রোমান্টিক স্ট্যাটাস | হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

 বিয়ের আগে প্রেম চলাকালীন সময়  আমার স্ত্রীকে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ' তোমার সবথেকে পছন্দের খাবার কোনটা?'


সে অকপটে জবাব দিয়েছিলো, -'ভর্তা। ভর্তার মত সুস্বাদু খাবার দ্বিতীয় কোনকিছু নাই। মাছ,মাংস সহ দুনিয়ার সকল দামি খাবার একদিকে আর হরেক রকমের ভর্তা দিয়ে ভরতি প্লেট আরেকদিকে থাকলে আমি অনায়াসে ভর্তার প্লেট টার দিকেই হাত বাড়াবো।'


নতুন নতুন প্রেমের ইতি টানার ভয়ে সেদিন প্রেমিকার মন রাখতে তার প্রিয় খাবারের প্রসংশা করেছিলাম। কিন্তু কে জানতো সেদিনের সেই প্রসংশা বিয়ের পর আমার জীবনটাকে ভর্তাময় বানিয়ে দিবে!


বিয়ের কয়েকসপ্তাহ গ্রামের বাড়ি থাকলেও চাকরির সুবাদে কয়েকদিন পর বউকে নিয়ে শহরে চলে আসি আমি। নতুন নতুন বিয়ে বলে কথা,কেউ কাউকে ছেড়ে একটা মূহুর্ত থাকা মানে একেকবছরের সমান। 


কিন্তু বউকে শহরে এনেই বিপত্তিটা ঘটলো। কথায় আছে না,সুখে থাকতে ভূতে কিলাই। আমাকেও কিলাইলো। তাই তো কথায় কথায় একদিন রাতে খাবার খাওয়ার সময় বউয়ের কথায় সায় দিয়েছিলাম।


আমি আবার ছোট থেকেই আমিষ খাবারটার উপর একটু বেশিই দূর্বল। আমিষ নামটা শুনলেই যেন ভরা পেটটাও ফুটো হওয়া বেলুনের মত চুপসে যায়। নতুন করে খাবার খাওয়ার জন্য। নতুন বউয়ের হাতের রান্না কারই না খেতে ভাল্লাগে বলেন তো? আমিও নতুন বউয়ের হাতে স্বাদের সব রেসিপি খাওয়ার জন্য হরের রকমের মাছ,মাংস আনতাম। ফ্রিজের এক তৃতীয়াংশ থাকতো আমিষ দিয়ে ভরতি।


বউ আমার মন রাখতে একের পর এক নতুন স্বাদের রেসিপি রান্না করলেও দেখতাম, সে প্লেটে ভাত নিয়ে শুধু নাড়ানাড়ি করে। মাংস বা মাছ তুলে দিতে গেলেই খাবারে অনিহা দেখায় সে।

ভাবলাম, বাবা-মা, নিজ গ্রাম ছেড়ে এতদূর আসাতে হয়তো মন খারাপ।


কিন্তু না। একদিন,দুইদিন, একসপ্তাহ,দুই সপ্তাহ। তারপরও সে যেই লাউ সেই কদু। সবসময় হাসিখুশি থাকলেও খাবার খেতে বসলেই এক ব্যারাম। প্লেটে ভাত নিয়ে আঁকিবুঁকি। 


'খাচ্ছো না কেন বললে, দু এক লোকমা মুখে তুলে আবার সেই যা তাই।


কি এক্টা মসিবত বলেন তো। শশুর-শ্বাশুড়ী যদি দেখে তাদের গুলুমুলু মেয়েটাকে আমি শহরে এনে শুটকি মাছের মত বানিয়ে ফেলেছি তাহলে আমার মানসম্মানটা তখন কোথায় গিয়ে দাড়াবে? তারা তো বলবে, আমি কিপ্টামি করে তাদের মেয়েকে খাওয়াই না। কিন্তু তারা তো এটা জানবে না,তাদের মেয়ের জন্য আমি ফ্রিজ ভরতি মাছ,মাংস আনিয়ে রেখেছি।


একদিন খেতে বসে বলেই ফেললাম, -'তোমার সমস্যা কি বল তো? তোমার রান্না যে একবারে মুখে তোলার মত না, তাও তো নয়। রান্নার প্রতিযোগিতায় নাম লিখাইলে নির্ঘাত প্রথম হবে। আর প্রথম না হলেও দ্বিতীয় হওয়া কেউ আটকাতে পারবেনা। তাহলে খাচ্ছো না কেন? এইভাবে না খেয়ে খেয়ে কি শুটকি হয়ে তোমার বাবা-মায়ের কাছে আমাকে কিপ্টা প্রমাণ করতে চাইছো তুমি?'


বেচারি আমার ধমক খেয়ে কেন্দে দিলো। কি একটা ঝামেলা। নরম হয়ে বললাম, -' কান্না কইরো না।  কি হয়েছে আমাকে বলো। কিছু না বললে বুঝবো কীভাবে আমি। বাবা-মায়ের জন্য মন খারাপ করলে বলো,কিছুদিন রেখে আসি।'


না সে তাতেও রাজি না। আমাকে ছেড়ে একটা রাতও থাকবে না সে। 


বললাম, -' তাহলে কি হয়েছে বলো আমাকে। প্লীজ এমন কইরো না লক্ষ্মীটি।'


বউ এবার মুখ খুললো। বললো, -' আমার মাছ,মাংস ভাল্লাগেনা।'


ওমা এ মেয়ে বলে কি। সবাই মাছ,মাংস দেখলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আর এনার নাকি ভাল্লাগেনা।


বললাম, -'তা কী ভাল্লাগে তোমার?'


