ভালোবাসার গল্প
বিয়ের তিনমাস পর আজকে প্রথম স্ত্রী স*হ*বা*স করলাম,
আর আজকেই ওকে খু-ন করবো বলে ঠিক করলাম।। কিন্তু
কিভাবে খু*ন করবো তাকে? খুব ক*ষ্ট দিয়ে, নাকি অল্প
ক*ষ্ট দিয়ে? কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি।
অবশ্য যেভাবেই হোক, ওকে খু*ন করতেই হবে, এটাই
ফাইনাল।। মনে মনে ভাবছি কথাগুলো আর ওর মিষ্টি
মুখের দিকে চেয়ে আছি।। নিষ্পাপ চেহারার মেয়ে
ও।। একদম সাজানো চেহারা তার।। শ্যামবর্ণের, হালকা
গোলাপি অধর, টানা টানা চোখ, প্রশস্ত ভ্রু আর লম্বা
চুল, তাকে দান করেছে এক অপরুপ সৌন্দর্য।। যা
যেকোনো ছেলের কাছেই আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু
হবে।। অবশ্য ওর সৌন্দর্য আজকে আরো কাছ থেকে
দেখলাম।। খুব আবেদনময়ী মেয়ে ও।।
।
আমি তখনও ওর ন*গ্ন দে*হের ওপরই শুয়ে আছি। আর চেয়ে
আছি ওর শত মায়া মাখানো চোখজোড়ার দিকে।।
যেনো তার চোখের গভীর অতলে হারিয়ে যাচ্ছি
আমি।। সে চোখ এক বাধাহীন, গন্তব্যহীন জলের ধারা।।
হঠাৎ ই আবার চৈতন্য ফিরে এলো আমার।। কি সব ভাবছি
আমি? কোথায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম?? না,,,না এসব
ভাবলে চলবে না।। কোনোভাবেই তার মায়ায় পড়তে
চাই না আমি।। তাই তার থেকে ওঠে দাড়ালাম।
ও হাতটা চেপে ধরলো আমার।। আমি পেছনে ফিরে
তাকালাম। তারপর আবারো আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বলে
ওঠলো --
--আরেকটু থাকোনা প্লিজ।।
ইস্স বোধহয় পা*গল হয়ে যাবো আমি।। কোনোভাবেই
তার কথাকে ফেলতে পারলাম না। কি করবো, তার
আবেদনে নিজ থেকে সাড়া চলে আসে আমার।।
তাইতো আবারো নিজের করে নিলাম তিথি কে।।।
তিথি.........!!!যাকে তিনমাস আগে, একটুও চিনতাম না,
জানতাম না। তিথি নামের কোনো অসিস্ত্বআমার
কাছে ছিলোনা।। অথচ আজকে আমার অসিস্ত্বে বেধে
গেলো সে।। যে অসিস্ত্ব তাকে উপহার দিতে চলেছে
এক মহা য*ন্ত্রণার বি*ষ।। যা তাকে বি*লীন করে দিবে
দুনিয়া থেকে।।
।
হঠাৎ ই তিথি আরো শক্ত করে জ*ড়িয়ে নিলো আমায়।।
ভাবনায় ছেদ পড়লো আবারো।। তাড়াহুড়ো করে ওঠে
দাড়ালাম এবার, তিথিকে সুযোগ না দিয়ে। আমার
মাথায় চিন্তাগুলো জাগ্রত হতে থাকলো।। আমি সুন্দর
সময় খুজছিলাম, তিথিকে নি*শ্চিহ্ন করার জন্য।। কিন্তু
কোনোভাবেই হয়ে ওঠছিলো না।।। অবশ্য এই তিনমাসে
মেয়েটি কেমন যেনো আমাকে বিশ্বাস আর ভরসা
করতে শুরু করেছে।। যার ফলে আজকে সুন্দর সময়টা পেয়ে
