কষ্টের ভালোবাসার গল্প | কষ্টের স্ট্যাটাস | চাপা কষ্টের স্ট্যাটাস

 অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস

অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস

কাপর পরতে পরতে রুপা বললো স্যার আমার কাজটা হয়ে জাবে তো এবার তাই না?  আমিতো এবার টাকাটা পেয়ে যাব স্যার তাই না? আমার স্বামীকে এবার সারিয়ে তুলতে পারবোতো স্যার?


 আমি আবারো কুনজরে রুপার বুকের দিকে তাকালাম। আমার খারাপ নজরে তাকানো দেখে রুপা তার জামাটা এবার পরে নিল। 

আমি মুচকি হেসে বল্লাম 


-- হা টাকা তো তুমি পাবেই। তোমার স্বামী আমাদের জন্য পুলিশের গুলি খেয়ে এখনো হসপিটালে আছে। আর তোমার কাজটা আমি করবো না তাই কি কখনো হয়।


-- স্যার তাহলে আমি কবে টাকা টা পাবো? 


আমি আবারো তার শরীরের দিকে তাকিয়ে বললাম। 


-- পাবেতো,,,,, তবে তার জন্য যে তোমাকে আবার আমার সাথে দুই একবার দেখা করতে হবে গো রুপা। 


রুপা এবার আমার চোখের দিকে তাকালো। রুপার চোখে আমি আমার প্রতি সম্পন্ন ঘৃণার ছাপ দেখতে পেলাম। রুপা এবার কোনো কথা না বলে সোফার ওপর থেকে তার ওড়না টা নিয়ে গায়ে জরিয়ে চলে যেতে লাগলো। আমি রুপাকে বল্লাম দাঁড়াও আমি আগে দেখে আসি বাহিরে কেই আছে নাকি। রুপা দাঁড়িয়ে গেলো। আর আমি একনজর বাহিরে চোখ বুলিয়ে আসলাম নাহ কেউ নেনলই। 

এবার রুপাকে চলে যেতে বল্লাম ও যেতে লাগলো। আবারো রুপার দিকে তাকিয়ে দেখি ও পাজামা টা উল্টো করে পরেছে। তাই আবারো রুপাকে দার করালাম। বললাম। 


-- রুপা তুমি তোমার পাজামাটা উল্টো করে পরেছো ওটা ঠিক করে পরে তারপর বের হও। 


কিন্তু রুপা তা ঠিক করলো না। আমার দিকে একবার তাকিয়ে সে বেরিয়ে গেলো। আমি রুপার চোখে যেনো দেখতে পেলাম একজন অসহায় নারীকে। তার চোখে দেখতে পেলাম আমার প্রতি ঘৃণা। তার চোখে দেখতে পেলাম প্রতিশোধ এর আগুন। 

রুপা বেরিয়ে যাবার পর আমি বেলকনিতে গেলাম। দেখার জন্য যে রুপা কি কাউকে কিছু বলে দেয় কি নাকি তাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে। কিন্তু নাহ ও সোজা চোলে গেলো,,,, এক সময় সে আমার চোখের আরাল হয়ে গেলো। 


মেয়েটার নাম রুপা তার স্বামী একটা কাজের জন্য পুলিশের গুলি খেয়ে এখন হসপিটালে।। রুপার স্বামী আমার সাথেই কাজ করতো। তবে সে আমার থেকেও নিচু পদের। 

রুপা আমার কাছে সাহায্য চাইতে আসে যাতে তার স্বামীর ভালো ভাবে চিকিৎসা হয়। আর আমার চোখ পরে রুপার শরীরে গঠনের ওপর। তারপর তাকে আমি আমার সাথে কিছুক্ষণ সময় খাটানোর প্রস্তাব দেই। প্রথমে রাজি ছিলো না পরে অভাবের তাড়নায় ঠিকই রাজি হয়ে গেলো। আর তারপর ওপরের ঘঠনা। 


