খুব কাছের মানুষের অবহেলা
আমার স্ত্রী এতটাই অযোগ্য যা কিনা বলার অপেক্ষা রাখেনা !! দেখতেও যদি একটু সুন্দর হতো , তা না হয় অন্যগুলো ছাড় দিতাম।
এইতো সে দিন অফিসে যাওয়ার সময় বললাম শার্টের কলারের বোতামটা লাগিয়ে দাও ।
এই কথাটা বলে যে আমি কি ভুল করলাম আল্লাহ্ই জানে , রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এসে ভিজা হাতে বোতাম লাগেতে গিয়ে শার্টে ময়লা লাগিয়ে দিল ।
আমি আয়না দেখতে গিয়ে দেখি শার্টে ময়লা । মেজাসটা কেমন লাগে তখন !!
ময়লা লাগছে ভালো কথা !
বলবেতো শার্টটা চেঞ্জ করে নাও । এই কথা তো দুরের কথা , উল্টো বলছে এই শার্টটা তোমাকে দারুন লাগছে । ভাগ্যিস আয়না দেখেছিলাম , তা না হলে তো আজকে অফিসে ই*জ্জত যাইত আমার।।
ছোট সংসার আমার । বাবা-মা আমি আর আমার স্ত্রী । বাবা-মা এতটাই প্রিয় আমার যে একটা গ্রাম্য ক্ষেত আনস্মার্ট মেয়েকে আমার বিয়ে করতে হলো ।
সব সময় অফিসে গিয়ে টেনশনে থাকি বাবা মার জন্যে , কখন যে কি হয়ে যায় ! আর বউ !! দূর তার কথা তো আমার মনেই পড়েনা ।
অনেস্টলি বলছি অনেক সময় সব কিছু ভুলে তাকে মেনে নেয়ার চেষ্টা করেছি । ভেবেছিলাম এই রকম একটা মেয়ে যদি আমার বোন থাকতো তাহলে হয়তো তার শশুর বাড়ীতে অনেক কষ্ট হতো ।
তাই একটা ফর্মুলা কাজে লাগাইতে চাইলাম । অনেকে বলে ঘুমের মধ্যে নাকি মানুষকে অনেক মায়াবী লাগে ।। একদিন সে ঘুমানোর পর আমি তার দিকে তাকালাম । ধুর ছাই !
কোন মায়াই লাগেনা ... নাহ এই মেয়ে দিয়ে আমার আর মোটেও হবেনা !
একদিন অফিসে বাবা মার জন্য খুব পরান পড়তে ছিল । তাই বাসায় হঠাত করে চলে আসলাম । মফস্বল এরিয়াতে বাসা আমাদের ।
তাই গেট দরজা প্রায় সময় খোলাই থাকে । আমি সরাসরি বাসায় প্রবেশ করা মাত্রই দেখতে পেলাম আমার স্ত্রী আমার বাবা মাকে মুখে তুলে দিয়ে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে ।
আমি কোতুহল বশত দরজার পাশেই দাড়িয়ে রইলাম । একবার বাবার মুখে তো আরেকবার মায়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে ।
আর ছোট ছোট কৌতুক বলছে , বাবা মা যেন হেসেই খু*ন হয়ে যাচ্ছে ।
ততক্ষনে আমার চোখের কোনে জল এসে পড়েছে । মা আমাকে দেখে বলছে আরে খোকা কখন আসলি, আয় আয় বস ।
আমার স্ত্রী তো ভয়ে শেষ ! না জানির বাবা মায়ের সামনে কিছু বলে ফেলি কিনা !
নাহ আমি সে ধরনের ছেলে নই । মা বলল, বৌমা খোকাকে একটু খাইয়ে দাও ! বাবাও মাকে সাপোর্ট করলো ।
আমার তো রুচিই আসে না তার হাতে খাবার খেতে । সে আমার দিকে এক লোকমা খাবার এগিয়ে দিলো । কি আর করার !
