স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অবহেলা | স্বামীর অত্যাচার

 অবহেলার ভালবাসার গল্প

অবহেলার ভালবাসার গল্প

দরজা খোলার সাথে সাথেই আমার গালে সজোরে থা*প্পড় পড়ে গেলো। 


"দরজা খুলতে এতো দেরী করিস কেন?"


"আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম। আর তাছাড়া আমার শরীর টাও... "


"চুপ করতো, মাথা গরম করাস না। যা পানি নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি। "


আমি পানি এনে উনার সামনে রাখলাম। শাড়ির আঁচল আঙুলে নিয়ে গুটাচ্ছি। 


"বলছিলাম কি, বেশ কয়দিন হল আমার শরীরটা ভীষণ খা*রাপ। আমাকে একবার ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবেন? "


"কেনো শরীরে কি জং ধরেছে না কি?এই তোদের মেয়ে মানুষদদের এক সমস্যা ..। সারাদিন তো বাসাতেই থাকিস। সময়ে খাওয়া, ঘুম সব হচ্ছে তার পরেও বলিস শরীর খা*রাপ! আজব! "


"আমি সত্যি বলছি ইদানীং আমার রাত হলেই জ্বর আসে । শরীরে অসহ্য য*ন্ত্রণা শুরু হয়। আর সারাদিন মাথা য*ন্ত্রনা হয়। "


"উফফ তোকে বলছিনা চুপ থাক। অফিস থেকে আসতে না আসতেই এই হয় সেই হয় শুরু করে দিয়েছিস। আমি যে সারাদিন এতো হাড় ভা*ঙা পরিশ্রম করি কই আমার তো জ্বর আসে না। যত্তোসব আ*জাই*রা,,। "


আমি আর কথা বাড়ালাম না। গুটি গুটি পায়ে রুম ছেড়ে চলে এলাম। আমার স্বামী কাব্যর কাছে এইগুলো কোন রোগ না। এই তো সেদিন আমার হাতটা কতোটা পুড়ে গেলো। য*ন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম। কিন্তু উনার কাছে এটা কোন বড়ো বিষয় ছিলো না। উনি পোড়ার মলম আমাকে দিয়ে দিলেন। একবারো দেখলেন না হাতটা কতোটা পুড়েছে। শুধু গম্ভীর সুরে বললেন,, 


"এই সমস্ত ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে বাচ্চাদের মতো আচরণ করবে না তৃষা আমার অসহ্য লাগে "


পারিবারিক ভাবেই আমার আর কাব্যর বিয়ে হয়। আমার বাবা এক দেখাতেই কাব্যকে পচ্ছন্দ করে ফেলে। হবে নাই বা কেনো আমার বাবা তো তার পচ্ছন্দ মতো পাত্র পেয়েছেন। ছেলে বড়ো ব্যবসায়ী অনেক নাম যশ আছে। সেখানে আমার পচ্ছন্দের মধ্যবিত্ত একটা বেকার ছেলের হাতে কেন তুলে দিবেন। ছোটো থেকেই দেখে আসছি বাবা বিলাসী লোক। সবসময় নিজের স্টেটাস বজায় রাখেন। আর কাব্য মাহমুদ সব দিক থেকে পারফেক্ট। বাবার সাথে তেমন বন্ধুত্ব নেই আমার। আমার আশে পাশে চার পাঁচটা মেয়ে যেমন তার বাবার পরী হয় বা বড়ো হয়ে গেলেও আঙুল ধরে রাস্তা পার হয়। সেখানে আমি এসব কিছুই পাই নি। আমার বাবা সবসময় লাভ ক্ষতির অঙ্ক কষতেন। কাব্য মাহমুদ এর সাথে বিয়ে হলে উনি উনার ব্যাবসা দেখার একটা বিশ্বস্ত লোক পাবেন। তাতে মেয়ে খুশি থাকুক বা না থাকুক। অথচ আমার বাবা চাইলে ওই মধ্যবিত্ত বেকার ছেলেটাকে একটা চা*কুরী দিতে পারতেন কিন্তু না উনার কাছে স্টেটাস বজায় রাখাটা মাস্ট।এখানে আমার মা ছিলেন নিরব দর্শক। শুধু মা কেন আমার দাদী, ফুপু সবাই বাবাকে বেশ ভয় করতো। বাবার মুখের ওপর কেউ কোন কথা বলতে পারে না। এই সব কিছুই ছোটো থেকে দেখে আসছি। আমার বিয়ের সময়ও তার কোন ব্যতিক্রম হল না।ভেবেছিলাম বাবার কাছে না পাওয়া ভালোবাসা গুলো স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে পুষিয়ে নিবো কিন্তু তা আর হলো কই!! কাব্যর সাথে আমার ছয় মাস হল বিয়ে হয়েছে স্বামীর ভালোবাসাটা কি তাই এখনো বুঝে উঠতে পারলাম না। 


