স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অবহেলার গল্প | আত্মীয় স্বজনের অবহেলা

 অবহেলার কষ্টের গল্প

-- " বাড়িতে আসার সাথে সাথেই গোসল করিস কেন তুই বউ? তোর কাজটা কি এমন!দুপুর সন্ধ্যা যে সময় বাড়িতে আসিস আগে সোজা কলপাড়ে গিয়ে গোসল করতে হয়। আমি জানতে চাইলে নানান অজুহাত এ প্রসঙ্গ বদলায় ফেলিস। আমি কিন্তু কিছু বুঝতে পারছি না তুই কি করিস বাইরে৷ কই যাস, কি করিস এতো টাকা কোথায় থেকে আসে?আমার চিকিৎসার জন্য এতো টাকা কই পাচ্ছিস তুই? আজ সত্যি টা জানতে হবে আমার, বল তুই আমায়। "


অসমি মাথা নিচু করে চুপ থাকে।তার স্বামী জোরে চিৎকার করে উঠে আজ এই সব কথার জবাব চায় সে, না হলে রাতের খাবার খাবে না সে সাথে ঔষধ ও। 


অসমি সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফিরে গোসল সেরে, ঘরে আসলে তাকে জেঁকে বসে বিপ্লব (তার স্বামী)। 


কি উত্তর দেবে অসমি সেটা ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণ চুপ থাকে। পরক্ষণেই রাগে গরগর করে অসমি আর বলে, 


-- " এতো দিন থেকে বিছানায় পরে আছেন আমি যে আপনার দেখাশোনা করার জন্য পরে আছি এখানে নিজের সুখ-দুঃখ ভুলে। কষ্ট করে রোজগার করে আপনার খাওয়া চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি সেটা কি সহ্য হচ্ছে না আপনার? বলেছি তো কাপড় কাটার কাজ করি একটা দোকানে, সে-তো আর আপনার বিশ্বাস এ আসে না।এখন এগুলোর জবাব দেন আমাকে, এটাও বলেন আমি না থাকলে আপনার কি হবে, কে দেখবে আপনাকে? "


উপায় খুঁজে না পেয়ে অসমি তার স্বামীর দূ*র্বল জায়গায় আঘাত করেছে।


সত্যি তো, অসমি ছাড়া বিপ্লব এর এই পৃথিবীতে কেউ নেই। তবুও বিপ্লব অসুস্থ অচল এই কথা বলে আঘাত করেছে অসমি বিপ্লব কে, তার জন্য দুঃখ টা রাগে পরিণত হয়ে যায় বিপ্লবের। 


পাশে থাকা স্টিল এর মগ টা হাতে নিয়ে সজোরে ছুঁড়ে মা*রে অসমির দিকে। পিঠে গিয়ে ঠেকে মগটা অসমির, হালকা আর্তনাদ করে চুপ হয়ে যায় মেয়েটা। 


এখন দু'জন দু'জনার দিকে চেয়ে আছে, কিন্তু কোনো কথা বলছে না। অসমি রান্নাঘর ঢুকে রাতের খাবার তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিপ্লব এর পছন্দের খাবার খিচুড়ি রান্না করে আজ সে।


বিপ্লব অনেক শান্ত মেজাজ এর ছেলে, ধৈর্য ক্ষমতা অনেক বেশি তার। কিন্তু ইদানীং বউয়ের আচরণ তার ভালো ঠেকছে না৷ আশেপাশের মানুষজন বাড়িতে এসে বসে নানান কথা বলে যায়,


-- " বিপ্লব তুই শয্যাশায়ী হয়ে তোর বউটা খা*রাপ হয়ে গেলো রে। এ পাড়ায় কাজ নাই, কাজের জন্য বাজার পার হয়ে শহরের দিকে যাইতে হয় তার, বুঝতে পারছিস কাজটা কি। "


আজ প্রতিবেশী চাচীর এমন কথা শুনে বিপ্লবের মাথায় র*ক্ত উঠে যায়। কিন্তু, অসমি তো ব্যাপার টা কৌশলে এড়ায় গেলো। না না এভাবে ছাড় দেওয়া উচিত হবে না। 


