কষ্টের ভালোবাসার গল্প | মেয়েদের কষ্টের স্ট্যাটাস

 ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস

ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস

বাসর রাতে সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো "আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?

আমি তাকে শুধু এটুকুই বলেছিলাম, শুধু রঙ ধবধবে সাদা হলেই তাকে সুন্দরী আর স্মার্ট বলে না। দাতে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল, তাই বিয়েতে রাজি না থাকার কথা পরিবারে বলতে পারি নি, এর জন্য তোর কপালে আমি জুটেছি, তুই তোর মতো থাকবি আর আমি আমার মতো। 


তিন দিন পর "গ্র‍্যান্ড সুলতান" ফাইভ স্টার হোটেলে হানিমুনে গেলাম, তবে একা একা। বাসায় এসে দেখি আপদটা বাপের বাড়ি চলে গেছে। কিন্তু দুই দিন যেতে না যেতে আবার দেখি হাজির!!!

বিয়ের পর নাকি মেয়েরা বাপের বাড়ি  "যাত্রায়" দু'দিন থেকে আসতে হয়।


প্রতি রাতে তার সাথে ঝগড়া করতে হত, কারণ মশারী টা আমাকেই টানিয়ে দিতে হতো। হঠাৎ এক মধ্যরাতে আমার কানের কাছে তার মুখ এনে চিৎকার দিয়ে বলেছিল, "ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, তুমি আমাকে ভালোবাস না"?

চোখ রাঙিয়ে বলেছিলাম 

"তোর চৌদ্দ গুষ্টিকে ভালোবাসি"

শুরু হল আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ। মেয়ে মানুষরে বাবা! কখন কী করে বসে! ভয়ে  তাই বাথরুমে ঢুকলাম! এবার শান্তি,,,,,হঠাৎ  ভেতর থেকে শুনলাম আমার মোবাইলে রিং বাজছে, তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে দেখি, সে! হেসে হেসে বলল, আমি ই কল দিচ্ছি আপনাকে বাথরুম থেকে বের করার জন্য।

আমি হাত জোড় করে বললাম

তোর কাছে মাপ চাই বাবা,,মাপ চাই"


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলে গেলাম চা বাগান দেখতে, হঠাৎ তার কল পেলাম "এই শুনো, আমার জন্য এক কেজি তাজা চা পাতা নিয়ে এসো "

কিছু না বলেই লাইনটা কাটলাম আর মনে মনে বললাম

"এরকম একটা আনকালচার্ড  মেয়ে আমার কপালেই জুটলো"


অনেক রাত করে বাসায় ফিরলাম, সে বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে এসে বললো,"আজ আমি নিজ হাতে আপনাকে খাইয়ে দিবো, যদি আপনার কোন বাধা না থাকে?

কি আর করার, খাইয়ে দিলো,

ঘুমিয়ে পরলাম।

পরের দিন আরেক আবদার

"আমরা আজ এক বিছানায় থাকবো "

কি আজব মেয়েরে বাবা,,,জোর করেই যেন ভালোবাসা আদায় করবে, কি আর করার,

একটা ভুতের সাথে রাত কাটালাম। পরের দিনও একই আবদার,,,,,

সে আমার হাত ধরে বললো 

"এই সপ্তাহ টা আমাকে দিয়ে দেন না প্লিজ"

"প্রতিদিন করুনা করা আমার পক্ষে সম্ভব না"

শুধু এ কথাটাই বললাম।


পরের সপ্তাহে চাকরিতে যোগ দিলাম। একা একা আছি, বেশ ভালো ই আছি। কয়েক মাস পর আমাকে ফোন করে বলল, ডাক্তার বলছে সু-খবর আছে, বলেই লাইন কেটে দিলো,,,, এই টুকো বলতেও সে লজ্জা পাচ্ছে,,,

