বাছাইকৃত সেরা গল্পের সমাহার | অবহেলার ভালবাসার গল্প

  •  খুব কাছের মানুষের অবহেলা

খুব কাছের মানুষের অবহেলা

৪ বছরের জুনিয়র ছেলেকে বিয়ে করলাম পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে।নিজের পরিবার মেনে না নিলেও ছেলের পরিবার আমায় মেনে নিলো।


পলকের পরিবার আমায় মেনে নেওয়ার কারণটা বোধহয় চাকরি ছিলো।আমি ব্যাংকের একটা সেক্টরে জব করি।মোটা টাকার বেতন।


বাবা-মা যখন জোর করে আমার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো তখন পলককে বললাম 


" বাড়ি থেকে বিয়ের প্রেশার দিচ্ছে।ওনারা আর কোনো কথা শুনতে রাজি নন "


পলক তখন করুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো 


" তাহলে আমার কি হবে?তোমায় ছাড়া বাঁচবো না "


" বিয়ে করবে?"


" এখন কিভাবে সম্ভব?কোনো জব নেই,তোমার দায়িত্ব নিবো কিভাবে?নিজেই চলি বাবার টাকায় "


" ওসব ভেবো না।আমি আছি তো,আমার বেতনে বেশ সচ্ছল ভাবেই সংসার চলবে "


পলক তখন আমায় জ"ড়িয়ে ধরে আশ্বস্ত করলো।তখন মনে হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছেলেকে আমার জীবনে পেতে চলেছি।


বিয়ের পর পলকের পড়ালেখা,সংসারের খরচ,যাবতীয় যত বিষয় আমার বেতনের টাকাতেই চলতে লাগলো।মাস শুরুতে বেতনের সব টাকা পলকের হাতে তুলে দিতাম।ও নিজেই সব খরচ করতো।পলক মাঝেমধ্যে মন খারাপ করে বলতো 


" তোমার আমার মতো অপদার্থ ছেলেকে বিয়ে করা উচিত হয়নি "


তখন বলতাম " ধূর পাগল,তোমার আর আমার কি আলাদা? শুধু ছেলেদের দায়িত্ব নিতে হবে এমন কোথাও লেখা আছে? মেয়েরাও এখন দায়িত্ব নিতে পারে "


আরো কত রংবেরঙের ফানুস উড়তে লাগলো আমাদের মনে।পরিবর্তনটা শুরু হলো পলকের বিসিএস প্রিলি দেওয়ার পর থেকে।একটুতেও রেগে যাওয়া,ঠিক মতো কথা না বলা,কেমন যেন খিটখিটে মেজাজের হয়ে গেলো।


ওর পরিবর্তনটা ঠিক মেনে নিতে পারছিলাম না।খুব কষ্ট হচ্ছিল।ভয়ে কিছু বলার সাহস ও পেতাম না।ভাবতাম পরিক্ষার টেনশন তাই,পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।


সব ঠিকঠাক হলো।পলক প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হলো।চারদিকে তার নামে জয়জয়কার।শুধু আমার মনে বিষাদ।বিষাদের কারণ, আজ সকালে টেবিলে তার রাখা ডিভোর্স পেপার।পেপারে পলকের সাক্ষর ও করা।খুব কাছের,খুব চেনা ছেলেটাকে মুহুর্তেই চির অচেনা একটা মানুষ মনে হতে লাগলো।


গল্প অকৃতজ্ঞ 

লেখক জয়ন্ত_কুমার_জয়

  • অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস

১৩ বছর নিঃসন্তান।ডাক্তারি চেকআপে আমি,স্ত্রী দুজনেই ফিট।শারীরিক সমস্যা নেই,তবুও সন্তান হচ্ছে না।


এই নিয়ে মনে তীব্র বেদনা।রাতে স্ত্রী জেদ করে বললো 


" চলোনা আজ রাতে রাস্তার মানুষদের পে"ট ভরে খাওয়াই "


