হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প | ভালোবাসার রোমান্টিক স্ট্যাটাস

 রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

--- ছিঃ ছিঃ স্বয়ং জামাই আইয়া উপস্থিত হইছে হলুদের দিন।। কি যুগ আইলোরে। প্রেম করছে বইলা কি মান সম্মান এদের একটুও নাই। লজ্জাও দেখি নাই।


এরকম কথা কানে আসতেই আমি আমার ছোট বোন জুমানাকে ডেকে পাঠাই।

সে এসেই বলতে লাগলো,,,

---- আপু শুভ ভাইয়া হাতে করে মেহেদী আর কলাপাতা কালারের শাড়ী নিয়ে এসেছে। সবাই এটা নিয়ে নানা বাজে মন্তব্য করছে। এখন আম্মুর সাথে কি যেন কথা বলছে।


আমি মুচকি হেসে ওকে বললাম,,,

--- তুই যা এখন। 


মনেমনে ভাবছি,, 

--- পাগলটার এখনও মনে আছে দেখছি। সেই কবে বলেছিলাম আমার ইচ্ছেটার কথা। সেদিন যখন বলেছিলাম,, শুভ আমার ইচ্ছে তুমি আমাকে হলুদের শাড়ী পরিয়ে দিবে। আর শাড়ী হবে কলাপাতা রঙের। মেহেদিও তুমি লাগিয়ে দিবে।


সেদিন আমার কথা শুনে খুব জোরে হেসে উঠে শুভ বলেছিল,,,

--- লোকে হাসবে। এইসব কল্পনায় হয়।


শুভর হাসি দেখেই লজ্জা পেয়েছিলাম খারাপ লেগেছিল। দুইদিন অভিমান করে কথা বলিনি।। পরে অবশ্য ভুলে যাই। 

অথচ গাধাটা ঠিকি মনে রেখেছে। এত্ত এত্ত কথা উপেক্ষা করেও এসেছে। 


*

---- মহারাণী কি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন??


শুভর কথার শব্দে ঘোর কাটিয়ে উঠে জিজ্ঞেস করি,,,

--- এসব কি শুভ? বাচ্চা কালে পাগলামি করে কি না কি বলেছিলাম আর তুমি সেটা মনে রেখে এই বুইড়া বয়সে এসব করছো?


শুভ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জুমানার দিকে তাকাতেই জুমানা হেসে উঠে চলে যায়। 


শুভ দরজা বন্ধ করে শাড়ীটা আমার হাতে দিয়ে বলে,,,

--- প্রথমত সেটা তোমার বাচ্চা কালের পাগলামি হলেও আমার কাছে প্রিয় তমার আবদার। দ্বিতীয়ত আমি বুইড়া না। তৃতীয়ত বউয়ের শখ যেকোনো বয়সে পূরণ করা আদর্শ স্বামীর কর্তব্য।


শুভকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললাম,,,

--- থামো তো। আম্মু কিছু বলেনি?


শুভ আমার ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলল,,,

--- আমার শ্বাশুড়ি আম্মা সারা পৃথিবীতে এক পিস। যে কিনা মেয়ের জামাইর মন বুঝে। 


হুট করে শুভ আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে, পকেট থেকে একটা বেলীফুল বের করে প্রপোজ করে।


আমি শুভর কাজ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবছি, "এটাও তার মনে আছে। একদিন বলেছিলাম বিয়ের আগের দিন রাতে প্রপোজ করতে হবে। আসলে আমার সম্পর্কটা কি করে যেন হয়ে যায়। শুভ আমায় প্রপোজও করেনি। তাই শুভকে বলেছিলাম, এর শাস্তি স্বরুপ তুমি আমাকে বিয়ের আগেরদিন রাতে প্রপোজ করবে। তাও বেলীফুল দিয়ে।"


শুভ সেদিনও একগাল হেসে বলেছিল,,

---- এসব উদ্ভট চিন্তা তোমার মাথায় আসে কিভাবে? তোমার জন্য আমি এবার বেলীফুল খুঁজে বেড়াবো? 


