ভালোবাসার মানুষের অবহেলা | স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অবহেলা

 অবহেলার কষ্টের গল্প

অবহেলার কষ্টের গল্প

রুবিনার দ্বিতীয় বিয়ে হলো…প্রথম স্বামী আরেকটা বিয়ে করে ওকে তালাক দিয়েছে।তবে ছেলে মিতুলকে রুবিনার সাথে দিয়ে দিয়েছে।এরপর আর ছেলের কোনই খবর নেয় না।

এই বিয়ের পর মিতুলকে রেখে আসতে হলো বাবার বাড়িতে। মাত্র সাত বছরের বাচ্চাটা ভীষন মা ন্যাওটা! রুবিনা এ বিয়েতে রাজি ছিল না। কিন্তু মা, ভাই, ভাবির জোরাজুরিতে শেষ পযর্ন্ত বাধ্য হলো বিয়ে করতে ! কিন্তু বুকের ভিতর কষ্টের পাহাড় জমে আছে… সে পাহাড়ের নাম মিতুল।

পাত্রেরও দ্বিতীয় বিয়ে। নাম মঈন।আবস্থাপন্ন ।প্রথম স্ত্রী মারা গেছে মিতুলের বয়সি এক ছেলেকে রেখে। রুবিনার পরিবার ভদ্র তবে তারা দরীদ্র! বাবা স্কুল মাষ্টার ছিলেন… এখন অসুস্থ ! ভাই একটা ছোট খাটো দোকান চালায়। বাবা, মা, ভাবী , ভাই তাদের এক সন্তান নিয়ে সংসারে রুবিনা বাড়তি বোঝা ! তার উপর ছেলে!বোঝার উপর শাকের আটি!

তাই সিদ্ধান্ত ওকে বিয়ে দাও! পাত্র পক্ষ অবস্থাপন্ন কিন্তু তারা শুধু রুবিনাকে চায়… তার ছেলেকে না।পাত্রের বাবার সাফ কথা রুবিনাকে নিবে তারা নাতির দেখা শুনার জন্য!সেখানে অন্যের বাচ্চার দায়িত্ব তারা নিবে না!আর পাত্র পিতার বাধ্যগত সন্তান।

সবাই রাজি হলো.. একজন  মায়ের  নিজ সন্তান রেখে , আরেকজনের বাচ্চাকে লালন  পালন করার কষ্ট কত খানি হতে পারে সেটা কেউ বুঝলো না… বুঝতে চাইলেও না।

বিয়ে পর রুবিনা চলে এলো শ্বশুর বাড়ি।মঈন প্রথমেই বলল, ছেলে মিরু আমার সব… তার আদর, যত্নের যেন কোন কমতি না হয়। রুবিনার বুকের ভিতর যত কষ্টই জমা থাকুন… তারপরও মিরুকে মায়ের আদরে কাছে টেনে নিলো।কিন্তু মিরু যেন সর্বক্ষণ মিতুলের ছায়া হয়ে তার চোখের সন্মুখে ঘুরে বেড়ায়… তাতে কি রুবিনার কষ্ট কমে ? নাহ্ ! আরো বাড়ে!

বুকের ভিতরটা সারাক্ষণ পোড়ে… মিতুলকে এক নজর দেখার জন্য! শেষে না পেরে মঈনকে বলল,

-রুবিনা, আমাকে যদি একদিনের জন্য বাবার বাড়ি যেতে দিতেন? মঈন মানুষটা নরম… কিন্তু আব্বার উপর কথা বলার সাহস তার নাই!কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

-মঈন, আব্বার অনুমতি লাগবে! এ সংসারে তার কথা ছাড়া কিছু হয় না! তবে আমি বলে দেখবো !

রুবিনার আশায় আশায় দিন কাটে। যদি যেতে দেয়। ভাইজানকে একদিন বলেছিলো, মিতুলকে নিয়ে আসার কথা কিন্তু ভাইজান বলল, নতুন সংসারে গেসিছ এত ছেলে, ছেলে করিস না! মন দিয়ে সংসার কর। মিতুল ভাল আছে! মা যত্ন করে রেখেছে.. ভাবিস না!

