অবহেলার ভালবাসার গল্প | অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস

 স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অবহেলা

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অবহেলা

" আমার বাবা তোমায় পছন্দ করেনি।ওনাদের আরো সুন্দরী বউমা লাগবে "


" তাহলে আমায় বিয়ে করলে কেন? "


" আমার পছন্দ।কথা দিয়েছিলাম আজীবন পাশে থাকবো।তাই তো বিয়ে করে পাশে রাখলাম "


" বাবার অপছন্দের মেয়েকে নিয়ে সুখী হওয়া যায় না "


" দেখা যাক না কি হয় "


অন্যদিকে ছেলের বিয়েতে নিশিকান্ত বাবুর দীর্ঘশ্বাস!একমাত্র ছেলে,তবুও তার অপছন্দের একটা মেয়েকে বিয়ে করলো।তার পছন্দের কোনো মূল্যই দিলো না।কি হলো এত কষ্ট করে ছেলেকে বড় করিয়ে,পড়াশোনা করিয়ে?


তবুও তিনি বিষয়টা মেনে নিতে চেষ্টা করলেন।কিন্তু খানিকটা ভয় ও হলো।মেয়ে তো জানেই, তাকে তার শ্বশুর পছন্দ করেনি।


বিয়ের পর যদি কোনো মেয়ে জানে যে তার শ্বশুর বিয়েতে অমত পোষণ করেছে তাহলে সে বউ বিগড়ে যায়।শ্বশুরকে নানানভাবে জ্বালা যন্ত্রণা করে।নিশিকান্ত বাবুর কিছুটা ভয় হলো,এই মেয়েটাও কি সেরকম কিছু করবে?সবসময় ঠেস মে"রে কথা বলবে?


এমন সময় দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো।নিশিকান্ত বাবু দরজায় তাকিয়ে দেখলেন ছেলের বৌ দাঁড়িয়ে।স্নিগ্ধ স্বর ভেসে এলো


" বাবা,ভেতরে আসি? "


নিশিকান্ত বাবু গম্ভীর স্বরে বললো " কি দরকার? "


" সিগারেটের ছাই ফেলার জন্য একটা এস্ট্রে আনছি আপনার জন্য।দেখুন তো পছন্দ হয় কিনা "


" লাগবে না " 


" আহা দেখুন না একবার।না দেখেই কেন বলছেন লাগবে না? "


কথাটা বলতে বলতে মেয়েটা ঘরে ঢুকলো।ঢুকে নাক মুখ কুঁচকে বললো " ইশশ,ঘরের সবকিছু এতো এলোমেলো করে রেখেছেন?সিগারেটের বিশ্রী গন্ধে তো ঘর ভরে গেছে "


নিশিকান্ত বাবু কিছু বললেন না।মেয়েটাকে তার অসহ্য লাগছে।মেয়েটা পাথরের উপর ডিজাইন করা একটা এস্ট্রে নিশিকান্ত বাবুর সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো 


" বাবা দেখুন তো এটা পছন্দ হয় কিনা।দোকানদার বলেছে এটা শ্বেতপাথরের।আমি পাথর চিনি না। দেখে বলুন না,এটা কি সত্যিই শ্বেতপাথরের? "


নিশিকান্ত বাবু আমতা আমতা করে বললো " চশমা ছাড়া আমি বুঝতে পারবোনা "


" চশমা কোথায় রাখছেন? "


" মনে পড়ছে না।টেবিলে আছে বোধহয় "


" আপনি তো আমার বাবার মতোই মনভুলো লোক।ভালোই হলো,দুইটা বাবাই পেয়েছি একইরকম "


" দুই বাবাই একইরকম " কথাটা শুনে নিশিকান্ত বাবু বিস্মিত হয়ে গেলেন।মেয়েটা সারা ঘর খুঁজে চশমা এগিয়ে দিলেন।নিশিকান্ত বাবু পরখ করে দেখে বললেন


" হ্যা শ্বেতপাথরের "


" উফফ,বাঁচা গেলো।আমি তো ভয়ে ছিলাম।আপনি একটু বাইরে যাবেন? আমি ঘরটা গোছাবো "


" লাগবে না "


" রেগেরেগে কথা বললে আমার কান্না পায় "


নিশিকান্ত বাবু নিরুপায় হয়ে ছাঁদে গেলেন।মেয়েটা তো ভারি জ্বালাতন শুরু করেছে। 


বিকেলে ঘরে গিয়ে তিনি নিজের ঘর নিজেই চিনতে পারলেন না।সবকিছু পরিপাটি।ঘরে হালকা মিষ্টি গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে।খানিক্ষন বাদেই চা হাতে মেয়েটা ঘরে ঢুকে বললো 


" বাবা এইযে চা।বারান্দায় চলুন,আপনার সাথে লুডু খেলবো "


" লুডু খেলা পছন্দ না "


" তাহলে কোনটা পছন্দ? "


" দাবা "


" ইশশ,আমি তো দাবা পারিনা।তাহলে আমায় শিখিয়ে দিন। প্রতিদিন বিকেলে বাবা মেয়ে একসাথে দাবা খেলবো "


কিছুদিন যেতেই নিশিকান্ত বাবু লক্ষ্য করলো মেয়েটি তার জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে।তার একটি মেয়ের শখ ছিলো,সেটা পুরন হয়নি।ছেলে হবার দুই ঘন্টা পরেই তার স্ত্রী ইহলোক ত্যাগ করেন।এই প্রথম নিশিকান্ত বাবু বুঝলেন বাবার প্রতি মেয়েদের ভালোবাসা কতটা তীব্র হয়।


প্রায় একমাসের মধ্যেই নিশিকান্ত বাবু সিগারেট খাওয়া পুরোপুরি বাদ দিয়ে দিলেন।কারণ একটাই,বৌমা সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না।তিনি মেয়েটির ভালোবাসায় এতোটাই মুগ্ধ হয়ে গেলেন যে তার মুখে বাবা ডাক না শুনলে তার প্রেশার ফল করে।


এক বিকেলে দাবা খেলতে গিয়ে মেয়েটা বললো " আচ্ছা বাবা,দাবা খেলায় রাজা,মন্ত্রী সবাই আছে।কিন্তু রাণী নেই কেন? "


নিশিকান্ত বাবু হাস্যজ্বল মুখে বললেন " রাণী থাকে বাড়িতে।যেমন আমার বাড়িতে তুমি "


কথাটা শুনে মেয়েটা খিলখিল করে হাসলো।নিশিকান্ত বাবু ভারাক্রান্ত মনে বললো 


" তোমাদের বিয়েতে আমার মত ছিলো না।এটা জানো? "


" হু জানি।আপনি কি ভেবেছিলেন? আমি আপনাকে জ্বালাতন করবো? "


" এমন ভাবনা আশা কি দোষের? "


" না দোষের না "


" যে তোমার বিয়েতে সম্মতি দেয়নি তাকে বাবার সম্মান দিলে? "


" এক দেখায় পছন্দ হওয়াটা আসলে ঠুমকো।পছন্দ অর্জন করাটাই বেশি আনন্দের, বুঝলেন শ্বশুর মশাই।আর বাবারা যতোই কঠোর হোক,মেয়েদের ভালোবাসা উপেক্ষা করতে পারেনা। যেমনটা আপনি পারেননি "


আদর্শ_ঘরণী

লেখক _জয়ন্ত_কুমার_জয়


মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post