বসে বসে টিভি দেখছি,,,,, হঠাৎ কলিং বেল টা বেজে উঠল। গিয়ে দরজা টা খুলে দিলাম। আর কেউ নয় আমার বউ নিশি এসেছে। 

মেয়ে টাকে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে। হাতে অনেক শপিং ব্যাগ। ডুকেই আমাকে জরিয়ে ধরলো। আমি বললাম,,,,,


আমি-- কি বেপার আজ আমার জান টাকে এত খুশি খুশি লাগছে,,,,,,, বেপার টা কি হুম☺


নিশি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ গুলো সোফাতে রেখে বললো। 


নিশি-- হু হু গ্রেস কর কি হতে পারে। আজ আমি অনেক খুশি।☺ 


-- তা তো আমার বউ টার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি আমার বউটা খুব খুশি। কিন্তু সোনা তুমি যদি না বল তাহলে বুঝবো কি করে। 


-- জান আমার প্রমোশন হয়েছে অফিসে ( কিছুটা এক্সাইটেড হয়ে) 

আমিও ওনেক খুশি হলাম আর বললাম।


-- ওয়াও জান তাই তাহলে তো ভালোই হলো। 


নিশি পাই চারি করতে করতে  বলতে শুরু করলো। 


-- হুম সোনা জানো,,,,,, আমি তো অনেক খুশি হয়েছি। নুসরাতও হিংসা শুরু করে দিয়েছে আমার সাথে যখন শুনলো আমার প্রমোশন হয়েছে। রফিক স্যার তো আমার কেবিনে এসে আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে গেলেন,,,,,,,,,,,, নিশি সমানে বলেই চলেছে তার কথা গুলো আর আমি মুচকি হেসে হেসে তার কথা গুলো শুনছি। 


হঠাৎ চোখ পরলো নিশির পড়নের পাজামার দিকে। নিশির পাজামার দিকে তাকিয়ে আমার হাসি মাখা মুখ নিমিষেই যেনো মলিন হয়ে গেলো। কারন 


নিশির পাজামাটা উলটো ,,,,,, নিশি উলটো করে পাজামাটা পরে আছে। তখনি আমার মনে পরে গেলো রুপার কথা। সকালে রুপাকে যখন আমি,,,,,, তবে কি নিশিও তাহলে। না না এহতে পারে না। নিশি আমার সাথে এত বড় বেইমানি করতে পারে না। 

নিশি কথা বলেই যাচ্ছে আর আমি ঘামছি। আমার ঘামা দেখে নিশি বললো। 


নিশি-- কি হলো তুমি,,,,,,,,,,


গল্প পাপ__

পর্ব_১


পাপ__

পর্ব ২শেষ 

.

আমার বউ নিশি পাজামা টা উলটো করে পরে আছে। ওর অফিসে যাবার আগে সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু যখন বাড়িতে আসলো তখন তার সব কিছু উলটো। আমি যেনো কিছুই ভাবতে পারছি না। তবে কি আমি সকালে রুপার সাথে যা জোর করে এসেছি তা নিশি সেচ্ছায় করে আসলো। কারন নিশি কে এমন খুশি হওয়া এর আগে কখনো আমি দেখি নাই। আমার বুকের ভেতর যেন এক অদ্ভুত কম্পন শুরু হয়ে গেলো। আর আমি এই এসি রুমের মধ্যেও ঘামতে শুরু করলাম। আমার এমন ঘামতে থাকা দেখে নিশি বললো,,,,,,,,


নিশি-- কি হলো তুমি ঘামছো কেনো এত। অসুখ বিসুখ বাধালে নাকি। ( বলেই আমার কপালে হাত দিলো) 

আমার জবান যেনো বন্ধ হয়ে গেছে কি বলবো কিছুই ভাবতে পারতেছি না। আমার স্তব্ধ হয়ে যাওয়া দেখে নিশি আবারও বললো,,


