সংসার জীবনের কষ্ট | সংসার জীবনের গল্প

 মেয়েদের সংসার জীবন

মেয়েদের সংসার জীবন

আজকে আমাদের বাসায় দুইটা ঘটনা ঘটেছে।এক.বাবা নাকি আজকে বিকালেই দ্বিতীয় বিয়ে করবেন।দুই.সকাল সকালে আপু নাকি বাসা থেকে পালিয়ে গেছে।

বাবা বাসায় এসে সোজা মাকে বলে দিয়েছেন বিকালে মাধ্যে তার ঘর সাজাতে।আপু যেহেতু পালিয়ে গেছে সুতরাং মাকে আপুর ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।আমাদের বাসায় বাবার উপরে কথা বলার অধিকার কারোরই নেই।তবুও আমি বললাম 'বাবা,বিয়ে আজ না করলেই নয়?'

-কেন?

-আপু পালিয়ে গেছে এই ব্যাথায় মা কাতর তার উপরে আবার এইটা...

-তোর কথায় আমি চলবো নাকি!চুপচাপ নিজের কাজে যাও।

আমি একবার মার দিকে তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।এইসব দেখতে ইচ্ছা করছে না!গভীর চিন্তায় মানুষের মস্তিষ্ক কাজ করতে পারে না।অচল হয়ে যায়!আমার মস্তিষ্কও অচল হয়ে যাচ্ছে লাগছে।মস্তিষ্ক ঠান্ডা করতে একটা ফ্রি*জিয়াম খেয়ে ঘুম দিলাম।

বিকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখি বাবা তার নতুন বৌ নিয়ে আমাদের বাসায় চলে আসছেন।বয়স খুব বেশি না,দেখতেও আহমরী সুন্দরী না তবে চেহারাটা দারুণ মায়াবী। ইচ্ছে করছিল একটা ছু*রি নিয়ে ঐমেয়েটার গলায় সোজা একটা টা*ন দিয়ে শরীর থেকে গ*লাটা আলাদা করে ফেলে!কিন্তু পারছি না।বাবা বললেন 'কিরে তোর মা কই?'

-আম্মা তো রুমে।

-গিয়া বল তো আসতে।

আম্মার ঘরে গিয়ে দেখি আম্মা ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখছে।আমি ডাকার ফলে আম্মা দরজা খুলল।চোখ দেখে বুঝা যায় যে আম্মা কাঁদছিলো।কিন্ত,আম্মা সে কান্নাটা ঢাকতে চেষ্টা করছে।আমি বললাম 'আম্মা,আব্বা ডাকে!'

-গিয়া বল আমি আসতে পারবো না।

-এইটা বলার পরে আব্বা তো তোমারে মা*রবে।মা*র খাওয়ার চাইতে যাওয়াটাই ভাল।

আম্মা আমার পিছন পিছন গেল।রুমে যেতেই বাবা বলল 'রেহেনা,রাতে কি রান্না করছ?'

-কিছু না?

-সারাদিন কি করছ মা*গী?

আম্মা কিছু বললেন না।আব্বা আবার হুঙ্কার দিয়ে বলল 'এক ঘন্টার ভিতরে খাবার চাই।নাইলে মা*গী আজকে তোরে বুঝাবো!'

-আমি পারবো না।

-বাড়ি থেকে বের হ!

-আমার কাবিনের টাকাটা দিয়ে দ্যান।চলে যাবো

আমি বললাম 'আব্বা বেশি হয়ে যাচ্ছে!'

-তুই কথা বলছ কেন?

-মায়ের পক্ষে আমি কথা বলবো না তো কে বলবে?

-খুব মুখ বাড়ছে না!এই মুখ আমি ছোট করতে জানি।

-আমিও মানুষ ঠিক করতে পারি।

-কি?