বিপ্লব ভীষণ রাগ হয়ে চিৎকার করতে থাকে 'আসমানী, আসমানী' বলে।


আসমানী নাম শুনে চমকে উঠে অসমি, আসলে নিজের সত্যি নামটা ভুলতে বসেছে সে। ভালোবেসে বিপ্লব সবসময় আসমানী কে অসমি বলে ডাকে।


তাড়াতাড়ি বিপ্লবের কাছে আসে অসমি, জানতে চায় কি লাগবে। 


বিপ্লবের এক কথা,

-- " সত্যি টা জানতে চায় সে। তার বউ রোজ কোথায় যায়?সে কোনো খা*রাপ কাজে নিজেকে বি*ক্রি করে দেয় নি তো! "


-- " দেখেন আপনি যা ভাবছেন তা ভুল, অযথা আমাকে ভুল বুঝতেছেন আপনি। মানুষ তো নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তাই না, এই আমি নিজেকে ছুঁয়ে ওয়াদা করছি আমি এমন কোনো কাজ করছি না যেটাতে আমার এবং আমার স্বামীর সম্মান ন*ষ্ট হয়। "


বিপ্লব একটু শান্ত হয়, নিজেকে ছুঁয়ে কেউতো মিথ্যা কথা বলতে পারে না এটা সে ছোট কাল থেকে জেনে আসছে।


স্বাভাবিক ভাবে দু'জনে রাতের খাবার খাওয়া শেষ করে বিছানায় ঘুমোতে যায়। চার মাস আগে এক ট্রাক এ*ক্সিডেন্টের এর পর থেকে বিপ্লব শয্যা*শয়ী, পা ভে*ঙে গেছে। পায়ের ভিতরে লোহার রড সাপোর্ট হিসেবে দেওয়া আছে। পুনরায় অপারেশন করে সেই রড বের করলে বিপ্লব আবার আগের মতো চলাফেরা করতে পারবে বলে ডাক্তার আশ্বাস দিয়েছে। 


.


কিন্তু তারা দিনে আনে দিনে খায়, ছোট একটা মুদির দোকান চালাতো বিপ্লব বাজারে ভাড়া নিয়ে। তার অসুস্থতার জন্য সেটা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাড়া বাকি ছিলো অনেক। তার অবস্থা দেখে দোকানের মালিক আর ভাড়ার টাকা নেয় নাই। শুধু বলেছে সুস্থ হয়ে যেনো আবার ফিরে আসে দোকানে। 


-- " বউ ও বউ, কাছে আয় তোকে জ*ড়ায় না ধরলে আমার ঘুম আসে না যে। "


অসমি ছোট্ট বাচ্চার মতো বিপ্লবের কোলের ভিতরে নিজের জায়গা করে নেয়। 

ফুলের মতো সাজানো সুন্দর জীবন টা তাদের অকালে ন*ষ্ট হতে চলেছে। অসমির চোখ ভর্তি পানি এতো সহজে সে হাল ছাড়বার মেয়ে নয়। যেভাবেই হোক না কেনো নিজের স্বামীকে সে সুস্থ করে তুলবেই। তার স্বামীর যেমন এ পৃথিবীতে সে ছাড়া কেউ নেই, তেমনি তারও কেউ নাই। তারা দু'জন দু'জনার। 


ফজরে ঘুম থেকে উঠে অসমি নামাজ পড়ে, বিপ্লবের জন্য চা-নাস্তা জোগাড় করে খাইয়ে দেয় তাকে। হাতের কাছে প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র শুকনা খাবার ও পানি  রেখে চেয়ারে বসায় বিপ্লব কে তারপর আটটা নাগাদ কাজে চলে যায়।


অসমির চলে যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে বিপ্লব, খুব খা*রাপ  লাগে তার এই প*ঙ্গুত্ব। অসহায়ের মতো জীবনযাপন করতে, বউয়ের কষ্টের টাকায় দিনগুজরাতে একা একা বসে শুয়ে থাকতে। 


পাড়া প্রতিবেশীর কথায় কান দেয়না এখন বিপ্লব, তার অসমির প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস আছে। কিন্তু কাপড় কে*টে তো হাজার হাজার টাকা আয় করা যাবে না, এনিয়ে খটকা বিপ্লবের মনে। অসমিকে জিজ্ঞেস করবে তারও সময় পায় না, আসলে অসমির ওই মায়া ভরা মুখটা দেখলে সবকিছু ভুলে যায় সে। ভুলে যাওয়ার স্বাভাবিক, তার মায়াভরা ডা*গরডো*গর আঁখি যুগল দেখলে বিপ্লবের আর কিছু মনে থাকে না। 


.