নিশি-- কি হলো তুমি কথা বলছো না কেনো? কিছুক্ষণ আগোও তো হাসিখুশি ছিলে,,,,, কি এমন হলো যে নিমিষেই মুখটা মলিন হয়ে গেলো তোমার?(বলেই আবার আমার কপালে হাত দিলো। আমি নিশির হাত টা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললাম) 


আমি-- কিছু হয় নাই আমার। 


বলেই শোবার রুমে চলে আসলাম। কিছুই মাথায় আসছে না কি করবো আমি। নিশির সাথে আমার প্রেম করে বিয়ে হয়েছে। মেয়েটা আমাকে ছাড়া যেনো কিছুই বোঝেনা। তাহলে কেনো আমার সাথে এমন করলো?  নাকি আমি রুপার সাথে যা জোর করে করেছি তা নিশির সাথেও করা হয়েছে। আমি রুপার সাথে যা করেছি তা তো পাপ, আমি পাপী 

নাহ এটা আমার পাপের ফল। আমি পাপ করেছি। আমি পাপী,,,,, আর এটা আমার পাপ এর ফল। 

হে আল্লাহ তুমি বলে দাও আমি এখন কি করবো। আমি বুঝতে পেরেছি পাপ করলে সে পাপের ফল তাকে ভোগ করতেই হয়। 


রাত ১২টা চোখে ঘুম নেই এখনো কিছু খাওয়াই হয় নাই। নিশি অবশ্য খাবার জন্য অনেক বার ডেকে গেছে কিন্তু আমি খাইতে যাই নাই। নিশি আমার পাসেই শুয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখতে একদম নিস্পাপ বাচ্চার মতো লাগছে। নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি সে খেয়ালই নেই। 


ঘুম ভাঙলো ফজরের আজান এর শব্দ শুনে। এর আগে কখনো ফজর এর সময় উঠি নাই। এর আগে নিশি ফজরের নামাজ পড়ার জন্য প্রায় দিন ডেকেছে কিন্তু আমি তখন ঘুমের দেশে ব্যস্ত ছিলাম। আজ কেনো জানি না ঘুম ভেঙে গেলো। হে আল্লাহ আমি জানি আমি যে পাপ করেছি তার কোনো ক্ষমা নেই। তবু আজ কেনো জানি তোমার সেজদায় পরে কাঁদতে মন চাচ্ছে।  


ওজু করে এসে বাড়িতে সুন্নাত নামাজ পরে ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে চলে গেলাম। নামাজ পরে এসে দেখি নিশি কুরআন পরছে। আমার এখন বিশ্বাসই হচ্ছে না নিশি এমন টা করতে পারে। তবে কি আমার ভাবনা টা ভুল? 


**দুপুর ১২ টা**

বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম,,,, উদ্দেশ্য রুপার বাড়ি। আমি পাপ করেছি আমার এই পাপের ক্ষমা আছে কি না আমি জানি না। কিন্তু আমার রুপার কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে। নইলে যে আমি ম র লেও শান্তি পাবো না। ভাবতে ভাবতে রুপার বাড়ির সামনে চলে আসলাম। কলিং বেল দিতেই রুপা এসে দরজা টা খুলে দিলো। আমাকে দেখেই,,,,,,,,,


রুপা-- একি আপনি,,,? আপনি কেনো এখানে আবার এসেছেন। নাকি আবার আমাকে ভোগ করার আপনার শখ জাগছে? আমার সব তো কেরেই নিলেন তবে আবার কেনো এসেছেন? ( বলেই রুপা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো) 

আর আমি ফ্লোরে বসে পরে রুপার পা দুটি জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে,,,,, 


আমি-- রুপা আমি পাপী,,, আমি তোমার সাথে অনেক বড় পাপ করেছি। রুপা তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি এই পাপ যে আর বয়ে বেরাতে পারছি না রুপা। তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও রুপা আমায় ক্ষমা করে দাও। 