-'ভর্তা! আমার ভর্তা ভাল্লাগে।'


-'এই কথা। তা বললেই হয়। আমি এত টাকা খরচ করে মাছ,মাংস কিনতে পারলে তোমার জন্য ভর্তা কিনতে পারবো না? ভর্তাতে আর কি এমন খরচা পড়বে। অবশ্যই পারবো। ভর্তার জন্য কী কী লাগবে তোমার, কালকে একটা লিস্ট বানিয়ে দিবে। আমি সব কিনে আনবো।'


বউ কান্না থামিয়ে হাসি হাসি মুখে বল়লো, -' আচ্ছা ঠিক আছে।'


আমাকে একা রেখে সারারাত তার ভর্তা বানানোর লিস্ট তৈরী করলো।


সকালে অফিস যাওয়ার সময় লিস্ট দেখে চোখে সরষের ক্ষেত দেখলাম আমি। এইটা লিস্ট নাকি চেয়ারম্যান বাড়িতে ফ্রিতে চাউল নেওয়ার লাইন!


বউয়ের আবদার বলে কথা, পকেট আমার গড়ের মাঠে যাক। বউয়ের প্রথম আবদারে কোনো খামতি রাখা যাবেন। 

সকাল করে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে লিস্ট ধরে ধরে সবগুলো কিনে বাসায় আসতে রাত নয়টা বাজলো।

শরীর একবারে ক্লান্ত।


বউ তার আবদার পু্রন হওয়া দেখে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। স্বামী হিসাবে আমার আর কি লাগে? এটাই তো আমার বড় পাওয়া!


বললো, -' বিয়ের আগে তো তুমি বলেছিলে আমার হাতে বানানো সব রকমের ভর্তা টেস্ট করে দেখবা। তাই ভাবছি আগামী কয়েকটা দিন তোমাকে প্রতিবার খাবারের সময় একের রকম আইটেমের ভর্তা বানিয়ে খাওয়াব।'


-' বলেছিলাম? আচ্ছা খাওয়াইয়ো।'


সারাদিন ঘুরেঘুরে বউয়ের লিস্ট কমপ্লিট করতে গিয়ে ক্ষুধায় কাতর আমি। জলদি করে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে দেখলাম, তিন চার পদের ভর্তা দিয়ে সুন্দর করে ভাতের চারপাশে সাজিয়ে রেখেছে বউ।


ক্ষুধার চোটে বাছবিচার না করে ভর্তা দিয়েই এক প্লেট ভাত গোগ্রাসে পেটে চালিয়ে দিলাম।

বউ তা দেখে মহাখুশি হয়ে বললো, -' তুমি না বলতে তোমার ভর্তা খেতে একদম ভাল্লাগেনা? এখন তো ঠিকি চেটেপুটে খেলে। আগামীকাল থেকে তাহলে মাছ,মাংস বাদ দিয়ে রোজ চার,পাঁচ পদের ভর্তা বানিয়ে খাওয়াবো তোমাকে।'


আমি বিরস মুখে বললাম, -' দিবা। আচ্ছা দিও।'


পরের দিন সকালে নাস্তার সময় দেখলাম, গরম গরম পরোটার সাথে বউ আমার, ধনেপাতা ভর্তা,সিম ভর্তা, ডিম ভর্তা বানিয়েছে। বউ এত কষ্ট করে বানিয়েছে,না খেলে আবার কি না কি মনে করে। তাই কষ্ট করে খেয়ে নিলাম।

দুপুরে অফিসে গিয়ে লাঞ্চ বক্স খুলে দেখলাম, চাপা শুটকি ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, ঢেড়স ভর্তা আরেকটা কি যেন ভর্তা বানিয়ে দিয়েছে।


মুখটা কাচুমাচু করে কোনরকম খেয়ে নিলাম। রাতে বাসায় এসে দেখি আমার প্রিয় মাছগুলো পরিবর্তে প্লেটে ছোট ছোট বলের মত করে হরের পদের ভর্তা সাজানো।

বউ এক এক করে নাম বলতে লাগলো, -'সিম ভর্তা,লাউপাতা ভর্তা, ইলিশ মাছের কানশা ভর্তা, পটলের চিলকা ভর্তা,ফেউয়া মাছের শুটকি  ভর্তা, বরবটি ভর্তা,টমেটো ভর্তা... 


আমি কানদুটো চেপে ধরে বললাম, ঢের হয়েছে। একদিনে এতগুলো ভর্তা খেয়ে কি আমার পেট সহ্য করতে পারবে? সামনের দিনগুলোর জন্যও কিছু আইটেম বাঁচিয়ে রাখো। '


বউ আবার হাত গুনে বললে লাগলো, -'আগামীকাল সকালে ওমুক ভর্তা,দুপুরে তমুক ভর্তা,রাতে হমুক ভর্তা খাওয়াবো তোমাকে।'


আমি পেটে হাত দিয়ে বললাম, -' সামনের দিনগুলোতে তোকে বহু নতুন খাবারের সম্মুখীন হতে হবে রে। একটু কষ্ট করে সহ্য করে নিস ভাই।


-ভর্তা প্রেমী বউ

-আশিক_মাহমুদ


স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post