বসলাম।। তিথি এবার বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।।
সুন্দর করে মাথায় হাত বুলিয়ে, যুদ্ধ জয়ী হাসি দিয়ে
বললো,,,,,
--যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।।
বলেই ও নিজ থেকেই ওয়াশরুমে ঢ়ুকে গেলো।। আজ প্রথম
ওর কথায় এতটা ল*জ্জা দেখতে পেলাম।।
আমি ঠিক ঠাক সোফায় বসে, মেয়েটিকে বোঝার
চেষ্টা করছিলাম।। ছিপছিপে দে*হের ভাজে ভাজে
লুকিয়ে আছে এক অপরুপ সৌন্দর্য।যা আমার মতো পুরুষদের
কাছে প্রচন্ড লা*লসার বস্তু।। কি অমায়িক মুখের
ভাষা,,,!!!প্রচন্ড হাস্যউজ্জল বদনের দিকে তাকালেই
যার প্রেমে হাবুডুবু খেতে ইচ্ছে করে।।।
এত প্রানোচ্ছল মেয়ে আমার জন্য সত্যিই এক বিশাল
ভাগ্যের ব্যাপার।।। কখনও কল্পনাতেও আমি তিথি কে
ভাবার যোগ্য নই।।
রংধনুর রং
ফুটপাতে ধুলোপটি খেয়ে বড় হওয়া ছেলে আমি।।
জানিনা কে আমাকে জন্ম দিয়েছে, আর জানতেও চাই
না কখনও।। ছোট্ট এই জীবনে না পাওয়ার ভেতরে, যাই
কিছু পেয়েছি তার ভেতর তেমন কোনো বিশেষত
ছিলো না।। এখন বলতেই পারি, আমার জীবনের একটাই
বিশেষ নাম, আর তা হলো তিথি।। কিন্তু সেটাও হয়তো
আর কিছু সময়ের জন্য।
ফুটপাতে বড় হয়েও কিছুটা সভ্যতা আমাকে ছুতে
পেরেছে। জানিনা সবার কাছে এই সভ্যতার নাম কি
......??আর কেমন তার পরিনয়....??
শুধু জানি ...আমার কাজ আমার কাছে সবই সভ্য নিভৃতে
আকা।। সমাজের অনেক সভ্য মুখোশের আড়ালে, তীব্র
অস*ভ্যতার ছাপ আমি কাছ থেকে দেখেছি।। দেখেছি
চারদেয়াল আর বদ্ধ পরিবেশের ভেতরে মানুষের সেই
গো*পন নির্মমতা।।। তাইতো এতকিছুর ভীড়ে, নিজেকে
আর আনুষ্ঠানিক সভ্য আর ভদ্রবেশীভাবে তুলে ধরার
ইচ্ছাটাকে জাগ্রত করতে পারি না।।
কঠিন থেকে কঠিন বাস্তবতাকে যখন আলিঙ্গন করে,
নিজেকে এতদুর নিয়ে এসেছি, তখন নিজের কাজ
থেকে কোনোভাবেই আর নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে
চাই না।।। ফুটপাতের এক রিকশাওয়ালাকে ছোট থেকে
নিজের বাবার আসনে চড়িয়েছি।। তার ছোট্ট ইনকাম,
আর আমার ধান্ধাবাজির কিছু টাকায় চলে যেতো
কোনোভাবে। তবুও কেনো জানিনা স্কুল কলেজের
ছেলেমেয়েদের মতো আমার মনের বাসনা গুলো
পড়াশোনার দিকেই মোড় নিতে থাকে।। তাইতো শত
কষ্টে হলেও নিজের গায়ে শিক্ষিতের তকমাটা
লাগাতে পেরেছি।।
আর তারই মাঝে অন্ধকার জ*গতে নিজের নাম কিছুটা
হলেও প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি।। যে নাম অনেকের