/


"এটা কি ধরনের রান্না হয়েছে? এতো লবণ! লবণ কি সস্তা হয়ে গেছে না কি যে পুরোটাই ঢেলে দিয়েছিস? "


কাব্য খাবার এর প্লেটটা আমার দিকে ছুঁড়ে মা*রলো। তারপর আমার চুলের মু*ঠি টেনে ধরে অশ্রাব্য ভাষায় গা*লিগা*লাজ শুরু করলো। দু চারটে লা*থি, থা*প্পড় মা*রলো। অসহ্য য*ন্ত্রণা হলেও কিন্তু নিরবে পড়ে থেকে কান্না করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই।।


.

.

.

.

অভাগীর আর্তনাদ

পর্ব : ১


অভাগীর আর্তনাদ

পর্ব :২শেষ


আমার চুপচাপ সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কারণ এর আগেও আমি মা*র খেয়েছি। এই তো বিয়ের এক মাস হয়নি গায়ে হা*ত তোলা শুরু করে দিলো। 


বসে বসে টিভি দেখছিলাম আমি, উনাকে বিকালের চা দিতে দেরী হয়েগিয়েছিল। ওই যে শুরু হল ছয় মাস হতে চললো বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই মা*ইর খাই। 


প্রথম প্রথম মা কে ফোনে বলতাম অনেক কান্নাকাটি করতাম। একদিন শাশুড়ী মা এর মুখে মুখে তর্ক করেছিলাম উনাদের মতে। কিন্তু আমি তো উচিত কথাই বলেছিলাম তবু উনার মনে হল আমি শাশুড়ী মা কে অসম্মান করেছি। উঠানে পড়ে থাকা চ্যালা কাঠ দিয়ে আমার শরীরে আ*ঘাত করলো কাব্য। হাত ফুলে গেলো , সারা শরীর ক্ষ*তবি*ক্ষত হল। শরীরে প্রচন্ড জ্বর নিয়ে বাবার বাসায় চলে গেলাম। পণ করলাম ম*রে গেলেও আমি আর ওই লোকের সংসার করবো না।


 কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস চারদিনের মাথায় আমি আবার ফিরে এলাম ওই লোকের সংসারে। আমি বুঝতে পারলাম মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়া মান আর বাবার বাসায় অধিকার থাকে না। আমি থাকাতে আমার মা আর বাবার মধ্যে দিন রাত অশান্তি হতো। বাবা মা কে বলতো আমাকে ঠিক ভাবে মানুষ করতে পারে নি। সব দোষ পড়লো মা এর উপর। আমি মা এর কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলাম না। যেদিন চলে আসবো সেদিন সকালে বাবার পা ছুঁয়ে সালাম করতে গেলে বাবা পা টা সরিয়ে নেয়। গম্ভীর গলায় স্পষ্ট ভাবে আমাকে উদ্দেশ্য করে মাকে বললেন,,, তোমার মেয়েকে জানিয়ে দাও জামাইকে ছাড়া এলে এই বাসার দরজা ওর জন্য বন্ধ।আমি কোন কথা বললাম না নিঃশব্দে অশ্রুপাত করতে করতে বাসা থেকে চলে আসলাম। নিজের মনে কসম করলাম মে*রে ফে*ললেও আমি জীবনেও আর কখনো বাবার বাসায় পা রাখবো না। 


পুনরায় স্বামীর কাছে যখন ফিরে আসলাম। শাশুড়ি মা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন। বললেন বেশ তো দেমাক দেখিয়ে চলে গিয়েছিলে কি করতে আবার ফিরে এলে! আমি এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলে ফেলেছিলাম ,, আমার নিজের বাসা আমি যখন খুশি যেতেও পারি আবার আসতেও পারি। শাশুড়ি মা আমার কথা শুনে আর কিছুই বললেন না। 


