স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অবহেলা | অবহেলার কষ্টের গল্প

 অবহেলার ভালবাসার গল্প

অবহেলার ভালবাসার গল্প

এই যে রাত হলেই পাশ ফিরে শুয়ে থাকো। মোবাইল হাতে ফ্রেন্ডলিস্টের বন্ধুদের খোঁজ খবর নাও। তোমার পাশে রাতের পর রাত শুয়ে থাকি। আমারও তো একটু খোঁজ নিতে পারো। রান্না করার সময় আগুনের আঁচ লেগে পুড়েছে ক্ষানিকটা হাতের অংশ। জানতে তো পারো, জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে কি-না! হাতটা মুখের সামনে নিয়ে মিথ্যে করে ফুঁ দিয়ে বলতে তো পারো, "দ্রুত সেরে যাবে। একটু সাবধানে কাজ করতে পারো না?" 

অথচ আমি কত সাবধানে ইচ্ছে করে ঘরের বাতি নিভানোর সময় টেবিলে থাকা বইটা ফেলে দেই। সেই শব্দে হয়তো আমার দিকে আড়চোখে তাকাবে একবার। কিন্তু তুমি তাকাও না। বইয়ের লেখক আশেপাশে থাকলে তাকাতো হয়তো, তার বই ফেলে দেওয়ার অপরাধে।

আমি পাশ ফিরে অন্ধকার রাতে ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে থাকি। তুমি বন্ধুদের মেসেজ করার সময় মাঝে মধ্যেই হেসে উঠো। আমার বুকের ভেতর তখন হাহাকার জন্মে। আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে হাসি ঠাট্টায় ব্যস্ত তুমি। আমি তো খুব করে চাচ্ছিলাম, তুমি আমার কাছে জানতে চাও সকালের নাস্তায় কী বানাব! 

পাশাপাশি বালিশে ঘুমিয়েও আমি কতটা নিঃসঙ্গ। আমরা এত কাছে থেকেও কতটা দূরত্বে অবস্থান করছি। বিয়ের পর মাস খানেক তো আমার প্রশংসায় তুমি ছিলে পঞ্চমুখ। নারীর রূপ কি মাস ঘুরলেই শেষ হয়ে যায়? বছর ঘুরলেই অর্ধাঙ্গিনী পুরোনো হয়ে যায়?  বাসর রাতে আমার গাল ছুঁয়ে যে বলেছিলে, আমাকে দেখেই না-কি প্রেমে পড়ে গেছো। বছর ঘুরতেই সেই প্রেম গেল কোথায় হে স্বামী?


বাবার বাড়ি গেলে মানুষদের কত প্রশ্ন। জন্ম দেওয়া পিতামাতা। খুনসুটিতে মেতে থাকা বান্ধবীরা। আর এলাকার যে মানুষগুলোর সাথে কেটেছে আমার শিশুকাল, শৈশব, কৈশোর বা যুবতী হয়ে উঠার সময়গুলো। তারা জানতে চায় কেমন আছি? কতটা সুখে আছি। আমি একগাল হেসে বলি, আমার চেয়ে সুখী আছে ক'জনা? 

তিনবেলা পেটপুরে খাওয়া। হাত,কান আর গলায় ভারী স্বর্ণের বোঝা কি মানুষকে সুখে রাখে হে স্বামী? না-কি এছাড়াও সুখের আছে কিছু!