কি একটা আনস্মার্ট গেয়ো মেয়ে,,,,,ছিঃ


চলে এলাম এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে। নিবিড় পরিচর্যায় রাখলাম, যতো ই বলি না কেন পেটের সন্তান টা তো আমার নিজের ই। একটুও ভারি কাজ করতে দিলামনা, সময়মত নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম, সময়মত ঘুম পাড়িয়ে দিলাম, শেষ রাতে হঠাৎ জেগে দেখি, সে আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। দেখেও না দেখার ভাণ করলাম, কিছুই বলিনি,,, ওইদিন মনে হয় কিছুটা তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।

কিছুদিন পর মেয়েসন্তানের বাবা হলাম,আমার মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর। মেয়ে সুস্থ আছে তবে মেয়ের মা খুব একটা সুস্থ না, কারণ অতিরিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে, রক্তসল্পতায় ভুগছে, নিজে রক্ত দিলাম, যখন সে অচেতন তখন আমি তার পাশের সিটে রক্ত দিচ্ছি,একটা মেয়ে কতো অসহায় হতে পারে,,, কাছে থেকে নিজ চোখে না দেখলে আসলে কখনো বুঝতাম ই না, তার জ্ঞ্যান ফিরলো,আমার দিকে তাকিয়ে বলল

"আমি বাঁচবো তো? বেঁচে থাকলে তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবার একটু সুযোগ দিবে আমায়?আর যদি মরেই যাই তাহলে আর কাউকে তুমি বিয়ে করতে পারবে না, তুমি এ পাড়েও আমার, ওপাড়েও আমার, শুধু ই আমার"

আমি আর কান্না ধরে রাখতে পারছিলামনা ,সেদিন প্রথম ওর দুই হাত ধরে বলেছিলাম, "বউ তুই শুধু আমায় ক্ষমা করে দে, চোখের পানি সে নিজের হাতেই মুছে দিয়েছিলো, আর বলেছিল, "তোমায় বড্ড  ভালোবাসি"। খোদার দরবারে সেদিন প্রথম হাত তুলে তাকেই আমি চেয়েছিলাম আর বলেছিলাম, 

"আমার বিনিময়ে হলেও আমার বউটাকে ভালো করে দাও খোদা"।

ততক্ষণে ডাক্তার এসে বলল,

কেটে যাওয়া রগের মাথায় ক্যাথেটার লাগানো আছে, সেটা বের করতে ছোট্ট একটা অপারেশন লাগবে, এই বলে আমার সামনে দিয়েই আমার বউটাকে নিয়ে যাচ্ছিলো,,


অনেকক্ষণ যাবৎ অপেক্ষায় আছি, আমার বউটা সুস্থ হয়ে ফিরবে,কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আমায় ডেকে নিয়ে বললেন

"Sorry, She is no more,due to insufficiency of blood"

ডাক্তারের পায়ে ধরে  বলেছিলাম,

"ওই মেয়েটাকে তোরা বাচিয়ে দে না ভাই"

"আমার সব ফোটা রক্ত নিয়েও আমার বউটাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দে প্লিজ।

ওরা আর শুনলইনা, সব ডাক্তাররা আমার ছোট্র মেয়ের দিকে তাকিয়ে আর আমার মৃত বউটার দিকে তাকিয়ে চোখ মুচ্ছিলো, সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে আমার বউটাকে আমার সামনে দিয়ে নিয়ে গেলো,,,,,,,,,,

শেষ বিদায় দিয়ে যখন ফিরছিলাম তখন বার বার যেন কানে সেই কথাগুলো বাজছিলো, "এই সপ্তাহ টা আমাকে দিয়ে দেননা প্লিজ"

"আমার জন্য এক কেজি তাজা চা পাতা নিয়ে এসো "


তাকে ছাড়াই প্রায় পাচ বছর একা একা কাটিয়ে দিলাম, তবে তার স্মৃতিগুলো আমার সাথেই আছে। আজ আমার মেয়ের পঞ্চম জন্মবার্ষিকী, সে আমায় জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

"বাবা তুমি কি আজও আমার সেই আনকালচার্ড মাকে ভালোবাসো"????


ভালোবাসার কষ্টের গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post