স্বার্থপর বন্ধু নিয়ে স্ট্যাটাস | প্রিয় বন্ধু স্ট্যাটাস ২০২৪

  বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত

একদিন স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরেছিলাম আমাকে আমার বন্ধুদের সাথে মিশতে না বলায়। আমার স্ত্রী সেদিন টলোমলো চোখে শুধু কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর মাস সাথে বছর চলে গেলেও কখনো আমাকে বলেনি, “তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে হাঁটাচলা করো না।”

বিষয়টা একটু ভাবালেও তেমন পাত্তা দিলাম না। আমি তপন। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করি। সংসার খরচ, বাবা-মায়ের ঔষধ, মেয়ের পড়ালেখা সব মিলিয়ে মাসে হাতে থাকে বলতে হাত খরচের টাকা এবং হাজার পনেরোশ। তবে সেই হাজার পনেরশো টাকা বন্ধুদের মন রাখতে সব সময় খরচ করে ফেলতাম। এটা নিয়েই বউ বলল, “এভাবে টাকা উড়ালে বিপদের সময় কোথায় হাত পাতবে। আজ যাদের মন রক্ষায় টাকা ভাঙছো তারাও একদিন মুখ ঘুরিয়ে নিবে। এভাবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিও না।”

কথাটা বলায় রাগ না হলেও স্ত্রীর কথাটা বন্ধু শুনে ফেলায় আমার ভিষণ আত্মসম্মানে লাগে। তাই তো ওকে বন্ধুর সামনেই থাপ্পড় মেরে বসেছিলাম নিজের পুরুষত্ব বজায় রাখব বলে। তারপর তো বললামই ও আর কোন কথাই বলতো না আমার বন্ধুদের নিয়ে। তবে বিপত্তি বাঁধে আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি সেটা আচমকা বন্ধ হবার পর। সংসারে নেমে আসে অভাব, বাবা-মা সময়ের ঔষধ সময়ে খেতে না পেরে অসুস্থ হতে শুরু করে। মেয়ের স্কুলের বেতন না দিতে পারার জন্য মেয়েকে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হলো না। চারিদিকে তখন আমি যেন শুধু অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখলাম না। ছুটে গেলাম সেসব বন্ধুর কাছে যাদের পিছনে মাসে মাসে টাকা খরচ করতাম। যে যা খেতে চাইতো তাই খাওয়াতাম। মাঝে মাঝে তাদের ছেলেমেয়েদের এটা সেটা কিনে দিতাম৷ তবে তারা আমাকে সেভাবেই ফিরিয়ে দিল যেভাবে আমি তাদের কাছে গিয়েছিলাম। মানে খালি হাতে। গুনে গুনে তিনমাস খুব ভয়াবহ সময় পাড় হলো আমার। বুঝে গেলাম পৃথিবীতে কেউ আপন না। সবাই সবার স্বার্থের পিছনে ছুটে। স্বার্থ ফুরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই তাদের আচার-আচরণও বদলে যেতে শুরু করে। তবে সেই তিনমাস আমার বাবা-মা এবং স্ত্রীকে ছাড়া আর কাউকে পাশে পাইনি। জীবনের ওই ভয়ানক তিনমাস আমার জীবনে আর না আসুক। তবে শুকরিয়া আসার জন্য। এসেছিল বলেই হয়তো মানুষ চিনতে পেরেছিলাম। ভেতর থেকে অনুশোচনা বোধ হয়েছিল বলে স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতেও নিজেকে ছোট মনে হয়নি। দিনশেষে এটাই হয়তো সত্যি, রূপ বদলে ফেলা মানুষ গুলো আর যাইহোক কখনো বন্ধু হয় না। হ্যাঁ এটাও সত্যি সবাই এক না। তবে কোথাও একটা কিন্তু থেকেই যায়। পৃথিবীর ৯৯% মানুষ স্বার্থের জোরে বাঁচে। বাকিরা অর্থের পিছনে এবং ভালোবাসার পিছনে উভয়পক্ষের সাথেই হাঁটে। তাই হয়তো বেলা ফুরাবার পথে তাদের ঝুলি শূন্য হয়ে থাকে। পেয়ে হারাবার ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদে...


-শূন্য_ঝুড়ি_

সমুদ্রিত_সুমি


এমন আরও বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়তে ভিজিট করুন।

Previous Post Next Post