বাবা মাকে খুশী করার জন্ন্যে হলেও খেতে হবে । সত্যি বলছি আচমকা একটা তৃপ্তি অনুভব করতে লাগলাম ।
দুর্বলতা যেন স্ত্রীর সামনে ফুটে না উঠে তাই দ্রুত আমার বেড রুমে চলে গেলাম । রুমে এসে খুব অসস্থি লাগছে । নাহ এটা অন্য কিছু না ।
স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা অনুভব করতে লাগলাম ।
অযোগ্য_বউ
পর্বঃ১
শিমুল
অযোগ্য বউ
পর্ব-২ শেষ
বিয়ের এখনো এক বছর ও পুরোপুরি হয় নি । কখনো এতো ভালোবাসা অনুভব করিনি অযোগ্য স্ত্রীর প্রতি । ধুর ছাই !!
কি যে আবোল তাবোল ভাবছি ,নিজেকে বোঝাঁতে লাগলাম ।
এই মেয়ের প্রতি তো আমার কোন রুচিই নেই তাহলে ভালোবাসা আসবে কোথায় থেকে । বা*জে অনুভুতি গুলো নিয়ে কখন যে দু চোখের পাতা এক হয়ে গেছে সেটা আর মনে নেই ।
হঠাত মায়ের চিৎকার শুনতে পেলাম ।
খোকা জলদি আয় , বউমা যেন কেমন করছে ।
দোড়ে গিয়ে দেখলাম বাবা –মা দু জনেই তাকে তুলে বিছানায় শু*ইয়ে দিল ।
সে বড় বড় করে নিশ্বাস নিচ্ছিল ।
আমাকে দেখে সে নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করল ।
আর এমন একটা ভাব করলো যেন কিছুই হয়নি । চোখের পানি টল টল করছে তার ।
আমিও একটু কেয়ারলেস ভাব দেখাইলাম। তারপর সে অন্যদিক ঘুরে আমার মায়ের আচলের নিচে নিজেকে গুঁজিয়ে রাখে।
এদিকে আমার বাবা একবার বালতি ভরে পানি নিয়ে আসেতো আবার মগ নিয়ে আসে আমার স্ত্রীর মাথায় পানি দিবে বলে ।।
আমার কেয়ারলেস ভাব দেখে আবার বাবাও যে বিব্রত বোধ করছেন সেটা আমি বুজতে পারছি । আর আমার মা এমন ভাবে দোয়া দুরুজ পরছে , মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে বার বার মা তোর কিচ্ছু হবেনা , “আমি আছিনা “ ।।
এই রকম সিচুয়েশন দেখে আমার মেজাস আরো বেশি খা*রাপ হয়ে যাচ্ছে ।
যতনা আমার বউয়ের ঢং , তার চেয়ে বেশি আমার বাবা মায়ের ঢং দেখে আমার অনেক বিরক্তও লাগছিল ।
যাই হোক না কেনো , বাবা মার সাথে তো আর উচ্চস্বরে কথা বলা যায়না ।
নিজেকে কিছুক্ষনের মধ্যাই নিয়ন্ত্রন করে ফেললাম ।
আর বাবা মা তাকে ভালো বাসবেই বা না কেন !! তাদেরকে মুখে তুলে খাওয়ায় ।
গল্প শুনায় । আরো কত কি !