রিক্ত মনে ১১ টার দিকে রাস্তায় বেড় হলাম।ভিখারি,প্রতিবন্ধী,লোকদের খাবার দিতে গিয়ে আমার মানসিক প্রতিবন্ধী ভাইকে দেখতে পেলাম।যাকে এতোদিন একটা মানসিক প্রতিবন্ধী আশ্রমে রেখে দিয়েছিলাম।


মনে পড়ে গেলো কয়েক বছর আগের কথা।প্রতিবন্ধী ভাইকে সম্পত্তি দেওয়া থেকে ঠকিয়ে ছিলাম।সাথে নিয়ে গেলাম বাড়িতে।জমির অর্ধেকটা ভাইয়ের নামে লিখে দিলাম।তাকে চিকিৎসার জন্য বড় হসপিটালে ভর্তি করালাম।


এই ঘটনার পর বছর না ফিরতেই স্ত্রীর কোল জুড়ে ফুটফুটে কন্যা সন্তান।আমাদের যেন আনন্দের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো।এতোদিন হয়তো প্রায়শ্চিত্তর অপেক্ষায় আমরা নিঃসন্তান ছিলাম।


গল্প প্রায়শ্চিত্ত

লেখক জয়ন্ত_কুমার_জয়

  • অবহেলা স্ট্যাটাস

বিয়ের আগের রাতে মেয়েটিকে বললাম " আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো " 


" হ্যা বলুন " 


" না মানে ছেলে হয়ে মায়ের বিষয়ে কিভাবে বলি! "


" আহা বলুন না।কালকে তো পুরোপুরি আপনার হয়ে যাচ্ছি।এখন থেকে লজ্জা কমাতে শিখুন।মাকে নিয়ে কিছু বলবেন? "


" জি।আমার মা একটু রাগী ধরনের।ওনার আধুনিক মেয়ে পছন্দ না।আর রাগারাগিটা একটু বেশিই করে "


" ব্যাস! এটাই? "


" জি।আপনি মায়ের মন জুগিয়ে চলতে পারবেন? মায়ের সাদামাটা মেয়ে পছন্দ "


" ওসব নিয়ে আপনি ভাববেন না।এক মাকে ছেড়ে আরেক মাকে মা বলে ডাকবো।তার মন জয় করতে হবে না?ওসব আমার উপর ছেড়ে দিন।দেখবেন শাশুড়ী থেকে কিভাবে নিজের মা করে নিই।তখন আপনারই হিংসে হবে।মনে মনে ভাববেন,ইসস এই মেয়েটা আমার মাকে কেড়ে নিয়েছে " 


কথাগুলো বলে মেয়েটা খিলখিল করে হাসলো।কি সরল সে হাসি।বু"কের ভেতরটা শীতল হয়ে গেলো।মেয়েটা বললো 


" আমার একটা অনুরোধ রাখবেন? "


" ছি ছি,অনুরোধ কেন বলছেন! বলুন না কি বলবেন "


" আমার বাবা-মা তাদের একমাত্র জামাইকে নিয়ে অনেক সখ আহ্লাদ পুষে রেখেছে।ওনাদের ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো,ভালোবাসাগুলো আপনি একটু মেনে নিয়েন।বলছি না যে মেনে নিতেই হবে,যতটুকু সম্ভব ওনাদের একটু সম্মান করবেন প্লিজ।ওনাদের ধারণা তাদের জামাই তাদের ছেলের যায়গা পূরণ করবে।আমার জন্য ওনারা অনেক করেছে।আমি চাই এমন একটা ছেলে আমার জীবনে আসুক যে আমার সাথে আমার বাবা মাকেও আপন করে নিবে।তাদের একমাত্র মেয়ে আমি।এ ছাড়া ওদের আর কেউ নেই।খুব বেশি কিছু কি চেয়ে ফেললাম? "


বুঝতে পারলাম এ মেয়ে আমার জীবনে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।বললাম 