গত সপ্তাহে তোমাকে খুশির খবর দিলাম, আমি মা হতে চলেছি। আমার পেটের মধ্যে আরেকটি প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। আমাদের কোল আলোকিত করে সন্তান আসবে। তুমি বাবা ডাক শুনবে। 

তুমি আল-হামদুলিল্লাহ বলেছো খুশি হয়ে। সেই থেকে এখনো অবধি আর কোনো কথা নেই এই বিষয়ে। আমার কী খেতে ইচ্ছে করে। সন্তান পেটে আসার পর আমার অনুভূতি কী? আমার খারাপ লাগে কি-না! কিছুই জানতে চাও না তুমি। অথচ আমার বান্ধবী গর্ভবতী হওয়ার আগেই তার স্বামীর সাথে আলোচনা করে সন্তানের নামও ঠিক করে ফেলেছিল। আমাদের সন্তানের নাম কী রাখব? আচ্ছা আমার ছেলে হবে না-কি মেয়ে হবে গো? তোমাকে জিজ্ঞেস করা হয় না। তুমি পাশ ফিরে শুয়ে থাকো।


বিয়ের পর একবার গিয়েছিলে আমার বাবার বাড়িতে। যখনি বলি মা'কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তখনি বলো, "যাও, দেখো এসো। কাল চলে এসো।"

অথচ তুমি আমাকে নিয়ে যেতে পারতে। আমার বাবা মা তোমাকে দাওয়াত করেও নিতে পারে না। শত কাজের ব্যস্ততা তোমার। অথচ আমি তো জানি, পাশ ফিরে শুয়ে থাকার জন্য তোমার অগনিত সময় রয়েছে। 

এই যে অন্ধকার রাতে তোমার পাশে শুয়ে এই অপূর্ণতায়, আক্ষেপ নিয়ে প্রচণ্ড অভিমানে চোখে বারি আনি। কখনো কি জানতে পেরেছো? বাসর রাতে আমার চোখে তাকিয়ে বলেছিলে, আমার চোখে নাকি ডুবে যেতে ইচ্ছে করে। তুমি সত্যিই ডুবে গেছো। তাই তোমার ডুব দেওয়ায় যে বারি উপচে পড়ে তা তোমার দৃষ্টির আড়ালেই থাকে। 

শরীর ডিঙানোর সময় হলে যখন কাছে আসো,  এটাকে কাছে আসা বলে? প্রয়োজনের স্পর্শই কি ভালোবাসা? খুব জানতে ইচ্ছে হয় হে স্বামী।


আমার গহনা লাগবে, বলার আগেই পেয়ে যাচ্ছি। কাপড় লাগবে, বলার আগেই পাচ্ছি। নিত্য প্রয়োজনীয় একজন নারীর যা প্রশাধনী দরকার, ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই পাচ্ছি। এই শত পাওয়ার মাঝেও, তোমারে আমি পাইলাম কই?  

পর নারীর প্রতি তোমার আকর্ষণ নেই, আমার পরম সৌভাগ্য। তাই বলে নিজ স্ত্রীর প্রতি অবহেলা বাড়বে? এই অবহেলা মৃত্যু পূর্ব মরণ যন্ত্রনার মতো। কেমন যেন গলা চেপে ধরে আছে। দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। অথৈ সাগরে পড়ে অনবরত সাতরিয়ে ক্লান্ত হয়ে ডুবতে বসা অসহায়ের মতো আমি বড্ড ক্লান্ত হে স্বামী।


হয়তো আমিই ভুল। পেটের উদরপূর্তি আর শরীরের সাজসজ্জা-ই নারীর প্রতি ভালোবাসা। হয়তো শরীর ডিঙানো আমার প্রতি তোমার এই কাছে আসাটাই ভালোবাসা। পাশাপাশি বালিশে থেকেও মনের প্রতি মনের কাছে আসতে নেই। ভালোবেসে হাসিমুখে দুটো কথা বলা হয়ে উঠে না কখনো তোমার। কী পরলে ভালো লাগে আমাকে। আমার কোন রান্নাটা বেশি মজা, জানা হয়নি কখনো। আমারই কেবল দূরত্ব মনে হয়। তুমি বোধ হয় খুবই কাছে। হয়তো আমি তোমাকে খুঁজে পাই না আমার মনের ঘরে। তুমি পেয়েছিলে আমায়? 

বড্ড জানতে ইচ্ছে করে, ভালোবাসো আমায় হে স্বামী? 


সমাপ্ত.....


স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post