রুবিনা, জানে মা আর কতটুকু পারবে… পুরো সংসার তার মাথার উপর। আর ভাবি তো কাজ কর্ম করতেও চায় না!

আর মিতুলকে তো দেখতেই পারে না… এটা ভাবতেই রুবিনার চোখ পানিতে ভরে গেলো!

একদিন মঈন রুবিনার বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলতেই

আব্বা সোজা মানা করলেন! বললেন, বৌদের ওতো বাবার বাড়ি যেতে দিতে নেই…ওখানে ঝামেলা আছে! তুই বরং খেয়াল কর মিরুকে বৌমা ঠিক মত যত্ন আত্তি করছে কিনা!কথা ওখানেই শেষ!

রুবিনার মিতুলকে দেখার সব স্বপ্ন পানিতে ভেসে গেলো!

ও জানে তার ছেলেটাও খুব কষ্ট পাচ্ছে… মা ছাড়া যে সে কিছু বোঝে না! কিন্তু সংসারের এ নিষ্ঠুর আচরণে  মা, ছেলে আলাদা হয়ে রয়ে গেলো! রুবিনা সব করে কিন্তু কেমন রোবটের মত।

এ বাসায় কত ভাল, ভাল খাবার কিন্তু তা রুবিনার গলা দিয়ে নামে না। শুধু মনে হয় মিতুল কি খাচ্ছে?এত খাবার বাদ দিয়ে রুবিনা শাক, ভাত খায়! সেটা যেন কেউ দেখেও দেখে না! শাশুড়ি আম্মা মাঝে মাঝে বলে ঠিক মত খাও!  বলে.. আমি জানি তোমার নিজের ছেলের কথা চিন্তা করে তুমি কিছু মুখে দিতে পারো না!কিন্তু কিছু করার নাই।

এ সংসারে মঈনের আব্বার উপর কথা বলার কেউ নাই।আমারও ইচ্ছে করে তোমার ছেলেটা তোমার কাছে এসে থাকুক … আমিও একজন মা! কিন্তু আমার কথার কোন মূল্য  এখানে নেই। যার কথার মূল্য আছে সে তো এ বিষয়টা জানেই না! মঈনের আব্বার কড়া নিষেধ তাকে এ সব কথা বলা যাবে না।

সে হলো রুবিনার দাদি শাশুড়ি। তবে বার্ধক্য জনিত কারনে  বেশির ভাগ ঘরেই থাকেন! তবে তার মাথা এখনো টনটনে! নাত বৌকে সে পছন্দ করে! রুবিনাও যথেষ্ট চেষ্টা করে তাকে দেখা, শুনার। সময় পেলেই কাছে গিয়ে বসে কথা বলে!

এভাবেই দিন কাটছিলো…

রুবিনা আজ  ব্যস্ত রান্না নিয়ে… কারন মিরুর জন্মদিন।

 গেষ্ট  আসবে…! যথা রীতি জন্মদিন পালন হলো!সব কিছু শেষে রুবিনা আর ওর শাশুড়ি আম্মা খেতে বসলো । দাদিজান অনেকদিন পরে ঘরের বাইরে এসেছেন!আজ তিনি অনেকটা ভাল বোধ করছেন! নাতির ঘরের ছেলের জন্মদিন, তাই ইচ্ছে করেই সবার সাথে বসে খেলেন।রুবিনার হাতের রান্নার প্রশংসায় তিনি পঞ্চ মুখ!

সব শেষে রুবিনা আর আম্মা খেতে বসলো!রুবিনা নিজের

হাতে পোলাও, কোর্মা আরো কয়েক পদ রান্না করেছে। দাদিজানও ওদের সাথে বসলেন গল্প করতে। রুবিনা প্লেটে খাবার নিয়ে নাড়া চাড়া করছে.. 