কাছে ত্রাস,,,,,আবার অনেকের কাছে ছোট্ট চশমার
ফ্রেমে বাধানো ভদ্র এক ছেলে।।
আজ বাস্তবতার বাবাকে নিয়ে সেই ছোট্ট কুঠির
টাকে বড় করতে পেরেছি।।। পেরেছি সেই বাবার
দেয়া নামের একটু স্বীকৃতি।। কেনো জানিনা এতকিছুর
ভীড়েও, বাস্তবতার বাবার সেই কড়া মেজাজের
শাসন ----
--(দেখ রাজ .....এদিকে আয় বলছি, নয়তো ধরতে পারলে
কান ছি*ড়া দিমু।।।)
আজো আমাকে টনক নড়িয়ে দেয়।
।
তিথি গোসল সেরে বেরিয়ে আসলো, আমি অপলক
তাকিয়ে আছি আবারো।। ভেজা চুল থেকে টপটপ করে
পানি পড়ছিলো, আর সমস্ত শ*রীর নীল শাড়িতে
মুড়ানো ছিলো। তিথিও পলকহীনভাবে এক নাগাড়ে
চুলগুলো মুচতেছিলো। হঠাৎ ই চুলগুলো ঝাপটা মে*রে,
ফিরিয়ে নিলো একপাশ থেকে আরেকপাশে।।
সামান্য জলের ছিটা এসে পড়লো আমার শরীরে, আমি
শিউড়ে ওঠলাম।। কি অমায়িক অনুভুতি যে আমার হচ্ছিল,
তা আর বলে বোঝাবার নয়......!!!
নিজেকে যেনো কিছুতেই নিয়*ন্ত্রণ করতে পারছিলাম
না, তাই একপা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম তিথির
দিকে, এবার সে পাশ ফিরে আমার দিকে তাকালো।
তার চোখে মুখে স্পষ্ট খুশির ছাপ। একটু মুচকি
হাসছিলো আমাকে দেখে।।। ওর প্রায় কাছাকাছি
চলে গেলাম আমি।। একটু ছু*য়ে দেখার চেষ্টা করলাম
ওকে, কিন্তু আমার হাতটা ধরে বলল ---
--যাও, যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আগে।। সব পরে হবে।।।
বলেই আমাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বাথরুমে ঢ়ুকিয়ে
দিলো।।।।
।
শাওয়ারটা ছেড়ে দিলাম।। ক্ষি*প্র গতিতে জলকনা
আছড়ে পড়ছিলো আমার ওপর।। আমি বসে পড়লাম
মেঝেতে।।। নিজের অজান্তেই ভাবনাগুলো আমাকে
ভাবিয়ে তুলছে।। আমি ঠিক করতে যাচ্ছি তো....??
আমার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো .....??
নাহ্!!! কিছুতেই না আমার দায়িত্ব আমি কিছুতেই
এড়িয়ে যেতে পারবো না।। শে*ষ করে দিবো
তিথিকে। একদম শে*ষ।।
কিন্তু গতকাল পর্যন্তও সব ঠিক ছিলো, অথচ আজকে
কেনো তিথির ওপর এতটা দুর্ব*লতা ভর করেছে??
কেনো,,,??
এ প্রশ্নের উত্তর আমাকেই খুজে নিতে হবে। আর
বেরিয়ে আসতে হবে অজানা সেই পিছুটান থেকে।।।।
অবশ্য তিথিকেও আজকে অন্যরকম লাগছে।। অন্যদিনের
চেয়ে আজকে, আমাকে বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছে।।
জানিনা কেনো,,,,,?? তবে কি তিথিও আমার ওপর
দু*র্বলতা ফিল করছে??
