অভিনয় মিথ্যা ভালোবাসা | মিথ্যা ভালোবাসা স্ট্যাটাস

মিথ্যা ভালোবাসা

মিথ্যা ভালোবাসা

 অঙ্কিতা, আমি বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে চাচ্ছি। আমি তোমায় বিয়ে করতে পারবোনা।


-উফ!! পিয়াস, প্লিজ এসব সিরিয়াস বিষয় নিয়ে মজা করবানা একদম, অলুক্ষনে কথাবার্তা আমার একদম ভালো লাগেনা।


-অঙ্কিতা কথা শোন।


-তুমি চুপ থাকো তো, খালি উল্টাপাল্টা কথা বলো, জানো, আজকে জুয়েলারি থেকে গহনাগুলো বাবা নিয়ে আসছে।


-অঙ্কিতা, আমায় বলতে দাও। কথাগুলো ইম্পর্ট্যান্ট।


-ফাজলামো করোনা তাইলে, অলুক্ষণে কথা না বলে,  মজা না করে বলবা কিন্তু প্লিজ।


-হুম, দেখো, সত্যি বলছি, আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা, বিয়ে ভেঙ্গে দিতে চাচ্ছি।


-আবারো মজা করছো?? আমি কিন্তু রেগে যাবো পিয়াস।


-আমি মজা করছিনা অঙ্কিতা, শুদ্ধ বাংলায় বলছি, স্পষ্টভাবে বলছি, আমার পক্ষে তোমাকে

বিয়ে করা সম্ভব না।


-দেখো পিয়াস, তুমি জানো আমি এসব কথা নিতে পারিনা, বারবার নিষেধ করার পরও, তুমি,সিরিয়াস ব্যাপার গুলো নিয়ে কেন এমন কর?আমাকে শুধু শুধু ক্ষ্যাপায়ে কি মজা পাও বলতো?


-আমি কি তবে তোমার বাবা মায়ের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলবো? যদিও আমি তাদের সাথে এ ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম না, আমি চাচ্ছিলাম তুমি ওদেরকে জানাও।


-মানে? সত্যি সত্যি তুমি বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে চাচ্ছো????!!!!


-হ্যাঁ,চাচ্ছি, এবং এ কথায় কোন রকম ফাজলামো কিংবা মজাদার মিথ্যা নেই।


-আমি কি জানতে পারি,তোমার এই সিদ্ধান্তের কারণ কি?


-দেখো অঙ্কিতা আমি জানি, ব্যাপারটা খুব খারাপ হলো, তুমি কিভাবে নিবে জানিনা, তবে তুমি আমার থেকেও অনেক ভালো কাউকে..........


-থামো। ভণিতা না করে, দয়া না দেখিয়ে প্লিজ, যেটুকু শুনতে চেয়েছি, শুধু সেটুকু বল, কারণ কী??


-আসলে, আমার মনে হয়েছে তোমার আমার বিয়ের ডিসিশন নেয়া টা ভুল হয়েছে, মানে আমি বলতে চাচ্ছি আসলে....


-আচ্ছা থাক আর বলতে হবেনা,আমি বুঝতে পেরেছি।  পিয়াস তুমি কি বুঝেশুনে, ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছো? তুমি ভালো থাকবে?


-হ্যাঁ। আমি জানি এটা অন্যায় হয়েছে অঙ্কিতা, তোমার হয়তো মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে, কিন্তু দেখো তুমিও অনেক...........


-আমি রাখছি,সিমপ্যাথি আর দয়া মেশানো কথা আমার ভালো লাগেনা। ভালো থেকো পিয়াস। সুখী হও।


ফোনটা রেখে সুইচড অফ করে দিল অঙ্কিতা। শক্তগোছের মেয়ে অঙ্কিতা এখনোও বুঝতে পারছেনা, ঠিক কি ঘটে গেল একটু আগের কথোপকথনে!আসলেই এও সম্ভব!! ৫ বছর প্রেম করার পর যখন, বাসার সবাই হাসিমুখে বিয়ে দিতে প্রস্তুত, তখন কি না পিয়াস!! দুদিন বাদেই বিয়ে, সব আত্মীয় স্বজন বাসায় আসতে শুরু করেছে। কাকে কি বলবে অঙ্কিতা!! কিচ্ছু মেলাতে পারছেনা সে।


............


-অঙ্কি ব্যাপারটা তুই যতোটা সহজে নিচ্ছিস সেটা এত সহজ কোন ব্যাপার না, এখানে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে, মান সম্মান, আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী। তোকে বুঝতে হবে মা। আমাদের পিয়াস এর বাসায় কথা বলতে দে।


-বাবা,এ বিয়ে ভাঙ্গাতে আমার কোন সমস্যা হচ্ছেনা, আমি মেনে নিয়ে নিয়েছি, এতটুকুই কি পর্যাপ্ত নয়????


-তারপরও সমাজ বলে কিছু আছে, এটা তোমায় মানতে হবে, সবাই কথা শোনাবে।


-বাবা, সবাই সব কিছুতেই কথা শোনায়, মানুষের কাজ কিছু হলেই কথা শোনানো। ওদের কে সৃষ্টিকর্তা পাঠিয়েছেন ওৎ পেতে থাকার জন্য, কখন কার কি হবে,পরে সেটা নিয়ে নাক গলাতে হবে, কথা বলতে হবে। প্লিজ এগুলো কানে নিওনা বাবা। বিশ্বাস করো আমি মেনে নিয়েছি।


- কি ছেলে পছন্দ করলি তুই এটা? পাঁচ বছরে একবারও বুঝিসনি তুই? মান সম্মান এর ব্যাপার এটা। কিভাবে মুখ দেখাবো!!