রুপা-- ক্ষমা কিসের ক্ষমা?  আপনাকে আমি কি ভাবে ক্ষমা করবো বলতে পারবেন? আপনি কি আমার হারিয়ে যাওয়া সতিত্ব ফিরিয়ে এনে দিতে পারবে?  আপনাকে কি ভাবে ক্ষমা করবো? যে লোক নিজের একটু পুরুষত্বের সুখ এর জন্য একটা পরিবার ভেঙে দিতেও পারে তাকে কি ভাবে ক্ষমা করবো বলতে পারবেন! পারবেন না। তাহলে কি ভাবে আমি আপনাকে ক্ষমা করবো বলুন? আমার স্বামীর বিপদের সময় যখন আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইতে গেলাম তার বিনিময়ে আপনি আমার সতিত্ব টাই কেরে নিলেন। আমি এখন কি নিয়ে আমার স্বামীর কাছে যাবো? বলুন জবাব দিন,,, জবাব দিন। জানি আপনার কাছে কোনো জবাব নেই। আমি আপনাকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না। আমার আল্লাহও আপনাকে কখনো ক্ষমা করবে না। এর ফল আপনি পাবেন আজ না হয় হাসর এর ময়দানে ঠিক পাবেন। 


আমি-- রুপা আমি জানি আমার এই পাপ এর কোনো ক্ষমা নেই। আর আমার এই পাপ এর সর্বোচ্চ শাস্তি কি তাও আমি জানি। এই পাপ এর সর্বোচ্চ শাস্তি গলা অব্দি মাটির সাথে গেরে পাথর নিক্ষেপ করা যতক্ষণ না সেই পাপী মা রা যায় ততক্ষণ। কিন্তু আমার তখন কি হয়েছিল আমি নিজেও বলতে পারবো না। রুপা আমি জানি তুমি আমায় কখনো  ক্ষমা করতে পারবে না। কারন আমি যে ক্ষমার জগ্য নই তারপরেও তোমার এই বিপদের দিনে আমাকে তোমার পাসে থাকতে দিয়ো। 


রুপা-- কি করতে চান আপনি? 


আমি-- এই নাও এখানে ৪লাখ টাকা আছে। এই টাকাটা দিয়ে তুমি তোমার স্বামীর চিকিৎসা টা করে নিয়ো। প্লিজ না করবে না,,, আমি জানি তোমার এখন টাকা টার খুবই দরকার। আর আমি এ-ও জানি আমি যে পাপ করেছি এর কোনো ক্ষমা নেই। আর আমিতো আ ত্ম হ ত্যা ও করতে পারবো না। কারন আ ত্ম হ ত্যা মহা পাপ। এমনি একটা পাপ করেছি আর একটা পাপ করে আমার পাপের বোঝা টা আর বাড়াতে চাই না। আমি এখন আসি রুপা আরো টাকার দরকার হলে আমাকে বলবে। 


বলেই ওখান থেকে চলে আসলাম। জোহরের আজান হয়ে গেছে তাই মাসজিদে নামাজ আদায় করার জন্য আসলাম। নামাজ পড়ে মোনাজাত এ আল্লাহ এর কাছে অনেক্ক্ষণ কাঁদলাম কারন আমি যে পাপী। হে আল্লাহ আমিতো অবুঝ ছিলাম তাই কিছু বুঝতে পারি নাই। আর যখন বুঝতে পারলাম তার আগেই আমি এক মহা পাপী হয়ে গেলাম।


নামাজ পরে বের হয়ে বুঝতে পারলাম আমার অনেক খুদা পেয়েছে। কারন সেই কাল রাত থেকে এখনো কিছু পেটের মধ্যে যায় নাই। তাই একটা হোটেল দিকে গেলাম। হোটেল এর সামনে যেতেই চোখ পড়লো ভিতরের একাটা টেবিলের দিকে। 


আমার বউ নিশি একটা ছেলের সাথে এক টেবিলে বসে আছে। ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছে না কারন সে অন্য পাশ হয়ে বসে আছে। কিন্তু নিশির মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। তবে কি এই সেই লোক যার কারনে কাল নিশি এমন ভাবে বাসায় আসলো,,,,,,,,,,,,,,,,,?