।
শাওয়ারের জল তখনও একই গতিতে পড়ছিলো।। হঠাৎ ই
তিথি বাইরে থেকে ডেকে বললো --
--কি হলো,,,?? হয়েছে কি তোমার?? তাড়াতাড়ি বের
হও।।
আমি বাস্তবে ফিরলাম।। তাড়াতাড়ি করে, শাওয়ার
নিয়ে বের হয়ে এলাম। তারপর বিছা*নায় গা টা
এলিয়ে দিলাম। প্রায় ঘুমঘুম ভাব ছেয়ে নিয়েছে।। হঠাৎ
ই ফোনের কাপুনিতে চোখ মেলে তাকালাম।।
ফোনের দিকে তাকিয়ে আবারো আমার মধ্যে
অস্থিরতা ভর করলো।। আমার দায়িত্বের কথাটি মনে
পড়ে গেলো।।
বিছানা থেকে ওঠে দাড়ালাম। রুমের বাইরে গিয়ে
তিথিকে খুজতে লাগলাম।।। দেখি তিথি রান্নাঘরে
রান্না করছে।।
আজকে রান্না ঘরেও তিথিকে অন্যরকম লাগছে। ও
রান্না করছিলো আর মুচকি হাসির চোখে আবারো
আমার দিকে তাকাচ্ছিল, যা সোফায় বসে স্পষ্ট
দেখছিলাম আমি।।
হঠাৎ ই ছোট্ট সুযো*গের কথা মাথায় এসে ভর করলো
আমার।। রান্না ঘরে এগিয়ে গেলাম আমি।। তিথির
নিতম্বে চোখটা আটকে গেলো আমার।। আবারো ছু*য়ে
দেওয়ার ইচ্ছাটা জাগ্রত হলো। জ*ড়িয়ে ধরলাম পেছন
থেকে তিথিকে। তিথি কিছুটা বিস্মিত হয়ে ওঠলো।।
তারপর একটু শান্ত চাহনি নিয়ে স্থির হয়ে দাড়ালো ও।
আর বলে ওঠলো ---
--রাজ ...!!!ভালোবেসে ফেলেছো আমায়??
আমি ভড়কে গেলাম ওর প্রশ্নে?? ওকে ধরার বাধনটা
একটু হালকা করলাম।। ও আবারো বলে ওঠলো --
--কি হলো রাজ?? উত্তর দিচ্ছনা কেনো?? কঠিন প্রশ্ন
করে ফেললাম আমি??
আমি তখনও কিছু বললাম না। শুধু একটু শক্ত করে আবারো
জড়িয়ে নিলাম ওকে।। ও একটা হাসি দিয়ে বলে ওঠলো
-----
--খু-ন হয়ে যাবো রাজ..............
কথাটি শুনে আতকে উঠি আমি।। সাথে সাথে ওকে
ছেড়ে দাড়িয়ে গেলাম দূরে ..........
.
.
গল্পঃ শেষ প্রহর
পার্টঃ_01
রংধনুর
গল্পঃ শেষ_প্রহর
পার্টঃ_02 & End.
রংধনুর
খু-ন হয়ে যাবো রাজ...........
কথাটি শুনে আতকে উঠি আমি।। সাথে সাথে ওকে
ছেড়ে দূরে দাড়িয়ে গেলাম আমি।। চাপা অস্থিরতা
ছেয়ে নিয়েছে আমাকে।।
হঠাৎ ই তিথি কে ছেড়ে দেওয়ায় ও একটু অবাক হলো
মনে হয়।আমার দিকে ফিরে তাকালো --
--কি হলো রাজ?? হঠাৎ ই ছেড়ে দিলে যে আমায়?
(তিথি)
-- না মানে এমনিতেই।। কি যেনো বলছিলে আমায়?? খু*ন
করে ফেলবে নাকি??