" চলুন একটা চ্যালেঞ্জ নেই "


" কি চ্যালেঞ্জ? "


" দেখা যাক কে আগে বাবা মায়ের মন জয় করতে পারে।আপনি না আমি "


মেয়েটা হেসে বললো " আপনি হেরে যাবেন।মেয়েরা যত সহজে বাবা মায়ের মন জয় করতে পারে, ছেলেরা তা পারে না "


" আহা,দেখাই যাক না "


গল্প: প্রতিশ্রুতি 

লেখক জয়ন্ত_কুমার_জয়

  • অবহেলার ভালবাসার গল্প

একটা মেয়ের ভিষণ শখ ছিলো।ছেলের বিয়ে দিলাম।ভেবেছিলাম বৌমাকে মেয়ে বানিয়ে রাখবো।


অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! বিয়ের বছর না ফিরতেই আমার স্থান হলো বৃদ্ধাশ্রমে।


বাইরে প্রচন্ড কুয়াশা।বৃদ্ধাশ্রমের ঘরে বসে জানালা দিয়ে বাইরের খেঁজুর গাছটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবি


" এমন কুয়াশার দিন হলেই তো খোকা ভাপা পিঠা খেতে চায়।বৌমা কি বানিয়ে দেয়?খোকার আবদার গুলো কি বৌমা পূরন করে? "


এসব ভাবনার রেশ কাটলো।কেউ একজন এসে বললো, তোমার ছেলে এসছে।লাঠিতে ভর করে বাইরে গেলাম।খোকা আমায় বু"কে জড়িয়ে ধরে বললো 


" মা চলো, বাড়ি যাবো।পিঠা খেতে ইচ্ছে করছে।তুমি ভাপা পিঠা বানাবে আর আমি চুলার পাশে বসে পিঠা খাবো।খোকাকে মাফ করে দাও মা "


গল্প: অনুসূচনা

লেখক: জয়ন্ত_কুমার_জয়


ফুলসজ্জা রাতে স্ত্রীকে বললাম " আমার কাছে কিছু চাওয়ার আছে?আপনার জন্য যতটা সম্ভব করবো "


স্ত্রী সরল স্বরে বললো " তেমন কিছু না।শুধু আমায় পরিবারের সবাই ভালোবাসবেন,সম্মান দিবেন।কোনো ভুল করলে আগে ভালোভাবে বোঝাবেন।প্লিজ কেউ রাগারাগি করবেন না।রাগারাগি করলে আমার মন খারাপ হয়ে যায়,তখন ইচ্ছে করেই ত্যাড়ামি করি "


মেয়েটার কথায় আমি বিস্মিত হয়ে বললাম " আপনি কতো সহজ ভঙ্গিতে চমৎকার সব কথা বলতে পারেন! "


" হু জানি।আর হ্যা,শাশুড়ী মা মাঝেমধ্যে বকা দিলেও সমস্যা নাই।কিন্তু ভালোবাসতে হবে।যদি বুঝতে পারি শাশুড়ী মা আমায় নিজের মেয়ের মতো যত্ন করছেন তাহলে কথা দিলাম,ওনাকে নিজের মায়ের মতো সম্মান করবো,ভালোবাসবো "


" তা নাহয় বুঝলাম।আমার কাছে কিছু চান না? "


" আপনার কাছে আপাতত কিছু চাওয়ার নেই।আগে ভালোভাবে বুঝে নিই তারপর চাইবো।আমি বড্ড ভালোবাসা কাতর বুঝলেন।আমায় শুধু একটু ভালোবাসবেন।তাহলেই দেখবেন আমি স্বর্গ নিয়ে হাজির হয়েছি "


মুগ্ধ হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম।


গল্প: মুগ্ধতা

লেখক: জয়ন্ত_কুমার_জয়


বাছাইকৃত সেরা গল্পগুলো পড়ুন।

Previous Post Next Post