আমার আর খাওয়া হলো না। বাসায় চলে আসলাম। নাহ আমার আর বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই। আর কেনোই বা বেচে থাকবো? যে নিজেই একটা লম্পট চরিত্রহীন। আবার তার বউ? সেও অন্য পুরুষ এর সাথে,,,,,৷? 

এই পৃথিবীতে আমার জায়গা নেই। যা করার আজ রাতের মধ্যেই করতে হবে। কিন্তু বাড়িতে কিছুই করা যাবে না যা করার বাড়ির বাহিরে করতে হবে। 


*রাত ৪টা নিশি এখনো ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে যে এই মেয়েটাকে কতটা আরো বেশি সুন্দর লাগে তা বলে বুঝাতে পারবো না। মন ভোরে মেয়েটাকে দেখে নিলাম। কারন এর পর আর কখনো এই মেয়ে টাকে দেখা হবে না। 

যাবার আগে টেবিলের উপর একটা চিঠি লিখলাম। তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম। উদ্দেশ্য ট্রেন স্টেশন,,,,,,, সকাল ৫টায় ট্রেন আসে আর তার নিচেই ঝাপ দিয়ে চলে যাবো না ফেরার দেশে। স্টেশনে এসে বসে আছি। 


ভোর ৫ টা,,,,,, ওইতো ট্রেন আসছে। আমিও তইরি ঝাপ দেবার জন্য। যেই লাফ দিবো অমনি অতীত এর কথা গুলো মনে পরে গেলো। কিন্তু আমি পিছপা হইলাম না আমি মহাপাপ করেছি পাপের শাস্তি তো পেতেই হবে। 


.

ট্রেন আসছে আর আমিও ট্রেনের নিচে ঝাপিয়ে পাড়ার জন্য প্রস্তুত। পাপী দের এই পৃথিবীতে থাকার কোনো অধিকার নেই। মৃত্যুর আগে মনে হয় সবারই প্রিয়জন দের সাথে কাটানো সময় গুলো মনে পড়ে যায়,,, সে হোকনা একজন ভালো মানুষ অথবা পাপী। আমারও তার বিপরীত হলো না। নিশির সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত যেনো আমার চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। 


বিদায় পৃথিবী,,,,, আর যেনো কোনো পাপীর জন্য রুপার মতো নিষ্পাপ মেয়েদের সতিত্ব না হারাতে হয়। 


আমি দিলাম লাফ। 


কিন্তু একি সামনের দিকে না গিয়ে পিছনের দিকে আসলাম কেনো। আর আমি ট্রেনের নিচে না পড়ে   যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই ফ্লোরে পড়ে গেলাম। 

মনে হলো কেউ একজন পিছনে থেকে টান মে রেছেন। উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি নিশি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। 


নিশির চোখ গুলো ফুলে লাল হয়ে আছে। মনে হয় অনেকক্ষণ কান্না করেছে। 


আমার শার্টের কলার ধরে উপরে তুলে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে আসলো। আসার সময় নিশি একটা কথাও বলে নাই। আমিও বলি নাই,,, কিন্তু সারা রাস্তা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম মুখটা একদম রাগে ভরপুর হয়ে ছিলো। 


রুমের মধ্যে নিয়ে এসে আমাকে খাটের ওপর বসিয়ে দিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া। 

তারপর নিশি,,,,,


নিশি-- এসবের মানে কি? (রাগী সাথে কান্না মাখা কন্ঠে) 


আমি-- চুপ করে আছি। 


নিশি-- আমি কিছু বলছি। কথা গুলো কি কানে যাচ্ছে না। এই চিঠি টার মানে কি? (এইবারে কেঁদে দিলো)


আমি-- উপায় ছিলো না( নিচের দিকে তাকিয়ে) 


নিশি-- শুধু নিজের কথাই চিন্তা করলে। একবারো আমার আর আমার ভিতরে যে বড় হচ্ছে তার কথাটা চিন্তা করলে না? তুমি এতটা সার্থ পর? 