তিথি হো হো করে হেসে ওঠলো। তারপর নিজ থেকে
আমার কাছে এসে আলতো করে শার্ট টা ধরে বললো --
--তোমায় ভালোবাসায় খুন হয়ে যাবো রাজ।।
তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরলো তিথি।। বুজলাম ফুফিয়ে
কেদে ফেলেছে ও।।তারপর আবারো বললো --
--যানো রাজ, এই তিনমাসে তোমার ভালোবাসা
কতটা মিস করেছি।। যদিও আমাদের বিয়েটা একটু
অন্যভাবে হয়েছে।। আমিই প্রথম নিজ থেকে তোমাকে
মেনে নিতে পারিনি।। তবে আজ বলছি রাজ,,,,,
---সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি তোমায় ---
কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা।। আমার অনুভুতির আকাশ
এলোমেলো হয়ে আসছে।। শুধু নিরব দর্শকের মতো
শুনছিলাম তার কথাগুলো।।
কেনো জানিনা নিজেকে আর শান্ত রাখতে
পারলাম না।। তাই কোনোমতো ওকে ছাড়িয়ে
বাহিরে বেরিয়ে আসলাম।।।
।
আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। আমি একটা
সিগারেট বের করে জা*লালাম।। পরিবেশটা একটু
শান্ত হয়ে আসছে।। মনে হচ্ছে এখনি বৃষ্টি নামবে।।
আমার প্রিয় সান বাধানো পুকুরের পাড়ে বসে আছি।
আর সিগারেটে ছোট করে টান দিচ্ছি।। সিগারেটের
ধোয়া ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে।।
হঠাৎ ই বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করলো।। আমিও আর নিজেকে
জল থেকে বাচাবার চেষ্টা করলাম না।। বৃষ্টির জলে
সিগারেট টা নষ্ট হয়ে গেলো।।
নিজেকে আজ বড্ড অসহায় লাগছে।। জানিনা কেনো,
কোন মায়ায় আর নিজের ভেতর তিথিকে শে*ষ করে
দেবার স্পৃহা জাগাতে পারছি না।। মেয়েটির সামনে
গিয়ে নিজেকে আর কঠোর করতে পারছি না। অথচ
দুদিন আগেও ওকে শেষ করাই আমার প্রত্যয় ছিলো।।।
।
বৃষ্টির বেগ তখনো তেমনি ছিলো, নিজের ভেতরে
আগুন গুলো যেনো সিগারেটের আ*গুনের মতো নিভে
যাচ্ছিলো বৃষ্টির জলে। নিজের অজান্তেই নিজের
পরিচয় গুলো আবারো ভেসে ওঠছে, নিজের মধ্যে----
.
---ছোটবেলা থেকেই বেড়ে ওঠি বস্তির সেই ছোট
ঘরটিতে।।যদিও ছোটবেলা থেকে বুজতে শেখা পর্যন্ত
কে আমাকে বড় করেছে তা আজোও অজানা আমার
কাছে।। সেদিন খুধার তাড়নায় কু*কুরের খাওয়ার কেড়ে
নিয়ে খাচ্ছিলাম আমি আর জোড়ে জোড়ে কান্না
করছিলাম।। সেই মুহুর্ত যে কতটা কষ্টের ছিলো, তা
হয়তো আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না।।
জীবনের বাস্তবতা কোথায় দাড়ালে, একজন অবুঝ শিশু
কু*কুরের খাবার কেড়ে নিয়ে খায়, তা হয়তো ভাবার
ক্ষমতা সবার হয়ে ওঠবে না। কিন্তু আমি সেই
বাস্তবতাকে পার করে নিজেকে দাড় করিয়েছি।।
তেমনি এক কঠিন মুহুর্তে আমাকে কোলে তুলে
নিয়েছিলো বাস্তবতার সেই বাবা --
--সেই ভ্যানচালক মুহাম্মদ কায়সার আহমেদ।সবাই
তাকে একজন ভ্যান চালক জানলেও, আমি জানি তিনি
হলেন, মাফিয়া জগতের ডন মিঃ কায়সার জন।।। আর আমি
হলাম সেই বাবার একমাত্র ডান হাত, অন্ধকার জগতের