আমার মা বলে বিয়ের পর মেয়েদের কাছে স্বামীর বাসাটাই নিজের বাসা। তাই তো বলার সাহস পেলাম। কিন্তু যতোটা সহজ ভেবেছিলাম তা কিন্তু নয়। রাত তখন আনুমানিক সাড়ে এগারোটা হবে। সারা শরীরের অসহ্য য*ন্ত্রণায় ছটফট করছিলাম ঘুম আসেনি চোখে।


 হঠাৎ আমার পিঠে বে*ল্টের বারি পড়লো আমি চি*ৎকার করে উঠে বসি। কাব্য আমার দিকে অ*গ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। পারলে আমায় চি*বিয়ে খাবেন। শরীর এর ক্ষ*ত গুলো তখনও সারেনি। ওই ক্ষ*ত শরীরটার ওপর বেশ কয়েক ঘা পড়তে চার পাঁচ বার চিৎ*কার করলাম ঠিকি। কিন্তু এক সময় আর কিছু মনে হলো না। এক ঘণ্টা ধরে আমাকে মা*রতে মা*রতে তিনি ক্লান্ত হয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়লেন। আমি শরীরে ব্যা*থা বুঝতে পারছি না। তবে শরীরে তরল কিছু বেয়ে যাচ্ছে তা অনুভব করতে পারছি। 


বুঝতে পারলাম স্বামীর বাসা টাকে নিজের বাসা বলার অপরাধের দাম দিতে হল। তারপর থেকে মুখ বুজে সহ্য করা শিখে গেছি। কাকে বলবো? কে শুনবে আমার কথা ? যেখানে আমার জন্মদাত্রী বাবা আমাকে বুঝলো না সেখানে কে আমার কষ্ট বুঝবে!!

.

.

.

 


তাই আজও খাবারে লবণের পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ায় কাব্য অশ্রা*ব্য ভাষায় গা*লিগা*লাজ শুরু করলো আমি তখনও চুপ করে মাথা নীচু করে রেখে ছিলাম। থা*প্পড়, লা*থি মা*রলেও য*ন্ত্রণায় ছ*টফট করতে থাকলেও মুখে কোনরকম আওয়াজ করলাম না। নিঃশব্দ চোখের পানি ঝরাচ্ছি। 


মাঝরাতে ছাদে উঠে আসি। এই ছাদটাই যেনো আমার কাছে শান্তির পরিবেশ মুক্তির পরিবেশ। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে এই ছাদেই নিজেকে মুক্ত করে দিই। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবি মহান আল্লাহতালা হয়তো আমার পরীক্ষা নিচ্ছেন। আমিও দেখতে চাই এই জীবনের পরিসমাপ্তি কোথায়!! 


সকালে আমি দরজা খুলে অবাক হয়ে যাই। কারণ আমার সামনে বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। বাবা আমাকে দেখে হাসছেন। যতোই হোক আমার জন্মদাত্রী বাবা তো আমি কি রাগ করে থাকতে পারলাম। ছলছল চোখে বাবা বলে ডাকলাম,, 


" আমার জামাই বাবা কোথায়? "


বাবার মুখে এমন কথা শুনে আমি আরও বেশী অবাক হলাম। আমি অনেক আশা করেছিলাম বাবা বলবে কেমন আছিস মা? 


আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই কাব্য চলে আসে। বাবা কাব্যর সাথে ভিতরে চলে যায়। আমি দরজা খুলে এখনো দাঁড়িয়ে আছি। ভাবছি এই বুঝি বাবা বলবেন,, কেমন আছিস মা? 


কিন্তু বাবা যে এতোক্ষণে তার জামাইকে নিয়ে ভিতরে চলে গেছেন তা বুঝতেই পারি নি। শাশুড়ি মা এর ডাকে নাস্তা তৈরি করলাম। আমার বাবা আর স্বামীর কাছে নিয়ে আসলাম।উনাদের কথোপকথন শুনেই বুঝলাম বাবা তো নিজের স্বার্থ ছাড়া এক পা এগোয় না। নিজের প্রয়োজনেই এসেছেন। বুকের মধ্যে একরাশ ক*ষ্ট নিয়ে সারাদিন পার করলাম। 


সন্ধের দিকে সারা শরীরে কাঁ*পুনি দেয়। প*চা গরমে যখন সবাই ঠান্ডা বাতাস খাচ্ছে আমি তখন লেপের তলায় নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করছি। ইচ্ছে করছে আ*গুনের মধ্যে ঝাঁপ দিতে। 