-- " বিপ্লব শোন, আজ দেখলাম তোর বউ শহরের নামকরা একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অনেক গুলো টাকা নিলো হেসে হেসে। কোন কাজের জন্য মানুষ এত টাকা মানুষকে দেয় জানিস কি তুই?


শুধু আমি না আমার নাতিডাও দেখছে সে কি কান্ড। তুই এ খা*রাপ মেয়ে মানুষটাকে ছাইড়া দে, জগতে মাইয়ার অভাব নাই। আর তুই মনে হয় এটাও জানিস না রোজ এক ভ্যানগাড়ি আইসা, তোর বউরে নিয়ে যায় আবার সেই ভ্যান এ দিয়ে যায়। "


প্রতিবেশী রহিমা চাচী আজও অনেক কথা বলে গেলো। বিপ্লব সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলেও পারছে না।


আজ দুপুরে অসমি পর পর কয়েকবার বমি করতে থাকলে তার সন্দেহ দ্বিগুণ হয়। কারণ স্বামী-স্ত্রীর মে*লামে*শা এখন তাদের নিষিদ্ধ ডাক্তারি মতে। 


গল্প :বাস্তবের_সত্যতা

প্রথম পর্ব (০১)


গল্প :বাস্তবের_সত্যতা

দ্বিতীয় পর্ব (০২)

---------

---------------

বিপ্লবের মন চাচ্ছে এই মুহূর্তে উঠে গিয়ে অসমি কে পিটিয়ে তক্তা বানাতে। রহিমা চাচী তাহলে আজ সব সত্যি কথাই বলছে।


এমন চরিত্রহীন নারীর সাথে সংসার করা হারাম, তার মুখ দেখাও পাপ। কিন্তু কি করবে সে তার তো উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই এখন। আল্লাহ কেন যে তাকে এতো বড় বিপদে ফেললো। আর সে শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে, বউ তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। প্রয়োজন নেই তার এমন বউয়ের। এরচেয়ে সে একা একা পরে থেকে মরবে তবুও বউয়ের হাতের এক গ্লাস পানিও খাবে না। 


সন্ধ্যায় অসমি স্বামীর টুকটাক কাজ করে চুলায় রান্না চাপায় দেয়। তার রোজকার নিয়ম সকালে ঘর গুছানোর সাথে বিপ্লব কে ঠিকমতো খাবার খাইয়ে ঔষধ খাওয়ানো ও ভাত রান্না করে কাজে যাওয়া।


ঠিক দুপুর বারোটা নাগাদ এসে গোসল সেরে তরকারি রান্না করে দুজনে একসাথে খায়। তারপর আবার কাজে যায় অসমি আবার ফিরে আসে সন্ধ্যায়, এসেই গোসল করে আবারও।  


.

অসমির সারাদিনের কাজকর্ম দেখলেই তো যে কেউ বলে দিতে পারবে সে কি কাজ করে বাইরে।


কষ্ট, যন্ত্রণায়, অপমানে বিপ্লব কেঁদে ফেলে। অসমি ঘরে আসার আগেই চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হয়ে যায়। 


-- " একি! আপনি কাঁদছিলেন কেনো? "


-- " ও কিছুনা, পা ব্যথা করছিলো তাই। "


-- " কি বলেন, খুব ব্যথা করছে ডাক্তার ডাকবো বলেন? "


--" না তার প্রয়োজন হবে না, ডাক্তার আসলেই তো হাজার টাকা গুনে নিয়ে যাবে এই দরিদ্র মানুষের থেকে। "