-যা বলছি বলছি এই থেকে বেশি আর কিছু বলবো না।

এই বলে রুম থেকে আম্মার হাত ধরে বের করে নিয়ে আসলাম।আম্মার চোখে অঝোর ধারা ঝরছে।আমি বললাম 'আম্মা তুমি চিন্তা করো না!আমি আছি তো!'আম্মা শুধু করুণ চোখে আমার দিকে তাকালেন যে চাহনি অনেক কিছু বুঝায়,পাওয়া বুঝায় আবার না পাওয়া বুঝায়!


পর্ব-১

গল্প ,বাবার বিয়ে


বাবার বিয়ে

পর্ব ২শেষ 


মা'কে আপুর রুমে দিয়ে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।সারা জীবন শুনেছি নারীরা নাকি সব কিছুর ভাগ দিতে পারলেও নিজের স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না!কিন্তু মায়ের ক্ষেত্রে কেমন হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না!নয়তো প্রকৃতি আমাকে সে কষ্ট বুঝার ক্ষমতা দেয় নি!

শুয়ে ছিলাম।কিছুক্ষণ পরে রান্না ঘরে শব্দ শুনতে পাই।একটু উৎসাহ নিয়ে ঊকি দিয়ে দেখি মা রান্না ঘরে।আমি তখন নিজের মনের কাছে নিজেরই ছোট লাগছে।যে পুরুষ কিনা মা'কে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে সেই মা'ই নাকি সেই পুরুষের জন্য রান্না করছে!নিজের ভাবতেও অবাক লাগে।

মা রান্না ঘরে প্রবেশের কিচ্ছুক্ষণ পরে আমাদের বাসার নতুন বৌ ও রান্না ঘরে গেল।গিয়ে মাকে বললো 'আপা কি রান্না করেন?'

-তুমি এই ঘরে আসছ কেন?

মা কথাগুলো যথেষ্ট জোরে বলার কারণে ঐরুম থেকে বাবা বললেন 'কি গো শাপলা তুমি রান্না ঘরে কি কর?'

-কিছু না কি রান্না করবে তা বলতে এসেছি।

-আচ্ছা,বলে চলে এসো।তোমার রান্না ঘরে যাওয়ার দরকার নাই।

-আচ্ছা।

এবার নতুন বৌ আবার মাকে বলল 'আপা,আমাকে আপনার প্রতিপক্ষ হিসেবে নিবেন না!আমি আপনার ছোট বোনের মত'

-ছোট বোনের মত বিধায় কি আমার সংসারটা খেলে?

-আপা...

-তোমাকে আমি দেখতে পারছি না।রান্না ঘর থেকে যাও তো।

-যাচ্ছি।

শাপলা বানু রান্না ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরে আমি রান্নাঘরে গেলাম।গিয়ে মা কে বললাম 'কি দরকার এমন একজন মানুষের জন্য রান্না করে?'

-ভালবাসার মানুষের জন্য কি না করা যায় বল তো!

-এত ভালবাসা আগে কই ছিল?

-সব সময় কি সব কিছু প্রকাশ পায়?

-প্লীজ আম্মা তোমার বেহা*য়া*পনা আর দেখতে পারছি না।

-যা তুই তোর ঘরে যা।

আমি যথেষ্ট রাগ নিয়ে রান্না ঘরে থেকে বের হয়ে গেলাম।রান্না ঘর থেকে যাওয়ার পর পরই আপু ফোন দিল।আমি রিসিভ করতেই আপু বলল 'কিরে কেমন আছিস? '

-ভাল না

-কেন কি হইছে?বাসায় কোন সমস্যা?

-না।তুই কই?

-আমি কলেজ ট্যুরে কক্সবাজার চলে আসছি।

-তবে তোর ঘরের ঐ নোটটা?

-সারাজীবন মিসির আলী পড়লি আর এই রহস্য বের করতে পারলি না?

-কথা না ঘুরিয়ে সোজা কথা বল।

-যাষ্ট তোদের চমকে দিতে চেয়েছি।মার কি খবর?

-তোর কাছে টাকা আছে?

-হুম।

-এখনই ট্রেনে উঠে বাসায় চলে আয়।কেলে*ঙ্কারি হয়ে গেছে।

-কি হয়েছে?