আমি-- তোমার ভিতরের টা মানে বুজলাম না? 


নিশি-- মানে আমি মা হাত চলেছি আর তুমি বাবা।


নিশির কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে এবার পানি বেরিয়ে আসলো। আমি কি বলবো কিছুই মাথায় আসছে না। তারপরও বললাম,,,, 


আমি-- তুমি জানো না নিশি আমি কত বড় একটা পাপ করেছি। আমি অনেক বড় পাপী অপরাধী। এই পৃথিবীতে আমার বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই। আমি চাই না আমার পাপের মাশুল তোমাকে দিতে হোক। তুমি জানো না নিশি তুৃমি কিছুই জানো না। ( কাঁদতে কাঁদতে) 


নিশি-- আমি সব জানি। 


আমি-- মানে,,,,,,,,, কি জানো তুমি?


নিশি-- তার আগে তুমি কিছু খেয়ে নাও আজ দুই দিন তুমি না খেয়ে আছো সাথে আমাকেও না খাইয়ে রাখছো। 


আমি-- মানে তুমি খাও নাই 


নিশি-- তোমাকে ছাড়া কোনো দিন খাইছি। 


আমি-- নাহ। কিন্তু তার আগে বলো তুমি কি জানো। 

নিশি বলতে শুরু করলো,,,,,,,,, 


নিশি-- তাহলে শোনো। আমি কোনো প্রমোশন পাই নাই আমার অফিস থেকে। 

সেদিন যখন অফিস থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম রাস্তায় রুপা ভাবীর সাথে দেখা হলো। আমি রুপা ভাবীকে আগে থেকেই চিন্তাম তোমার অফিস থেকেই তার সাথে আমার পরিচয়। মেয়েটাকে কেমন কেমন যেনো লাগছিল। তাকে যখন আমি জিজ্ঞেস করলাম তার এমন অবস্থা কেনো। তিনি যেনো কিছুতেই বলতে রাজি নন। পড়ে জোরাজোরি করাতে রুপা ভাবী আমাকে জরিয়ে ধরে কেদে দিলেন। 

তার দিকে খেয়াল করে বুজতে পারলাম তার জামাকাপড় ঠিকঠাক নেই। তখনি বুঝতে পারলাম তার সাথে কিছু একটা হয়েছে। পড়ে যখন আরও জোর করলাম তখন তিনি তোমার কথা যা বললেন তা শুনে আমি একদম ( বলেই নিশি কেঁদে উঠলেন) তুমি ওনার সাথে এমনটা করতে পারো এটা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করি নাই বিশ্বাস কর। তারপর রুপা ভাবীকে অবিশ্বাস করে তাকে আরো দু-চার টা কথা শুনিয়ে দিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। তারপর মনে হলো তুমি যদি সত্যি রুপা ভাবীর সাথে ওই কাজ টা করে থাকো। তাই আমাদের রুমে না ডুকে জাহানারা আপা দের রুমে কলিং বেল বাজাই। তারপর জাহানারা আপা এসে দরজা খুলে দেন। আর আমি তাদের বাথরুমে গিয়ে আমার জামাকাপড়ও ওলট-পালট করে নেই যেমনটা রুপা ভাবীর ছিলো। 

আর তাই তোমার নজরে আসার জন্য প্রমোশন এর কথা টা বলি এবং পাইচারি করি। 


জানো তোমার মুখে যখন ভয়ের ছাপ দেখতে পেলাম তখন আমার কতটা কষ্ট হচ্ছিল। আমি বুঝতে পেরে গেলাম তুমি রুপা ভাবীর সাথে ওই নিচু কাজ টা করেছো।