আমার স্বামী আসতেই শাশুড়ি মা আমার নামে অভিযোগ করলেন। উনি কথাগুলো এতো জোরেই বলছিলেন যা আমার কানের ভিতরে ঢুকে মাথায় আ*ঘাত করছিলো। 


"রাজরানী বিয়ে করেছিস তো। সারাদিন শুয়ে বসে কাটায়। আর আমি বৃদ্ধ বয়সে এখনো কা*মলা খাঁটুনি খাটি। আর চারপাশে দেখ ছেলের বিয়ে দিবে সব আয়েশ করছে আমার পো*ড়া কপাল। "


শুধুমাত্র রাতের রান্নাটা উনাকে করতে হয়েছিলো বলেই উনি এতো কথা শোনালেন। আর এদিকে সারা সকাল থেকে বাসার ধূলো ময়লা পরিষ্কার করা, মোছা শুধু তাই নয় হাজার খানেক জামাকাপড় পরিস্কার করেছি। এগুলো আমার রোজকার কাজ। একটা কাপড় তিন চার বার করে ধুতে হয় আমার শাশুড়ি মা*র পছন্দ না হলে। 


আমি জ্বরে গুটিগুটি মে*রে শুয়ে কাঁপছি। কাব্য বেশ রাগ নিয়েই রুমে ঢুকে। তবে আমাকে লেপ কম্বল জড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখে কিছুটা নরম হল। আমার কাছে এসে আমার কপালে হাত ছোঁয়ালো। তারপর একটা জ্বরের ঔষধ দিয়ে চলে গেল।


 এইভাবেই আমার এক বছর পূরণ হল। মা এর কথা শুনে মা*রধর করতো। আবার ছোট ছোট কোন বিষয় নিয়েও কথা শোনাতো। এভাবেই কাটছিলো আমার জীবন। 


কিন্তু সেদিন এর পর আমার সবকিছু হারিয়ে গেলো। আমার স্বামী নে*শা করতো। প্রায় কোন কোন রাতে ম*দ খেয়ে গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরতো। একদিন সারা রাতটা আমি জেগে কাটালাম। উনি বাসায় আসেননি সকালে কল এলো। জানতে পারলাম উনি গাড়ি দুর্ঘ*টনায় আহত হয়েছেন। হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। শোনা মাত্রই ছুটে চলে গেলাম। 


ডক্টর বললো"আঘাতটা মাথায় বেশি হয়েছে। অনেক র*ক্তপাত হয়েছে। মাথার শিরা কে*টে গেছে। দুঃখিত আপনার স্বামীকে বাঁ*চানো গেলো না। "


এটা শোনার সাথে সাথে আমার পুরো পৃথিবীটা থমকে গেলো। আমার চারদিকে শুধুই অন্ধকার। যতোই হোক স্বামীতো, উনার প্রতি সম্মান ভালোবাসা আছে কষ্ট তো হবেই। 


কাব্য মা*রা গেছে এক মাস হতে চললো। এই এক মাসে আমাকে আর মা*র খেতে হয়নি। কোন অপমান শুনতে হয়নি। স্বামী মা*রা যাওয়ার কষ্ট হলেও দিনশেষে আমি ভালো ছিলাম।দুই মাসের মাথায় আমার শাশুড়ি আমাকে তাড়িয়ে দিলেন। তার কারণ,, সেদিন সকালে আমি আমার শাশুড়ি মাএর ঔষুধ কিনতে দোকানে গিয়েছিলাম। ঔষধ কিনে এনে যখন বাসার দিকে পা চালাচ্ছিলাম তখন খুব চেনা একটা কন্ঠ স্বরে থমকে দাঁড়ালাম। পিছনে ফিরে দেখি যেই মানুষটার হাত ছেড়ে দিয়েছিলাম পরিবার এর কথা ভেবে, আজ থেকে এক বছর আগে। সেই মানুষটা আমার সামনে দাঁড়িয়ে। 


"কেমন আছো তৃষা? "


প্রিয় মানুষটার প্রশ্নে বুকে তোলপাড় করা এক ঝড়ের সৃষ্টি হল। তবু নিজেকে দমিয়ে রাখলাম। 


"এই তো বেশ আছি। "


মুখে হাসি টেনে কথাটা বললাম। কিন্তু আমার মনে হল প্রিয় মানুষটা আমার উত্তর শুনে খুশি হলো না।


"আমি সব কিছু জানি তৃষা। তোমার স্বামী মা*রা গেছেন এক মাস হল। "