এদিকে মোবাইল বাজতেছে । মোবাইল হাতে নিয়ে আমার মেজাস আরো বেশি খা*রাপ হয়ে গেল । ইনি আর কেউ না , আমার অযোগ্য স্ত্রীর যোগ্য পিতা , যিনি আমার মত একটা শিক্ষিত, স্মার্ট ছেলেকে জামাই বানাতে পেরেছেন ।
যাই হোক ফোন বাজতেছে আর আমার ভিতরের মানবতা আমাকে বলছে , দেখ যার মেয়ে তার দিলে ডাক দিয়েছে।
হয়তো তার মেয়ের কোন বিপদ হয়েছে। তাই সে ফোন দিয়েছে । এটা হয়তো পৃথিবীর সব বাবা মায়েদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে ।
সন্তানের কোন বিপদ হলে তাদের বুকের ভিতরে হু হু করে উঠে । এটা সরাসরি স্রস্টা প্রদত্ত ।
হঠাত আমার ঘোর কা*টতেই দেখলাম ফোনটা কে*টে গেলো ।
ফোন যেহেতু কে*টেই গেল তাই আর শ্বশুরের কথা হয়নি ।এরি মধ্যে মায়ের ডাক পড়লো আবার । খোকা একজন ডাক্তার নিয়ে আয় বাবা। বউয়ের শরীরটা তাপে পু*ড়ে যাচ্ছে। আমি আবার সাথে সাথে মায়ের রুমে গেলাম যেখানে আমার স্ত্রী শুয়ে আছে । রুমে যাওয়া মাত্রই স্ত্রীর চোখে চোখ পড়ল । আমি একটু অপ্রস্তত হয়ে গেলাম । আমার বুকের ভিতর টা কম্পন দিয়ে ঊঠলো । তার চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছি সে যে আমার কাছে কতটুকু অবহেলিত !! আমার বুকের ভিতরে মনে হচ্ছে ঝড় বয়ে যাচ্ছে ।। নাহ নিজেকে সামলিয়ে নিলাম । তার কপালে হাত দিয়ে আমি চমকিয়ে উঠলাম ।। এইতো অনেক জ্বর । ভালো না বাসি, এটলিস্ট মানবতা বলতে তো একটা কথা আছে । এরই মধ্যে বাবা বের হয়ে গেল ডাক্টারের জন্যে । মা বলল খোকা এই খানে একটু বস । আমি একটা ভিজা কাপড় নিয়ে আসি । মেয়েটার শরীরটা একটু মুছে দিতে হবে । এই বলে মা উঠে আমার কোলে স্ত্রীর মাথাটা রাখলো । আমার কাছে এতটাই আনইজি লাগতেছিল যে বলার আপেক্ষা রাখেনা। সে বুজতে পেরে মাথাটা নামিয়ে বালিশের মধ্যে নিয়ে নেয়।
শশুর মশাই আমাকে ফোনে না পেয়ে, শাশুড়ি আমার মায়ের নাম্বের ফোন করে । মা ফোন রিসিভ করে কোশলাদি জিজ্ঞেস করে । তার আম্মা তার সাথে একটু কথা বলতে চাইলো । মা বলল বউমার তো শরীরটা খা*রাপ , আচ্ছা নেন কথা বলেন । সে ভালো করে কথা বলতে পারছেনা । শাশুড়ি হয়তো তার মেয়ের শরীরের খোজ খবর নিচ্ছে । আমার স্ত্রী কথা শুরু করা মাত্রই আমি বারান্দায় চলে গেলাম।
একটু পরেই বাবা ডাক্তার নিয়ে আসলেন , আমি একটু আড় চোখে তাকালাম ডাক্তারের দিকে। বাবা কেন পুরুষ ডাক্তার আনতে গেলেন। বাসার পাশেই তো ডাক্তার আন্টি থাকেন । কিংবা আরেক টু সামনেই সরকারী হাস্পাতালের ভালো এক কম্পাউনডার আন্টি থাকেন। আমার এই অনুভুতিটাকে কিসের টান বলে সেটা আমি জানিনা!!!!