-তুই আগে আয়......

______________________________


-কি হয়েছে বলবি তো?মা কি স্ট্রো*ক করেছে?(আপু)

-না।বাবা আরেকটা বিয়ে করছে(আমি)

-কি?

-আপু টেনশন নিও না।আগে বাসায় আস..

-এত কিছু ঘটল আমকে কিছু জানালি না কেন?

-আপু ফোন রাখি।কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।

-আরে শুন না

আমি ফোনটা কেটে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।প্রচুর চিন্তা হচ্ছে।কি করা যায় এই পরিস্থিতিতে!আমার মাথায় যেন আকাশ ভে*ঙ্গে পড়ছে!চারিদিকে শুধু দেখতে পাচ্ছি ধুয়াময় ভবিষৎ

আমাদের বাসার নিয়ম হচ্ছে যে যেখানেই থাকুক না কেন রাতের খাবারটা সবাই একসাথেই খেতে হয়।যত ঝড়-ঝাপটা আসুক না কেন এই নিয়মের কোন হের ফের হওয়া চলে না।এত দিন যাবত আমি মনে করতাম এই নিয়মটা আমার জন্য জুলুম।নিজের খাওয়া নিজে খাবো যখন খুশি তখন খাব,এখানে নিয়মের কি আছে?কিন্তু আজকে ইচ্ছা করছে সবাই একসাথে খাবো আর সেখানেই বাবার সাথে কিছু কথা বলবো

রাত ১০টার দিকে খাবার রেডি করে মা ডাকল।গিয়ে দেখি সবাই বসেছে কিন্তু মা নেই।আমি মাকে আনতে যাচ্ছিলাম এর মাঝে বাবা বলল 'কই যাছ?'

-মাকে আনতে! 

-যার ইচ্ছা সে আসবে যার ইচ্ছা সে আসবে না।

-এই নিয়ম আগে কই ছিল?

-আজকে থেকে এই নিয়ম।

আমি চেয়ারে বসলাম।বসে বললাম 'বাবা আমি এই ঝা*মেলার সমাধান চাই'

-বাসায় কোন ঝা*মেলা আছে বলে আমার মনে হয় না।

আমি হাতে ফল কাটার ছু*রিটা নিয়ে বললাম 'এই ছু*রিটা দিয়ে যেমন ফল কা*টা যায় তেমনি ঝামেলাও কা*টা যায়'

-কি বলতে চাস তুই?

-কেমন হবে যদি এই ছু*রি দিয়ে ঝা*মেলার গ*লায় একটা টান দিয়ে ঝা*মেলা শেষ করে ফেলি!

-কি আবার বল

-এই কথাটা আমি দুবার ব্যয় করবো না।

শাপলা বানু এইবার আমার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম 'এই বাসায় থাকতে হলে আপনার রান্না আপনি করবেন।মায়ের রান্না করা খাবারে হাতও দিবেন না।যদি দেন অবস্থা খুব খা*রাপ হবে?"

ওপাশা থেকে বাবা বলল 'কি করবি রে মা*গীর পুত?'

-সময় হলেই দেখবেন!

চিল্লা চিল্লি শুনে মা ডাইনিংয়ে এসে দেখে বাবা চোখ গরম করে বসে আছে।মাকে দেখে বাবা বলল 'দেখ মাগী তুই কোন লোক থেকে এই পুলার বী*জ নিছিলি?'

মা আমার দিকে তাকিয়ে গালে একটা ঠাস করে চ*ড় দিয়ে বলল 'তুই তোর ঘরে যা।তোর খাবার রুমে দিয়ে আসছি!'

-আম্মা

-আর একটাও কথা বলবি না।

আমি আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।ভাবছি এই সমস্যার সমাধান কেমনে করা যায়।এর মাঝে মা আমার রুমে আসল।মা বলল 'নে তোর খাবার'

-আমি খাবো না।

-কেন?

-বলছি তো খাব না!আমাকে একটু একা থাকতে দাও!

-নাবিলার খবর কি জানিছ কিছু?