- মা আমি ঠিক আছি এটা কি এনাফ না তোমাদের জন্য।


- তুই এ যুগের মেয়ে, তোদের কাছে কিছুতেই কিছু যায় আসেনা। সব কিছুই তোদের কাছে সহজ। 


-আমার এখানে কিছু করার আছে মা? তুমি বলো?


-কেন তুই আগে বুঝিস নি ছেলে ওমন?? কি হবে এখন??


-অঙ্কি আমি এখন কি করব? এখন তোর জন্য ছেলে কোথায় পাবো??


- বাবা আমার এখুনি বিয়ে করাটা কি খুব বেশী জরুরি??


- তো কি করবা তুমি??


-আমি কি বোঝা তোমাদের কাছে?


-মেয়ে হয়েছিস, বিয়ে দেবনা? এটা আমাদের দায়িত্ব।


-শুধু বিয়ে দেওয়াটাই দায়িত্ব??আর বিয়ে ভেঙ্গে গেছে বলে, কথা শোনানো মানুষগুলোর মুখ বন্ধ করা তোমাদের দায়িত্ব নয়? আমার সিদ্ধান্ত কে সম্মান জানানো তোমাদের দায়িত্ব নয়?? মেয়ের পাশে থেকে মেকি সমাজকে দেখিয়ে দেয়া তোমাদের দায়িত্ব নয়?? তোমরা তো দায়িত্বগুলো পালন করো কথা শোনার ভয়ে। কে কি বলবে এই ভয়ে, আসল দায়িত্ব টুকু সমাজের ভয়ে এড়িয়ে যাও। নিয়ম কানুনের ভিড়ে মেকি সব কিছু তোমাদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। আসল ব্যাপার গুলো তোমরা মানতে চাওনা।


-তুমি চুপ থাকো, পড়ালেখা করছো বলে বহুত জ্ঞানী ভাবার কোন কারন নাই, সমাজে আমরা চলি, সব কিছুই মানতে হবে।


-ওহ। আমি বুঝতে পারিনি আমার ভাবনা চিন্তা গুলো অসামাজিক!! আমি উঠছি মা বাবা।


( এটাই কি নিয়ম, সবাই এতোটা আলাদা?? কোথায় বাবা মায়ের আমার পাশে থাকার কথা!! আর তারা ভাবছে মানুষ কি বলবে?? আমি তো শুধু পিয়াস কে ভুল চিনিনি, এত বছর ধরে মা বাবার চিন্তাভাবনা গুলোও ভুল চিনেছি!! তাহলে তো কেউ থাকলো না পাশে, রাস্তাটা নিজের, একার।)


ড্রয়ার থেকে একটা খাম বের করে অঙ্কিতা, খামে তার চাকরিতে জয়েনিং এর কাগজপত্র, কাউকে না জানিয়েই এ্যাপ্লাই করেছিল সে, ভেবেছিল যদি হয় তবে সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু হওয়ার পর বাধ সাধে সবাই, মা বাবা বলেছিল এখন চাকরি করতে হবেনা বিয়েটা হোক পরে করো, আগে নিজেকে ও বাড়িতে থিতু করো, পিয়াসও একই কথা বলেছিল, ওর বাসায় মানানোর ব্যাপার নাকি আছে।অঙ্কিতা মেনে নিয়েছিল ব্যাপারটা। আজ মনে হচ্ছে এতগুলো অচেনা মানুষের কথা সে এতদিন ভেবে আসছে?? না আর না।


 ব্যাগ গোছাতে বসে গেল অঙ্কিতা, ঢাকায় ফিরে যাবে সে। চাকরিটায় জয়েন করবে। খেয়ে পরে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য তো খুব বেশী কিছুর দরকার নেই, শুধু নিজের পায়ে দাঁড়ানো খুব বেশী দরকার। কেন যেন হুট করে আরও বেশী পাথর হয়ে গেছে অঙ্কিতা, ব্যাগ গোছাচ্ছে সে, প্রতিটা ব্যাপার এত দ্রুত ঘটে গেল!!


সকালবেলাই সে অতি উচ্ছ্বাসে বান্ধবীদের আসতে বলেছিল, বাসার সব আয়োজন দেখছিল, আর সন্ধ্যাবেলায় ই তার সেই উচ্ছ্বাস কোথায় উবে গেল??!! 


এত অনিশ্চিয়তা প্রতিটি মুহূর্তে!! এত অনিশ্চিয়তা!!!!!! 


ব্যাগ গোছানো শেষে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পড়লো অঙ্কিতা, বিয়ের চিন্তায়, উদ্বেগে গত দুমাস ধরে ভালো করে ঘুমাতে পারেনি অঙ্কিতা। আজ একটু ঘুমুবে নিশ্চিন্তে, একটা ভালো ঘুম দরকার তার। 


কাল আবার সকালের বাস ধরতে হবে, ঢাকায় যেয়েই তার নতুন জীবন। কাঙ্খিত চাকরি, নিজের মতো করে বাঁচা। শুধু নিজের, একান্ত নিজের জীবন। ভাবতে ভাবতেই একটু স্বস্তিতে ঘুমুলো অঙ্কিতা।


-ছোটগল্প 

""অঙ্কিতা একটু ঘুমাবে"" 


মন ছুঁয়ে যাওয়া অসাধারন গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post