ত্রাস - মিঃ রাজ।।।
তিনি আমাকে চরম বাস্তবতায় কোলে তুলে
নিয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আমাকে
গড়ে তুলেছিলো অন্ধকার জগতের মাফিয়া।।
নিজের হাতে কতো অন্যায়কারি কে যে খু*ন করেছি,
তার ইয়ত্তা নেই।। তবে এতটুকু সত্য খু*নি হিসেবে বলতে
পারি, আমার জানামতে কেনো ভালো মানুষ কে
দুনিয়াছাড়া করিনি কখনও।। আর আমার বাবা মা*ফিয়া
ডন কায়সার জন শুধুমাত্র খুনের অর্ডারগুলো আমাকে
দেন,আর বাদবাকি কাজগুলো নিজের হাতে আমিই
করে থাকি।।
বাস্তবতার কড়াকাতে পৃথিবীর অনেক সত্য খুব
ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি।। যেনেছি এই
নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কিছু করার চেয়ে, কিছু না করে
টাকা কামানো সহজ।। শুধু থাকতে হবে ক্ষমতা আর
অস্ত্রের জোর আর একটুখানি মাথা খাটানোর ক্ষমতা।
জীবনে যতবার মানুষ খু*ন করেছি, তার একবারও আমার
এতটুকু হাত কাপেনি। এমনকি প্রথম যেদিন খু*ন করি,
সেদিনও আমার এতটুকু বিব্রতবোধ হয়নি।। কিন্তু একোন
চরম মুহুর্ত আমাকে আটকে ধরলো, আমি তিথিকে
কোনোভাবেই হয়তো আর খু*ন করতে পারবো না।।।
বৃষ্টির বেগ কিছুটা কম মনে হচ্ছে, এতক্ষণে ভিজে
একাকার হয়ে গেছি।। শরীরে হালকা কাপুনি অনুভব
করছিলাম আমি।। দাড়িয়ে পানিগুলো ঝেড়ে নিলাম।।
ভেতরে যাবার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু চোখের পলক
আবারো থেমে গেলো আমার, শাড়ি পড়ে খালি নুপুর
পায়ে, চুলগুলো ছেড়ে, বৃষ্টিতে ছাতা হাতে এগিয়ে
আসছিলো তিথি।। আমি আবারো মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে
আছি তিথির দিকে।।
একেবারে কাছে এসে দাড়ালো তিথি।। আমিও
চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলাম।। হঠাৎ ই তিথি বলে ওঠলো --
--খুব সুন্দর লাগছে পরিবেশটা।। তাই না রাজ??
আমি তেমন কোনো উত্তর দিলাম না। শুধু মাথা
নাড়িয়ে ওর কথায় সায় দিলাম।। এবার আমার বাহুটা
ধরে মাথা হেলান দিয়ে দাড়ালো তিথি।। আমি
আবারো শিউড়ে ওঠি।। এভাবে বেশ কিছুসময় দুজনে
নিশ্চুপ ছিলাম।। তারপর আবারো বৃষ্টি পড়া আরম্ভ
করলো।। তিথি আমার ভেজা অবস্থা দেখে
তাড়াতাড়ি ভেতরে যেতে বললো। যদিও তার চোখ
বলে দিচ্ছিল,, এই খোলা আকাশের নিচে চলনা দুজনে
ভিজি একসাথে রাজ ..... । হয়তো আমার কথা ভেবে আর
বলতে পারলো না তিথি।। এমনিতেই আমার জ্ব*রের ভয়
ও আসার পর থেকেই বলে আসছিলো।।
আমিও আর আগ বাড়িয়ে তেমন কিছু বললাম না।।
সকালের বৃ*ষ্টিস্নান সেরে ঘরে এসে কাপড় চে*ঞ্জ
করে নিলাম আমি।। আয়নায় নিজের মুখটা ভেসে
ওঠতেই, আবারো ভাবনায় পড়ে যাই আমি।। এরই মধ্যে
ফোনটা আবারো বেজে ওঠে আমার।। ভেতরটা একটু
মুচড়ে উঠলো আবারো।। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে
বলে ওঠলো --
--কাজটা করেছিস রাজ?? তিথি কে শে*ষ করেছিস
তো??