-ও কলেজ ট্যুরে কক্সবাজার গেছে।

-ও আচ্ছা।

মা আর আবেগ দেখাল না।সোজা নিজের রুমে চলে গেল।মাকে বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে সব কিছু কত সহজে মেনে নিচ্ছেন অথচ ভিতরে জ্ব*লে পু*ড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে তবু আমাদের কিছু বুঝতে দিচ্ছেন না।মায়েরা হয়তো এমনই হয়!নিজের ভিতরে সব কিছু পুষে রাখতে পারে যা কিনা অন্যরা পারে না....

__________________________


কতক্ষণ পরে মার রুমে গিয়ে দেখি মা কাঁদছে।মার দুঃখ কষ্ট দেখে মাকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা আমি হারিয়ে ফেলেছি।কিছুই বলতে পারছি না।আস্তে আস্তে আমি মার পাশে গিয়ে বসলাম।মা তার চোখ মুছতে মুছতে বলল 'কিরে ঘুমাস নি?'

-ঘুম আসছিল না 

-আয় আমার সাথে শুয়ে থাক।

আমি মায়ের সাথে শুয়ে পড়লাম।মা বোধহয় তখনও কাঁদছে।ফোপানোর শব্দ শুনা যাচ্ছে,কিন্তু আমি কিছু বলতে পারছি না।একবার বললাম 'আম্মা'

-কি হয়েছে?

আমি আবার বললাম 'আম্মা'

-কি হয়ছে বলবি তো?

এবার মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল 'বোকাটা ঘুমা তো!আমি তোর মাথা হাতিয়ে দিচ্ছি।'

মাকে আমি জোরে জড়িয়ে ধরলাম।মনে মনে বললাম 'আম্মা আমি তোমার প্রত্যেকটা কষ্ট অনুভব করতে চাই,তোমার প্রত্যেকটা ব্যাথার ভাগিদার হতে চাই,তোমার ভালবাসায় সিক্ত হতে চাই'

পরের দিন সকালে বাবা অফিসে যাওয়ার সময় বিশাল এক নাটক ঘটল।শাপলা বানু বলছে সে নাকি বাবাকে ছাড়া এই বাসায় থাকবে না।তার নাকি ভয় করে তাকে আমি নাকি মে*রে ফেলবো।বাবা আমাকে ডেকে নিয়ে বলল 'রাতে যা করেছিস তা মাফ করে দিছি আর বেশি কিছু করলে অবস্থা খা*রাপ হবে।কি বুঝলি?'

আমি বললাম 'আজকে আপু আসছে'

-তোকে যা বললাম সেটা বুঝেছিস কিনা বল?

-আমি মার কষ্ট সহ্য করতে পারবো না।এর জন্য যা কিছু তাই করতে পারি।প্রয়োজনে মানুষও খু*ন করতে পারি'

শাপলা বানু এইবার আমার দিকে কেমন জানি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকল।আমি আবার বাবাকে বললাম 'আমি আজকের মধ্যে এই ঝা*মেলার শেষ চাইছি'

-তুই আর তোর মা বাসা থেকে চলে যা তাহলেই তো হল!

-দেখি কি করা যায়

বলে বাবার রুম থেকে বের হয়ে এলাম।নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি।তবুও কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।সকালে নাস্তাও খাওয়া হয় নাই।পেট কেমন জানি চো চো করছে।মাথা ঘুরাচ্ছে।কোন মতে নিজের ঘরে এসে শুয়ার পরে বুঝতে পারলাম আমি জ্ঞান হারা*চ্ছি।মাকে একা রেখে কোন অতল গহব্বরে হারিয়ে যাচ্ছি...

জ্ঞা*ন ফিরার পরে প্রথমেই যার মুখ দেখলাম সে হচ্ছে আমার আপুর।আপুর চেহারাটা কেমন জানি কালো হয়ে গেছে।মুখটাও ভীষণ শুকিয়ে গেছে।আমার খোলা চোখ দেখে আপু বলল 'কিরে কেমন লাগছে এখন'

-ভাল।আম্মা কই?

