ভালোবাসার নামে নষ্টামি প্রেমিক | অবহেলার কষ্টের গল্প

 স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অবহেলার গল্প

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অবহেলার গল্প

বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় তানিয়া টেলিফোনে বললো, 

-- 'দেশে ফিরলে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিও, বলতে পারো এটাই আমাদের শেষ কথা।'


কথা শুনে আমি পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে গেলাম। 

কাঁপা গলায় বললাম, 

-- 'ডিভোর্স! সাইন করে দেওয়া? এসবের মানে কি?'


-- 'পারলে ক্ষমা করে দিও,'

বলেই তানিয়া টেলিফোনটি রেখে দিলো। 


আমি জাহাজের টেলিফোন রুমেই চিৎকার দিয়ে রুমটিকে কাঁপিয়ে তুলতে চাইলাম। আমার পাশেই সিনিয়র অফিসার ক্যাপ্টেন 'ড্যানি'শ তার স্ত্রীর সাথে টেলিফোনে কথা বলছে। টেলিফোন রুমে কথা বলার সময় উচ্চ স্বরে শব্দ করে অন্য কাউকে বিরক্ত করা যাবে না, জাহাজের হাজারোও নিয়মের মাঝে এটা ও একটা নিয়ম। সেই নিয়মের বেড়াজালেই নিজকে আটকে রাখলাম।


জাহাজ অস্টেলিয়ায় থেকে ছেড়ে দিয়েছে বেশ কয়েকদিন হলো। ক্যাপ্টেন ড্যানিশের কাছ থেকে জানতে পারলাম বাংলাদেশে পৌঁছতে আর মাত্র তিন দিন লাগবে। এর মাঝেই তানিয়ার এমন সিদ্ধান্ত শুনে শরীরের প্রতিটা শিরা উপশিরায় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। তানিয়া ফোন কেটে দেওয়ার পর কয়েকবার চেষ্টা করলাম টেলিফোনে সংযোগ দেওয়ার জন্য, কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না।


.


মেরিন ইন্জিনিয়ারিং শেষ করে হিসেবে সহকারী ক্যাপ্টেন হিসেবে চাকুরীতে জয়েন করেছি পাঁচ বছর হলো। এই পাঁচ বছরে জাহাজে ভাসমান অবস্থায় মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেছি, তার ঠিক এক সাপ্তাহ পরে শুনেছি বাবার মৃত্যুর খবর। একমাত্র সন্তান হয়ে সেই সময়টা দু'জনের পাশে থাকতে না পেরে হৃদয়ের ভেতর যেই যন্ত্রনাটা তৈরি হয়েছিল তানিয়ার মুখে ডিভোর্সের কথা শুনে সেই যন্ত্রনাটা আজকে আবারো জেগে উঠলো। 


এই জাহাজ, জাহাজের চাকুরী আমাকে শিখিয়েছে মেডিক্যাল রিপোর্ট হাতেও নিয়ে কিভাবে আঠারো ঘন্টা পর্যন্ত বিরামহীন ডিউটি পালন করতে হয়। আর আমি নিজে থেকে শিখেছি অসুস্থতার চেয়েও কষ্টকর যন্ত্রনা নিয়ে কিভাবে ডিউটি করে যেতে হয়। 


.


তিন দিন পর ঠিক সন্ধায় জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছলো। এক মাসের ছুটির অনুমোদিত কাগজ, সাথে দুই মাসের মোটা অঙ্কের বেতন আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে দায়িত্বরত ক্যাপ্টেন প্যারেড মিখাইল বললো, 


-- 'আজকে রাতটি জাহাজে রেষ্ট নাও সকাল হলেই চলে যেও।'



তানিয়ার সাথে যোগাযোগ করার যে যন্ত্রনাটা হৃদয়ের ভেতরে ছুটে বেড়াচ্ছে, সেই যন্ত্রনা নিয়ে জাহাজে আর এক মিনিট ও থাকতে পারলাম না। জাহাজ থেকে বন্দরে নেমে গাড়িতে করে ছুটলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। গাড়ির গ্লাসের ফাঁকা দিয়ে আসা বাতাসে এই দেশের মাটির ঘ্রান কতোটা গভীরভাবে মিশে আসে তা টের পেলাম।


জাহাজে নেটওয়ার্ক না থাকায় অনলাইনে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। ভার্চুয়াল পৃথিবীতে প্রবেশের সুযোগ পেয়ে মোবাইলে ডাটা অন করলাম। অন করতে মেসেন্জারে পরিচিত জনদের পাঠানো ভিডিও দেখে একই সাথে আমি বিস্মিত এবং হতভম্ব হয়ে গেলাম। 


এ'রকম ভিডিওকে স্মার্টনেস ভাষায় বলা হয় 'আপত্তিকর ভিডিও।' যে ভিডিও একটা মেয়ের সাধারণ নামের পাশে যোগ করে 'বেশ্যা' নামটি। যেনো আমার সম্মান নষ্ট না হয় সে জন্যই কি তানিয়া আমাকে ছেড়ে চলে গেছে? মাথায় হাজারো প্রশ্ন নিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম। তালাবদ্ধ ঘরের তালা ভেঙ্গে রুমে ঢুকে দেখি ডিভোর্স পেপারটি ফ্লোরে পরে আছে। পেপারটি হাতে নিয়ে কতোক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি হিসেব রাখতে পারলাম না।


.


খোঁজ নিয়ে দেখলাম আপত্তিকর ভিডিওতে তানিয়ার সাথে যে ছেলেটিকে দেখা যায় সেটি তানিয়ার কলেজ জীবনের প্রেমিক।যে প্রেমিক তার প্রেমিকার ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দিতে পারে তার মতো নিচু মানসিকতার মানুষটিকে ছেড়ে এসে আমাকে বিয়ে করাটা তানিয়ার অপরাধ ছিল এমনটা মনে হচ্ছে না।  

--

-----


বিয়ের পর পাঁচ মাসে তানিয়া আমার প্রতি যে ভালবাসা দেখিয়েছি সে ভালবাসায় কোন কমতি ছিল না। তানিয়াকে খোঁজে পেতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা ছুটে বেড়াচ্ছি। পৃথিবীর প্রতি রাগ অভীমান নিয়ে দূরে লুকিয়ে থাকা মেয়েটিকে কবে খুঁজে পাবো তা আমার জানা নেই। তবে যেদিন খুঁজে পাবো হাতটি শক্ত করে ধরে বলবো - 


-- 'নিচু মানসিকতার এ'রকম প্রেমিকদের ছেড়ে আসাটা ভুল নয় বরং জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত। তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছ তোমার নেওয়া এই সিদ্ধান্তকে মূল্যায়ন করেই আমি তোমার পাশে থাকতে চাই। রাখবে আমাকে পাশে?'


তানিয়ার মতো মেয়েটার পাশে থাকাটা হয়তো সমাজ মেনে নেবে না। তবে ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসা এ'রকম তানিয়াদের পাশে থাকলে কোন এক সময় হয়তো নিচু মানসিকতার প্রেমিকদের জন্য সমাজে আইন তৈরি হবে, কঠিন সে আইন। 


(সমাপ্ত)....


ছোটগল্প

সীমাবদ্ধতা (বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত)

----------------


বাস্তব জীবনের গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post