শত কষ্টের মঝেও মুখে হাসির ছাপ এনে রেখে ছিলাম। 


আমি-- তাহলে যে তোমায় কাল দেখলাম ওই হোটেলে কার সাথে যেনো বসে আছো। 


নিশি-- হা হা হা। ওইটা আমার ছোট ভাই রিফত ছিলো। আমি যখন জানতে পারলাম রুপা ভাবীর অনেক টাকার দরকার। আর তিনি টাকার জন্য তোমার সাথে ওই নোংরা কাজ করতে বাধ্য হয়েছে তখন আমি কিছু টাকার জন্য রিফাত কে বলি। 

আর টাকা টা নিয়ে যখন রুপা ভাবীর কাছে গেলাম তখন তিনি বললেন তুমি নাকি এসেছিলে তার কাছে টাকা দেবার জন্য আর তার কাছে ক্ষমা চাইবার জন্য। 

তখন আমার খুব ভালো লেগেছিল জানো তুমি আজিজ। আর সব থেকে বেশি ভালো লেগেছিলো তুমি যখন নামাজ পড়া শুরু করলে তখন। 


আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আজিজ। তোমাকে ছাড়া আমিও যে বাঁচতে পারবো না(কান্না করতে করতে নিশি)


নিশি-- বিশ্বাস কর আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমিও যে আর বাঁচবো না। 


আমি-- কিন্তু আমি যে পাপ করেছি আমি যে পাপী। তাহলে কেনো তুমি আমায় ভালোবাসবে? 


-- আমি জানি তুমি পাপ করেছো তুমি পাপী। কিন্তু তুমিতো সে পাপ বুঝতে পেড়েছো এবং ক্ষমাও চেয়েছো। একটা কথা কি জানে? ঘৃনা পাপকে করতে হয় পাপী কে নয়। তোমার পাপ টা যত বড় তার থেকে আমার ভালোবাসাটাও অনেক বড় আমি যে তোমায় অনেক ভালোবাসি আজিজ। 


-- কিন্তু? 


-- কোনো কিন্তু নয়। আমি তোমার সাথে জান্নাতে যেতে চেয়েছিলাম আজিজ। এখনো যেতে চাই,,, তুমি কথা দাও আজিজ এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে। সামনে রমজান মাস কথা দাও এই রমজানে ৩০ টা রোজাই পালন করবে। কথা দাও তুমি আমায় আর কখনো কারো ক্ষতি হয় এমন কাজ কখনোই করবে না। কথা দাও আমায় কথা দাও। 


-- হুম কথা দিলাম। আমি জানিনা আমার এই পাপ এর ফল। 


-- ধন্যবাদ তোমায়। ফজরের আজান যে আজান যে হয়ে গেছে সে দিকে কি আপনার খেয়াল আছে আমার স্বামী? (মুচকি হেসে মুখে যেন তার এখন বিজয় এর হাসি)


-- হুম। 


-- তবে চল দুজন ওজু বানিয়ে আসি। তারপর এক সাথে নামাজ আদায় করবো। শুধু আজকেই কিন্তু বাড়িতে ফজরের নামাজ আদায় করবে। কাল থেকে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে হবে। 


-- হুম। 

( আল্লাহ তুমি আমার মতো একজন এর কপালে এমন একটা বউ দিয়েছো তার জন্য তোমার দরবারে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করি।) 


তারপর দুজনে মিলে নামাজ আদায় করে নিলাম।নামাজ শেষে নিশি চলে গেলো রান্না ঘরে আর আমি এসে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরে নিশি একটা প্লেটে করে খাবার নিয়ে আসলো। 


নিশি-- এই উঠো আগে খেয়ে নাও। 


আমি-- তুমি খাবে না?


-- হুম খাবো তো? 