সেদিনও মন খারাপ হয়েছিল শুভর কথা শুনে।


*

--- জানো, এই বেলীফুল খুঁজতে কত কষ্ট হয়েছে। দরকারের সময় কোনো জিনিস পাওয়া যায়না।


শুভর কথায় চিন্তার জগৎ থেকে ফিরে আসি। 


শুভ বলল,,,

--- দেরি হয়ে যাচ্ছে আসো শাড়ী পরিয়ে দেই। সবাই ভাববে এরা ভিতরে কি করছে!! হাহাহাহা।


আমি শুভর হাসির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কতটা মুগ্ধতা আছে এই হাসিতে জানিনা৷ তবে ওর ভালোবাসায় মুগ্ধ আমি। এতো মানুষের এত্ত এত্ত কথা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র আমার আবদার পূরণ করতে এসেছে। 


শুভ শাড়ী আর মেহেদী পরানো শেষ করে বলল,,

--- আগামীকাল দেখা হচ্ছে তবে মহারাণী। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থেকো। এরপর তো আমার দায়িত্ব তোমাকে ভালো রাখার।

গল্প-কলাপাতা রঙের শাড়ী

পর্ব--- ১

কলাপাতা রঙের শাড়ী

 ২য় এবং শেষ পর্ব 


শুভ শাড়ী আর মেহেদী পরানো শেষ করে বলল,,

--- আগামীকাল দেখা হচ্ছে তবে মহারাণী। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থেকো। এরপর তো আমার দায়িত্ব তোমাকে ভালো রাখার।


এই বলে শুভ দরজার দিকে পা বাড়াতেই আবার পিছনে ফিরে এসে বললো,,,


--- আর হ্যাঁ শাড়ী পরিয়ে দিয়েছি। এখন চুপচাপ এখানে বসে থাকবে। একদম নড়াচড়ার দরকার নেই। না-হয় বিয়ের আগেরদিন পা ভেঙে আবার আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে। 

--- হুহ। পা না ভাঙলেও কোলে করেই নিয়ে যেতে হবে। 

--- আমার কি লজ্জাশরম নেই নাকি?

--- ওরে আমার লজ্জাবতী লতা। ওপ্স তুমি তো ছেলে। এতোই লজ্জা থাকলে আজকে আসতে না।

--- হইছে। এখন চুপচাপ এখানে বসে থাকো। আগেরবার শাড়ী পরে যে পড়ে গিয়ে বাম পায়ের আঙুল কেটেছিলে মনে আছে?  নেহাত শাড়ী পরতে চেয়েছিলে নাহলে 

---- হইছে বকবক না করে যাও।

--- আচ্ছা। আল্লাহ্ হাফেজ বউ। 

--- আল্লাহ্ হাফেজ।


*******

--- তরু, এই তরু

--- হু

--- তুমি বারেন্দায় দাঁড়িয়ে কি করছো, বলোতো। 

--- কি করবো রুমে অন্ধকার। তুমি নাকি আলো জ্বালাতে নিষেধ করেছো। তাই তোমার বোনরা আমাকে অন্ধকারে বসিয়ে চলে গেছে। 

---- বারেন্দাটার দিকে নজর দিয়েছো?

---- হু। একদম আমার মনের মতো। দুটো চেয়ার। ফুল গাছ। 

--- হু। চোখ বন্ধ করো এবার। 

--- কেন? 

--- প্রশ্ন করোনা। চুপচাপ রুমে আসো।


শুভ আমার চোখ ধরে রুমে নিয়ে আসে। শুভ লাইট জ্বালিয়ে আমাকে চোখ খুলতে বললো। আমি চোখ খুলেই অবাক। একদম আমার পছন্দ মতো সব।


 শুভ একদমই বই পড়েনা। অথচ শুধু আমার জন্যই পুরো একটা বুকসেল্ফ ভর্তি বই। আমার পছন্দের কালারের বেডশিট। পুরো রুমজুড়ে টেডি বিয়ার, ফুলদানি।  

কিন্তু ড্রেসিং টেবিলটা অদ্ভুত। কোনো আয়না নেই। আমি শুভর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,

--- শুভ ড্রেসিং টেবলে কোনো আয়না নেই ক্যান?


শুভ আমার চুল একপাশে সরিয়ে দিয়ে বলল,,,

--- এটা আমার বউয়ের জন্য স্পেশাল অর্ডার দিয়ে বানানো। এখানে বসে চোখে কাজল লাগাবে আর আমার চোখে আয়না দেখবে। 


আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

--- আমি বুঝতে পেরেছি শুভ তুমি কেনো কোনো আয়না রাখোনি। যাতে এই ভয়ংকর বিভৎস চেহারা যাতে না দেখা যায়। 


শুভ আমার পুড়ে যাওয়া কপালে চুমু দিয়ে বলল,,।

--- একদম তাই নয়। আর কে বলেছে ভয়ংকর?  আমি তো এক রাজকন্যাকে আমার ঘরের রাণী বানিয়েছি। যে আমার কাছে পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দরী নারী।

তুমি আমার চোখে আয়না দেখবে আর আমি তোমার চোখে। 


শুভ আমার সব কথা রেখেছে দেখে ভেবেছিলাম আলমারি ভর্তি শাড়ী রেখেছে নিশ্চয়ই৷ তাই আলমারির কাছে যেতেই শুভ বলে উঠলো,,,