অবশ্য বিপ্লব এর সময় কিছু টাকা কম নিয়েছিলো হাসপাতাল কতৃপক্ষ ও ডাক্তার। তবুও ঋণের সমুদ্রে ডুবে আছে তারা, এক পয়সাও জমানো ছিলো না বিপ্লবের। যত খাটাখাটুনি দৌড়াদৌড়ি সব অসমি করেছে। দোকানের সব জিনিস বিক্রি করে দেয়, অসমির একটা সোনার রিং ছিলো সেটাও বিক্রি করে। তবুও কুলচ্ছিলো না টাকায়। মানুষের দ্বারে হাত পাতা কিংবা ভিক্ষা করা শেখে নাই বিপ্লব ও অসমি। তাই কারও দয়ায় বাঁচতে চায়নি বিপ্লব। তখন মোটা অঙ্কের টাকা চড়া সুদে ঋণ নেয় তারা। 


এখন সেই ঋণ শোধ এবং স্বামীর চিকিৎসার জন্য হাল ধরেছে অসমি নিজে। 


-- " আসমানী একটু আগে বমি করলি কি কারণে? "


-- " আমার পেটে ব্যথা করছে সকাল থেকে, খাওয়ার সমস্যা হয়েছে মনে হয়। " 


অসমির এই কথা টা মিথ্যা। 

আর বিপ্লব মুখে বিশ্বাস করলেও মনে মনে বিশ্বাস করলো না। 

রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পরে তারা।


আজ আর অসমিকে কাছে ডাকে না বিপ্লব, নিজে থেকে স্বামীকে জড়িয়ে ঘুমায় মেয়েটা। 


.


আগেই বলেছিলাম বিপ্লব শান্ত ছেলে, তাই সে নিজের মাথা ঠান্ডা রাখে। পরিকল্পনা করতে থাকে কিভাবে সে জানতে পারবে যে অসমি কি কাজ করে। 

পরের দিন অসমি কাজে যায়, দুপুরে ফিরলে বিপ্লব তাকে বলে,


-- " অসমি, আজ গাড়ি করে একটা লোক এসে তোর খোঁজ করছিলো। আর কিসের জন্য যেনো অগ্রীম টাকা দেওয়ার কথা বলছিলো।কে সেই লোকটা? "


অসমি থতমত খেয়ে বলে, 

-- " কে আসবে আমার তো সেরকম কাজের জন্য পরিচিত কোনো লোক নেই, যে গাড়ি করে বাড়ি বয়ে আসবে। আপনি সত্যি বলছেন তো নাকি স্বপ্ন দেখলেন এমনটা। "


-- " আমি মিথ্যা বলি না, হারামী তুই রোজ কই যাস আর এতো টাকা আনিস। মানুষ এতো টাকা তোকে মাগনা মাগনা তোর মুখ দেখে দেয় নাকি? "


বিপ্লবের ব্যবহারে অসমি কেঁদে ফেলে এবং বাহিরে চলে যায়। বিপ্লব পরক্ষণেই শান্ত হয়ে বুঝতে পারে এই মিথ্যা কৌশল টা কাজে লাগলো না তার। অন্য ভাবে এগুতে হবে। আর অসমির সাথে আপাতত খুব ভালো ব্যবহার করতে হবে। সত্যি টা জানতে হলে আমায় অনেক ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। 

'

'

'

-- " রহিমা চাচী আপনি সত্যি কথাই বলতেন, শুরুতে আমি বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু এখন ওই চরিত্রহীনার সব কাজকর্মে আমি প্রমাণ পাইছি। কিন্তু আমি নিজের চোখে দেখতে চাই অসমি কোথায় যায়, কি করে। এজন্য আপনার সাহায্য প্রয়োজন আমার চাচী। "


পান সুপারি খেতে খেতে লাল কালো হয়ে যাওয়া দাঁত গুলো বের করে বিদঘুটে ভাবে হাসে রহিমা বেগম।


-- " বাজান, এবার তো আমার কথা বিশ্বাস হইলো। এই রহিমা বেগম কখনো ভুল কিছু বলে না। এর বহুত প্রমাণ আছে বহুত। তুমি টেনশন কইরো না, আমি সব ব্যবস্থা করবো নিজে। "


-- " তবে চাচী একটা কথা, এই কথা যেনো আশেপাশের আর কেউ জানতে না পারে। মানে আমাদের এই গোয়েন্দা অভিযানের কথা। "