আমি কোনো উত্তর দিচ্ছিলাম না।। তাই ধমকের সুরে
এবার বলে ওঠলো --
--কিরে কথা বলছিস না কেনো?? তাহলে কি ......??
--না বা...বা...!আমি পেড়ে ওঠছি না বাবা।। আমি
হয়তো তিথি কে খুন করতে পারবো না।। (রাজ)
বলেই চোখ থেকে কয়েকফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।।
বাবা হুংকার ছেড়ে বললো --
--কি বলছিস তুই?? তুই বুজতে পারছিস,,, কি বলছিস তুই??
--হ্যা বাবা ঠিকই বলছি আমি। আমি বোধহয় তিথিকে
ভালোবেসে ফেলেছি বাবা।।। (রাজ)
ওপাশ থেকে জোড়ে শব্দ হলো।। হয়তো ফোনটা আর
সুরক্ষিত নেই।। চোখের জল মুছে পেছন ফিরে
তাকালাম আমি।। পেছন ফিরেই আতকে যাই আমি।।
তিথি দাড়িয়ে আছে আমার পেছনে।। কিছুই বুজতে
পারছি না।। কি করবোএখন?? ও কি সব কিছু জানতে
পেরে গেলো?? সব শুনে নেই নি তো?? হঠাৎ ই ঘাম
ছুটে যায় আমার শরীরে।।
ভাবনা গুলো দীর্ঘ হতে থাকে আমার।। হঠাৎ ই
ভাবনাগুলো কে পেছনে ফেলে আচমকা তিথি এসে
জড়িয়ে নেয় আমাকে।। আমি হতবাক হয়ে গেলাম।।।
তারপর তিথি জোরে কান্না আরম্ভ করে দেয়।। আর
আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।।। এবার আর চুপ
থাকতে পারলাম না।।
রংধনুর রং
আমিও জ*ড়িয়ে নিলাম তিথিকে পরম আদরে।। তারপর
তিথি আমাকে অবাক করে দিয়ে অজানা সেই অনুভুতি
গুলো বলতে শুরু করলো ---
--আমি জানি রাজ, তুমি আমাকে খু*ন করার জন্যই
বিয়েটা করেছো।। যদিও আমি বিষয়টা বিয়ের পরপরই
জানতে পারি।। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার আচরন
কখনই আমাকে তা বুজতে দেইনি।।
আমি বিস্ময়ে ওর মাথাটা আমার দিকে তুলে নিলাম।।
তারপর ও আবারো বলা শুরু করলো --
--সত্যি বলতে কি রাজ,, কথাটা যেদিন থেকে জানতে
পেরেছিলাম, সেদিন থেকে জিদের বশে আমিও
সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম তোমাকে শে*ষ করার
জন্য।। কিন্তু ভাগ্য হয়তোবা তোমাকে আমাকে এক
সুতোয় বেধে দিয়েছে রাজ।। জানো রাজ, ছোটবেলায়
থেকেই নিজের চাচা-চাচীকে বাবা মা*র আসনে
চড়িয়েছিলাম।। কিন্তু তারা যে শুধুমাত্র, আমার
বাবার সম্পত্তির লোভে আমাকে ভালোবাসার
অভিনয় করেছে তা জানতাম না।।
বলেই আবারো ফুফিয়ে কেদে ওঠলো তিথি।। আমি ওর
চোখের পানির মানে তখনও বুজে ওঠছিলাম না।।
তারপর ---
--শুধু তাই নয় রাজ, তারা যে তোমার বাবাকে,
আমাকে খু*ন করার জন্য অনেক টাকা দিয়েছে, সেটাও