---- সব শাড়ী পুড়িয়ে ফেলেছি সেদিন। আমি চাইনা আর কোনো শাড়ির ছোঁয়া লাগুক। যেই শাড়ী তোমাকে একটা বছর যন্ত্রণা দিয়েছে সেই শাড়ী আশেপাশেও থাকুক আমি চাইনা।

---- শুভ দোষ তো আমার। আমি যদি সেদিন তোমার কথা শুনে চুপচাপ বসে থাকতাম। তাহলে হয়তো আজকের এই দিন আমাদের দেখা লাগতো না। আই এম স্যরি শুভ।  আই এম স্যরি।

এই বলে কাঁদতে থাকি। 


শুভ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,

--- কিচ্ছু হয়নি। সামান্য ব্যাপার। 


শুভ হয়তো আমার মনের জোর বাড়াচ্ছে কিংবা তার ভালোবাসার জোর। তবে আমি তো জানি সেই একটা ঘটনায় আমি আমার চেহারাটাই হারিয়েছি। 


সেদিন শুভ বারবার করে নিষেধ করা সত্ত্বেও আমি শাড়ী পরে বের হয়েছিলাম৷ চা করে দেওয়ার কথা বলার জন্য কিচেনে যাই। চাচী আম্মা পানি ফুটিয়ে নিচে রেখেছিল।।

কিভাবে যেন শাড়ীতে পা আটকে আমি ফুটন্ত পানিগুলোতেই পড়ে যাই৷ 


---- আউউউউউউউউউউউউ

---- কি হয়েছে তরু? কি হলো তোমার?

--- ক ক কই কিছুনা তো।

--- তুমি সেদিনের ঘটনাটা আবার ভাবছো তরু? তুমি শুনবে না আমার কথা? 

--- আমি তো ভুলতে পারছি না শুভ। সেই দিনের সেই বিভৎস যন্ত্রণার কথা আমার বারবার মনে পড়ে।তবে একটা কথা কি জানো তো সেদিনের সে ঘটনাটা না ঘটলে বুঝতেই পারতাম না কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে। গত একটা বছরের তোমার সব মুহুর্ত নষ্ট করে দিয়েছি আমি। 


--- আর একটা কথা বললে ঠাস করে একটা লাগিয়ে দিবো। তুমি জানো না প্রিয় মানুষের পাশে থেকে তার প্রতিটা কষ্টের সাক্ষি হওয়া কতটা সুখের। কিন্তু আফসোস তোমার কষ্টের ভাগ নিতে পারিনি।

---- বিশ্বাস করো শুভ আমার একটুও কষ্ট হয়নি। বরং প্রতি সেকেন্ড তোমার ভালোবাসা উপভোগ করেছি। নতুন তোমাকে চিনেছি। 

--- হইছে আর ফুলাতে হবেনা আমাকে। ফ্রেশ হও আগে। আলমারিতে জামা রাখা আছে। 

--- শুভ

---- হু কিছু বলবে?


আমি মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম,,, 

---- এখন আর বুঝি আমাকে কাজলে ভাল্লাগবে না?

--- হঠাৎ এই কথা ক্যান?

---- সব মনে রেখেছো অথচ আমি যে কাজল পরিয়ে দিতে বলেছিলাম সেটা ভুলে গেছো।

--- গাধী। কাজল পরিয়ে দেওয়ার আগে যে সাদা শাড়ী পরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল সেটা মনে আছে?

--- কিন্তু শাড়ী তো সব পুড়িয়ে দিয়েছো।

--- উঁহু মহারাণী। একটা শাড়ী তো রেখেছি। 


ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে শুভ আমাকে শাড়ী পরিয়ে দিচ্ছে ঠিক সেই এক বছর আগের মতো। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে আজও তাকিয়ে আছি। ভালোবাসা জমানোর কোনো ব্যাংক নেই তারপরও মুনাফার হারে বাড়ছে শুভর ভালোবাসা। 


শুভ শাড়ী পরিয়ে দিয়ে বললো,,,,

--- তাকাও আমার চোখের দিকে। দেখো নিজেকে কেমন লাগছে।


আমি শুভর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

--- যার চোখের ভালোবাসা সুন্দর, যার চোখের চাওয়া নিষ্পাপ, যেখানে সৌন্দর্য এসে ভীড় করে সেখানে কি করে আমাকে অসুন্দর দেখায়? 


শুভ তার বাহুডোরে বেঁধে নিয়ে আমাকে বললো,,,

---- আমার ভালোবাসাটা তো সম্পূর্ণ তুমি। যদি আমার ভালোবাসা সুন্দর হয় তাহলে তো সেই ভালোবাসার সৌন্দর্য তুমি।


সমাপ্ত---


সব ধরনের গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post