-- " না জানার কি আছে, পাড়াপড়শি সকলে ছি ছি করতেছে। বলছে বিপ্লবের বউটা শেষ নষ্ট হয়ে গেছে। "


-- " তবুও চাচী এ কথা যেনো তিন কান না হয়, আমি কিন্তু কাজ শেষ হলে তোমাকে ভালো একটা শাড়ি কিনে দিবো। "


শাড়ির কথা শুনে রহিমা বেগমের লোভ হয়। 

-- " আচ্ছা বাজান কেউ জানতে পারবো না শুধু তুমি আর আমি। "

'

'

রহিমা বেগম গোপনে অসমির পিছু নেয়, টানা তিনদিন পর জানতে পারে অসমি কোথায় কাজ করে।পথ হারিয়ে ফেলতো রহিমার নাতি টা সে ভ্যান চালক, নতুন শিখেছে। ভালোই আয় করে ভ্যান চালিয়ে। জানতে পেরে রহিমা ছুটে এসে খবর দেয় বিপ্লব কে। 


.


সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পরেরদিন তারা তিনজন সেই কাজের জায়গায় যাবে।বিপ্লব মানসিক ভাবে নিজেকে তৈরি করতে থাকে। তবুও তার মনটা খচখচ করে, তার অসমি কি এমন কাজ করতে পারে।ছোট বেলা থেকে ভালোবাসে তারা দু'জন দুজনকে।


অনেক সন্দেহ চোখের সামনে কিন্তু মানুষের চোখের দেখারও ভুল থাকতে পারে। তবে অসমির ব্যাপারটা চোখে না দেখে বলা যাচ্ছে না কিছু। রহিমা চাচীর বর্ণনায় আর পরিস্কার হয়েছে অনেকটা অসমি আসলে কি কাজ করে। 


পরিকল্পনা অনুসারে, 

পরের দিন তারা তৈরি হয়। বিপ্লব কে ভ্যানে তুলতে কষ্ট হওয়ায় পাশের দোকানের দুটো ছেলের সাহায্য নেয় তারা।এতে করে বিপ্লব সামান্য আঘাত পায় পায়ে। সে যাই হোক এ সত্যি জানার চেয়ে তার পায়ের ব্যথা বেশি হতে পারে না। আজ যদি তার জীবনও বের হয়ে যায়, তবুও সে সত্যি টা উদঘাটন করেই ছাড়বে। 


বিপদের সময়ে মনে হয় বিপদ বাড়ে, হলো তাই ভ্যানের চাকা নষ্ট হলো মাঝপথে সেটা সারাতে আধঘন্টা সময় লেগে গেলো। এগারোটা নাগাদ তারা অসমির কাজের জায়গায় এসে পৌঁছায়। 


-- " বিশাল তিনতলা বিশিষ্ট বাড়ি, সামনে বিরাট গেট এই বাড়িতে কাজ করে অসমি তুমি ঠিক দেখেছো চাচী? "


-- " হরে বাজান আমি দুই চক্ষু দিয়া দেখছি এই বাড়ির ভিতরে সে যায় সকালে আবার দুপরের আগে ফিরে আসে। ওই যে ভ্যান খাঁড়ায় আছে সেটায় করে অসমি আসা যাওয়া করে, অনেক বড় বড়,সাহেব রাও আসে এ বাড়িতে আমি খোঁজ নিয়া জানছি। "


বাড়ি দেখে সত্যি টা কি বিপ্লবের আর বুঝতে


 বাকি রইলো না। 


গল্প : বাস্তবের_সত্যতা

শেষ পর্ব (০৩)


-- " এমন বেহায়া মহিলার লজ্জা হবে কি করে?  

সবকিছু জানা স্বত্বেও কিভাবে আমার দেবরকে বিয়ে করতে পারলো সে। বাপ-মা কি পরিবার থেকে কোনো শিক্ষা দেয় নাই। শুনেছি তুমি ডিভোর্সি, বোঝাই যাচ্ছে কি শিক্ষা পেয়েছো পরিবার থেকে। ওই ভুলিয়ে ভালিয়ে ছেলে ধরা আর আরাম আয়েশ করে চলা। "


-- " ভাবি, আপনি ভুল জানেন আমি ডিভোর্সি নই আমার স্বামী মারা গিয়েছে। "


