হয়েছে বলো তো?

--- চল না মা হাটি। আবার কবে সুযোগ পাবিই কি না পাবি।

--- বাবা এভাবে বলো না তো, ভালো লাগে না কিন্তু। দাঁড়াও আমি আইসক্রিম নিয়ে আসছি তারপর আমরা দুজন হাটবো।খালামণিকেও ফোন করে বলে দেই।

--- আচ্ছা ঠিক আছে।


আইসক্রিম খাচ্ছি আর বাবার সাথে হাটছি। মাঝে মাঝে বাতির আলো, কিছুদূর অন্ধকার সাথে বাবা সবমিলিয়ে সময়টা ভীষণ ভালো যাচ্ছিলো।


--- চল মা একটু বসি।

--- ক্লান্ত হয়ে গেছো?

--- একটু,, বয়স হয়ে গেছে যে।


আমি আর বাবা গিয়ে বসে পড়লাম। ব্যাগে চকলেট ছিল নিজে একটা নিয়ে বাবার দিকে একটা বাড়িয়ে দিলাম। বাবা হাত নাড়িয়ে খাবে না বলল। চুপচাপ একটু বসে আছি বাবার কাধে মাথা রেখে। এই মানুষটা তার সবটুকু দিয়ে আমার সব ইচ্ছে পূরণ করে।অনেকদিনের ইচ্ছেটাও আজকে পূরণ করে দিলো। বসে বসে বাবার কথাই ভাবছিলাম।


--- মা.....

--- হ্যাঁ বাবা বলো।

--- তুই আমার স্বপ্নটা পূরণ করবি তো?

--- হ্যাঁ বাবা, আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে তোমার স্বপ্ন পূরণ করব তুমি দেখো।

--- কখনো পর্দা ছাড়বি না।

--- না বাবা এটা আমার আল্লাহর জন্য।

--- নামাজ ছাড়বি না।

--- কখনও না বাবা।

--- বাবার সম্মানে কখনও আঘাত করিস না মা, বিয়ের আগে কোন ছেলেকে তোর কাছে ঘেষতে দিস না মা। স্বামীর হক কখনও নষ্ট করিস না। জীবনে প্রথম কাজ ভালো একটা মানুষ হওয়া, সেদিকে খেয়াল রাখবি।


--- ঠিক আছে বাবা, তোমার সব কথা আমার মনে থাকবে। আমি তোমার ভালো মেয়ে, সারাজীবন তোমার ভালো একটা মেয়েই থাকবো।

--- দোয়া করি মা জীবনে অনেক ভালো কিছু কর।

--- হুম বাবা তুমি শুধু দোয়া করো।


--- চল মা এখন উঠে বাসায় যা। আশেপাশে কেউ কিছু বললে সালাম দিয়ে চলে যাবি, বিপদে পড়লে মহান আল্লাহকে আগে স্মরণ করবি। নিজের সবটুকু দিয়ে নিজেকে রক্ষা করবি।

--- ঠিক আছে বাবা, চলো এবার।


বাবা বাসার নিচে এগিয়ে দিতে আসলো।


--- বাবা চলো ভেতরে সবার সাথে দেখা করে যাও।

--- না রে মা আমি শুধু তোকে দেখতে এসেছিলাম আর কিছু কথা বলতে এসেছিলাম।তুই সবসময় নিজের খেয়াল রাখিস মা।

--- ঠিক আছে বাবা।

--- আয় একটু বুকে আয়।


আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। বাবা চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর আমাকে রেখে হাটা শুরু করলো।আমিও সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠছি এমন সময় বাবার নম্বর থেকে আবার ফোন এলো। কি ব্যাপার বাবা তো মাত্র গেলো আবার কেন কল দিলো! রিসিভ করতেই আম্মুর কান্না জড়ানো কন্ঠ, কথা বলতেই পারছে না। ফোনটা হয়তো আম্মুর হাতে থেকে কেউ নিয়ে নিলো।


--- মাহি, তোর বাবা আর নেই রে, একটু আগে জান বেরিয়ে গেছে, তোকে খুব দেখতে চাইছিলো রে............!


আমার হাত থেকে ফোনটা সিঁড়িতেই পড়ে গেল। মানে..........

বাবা তো মাত্র আমার সাথে দেখা করে হাটা দিলো বাড়ির পথে।

---- বা বাবা বাবা...............


অণুগল্পঃ বাবার_কথা

তানিয়া_মাহি (নীরু)


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন আমাদের আরো একটি গল্পের ওয়েব সাইটে।

Previous Post Next Post