-- তাহলে একটা প্লেটে আনলে যে? 


-- কারন আমরা এক প্লেটেই খাবো। তুমি আমায় খাইয়ে দিবে আর আমি তোমাকে। এক প্লেটে খাওয়া সুন্নাত বুজলে? 


-- হুম। দাও খাইয়ে দাও। 


-- হুম হা করো। তারপর আমি নিশিকে আর নিশি আমাকে দুজন দুজনকে খাইয়ে দিলাম। খাওয়া শেষে,,,,, 


নিশি-- শুনো আমরা এখন মার্কেটএ যাবো। আমাদের তো বেবি হবে তাইনা। বেবির জন্য এখন থেকেই সব কিছু কিনে রাখবো। আর তার সাথে বেবির আব্বুর জন্য কিছু কিনবো।


আমি-- বেবির আব্বুর জন্য আবার কি কিনবে? 


-- পাঞ্জাবি কিনবো টুপি কিনবো আর একটা সুগন্ধি কিনবো। আমার বেবির আব্বুকে এখন থেকে হুজুর বানিয়ে রাখবো। কি তোমার বেবির আম্মুর হুজুর হবে না। 


-- হুম হবো। কিন্তু লোকে তো নানান ধরনের কথা বলবে। বলবে যে দেখ দেখ শালায় শাখ দিয়ে মাচ ঢাকার চেষ্টা করছে। 


-- লোকে কি বলবে না বলবে তা তুমি কেনো শুনতে যাবে। একটা কথা সবসময় মনে রাখবে,,, আমাদের সমাজে যদি কেউ ভালো কাজ করতে চায় তাকে উৎসাহ দেবার মতো একটা লোকও খুজে পাবে না। কিন্তু সেই লোকটাই যদি খারাপ কাজ করতে যায় তার পিছনে হাজার হাজার লোকের সমাগম দেখতে পারবে। পড়ে আবার দোষ টা তাকেই দিবে এই সমাজের লোকজন। তাই কে কি বললো তাতে কান না দেওয়াই উত্তম বুজলে? 


-- হুম বুঝলাম। 


-- এখন তাহলে চল। আগে হসপিটাল যাবো রফিক ভাইকে দেখার জন্য। তারপর মার্কেট যাবো কেমন। আর শুনো রফিক ভাইয়ের হসপিটালের যাবতীয় খরচ কিন্তু আমরাই মিটাবো। আর তার সাথে তার পরিবারের সকল খরচও তুমি চালাবে যতদিন না রফিক ভাই সুস্থ হন। 


-- হুম ঠিক আছে। 


তারপর দুজনে বের হয়ে পড়লাম। প্রথমত হসপিটাল গেলাম। সাথে কিছু ফলমূল নিয়ে গেলাম। আর আসার সময় তার জন্য সকল মেডিসিন কিনে দিয়ে আসলাম। সেখান থেকে মার্কেট গিয়ে কিছু শপিং করে নিয়ে আসলাম। 


এভাবেই দিন যেতে লাগলো। নামাজ খাওয়া আর দৈনন্দিন কাজ সাথে ঘুম এভাবেই ৭টা বছর পার হয়ে গেলো। নিশি সেদিন থেকে আর তার অফিস যায়না। সেদিনই চাকরি টা ছেড়ে দেয়। ওহ আপনাদের তো বলাই হয় নাই আমাদের একটা পুত্র সন্তান হয়েছে। তাঁকে হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি নিশির ইচ্ছেয়। আমাদের জন্য দোয়া করবেন সকলে, ছেলে কে যেনো একজন হাফেজ বানাতে পারি। 


আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে পাপ থেকে বিরত রাখুন। সকলকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। সামনে রোজার মাসে সকলকে ৩০টি রোজা আদায় করার তাওফিক দান করুন! আমিন। 


                            সমাপ্ত 


বাস্তব জীবনের ঘটনা ও গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post