ভাই বোনের ভালোবাসা | ভাই বোনের স্ট্যাটাস

ভাই বোনের মধুর সম্পর্ক

ভাই বোনের মধুর সম্পর্ক

সন্ধ্যার পর বাসায় এসে দেখি আমার রুমের দরজার সামনে খুব বড় বড় অক্ষরে লেখা গোয়ালঘর। লেখাটা দেখেই বুঝতে পেরেছি ছোট বোন হোস্টেল থেকে বাসায় এসেছে।


  আমি তখন চিৎকার করে মাকে ডাকতে লাগলাম। আমার চিৎকার করা দেখে ছোট বোন এসে বললো,

  --কি রে এইভাবে গরুর মত হা/ম্বা হা/ম্বা করছিস কেন? 


ছোট বোনের কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। রেগে গিয়ে বললাম,

  ~গরুর মত হা/ম্বা হা/ম্বা করছি মানে? আমাকে কি তোর গরু মনে হয়? আর আমার রুমের দরজার সামনে গোয়ালঘর লিখেছিস কেন? 

 

  আমার কথা শুনে ছোট বোন বললো,

-- কেন রে, তুই কি আজকাল নিজেকে মানুষ মনে করিস না কি? তুই গরু আগেও ছিলি এখনো আছিস আর ভবিষ্যৎতেও থাকবি। আর দরজার সামনে গোয়ালঘর লিখে রেখেছি তার কারণ হলো বাসায় কোন আত্মীয় স্বজন এসে যেনো ভুল করেও তোর রুমে না যায়। তোর রুমে যদি কেউ যায় তাহলে তোর রুম দেখে প্রথমে ওর মাথা ঘুরবে তারপর তোর ঘামে ভেজা কাপড়ের গন্ধে সাথে সাথেই অজ্ঞান হবে। তাই আগে থেকেই লিখে রেখেছি। 


  ছোট বোনের কথা শুনে আমি আর ওকে কিছু বললাম না। আমি জানি ও এখনি এই গোয়াল ঘরটাকে গুছিয়ে মানুষের ঘরে রূপান্তরিত করবে৷ তাই আমি চুপচাপ ওয়াসরুমে চলে গেলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমায় শেষ মেষ গরু বললো।ও কে একটা শিক্ষা দিতে হবে।


ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে মায়াকে( আমার ছোট বোন) বললাম, 

  ~কি রে, ওয়াসরুমে একটা চেইন পরে থাকতে দেখলাম। দেখে তো স্বর্ণের মনে হলো। 


আমার কথা শুনে ছোট বোন যখন ওয়াশরুমে ঢুকলো আমি তখন সাথে সাথে বাহির থেকে লক করে দিলাম। এখন ভিতরে বুঝবে মজা। আমি কমোড ফ্ল্যাশ না করেই এসেছি। আমায় গরু বলে ডাকা তাই গরুর মতই একটা কাজ করেছি। 


  ৫মিনিট পর যখন দরজা খুলে দেয় তখন ও বের হয়ে আমায় কয়েকটা কিল ঘুষি মেরে বললো, 

  --তুই শুধু গরু না তুই একটা খবিশ ছিঃ ছিঃ ছিঃ


  ছোটবোন আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য খুব আয়োজন করে হালিম রান্না করলো কিন্তু আমি এত রিকোয়েস্ট করার পরেও আমায় একটুও দিলো না। সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম ও তখন আমার পাশে এসে বসলো আর গরম হালিম ফুঁ দিয়ে দিয়ে খেতে লাগলো। আমি তখন ছোট বোনকে আস্তে করে বললাম,

   ~ আজ ওয়াসরুমে যে জিনিসটা রেখে এসেছিলাম সেই জিনিসটার রঙ আর হালিমটার রঙ এক না রে?


আমার কথা শুনে ছোটবোন হালিম রেখে ওয়াক ওয়াক করে ওয়াসরুমের দিকে চলে গেলো আর আমি সোফায় পায়ের উপর পা তুলে হালিম খেতে লাগলাম....

|

|


  রাত ১১ টা বাজে। আমি শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছি এমন সময় কি যেন একটা শব্দ হলো। আমি রুম থেকে বের হয়ে দেখি ড্রয়িংরুমে মায়া( ছোট বোন) অ/জ্ঞা/ন হয়ে পড়ে আছে। আমি দৌড়ে ওর কাজে আসলাম। চোখে মুখে পানি ছিটাতে লাগলাম কিন্তু ওর জ্ঞা/ন আসার নাম নেই। তাই তাড়াতাড়ি ওকে কোলে করে নিচে নামলাম হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। যখন গেইটের কাছে আসলাম তখন ও আমায় বললো, 

  -- অনেক হয়ছে এইবার আমাকে কোল থেকে নামা? 

আমি ওর কথা শুনে চমকে গেলাম । 

ও তখন মিটমিট করে হেসে বললো,

  -- আমার এত কষ্ট করে রান্না করা হালিম তুই একা খেলি সেটা হজম করাতে হবে না? তাই তো এমন করেছি যেন তুই আমাকে কোলে করে ৫ তলা থেকে নিচ তলায় নিয়ে আসিস।


  আমাদের ভাই বোনের এমন কা/ন্ড দেখে মা আমার গালে এক থাপ্পড় দিলো আর ছোট বোনের গালে এক থাপ্পড় দিলো।

থাপ্পড় খেয়ে আমি বোনের দিকে তাকিয়ে হাসি আর বোন আমার দিকে তাকিয়ে হাসে....


  ছোটবোনকে টিকেট কেটে বাসে তুলে দেই। আর বারবার বলে দেই বাসে যেন না ঘুমায় আর হোস্টেলে পৌঁছে যেন আমায় ফোন দেয়। বাস ছেড়ে দেবার সময় ছোটবোন আমার হাতে রঙিন কাগজে মুড়া একটা প্যাকেট দেয়। বাসায় এসে কাগজটা খুলে দেখি একটা সিগারেটের প্যাকেট। প্রতিটা সিগারেটের গায়ে কলম দিয়ে লেখা মায়া। আর সাথে একটা চিরকুট আর তাতে লেখা ছিলো,

 

  ভাইয়া, তকে আমি প্রচন্ড রকম ভালোবাসি। আমি চাই তুই অনেক অনেক বছর বেচে থাক। আজ থেকে এই সিগারেটটা হলাম আমি। এখন তুই সিদ্ধান্ত নে, আমায় তুই আ/গু/নে পুড়িয়ে ছাই করে উড়িয়ে দিবি না কি সযত্নে রেখে দিবি...


বোনের চিরকুটটা পড়ে মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো কিন্তু ঠোঁটের কোণে হাসিটা রয়ে গেলো। এই হাসিটার অর্থ হলো আমি আমার বোনকে আমার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি.....


বোন.

আবুল_বাশার_পিয়াস 


এমন আরও ভাই বোন এর গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post