অবহেলা কষ্টের গল্প | অতীতের স্মৃতি নিয়ে গল্প

ভালোবাসার কষ্টের গল্প

ভালোবাসার কষ্টের গল্প

 " বিয়ের পরেরদিন আমার স্ত্রীর অ/ন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলো "


তখন আমি অফিসে কাজ করছিলাম।আমার কলিগ আমজাদ এসে বললো " ভাই,মেয়েটারে দেখছেন? "


আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম " কোন মেয়ে? "


" ফেসবুকে আবার একটা মেয়ের ভিডিও ভাইরাল হইছে।মেয়েটার বু'ক দেইখা তো আমি পুরা শ্যাষ ভাই,এইযে আপনেও দেখেন "


আমজাদ সাহেবের কথায় আমার ভিষণ রাগ হতে লাগলো।এসব বিষয়ে এই লোকের অসীম আগ্রহ।ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও জোর করে উনি ফোন বেড় করে মেয়েটার ভিডিও আমার সামনে ধরলেন।হুট করে ফোনটা চোখের সামনে ধরায় আমার স্ত্রীর মুখটা নজরে এলো।


পর্শীকে বিয়ে করেছি আর দুইদিন হলো।হঠাৎ বিয়েটা হওয়ায় অফিসের কাউকে বিয়েতে ডাকা হয়নি।বিয়ের দুইদিন পরেই স্ত্রীর ভিডিও ভাইরাল! 


অফিসের সবাই এখন ভিডিওটা নিয়ে ব্যস্ত।কাউকে কিছু না বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসলাম।কয়েকবার কলিংবেলে চাপ দেওয়ার পর পর্শী দরজা খুললো।পর্শীর চোখ লাল হয়ে আছে।বুঝতে পারলাম এতোক্ষণ ও কান্না করছিলো।আমাকে দেখে পর্শী দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।


সোফায় চুপচাপ বসে আছি।রান্নাঘরে তাকিয়ে দেখলাম পর্শী মুখ চেপে কান্না করছে।আমি কাছে যেতেই পর্শী কান্নামিশ্রিত স্বরে বললো


" আমি এজন্যই আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি

।আমি জানতাম এরকম কিছু একটা হবে।ও যে একটা জা'নোয়ার এটা বুঝতে পেরে ব্রেকআপ করেছিলাম,তবুও..." 


একথা বলে পর্শী আবারো কান্নায়ভেঙ্গে পড়লো।পর্শী সত্যিই আমায় বিয়ে করতে রাজি ছিলো না।আমিই জোর করে ওকে বিয়েতে রাজি করিয়েছিলাম।বলতে গেলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বেহায়াপনা করেছিলাম পর্শীকে নিজের করে পাওয়ার জন্য।বিয়ের আগের দিন পর্শী আমায় বলেছিলো 


" আমার একটা ভয়ঙ্কর অতীত আছে তাতান,সেটা জানলে আপনি কখনোই আমায় বিয়ে করতে রাজি হবেন না "


আমি ওর প্রতি এতোটাই মোহিত ছিলাম যে বললাম " তোমার যেকোনো অতীত আমি মেনে নিতে রাজি পর্শী।একবার বিশ্বাস করে তোমার হাতটা ধরার সুযোগ করে দাও।আমি কথা দিলাম যাই হয়ে যক আজীবন তোমার হাত আমি ছাড়ছি না "


পর্শী চোখের জল মুছে বললো " আপনি চাইলে আমায় ডিভোর্স দিতে পারেন।আমার মতো নষ্ট মেয়ের ভালোবাসা পাওয়ার কোনো অধিকার নেই "


আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারলাম না।পর্শীকে এতোটাই ভালোবেসে ফেলছি যে ওকে ছেড়ে থাকার কথা আমি কল্পনাও করতে পারিনা।সেই বিকেলটা আমার ঘোরের মতো কাটলো।


রাত বাজে আটটা।পর্শী বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।পেছন থেকে আমি বেশ বুঝতে পারছি ও কাঁদছে।আমি ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।পর্শীর কান্নার বেগ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো।কান্না এমন একটা জিনিস যেটা অন্যর সংস্পর্শে আসলে বাড়তে থাকে।আমি বললাম


" আচ্ছা পর্শী পাহাড় কেমন লাগে তোমার? "


পর্শী চোখের জল মুছে হতভম্ব হয়ে তাকালো আমার দিকে।আমি স্বাভাবিক স্বরেই বললাম " চলো পাহাড় থেকে ঘুরে আসি।আমার মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য পাহাড়ে লুকিয়ে থাকে "


বিকেলেই ট্রেনের টিকিট কে'টে রেখেছিলাম।রাত ৯ টায় ট্রেন।পর্শীকে নিয়ে স্টেশনে রওনা হলাম।পুরো রাস্তায় পর্শী একটা কথাও বললো না।শুধু বারবার করুন চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছিলো।


ট্রেনে উঠলাম।ঝকঝক শব্দে ট্রেন চলতে আরম্ভ করলো।পর্শীকে নিয়ে ট্রেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম।পর্শী ভয়ে আমার শার্টের হাতা শক্ত করে ধরে দাড়িয়ে আছে।বাতাসের তীব্রতায় পর্শীর চুল প্রচন্ড গতিতে উড়ছে।পর্শীর হাতে হাত রেখে বললাম


" প্রেয়সীর অতীত মেনে নিতে না পারলে সেটা আবার কীসের ভালোবাসা?তাছাড়া তুমি যাকে ভালোবেসেছিলে সেই মানুষটা ভুল ছিলো।তোমার যে একদমই ভুল ছিলো না সেটাও বলবো না,তোমারও ভুল ছিলো।তবে সেটা বুঝতেও পেরেছো।আমার কাছে তুমি যেমন পবিত্র ছিলে,সেরকমই সারাজীবন পবিত্র থাকবে। ভালোবাসার মানুষটা কখনো অপবিত্র হতে পারে? "


পর্শীর চোখে জল,আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম " তুমি শুধু অর্ধশত ছেলের মধ্যে আমায় ভালোবেসে দেখো,কোটি সমস্যার ভীড়েও তোমার হাত আমি ছাড়ছি না " 


-অতীত

-জয়ন্ত_কুমার_জয়

-ছোটগল্প


বাস্তব জীবনের ভালোবাসার গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post