ডাক্তার তাকে দেখে প্রেস্কাইব করলেন । আর আমাকে বললেন কালকেই যেন উনার চেম্বারে নিয়ে গিয়ে কিছু টেস্ট করাতে ।এই বলে ডাক্তার সাহেব বিদায় নিলেন। এরই মধ্যে আমার এক ফ্রেন্ড এর ফোন আসে । সে আমাকে সন্ধায় বাহিরে কফি খাওয়ার জন্যে অফার করল । আমি ফ্রেন্ডকে বললাম বন্ধু আমার ওয়াইফ তো অসুস্থ আজ বের হবোনা । এই বলে ফোন কেটে দিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালাম । তার চেহারার মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করছি । তার মুখের মধ্যে একটা আনন্দের ছাপ । কারনটা বুজতে পারলাম ।আমি যে বন্ধুকে বলেছি ‘আজকে আমি বের হবনা, আমার ওয়াইফ অনেক অসুস্থ’ । এই কথা শুনে সে অনেকটা হেপী হয়েছে বলে মনে হয় । সে দিন বুজতে পারলাম ছোট ছোট আনন্দ গুলো মানুষকে মেডিসিনের চেয়েও বেশি ইফেক্ট করে।
মা আমার, বউইয়ের জন্যে এত পা*গল হয়তো নিজের মেয়ে নেই বলে। আমার বাবাও কম যায় না !! বউ বলতে বলতে পা*গল। এ নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। শেষ বয়সে বাবা মা*র যদি একটু খুশিতে কা*টে তাহলে মন্দ কি !! আমি আমার বেড রুমে এসে অনেক কিছু ভাবতে লাগলাম ।
পরের দিন বিকেলে আমার শাশুড়ি আমাদের বাসায় আসলেন । মায়ের মন বলে কথা। মেয়েকে নিয়ে যাবে কয়দিনের জন্যে। সেটা ভালো কথা , তাতে আমার কোন মতাতম কিংবা অনুভুতি কিছুই নেই । কিন্তু আমি অভাক হলাম একটা কথা শুনে । সেটা হলো আমা স্ত্রী বাবার বাড়ি যাবেনা ।। এই জীবনে প্রথম শুনলাম কোন মেয়ে শশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যেতে চায় না !! আমার মাও বলছে , বউমা যাও ।তোমার আম্মুর সাথে কয়দিন ঘুরে আসো । ভালো লাগবে তোমার। কে কার কথা শুনে !! সে বলছে এইখানেও আমার বাবা মা থাকে । অইখানেও আমার বাবা মা থাকে । সুতরাং আমি যাচ্ছিনা । আমার বাবা বলে উঠলো , বেয়ান সাহেবা আপনার যদি সম্ভব হয় আজকে থাকেন । আর যদি না থাকেন তা হলে দয়া করে একাই চলে যান । আমার মেয়ে আমার কাছেই থাকবে । আমার শাশুড়ি তো খুব খুশি । তার মেয়ে যেন কত সুখেই আছে শশুর বাড়িতে ...। শাশুড়িকে আমি এগিয়ে দিয়ে আসলাম ।
সামান্য দু দিনের প্রেক্ষাপটে আমি বুজতে পারলাম আমার পরিবারের মানুষ গুলো কত সুখে আছে । কিংবা আমার ভিতরেও যে একটা নিরঅহং*কার মানুষ বাস করে, যা কিনা বিয়ের একটা বছরেও আমি বুজতে পারিনি । যে মেয়েটাকে আমি অবহেলা করেছি । সে কিভাবে আমার পরিবারকে এতো সুন্দর করে রাখলো । বিয়ে তো আমার জন্যে করিনি । করেছি পরিবারের জন্যে । এখন আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে পজিটিভ । ভাল মন্দ সবই তার সাথে শেয়ার করি। প্রতিটা দিনই আমার কাছে ঈদের দিন মনে হয় । রাতে আমরা সবাই এক সাথে বসে খাই । এটাই সুখ আর এটাই শান্তি । হ্যা এই রকম অযোগ্য স্ত্রী আমার পরিবারের জন্যে যেমন দরকার ছিল। ঠিক তেমনি দরকার আমাদের ঘুনে পড়া সমাজের জন্যে।
সমাপ্ত,,