-- " আমার মুখের উপর কথা বলা! তওবা তওবা! বিধবা হয়ে আমার সহজসরল দেবরটার গলায় ঝুলে পরলে। লজ্জা করলো না বিধবা হয়ে একটা ফুলপাত্র কে বিয়ে করতে? "


-- " ভাবি,আপনার দেবরের বয়স তো অনেক, ওনার চেয়ে কমপক্ষে আমি দশ বছরের ছোট হবো। আর আমাদের ধর্মে কি বিধবা দের বিয়ে করা নিষিদ্ধ নাকি? এমন কোনো হাদিস তো আমার জানা নেই। আপনি জানলে বলুন শুনি।  "


-- " এই মেয়ে, তুমি আসলেই বেশি কথা বলো। বলে না চোরের মায়ের বড় গলা, সেটা তোমায় না দেখলে বিশ্বাস করতাম না । যত যাই হোক আমরা তোমায় এ পরিবারের সদস্য হিসেবে মানবো না। " (বড় ভাসুর)


-- " আমার ভিতর আপনার ভাইয়ের রক্ত বইছে, পৃথিবীতে নতুন অতিথি আসবে। "


ওনারা কিছু বলতে যাবেন, এমন সময় আমার শ্বশুর শাশুড়ি এসে আমাকে সেখান থেকে নিয়ে যায় এবং সবাইকে চুপ থাকতে বলেন। 


অনেক ঝড় উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত শ্বশুর বাড়িতে জায়গা হয় আমার। 


.


আমার স্বামী আজমল হোসেনের মাথায় সামান্য সমস্যা আছে, একটু পাগলামি করে তবে তা অতিরিক্ত রকমের বাড়াবাড়ি নয়।আচ্ছা এই সামান্য পাগলদের কি বিয়ে করার অধিকার নেই, আর তিনি তো পাগল নন একটু বেশি সহজ সরল। ভাবছেন সহজসরল হলে একলা আমায় কিভাবে বিয়ে করলো! বিয়েটা ওনার মামা দাঁড়িয়ে থেকে দিয়েছে আমাদের। আমিও অসহায় ছিলাম তিনিও অসহায়, দু'জনে যেনো একসাথে সুখে-দুঃখে চলতে পারি সে চিন্তা করেই মামা এ কাজ করেছেন। মামার বাড়ি আমাদের গ্রামে, আমার বাবা মায়ের মৃত্যুর পর ভাইয়ের সংসারে অনেক বড় বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে মামা আমাকে উদ্ধার করলে আরেক জগতে এসে পরি। বিয়ের পর ছয়মাস আমরা মামার বাড়িতে ছিলাম। 


সাত ভাই তারা বাকি ছয় ভাইয়ের ছয় রকম ব্যবসা আছে, একমাত্র তিনি কোনো উপার্জন করেন না এ সংসারে। তারজন্য সংসারের অনেক কাজ করতে হয় আমাকে। সবাই বড় ভাসুর ও ভাবির মতো না হলেও ওনাদের ভয়ে আমাদের সাপোর্ট দিতে পারে না।


তিনি সারাদিন বাড়ির বাইরে বসে ফুল গাছের পরিচর্যা করতেন, ওনার এই একমাত্র কাজ। গাছ প্রেমী নাওয়াখাওয়া নেই সময়ে অসময়ে গাছের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখে। বড় ভাবিদের অনেক অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে,দুইবেলা না খেয়ে, শেষ পর্যন্ত আমাদের ছেলে সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখলো। পরিবারের সকলে এসে দেখে গেলেও বড় দুই ভাবি ও ভাইয়ারা এলো না। 


এতে আমার দুঃখ নেই, ওর দাদা দাদী তো আশীর্বাদ করেছে ওঁকে এই অনেক। আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, মানুষটা গাছ প্রেমী থেকে ছেলে প্রেমী হয়ে গিয়েছে। সকাল আর বিকেলে গাছের যত্ন নিতো বাকি সময় ছেলের জন্য। আমাদের দু'জনের মধ্যে ভীষণ ভাব ছিলো, এজন্য অনেকে ওনাকে বউ পাগলও বলতো। আমার তা শুনতে খারাপ লাগতো না। বেশ সুখেই ছিলাম আমরা দুই বছর। 


.