-আছে।ডাকবো?

-হুম ডাক তো।আম্মারে বড্ড দেখতে ইচ্ছা করছে।

আমার বড্ড ইচ্ছা হচ্ছে আম্মার হাতে একগ্লাস লেবুর শরবত খেতে।আমি জানি আমার জন্য এই শরবত মহাওষৌধ।আম্মা আমার রুমে আসার সময় হাতে করে একগ্লাস লেবুর শরবত নিয়েই ডুকছে।নিজের কাছেই কেমন জানি অবাক লাগছে।

লেবুর শরবত খাওয়ার কিছুক্ষণ পর একটু সুস্থ লাগছে।আপু বলল ঘটনা কি খুলে বল তো।আমি সব খুলে বললাম।আপু বলল 'আজকের মধ্যে আমি এর সমাধান করছি'।আমি বললাম 'আপু রাগের মাথায় কিছু করিস না'

-না ঠান্ডা মাথাই সব করবো।

-যা ভাল মনে করিস।

দুপুরে দিকে শাপলা বানু খেতে এসেছিল।আপু তো শাপলা বানুর চু*লে ধরেই ফেলেছিল।কিন্তু সেখানেও বাধা দেয় মা।মার কথা একটাই 'যাকে বিয়ে করেছি তার সুখই আমার জীবনে লক্ষ্য।'কিন্তু এবার আপু আমার মত চুপ চাপ না থেকে বলে 'তো যাও না স্বামীর সাথে!আমার ঘরে দুইদিন যাবত কি কর?এত ভালবাসা বা ঢং দেখাবা না!'

রাতে বাবা বাসায় এসে আপুকে দেখ রীতিমত আগুন।বাবা বলল 'যেই মেয়ে অন্য পুরুষের সাথে রাত কা*টিয়ে দুইদিন পর বাসায় আসে সে মেয়ের জায়গা আমার বাসায় হবে না!'

আপু বলল 'তুমি কি ন*ষ্টামি কম করছ?নিজের বৌ থাকতেই আরেকটা বিয়ে করলে কেন?

-তোর কাছে জবাদিহি করতে হবে আমার?

-সব কিছুতে কি তোমার অগ্রাধিকার থাকবে তা কই পেলে?

-কালকের মধ্যে তোরা সবাই বাসা ছাড়বি না হলে বুঝাবো!

-কি বুঝাবে তুমি?

এর মধ্যে আমি গিয়ে আপুকে নিয়ে আসলাম।বললাম 'আপু কু*কুরের সাথে কু*কুর হওয়া যায় না'

বাবা বলল 'কি আমাকে কু*কুর বলিস।সাহস তো কম না'

-তোমার ক্ষেত্রে কু*কুর বলাটাও কম হয়ে যায়

-কি

এবার পাশ থেকে শাপলা বানু বলল 'সারাদিন অনেক কষ্ট দিছেন এখন আবার এখানে ঝ*গড়া করছেন কেন?'

আপু বলল 'তুই চুপ থাক'

বাবা এবার আপুকে মা*রতে উদ্ধত্য হল।আমি বাবাকে আটকে দিয়ে বললাম 'আমার সাথে পেরে ওঠাটা এখন মুশকিল হয়ে যাবে বাবা'

আমাদের চিৎ*কার চেচামেচি শুনে আম্মু আসল।এসে দেখ বাবা বিছানার উপরে বসে আছে।মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল 'তিহাম যথেষ্ট হয়েছে এবার এসব বাদ দে'

-কি বাদ দিবো বল?বাবার বিয়ের য*ন্ত্রণা*টা তোমাকে যে কত কাঁদাচ্ছে সেটা বুঝি আমি বুঝি না......