আমি জানতে পারি, আমাদের বিয়ের পর।
আমাকে মিথ্যে বলে তোমার সাথে বিয়ে দেয় রাজ।।
যা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম
না।।।
জানো রাজ, তোমাকে সেদিন রাতে খুন করার জন্যই
রুমে এসেছিলাম, কিন্তু তোমার ছোট্ট ভুলেই বেচে
গিয়েছিলে তুমি।।। তোমার ফোনটা ভুলে ফেলে
গিয়েছিলে তুমি।। আর সেদিনই এক বৃদ্ধ মহিলা ফোন
করে বলে --
--বাবা আমাদের এতিমখানার খাবারগুলো শেষ হয়ে
গিয়েছে বাবা। যদি তুমি কালকে একবার আসতে।।।
যানো রাজ সেদিন ব্যাপকভাবে বিস্মিত হয়েছিলাম
আমি।। আর সেদিনই খোজ নিয়ে আরো অনেক অজানা
সত্য জানতে পারি আমি।। যা তোমার মহত্বের পরিচয়
বহন করে রাজ।।(তিথি)
আমি কোনোভাবেই তিথিকে বুজতে পারছিলাম না।।
শুধু একমনে ওর কথাগুলো শুনে যাচ্ছি লাম।। তিথি
বিরতিহীন ভাবে আবারো বলা শুরু করলো --
--আমি সেদিনই বুজেছিলাম রাজ, যে খু*নি নিজের
টাকায় এতিমখানা চালাতে পারে, যে খু*নি বৃদ্ধ-
বৃদ্ধাদের শেষ আশ্রয়স্থল হতে পারে,, সে কখনই
বিকৃতমনা, মনুষত্যহীন মানুষ হতে পারেনা।। সেদিন
থেকেই তোমাকে জানতে আর বুজতে চেষ্টা করি
রাজ।।।
যানো রাজ, আমি বিশ্বাস করতাম তুমি
কোনোভাবেই আমাকে খু*ন করতে পারবে না।। দেখো
রাজ আমার বিশ্বাসই কেমন সত্য হলো??
বলেই আবারো জড়িয়ে নিলো আমাকে। এবার নিজের
অজান্তেই অশ্রু কনা চোখে এসে ভর করলো।।এই প্রথম
নিজেকে জঘ*ন্য খুনি মনে হচ্ছে।। নিজের প্রতি নিজের
ঘৃ*না বেড়ে যাচ্ছে।। অনুভুতিগুলো বিকলাঙ্গ হয়ে
আসছে।।।
এই প্রথম কোনো নারীর ছোয়া আমাকে ভালো হওয়ার
উৎসাহ দিচ্ছে।। নিজেকে আবারো ক্ষমতার দাবানল
থেকে চিরতরে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করছে।।।।
।
।
আজ ছয় বছর পর তিথিকে নিয়ে দাড়িয়ে আছি জীবনের
এক পরম মুহুর্তে।। আজ মনে হচ্ছে, হয়তো অস্ত্র আর ক্ষমতার
বলে ধরে রাখা যায় রাজত্ব।তবে সেটা ক্ষনস্থায়ীই
হয়েই জীবনে ধরা দেয়।। আসলে প্রকৃত অজর্নগুলো
ভালোবাসার মাঝেই লুকিয়ে থাকে।। তাই হয়তো ছয়
বছর আগে নিজ শহর ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছি, শত মাইল
দুরের অন্য সেই শহরে।। যে শহরের প্রতিটি সকাল স্নিগ্ধ
ভালোবাসায় পূর্ণ থাকে প্রতিটা স্পর্শে।।। অপেক্ষার
শানিত ধারাগুলো পূর্ন আবেশে ছেয়ে নেয়, সকল অপূর্ণ
গ্লানি কে।।। শত অপেক্ষার পরও বেচে থাকে চিরন্তন
ভালোবাসাগুলো।।।
.
.
(সমাপ্ত)