আমি আবার বিধবা হলাম, ভেবেছিলাম আত্নহত্যা করবো কিন্তু আমাদের ছেলের জীবনের কথা চিন্তা করে বেঁচে থাকলাম। স্বামী হারানোর শোক হাজার বছরেও দূর হবে না জানি,তবুও কয়েকদিনের মাথায় আমার সাথে ভীষণ রকম অত্যাচার শুরু হলো। সবচেয়ে ছোট দেবর সাহায্য করতো কিন্তু তিনিও বিদেশে চলে গেলেন সপরিবারে। শ্বশুর শাশুড়িও মুখ ফিরিয়ে নিলেন, সত্যি তো আমরা বোঝা। জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হলো আমাদের। এতো বড় অট্টালিকায় একটা ঘর হলো না আমাদের মা ছেলের। 


শহরের দূরে বস্তির মতো একটা গ্রামে ঘর ভাড়া নিলাম, দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুবাদে গ্রামের কিছু বাচ্চাদের পড়ানোর সুযোগ পেলাম। কিন্তু তাতে আমাদের সংসার কুলচ্ছিলো না, পাশাপাশি সেলাই মেশিন কিনলাম একটা কিস্তিতে। বেশ ভালোই রোজগার হচ্ছিলো। মা-ছেলের চলে যাচ্ছিলো ভালোই। 


.

দেখতে দেখতে আমার ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিলো তারপর শুরু হলো আমার কঠিন অসুখ বুকের ব্যথা। তিলতিল করে জমানো টাকা গুলো শেষ হয়ে গেলো। পড়াশোনা ছেড়ে কাজ করা শুরু করলো মানিক আমার।


এরমধ্যে আমার শ্বশুর শাশুড়ি পৃথিবী ছেড়ে গেলে ছেলে সহ তাদের শেষ দেখা দেখতে গিয়েছিলাম। তখনও বড় ভাবি আমাকে ছাড় দেয়নি, ছেলের সামনেই যা-তা ব্যবহার করেছে। সেদিন খুব কেঁদেছিলাম, আর ছেলেকে বলেছিলাম সে যেনো জীবনে কঠিন বিপদে পড়লেও তার বংশের কারও কাছে সাহায্য না চায়,ও বাড়িতে না যায়। 

.

ভীষণ অসুস্থ আমি, ছেলেটা দিনরাত পরিশ্রম করে আমাকে বাঁচানোর জন্য। আফসোস ছেলের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারলাম না। আল্লাহ'র কাছে আমার একটাই চাওয়া, আমার ছেলেটা যেনো ভালো থাকে। 


❝❝❝❝

-----------

------


বিপ্লবের মায়ের ডাইরির পাতায় লেখা ছিলো কথাগুলো। এ বাড়িটা একসময় বিপ্লবের ছিলো এখন তা অতীত মাত্র। এই বাড়ি থেকে তার মা কে মানে এ বাড়ির পুত্রবধূকে অপমান করে বের করে দেওয়া হয়েছিলো।


আজ অনেকদিন পর দাদা বাড়ি দেখে, পুরোনো কথা গুলো মনে পরে গেলো তার। কিন্তু এ বাড়িতে কি কাজ করে অসমি, আমি তো তাকে এ বাড়িতে আসার জন্য নিষেধ করছিলাম। আমার মায়ের আদেশ আমি অমান্য করি নাই, কিন্তু অসমি এটা কি করলো। অসমি ভিক্ষা করলেও এতটা কষ্ট পেতাম না, যতটা পাচ্ছি এখন এই অপমানিত হওয়ার বাড়িতে তাকে দেখে। 

.

.