____________________________


সকাল সকাল বাসায় এক র*ক্তা-র*ক্তি কান্ড ঘটে গেছে।আপু শাপলা বানুকে খু*ন করেছে।আপুকে আমি এত দিন জানতাম খুব শান্ত শিষ্ট মেয়ে।কিন্তু,আপু যে এমন কাজ করবে তা ভাবার বাইরে ছিল।সকাল থেকে মায়ের রুমের দরজাটাও বন্ধ।আমি অনেক ডাকা-ডাকি করার পরেও খুলে নি।প্রথমে ভেবেছিলাম মা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু কি কারণে জানি আমার মনটা একটু মোচড় দিয়ে উঠল।কি জানি অজানা শঙ্কায় বুকের ভিতরে একটা চিনচিনে ব্যাথা লাগছে।

দুপুরে বাসায় বাবা আসে।বাবার সাথে আসে পুলিশও।তারা আপুকে ধরে নিয়ে যায়।মাকে অনেক ডাকা -ডাকির পরেও মা দরজা খুলে নি।তখন পুলিশেরা মার রুমে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ডুকে।দরজা ভাঙ্গার পরে যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।দেখি মার জি*ব্বাটা কেমন জানি বের হয়ে রয়েছে।পুরো শরীরটা ঝু*লে আছে ফ্যানের সাথে।চেহারায় কেমন জানি একটা ভ*য়ের ছা*প।মায়ের মুখের দিকে আমি তাকাতে পারছি না।আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি জ্ঞান হা*রাচ্ছি।আবার মনে হচ্ছে আমি অতল অন্ধকার গহ*ব্বরে হারিয়ে যাচ্ছি।খুব ইচ্ছা করছে বলতে 'আম্মা,তোমার হাতে বানানো এক গ্লাস লেবুর শরবত দাও তো।মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাচ্ছি'

জ্ঞান ফিরার পরে দেখি খালামনি আমার মুখের উপরে।আমাকে দেখ বলল 'কিরে বাবা আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস'

-জ্বী বল খালা মনি

-তোর কেমন লাগছে?

-আম্মার অবস্থা কেমন?

-ও মা*রা গেছে।

আমার আর কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না।তবুও বললাম 'খালা মনি আমি ম*রতে চাই'

খালা মনি এবার আমার দিকে বেশ কৌতূহলে তাকাল।আমি আমার চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।কিচ্ছু ভাল লাগছে না।ধুসর পৃথিবীতে বাঁচতে ইচ্ছা করছে না।

দিন দুই পরে আপুর সাথে দেখা করতে হাজতে গেলাম।আপু আমাকে দেখে বলল 'তিহাম,আমি তোদের জন্য সব করতে পারি'

আপু কাছ থেকে চলে আসার পর থেকে সব কিছু বিবর্ণ লাগছে।বাবা এখন রেগুলার বাসায় আসে না।সারাদিন একা একা থাকি।বাসা থেকে বের হতেও ইচ্ছা করে না।খাওয়া দাওয়া সব কিছুতে অনিয়মের হাতছানি।একদিন বিকালে ছাদে গেছি,সেখানেও মায়ের কত স্মৃতি।এখানে বসে মার সাথে কত গল্প করেছি।এইসব ভাবতে চোখটা নোনা জলে পূর্ণ হয়ে গেল।ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মা বলল 'কিরে বাবা কেমন আছিস?'

আমি চমকে পিছনে তাকাই।দেখি মা রেলিং এর কাছে দাঁড়িয়ে আছে।মা আবার বলল 'কিরে বলবি না কেমন আছিস?'

আমি কেমন আছি প্রশ্নটা আমি মাকে করি।মা উত্তর না দিতে পারা ছাত্রীর মত মাথা নিচু করে হেটে যেতে থাকেন।ছাদ পার হয়ে বাতাসে ভাসতে ভাসতে হেটে চলেন আকাশের দিকে।আমাকে আশ্রয়হীন করে,সম্বলহীন করে একা রেখে মিলিয়ে যান আকাশে।মাকে বলা হয় নি যিনি এই দুর্গ*তির মুলে আছেন তিনি একজন খা*রাপ মানুষ অথচ,তিনি আমাদের বাবা.............


-----------সমাপ্ত---------------


সংসার জীবনের গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post