আমি মুখটা নিচু করে নিলাম। চোখে পানি এসে গেছে। প্রিয় মানুষটি আমার হাতটা ধরলো। 


" জানো তৃষা আমি এখন চা*করি করি। আমার এখন গাড়ি বাড়ি সব আছে। কোন অভাব নেই। আমার। আগে তোমাকে দশ টাকার ফুচকা খাওয়াতাম মাসে একবার। কারণ সপ্তাহে খাওয়াবার মতো আর্থিক ক্ষমতা আমার ছিলো না। কিন্তু এখন আমি তোমাকে পাঁচ তারা হোটেলে খাওয়াবার ক্ষমতা রাখি। "আমি জানি না কথাগুলো কেনো বলছে! তাহালে কি আমাকে অপমান করছে! 


আমি আমার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে হাসি মুখে বলি,, 


"ও ভালো থাকবে। "


"হুম আমি ভালো থাকবো যদি তুমি আমার সাথে থাকো।"


"কি বলছো তুমি এসব? "


"আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আমি বেকার ছিলাম বলে তোমার বাবা আমার সাথে বিয়ে দেননি। কিন্তু এখন আমি চাকরি করি আমার টাকা পয়সা আছে। তোমার বাবা মেনে নিবে। চলো আমরা আবার এক হই।"


"না তুমি ভুল করছো। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী মা*রা গেছে বলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। তুমি আমার থেকেও ভালো মেয়ে পাবে। বিয়ে করে নাও সুখি হও। ভালো থেকো। "


হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চলে আসলাম। হাজার ডাকেও পিছন ফিরে আর তাকালাম না। মানুষটার মায়ায় যদি পড়ে যাই আবার। আর তাছাড়া সমাজ কি বলবে! যেই ছেলেটাকে আমি বেকার বলে ছেড়ে দিয়েছিলাম এখন সে রোজগার করে বলে তার কাছে ফিরে যাবো! লোকে তো নি*ন্দা করবেই।


পাড়ার লোক এসে শাশুড়ি মা কে আমার নামে নালিশ করলেন কারণ রাস্তায় আমি পরপু*রুষ এর হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। জায়গা পেলাম না স্বামীর বাসায়। আমার চ*রিত্রের দোষ আছে বলেই না কি আমি উনার ছেলেকে খে*য়ে ফেলেছি। তাড়িয়ে দিলেন বাবার বাসাতেও জায়গা পেলাম না। 


ঘে*ন্না লাগছিলো পৃথিবীটাকে এই মানুষগুলোকে। রাস্তায় নেমে পড়লাম, পুরো একটা দিন রাস্তায় বসে কাটালাম। 


তারপর দিন সকালে বাসস্ট্যান্ডের বেঞ্চে বসে আছি। হঠাৎ আমার সামনে একজন বয়স্ক মহিলা এসে দাঁড়ালেন। প্রথমে আমি জিনতে না পারলেও তার মুখে আমার নাম শুনে কন্ঠস্বরটা খুব চেনা লাগলো। 


ভালো করে তাকিয়ে দেখি আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। এখন হয়তো অবসর প্রাপ্ত হয়ে গেছেন।আমাকে উনার বাসায় নিয়ে গেলেন। আমার সব কথা শুনে আমাকে আশ্রয় দিলেন। উনার ছে*লে আর ছেলের বউ উনার দায়িত্ব নেয়নি তারা বিদেশে চলে গেছে। আমাকে পেয়ে তিনি জড়িয়ে ধরে সব কথা বললেন। উনার কষ্ট গুলো আর আমার কষ্ট গুলো যেনো এক হয়ে গেলো। উনিই আমাকে পেয়ে খুশি হলেন কারণ এই বয়সে উনাকে কেউ দেখবেন। আর আমিও বাঁ*চলাম। আশ্রয় পেলাম। 


উনার সাহায্যে আমি এখন স্কুলের টিচার হয়েছি। ভালোই কাটছে। যা আয় করছি তাতে বেশ ভালো মতোই চলে যাচ্ছে। হুম আমার কষ্টের অবসান ঘটেছে। 


................ ................ ............. সমাপ্ত.......... ...........


গল্পটা সত্যঘটনা অবলম্বনে লেখা। আমার কল্পনায় না। এক আন্টির জীবনের গল্প লিখলাম। নাম গুলো কাল্পনিক।


সব ধরনের বাস্তব গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post