-- " বাড়ি চলো রহিমা চাচী। "


-- " ক্যান বাজান ধরবি না তোর বউকে? "


-- " চাচী ঘটনা কি পরে তোমারে বলবো আগে আমারে নিয়ে চলো বাড়িতে। "

'

'

'

-- " আমার নিষেধ থাকা স্বত্তেও ও বাড়িতে কাজ করতে গিয়েছিস তুই বউ? তুই আমার মানসম্মান সব শেষ করে দিলি এই বলে বিপ্লব রাগে গজগজ করতে থাকে। "


-- " চুপ করেন (মুখে আলতো করে হাত রেখে), আমার কাছে আপনার সুস্থতা, সুন্দর একটা জীবন আগে। তাই আমি উপায় না পেয়ে সেখানে গিয়েছি। আপনার জীবনের মূল্য অনেক বেশি আমার কাছে মানসম্মানের চাইতে। এতদিন আপনাকে জানাইনি কারণ, জানলে আর কাজে যাইতে দিতেন না আমায়। সেজন্য সব গোপন রেখে কাজ করছি। "


-- " কিন্তু, তোর কাজটা কি ছিলো? "


-- " শুনবেন কি কাজ, তাহলে শুনুন -- 


ও বাড়ির বড় চাচা চাচী বিছানায় পরে আছেন, ভীষণ অসুস্থ। ওনাদের ছেলেমেয়ে দেশের বাইরে ঠিকমতো খোঁজ খবর নেয় না, বিছানায় পরে কাঁদেন ওনারা। কাজের লোকের ব্যবহার দিনদিন জঘন্য হতে থাকে, ভাইয়েরাও খোঁজ খরব নেওয়া বন্ধ করে দেয়।সেসময় আমি উপস্থিত হই সেখানে একটা কাজের জন্য। খুব সহজে তাদের দেখাশোনার কাজটা আমি নিয়ে নেই । তাদের বিছানা, শরীর, ময়লা কাপড়, পায়খানা, প্রসাব সবকিছু আমি নিজ হাতে পরিস্কার করি।এজন্য বাড়িতে আসার পর গোসল ও মাঝে মধ্যে বমি করতাম। ও বাড়িতে গোসল করলে আপনি সন্দেহ করতেন, তাই বাড়িতে এসেও গোসল করে সন্দেহের হাত থেকে রেহাই পাইনি। 


আমার কাজ শুধু ওনাদের পরিস্কার রাখা। আপনার সবচেয়ে ছোট চাচা বিদেশে থাকেন, ওনার সাথে কথা হয় সবশুনে এই কাজের বিনিময়ে তিনি আপনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন সেইসাথে সবরকম সমস্যার জন্য টাকা দেন।বড় চাচাচাচী বিছানা ছেড়ে উঠতে না পারলেও আমাকে ভীষণ আদর করে নিজের মেয়ের মতো, ওনারা অনেক অসহায়। অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। "


.


.

আট মাস পর, 

পায়ে হেঁটে বিপ্লব বড় চাচা চাচীর সাথে দেখা করতে যায়।(পুরোপুরি সুস্থ সে এখন শারীরিক ভাবে)।


ভাতিজাকে দেখে চাচা কেঁদে ফেলে, অতীতের জন্য ক্ষমা চায়। তার অধিকার বুঝিয়ে নিতে বলে, এ বাড়িতে তারা শুধু দু'জন। বিপ্লব ও তার বউকে থাকতে বলে। সেই সাথে বলে বিপ্লব কতটা ভাগ্যবান এমন স্ত্রী পেয়ে, সত্যি এমন ত্যাগ হয়তো খুব কম মানুষ করবে যা অসমি করেছে তার স্বামীর জন্য। অসমি দিনের পর দিন যে কষ্ট করে স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে কয়জনে তা করতে পারবে? 


কিন্তু বিপ্লব রাজি হয়না, 

তার মায়ের মুখটা ভেসে উঠে বারবার। স্ত্রী কে স্বামীর ঘরছাড়া করা কম কষ্টের ও অপমানের নয়। এ বাড়িতে থাকলে তার মা কষ্ট পাবে, তারও ঘুম হবে না। সে এখন যথেষ্ট স্বাবলম্বী, ছোট চাচার সাহায্যে একটা ছোট ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে। বস্তি ছেড়ে শহরে ছোট একটা বাসা ভাড়া নিয়েছে।


সে উল্টো প্রস্তাব দেয় তার ছোট বাসায় ওনাদের যাওয়ার জন্য, অসমিও সহমত স্বামীর সাথে। বড় চাচা চাচী খুশি হয়ে তাদের প্রস্তাবেই রাজি হয়। 


(সমাপ্ত)


এমন আরও অনেক গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post