ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প | ভূতের গল্প | ভূতের কাহিনী

 রহস্যময় গল্প

রহস্যময় গল্প

হকার । তিনি গত ২৫ বছর ধরে হকারি পেশার সাথে নিযুক্ত । তিনি ভোর হবার আগেই অনেক দূরের গ্রাম থেকে রেল স্টেশন এর উদ্দেশ্যে রউনা হোন । সারা দিন ট্রেন থেকে ট্রেনে হকারি করেন । বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায়ই রাত হয়ে যায় ।

প্রিয় পাঠক, সালাম মিয়ার মুখে বলা ঘটনাটি হুবুহু আপনাদের সামনে তুলে ধরছি…

আমি সালাম মিয়া । বয়স ৪৯/৫০ । আমি রোজ গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে ট্রেনে হকারি করতে যাই । আমি ট্রেনে করে পান সিগারেট বিক্রয় করি । আমার গ্রাম থেকে ইস্টিশনে যাবার পথে একটা বড় কবরস্থান পাশ দিয়ে পার হয়ে যেতে হয় ।

ঘটনাটি সেই কবরস্থান নিয়ে…

ট্রেনে সব কিছু বিক্র‍য় করার পরে, বাড়ি ফিরতেছিলাম। সেদিন ট্রেন ডিলে থাকার কারণে বেশ খানিকটা দেরি হয়ে যায়। স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময়ই দেখলাম রাত ১.৩০ টা বাজে। এমন দেরি এর আগে হয় নি। তাও সিগারেট জ্বালিয়ে হাটা শুরু করলাম।

আমি হেটে যাচ্ছিলাম। প্রায় ৩০ মিনিট পর সেই কবরস্থানের কাছে চলে আসলাম। এখান থেকে আমার বাড়ি আর ২০ মিনিটের রাস্তা। কবরস্থানটি দেখার পর কেন জানি বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো, আগানোর ইচ্ছা ছিল না। এখান থেকে ঘুরে যাওয়া যাবে কিন্তু সেখান দিয়ে যেতে হলে আরো ঘন্টাখানেক লাগবে। অযথা ঝামেলার কথা ভেবে বাদ দিলাম। শুনেছিলাম আগুন দেখলে নাকি ভূত কাছে আসে না। তাই সিগারেটটাতে টান না দিয়ে জ্বালিয়ে রাখলাম।

২০-২৫ কদম আগানোর পর কবরস্থানটির একদম কাছে এসে পড়লাম। এখানকার কাহিনী জানার পর কোন ওয়াচম্যান আর থাকে না। কেউ সাহস করে থাকলেও, বেশিদিন টিকে না। শুনা যায় শয়তানের বাস এই কবরস্থানে।

আমি মনে হালকা সাহস নিয়ে আগাতে থাকলাম। ১০ মিনিট হাটার পরেও মনে হলো আমি সেখানটাতেই আছি। এক ইঞ্চিও এগোতে পারি নি। কিন্তু আমি তো সেই কখন থেকেই হাটছি।

হঠাৎ করে চাপা কান্নার শব্দ পেলাম। পিছু ফিরে দেখি এক বাচ্চা। বয়স দুই থেকে আড়াই বছর। বলের মতো কিছু একটা নিয়ে খেলা করছে। ভাবলাম এতো রাতে এই বাচ্চা এখানে কেন?

হয়তো কেউ ফেলে রেখে গেছে। কাছে গেলাম গুটিগুটি পায়ে। কাছে গিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন ভাবেই উঠাতে পারলাম না। এইটুকু বাচ্চার শরীরে এতো শক্তি? যেই বাচ্চাটার বলে হাত দিলাম, আমার দিকে হঠাৎ করে তাকালো। আমি সত্যি ভাবি নি এমনটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে । বাচ্চাটার চোখ নেই। পুরোটা কালো। আর যেন কালো রক্ত বেয়ে বেয়ে পড়ছে। আর মুখ দিয়ে বলছে,”বড় ভুল করেছিস সালাম, তোর এদিক দিয়ে আসা ঠিক হয় নি।”


 হঠাৎ করেই দেখি বাচ্চাটা উধাও। বলের জায়গায় যেন অন্যকিছু। একটু নিচু হয়ে দেখি, একটা মাথা। কেটে ফেলা মাথা। ভালো করে খেয়াল করে দেখি, সেটি আর কারো নয় আমারই মাথা। পুরো শরীর দিয়ে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। আমি নড়তে পারছি না।

আবারো সেই শব্দ, সেই কথা। “ভুল করেছিস, সালাম” এবার ফিরে তাকিয়ে দেখি একটা কুকুর। একদম কালো কুচকুচে। চোখটাও কালো। যেন অন্ধকারে ভাসছে সে। কিন্তু অবাক করার কান্ড সে দুই পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে। ঠিক মানুষের মতো। আর এক হাত দিয়ে একটি মাথা ধরে আছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখি আবারো আমার মাথা। এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম।

চোখ যখন খুলে তখন নিজেকে কবরস্থানের ঠিক কিছু সামনে একটি মসজিদ ছিল, সেখানে পাই। সেখানকার হুজুর সাব আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছিল। তাকে সব ঘটনা বলার পর এসবের কারণ জানতে চাইলে বলেন,”বাবা, কিছুদিন আগে একটি বিত্তশালী পরিবারের ২-৩ বছরের বাচ্চাকে কয়েকজন তুলে আনে। তারা ঠিক মতো টাকা না পাওয়ায়, বাচ্চাটির চোখ তুলে নিয়ে মাথা কেটে ফেলে। চোখ আর মাথা কুকুরকে দিয়ে দেয় খাওয়ার জন্য আর বাকি দেহটুকু এখানেই কবর দেয়। হয়তো জানাজা নামাজের অভাবে বাচ্চাটির আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা শত চেষ্টা করেও তার আত্মার শান্তি আনতে পারছি না।

হয়তো প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে। তিনি আরো বললেন,”বাবা আর কিচ্ছুক্ষণ পরে আজানের সময় হলে হয়তো তোমাকে আর পাওয়া যেতো না।”


আমার এখনো মনে আছে, আমি ২ সপ্তাহ জ্বরে ভুগেছিলাম। বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। এখনো স্বপ্নে সেই শব্দ আমার কানে বেজে উঠে,”ভুল করেছিস সালাম। 


বড় ভুল।

------সমাপ্ত-----


সব ধরনের গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post