মনে পড়ছে মিতুল খুব পোলাও, কোর্মার ভক্ত! টানাটানির সংসারে কখনো ভাইজান একটা মুরগি, পোলাওর চাল আনলে রুবিনা নিজে তা রান্না করতো ।সে দিন মিতুলের যেন ঈদ ছিলো!কি তৃপ্তি নিয়ে যে খেতো বাচ্চাটা! রুবিনা নিজের ভাগের গোশতটুকু ছেলেকে দিয়ে দিতো। এখন তো সে নাই, আর জিনিসের যে দাম তাতে আর ভাইজান কোথা থেকে এ সব আনবে?

এ কথাটা মনে আসতেই রুবিনার চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি ঝরলো খাবার প্লেটে! রুবিনার বুকটা কষ্টে ভেঙ্গে যাচ্ছে! একজন মা-ই বুঝবে এর গভীরতা!

দাদিজান চশমার মোটা ফ্রেমের ভিতর দিয়ে তা দেখতে পেলেন… উনি অবাক হয়ে বললেন কি হয়েছে নাত বৌ?এবার আম্মা খুলে বললেন সব। সব শুনে দাদিজান কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন!এরপর বললেন সাদেকা( আম্মা ) তুমি কিভাবে এ কথা আমার থেকে লুকিয়ে রাখলে? নিশ্চয়ই মিন্টুর( আব্বা) ভয়ে! 

এরপর ছেলে আর নাতি দুজনকেই ডাকলেন! প্রথমেই ধরলেন তার ছেলেকে! বললেন তুই এতো বড় পাষন্ড কিভাবে হলি? একজন মাকে তার সন্তান থেকে, আর সন্তানকে মা থেকে আলাদা করে দিয়েছিস? এটা তো গুনাহর কাজ…আর এ কথা কেউ আমাকে বলে নাই।লুকিয়েছে।মঈনের আব্বা কিছু বলতে গেলেন, কিন্তু দাদিজান এক ধমকে থামিয়ে দিলো! বলল, আমি কোন কথা শুনতে চাই না… আজই মঈন নাত বৌকে নিয়ে  ওর বাচ্চাকে নিয়ে আসবে।

রুবিনা অবাক হয়ে দেখলো আব্বা একটা বাচ্চা ছেলের মত

কাঁচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে!

দাদিজান বলল, নাতবৌ  খেয়ে রেডি হয়ে নাও।রাতে ছেলেকে  মন ভরে খাইয়ে দিও!এরপর যোগ করলো মিন্টু, ঐ বাচ্চা এ বাড়িতে মিরুর সমান আদরে বড় হবে! মনে রাখিস এটা আমি বলছি… আমি মরে গেলে এ কথার যেন হের ফের না হয় আমাকে কথা দে.. আব্বা বলল, ঠিক আছে।

দাদিজান মঈনকে কাছে ডেকে বললেন, তোর তো দায়িত্ব ছিলো রুবিনার কষ্টের জায়গাটা বোঝা.. এখন যা রুবিনাকে নিয়ে বাচ্চাটাকে নিয়ে আয়!এই ছেলেকেও নিজের ছেলের মত আদর

দিয়ে বড় করবি।মনে রাখিস একজন মা কখনো সন্তান ছাড়া সুখি হতে পারে না।

আম্মা খুশি হয়ে বলল, রুবিনা এবার এ বাড়িতে আমার দুটো নাতি থাকবে। মিরুর খেলার সাথী হবে।

রুবিনার ভিতরটা অসম্ভব ভাললাগায় ভরে যাচ্ছে.. ওর

চোখ বেয়ে এখন যে পানি গড়িয়ে যাচ্ছে তা আনন্দের…একজন মা-ই জানে  এ পৃথিবীতে সন্তানের চাইতে বড় কিছু নেই।

....সমাপ্ত....

অবহেলার ভালবাসার গল্প

আমাকে ১০ লা"খ টাকা লোন দিবেন স্যার..........!


—কিন্তু কেন, আপনি এতো টাকা লোন নিয়ে কী করবেন?

—আমার টাকা'টা খুব প্রয়োজন স্যার।

—কিন্তু আমরা আপনাকে টাকা"টা কি দেখে দিবো? 

আমার একটা শখের বাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই। আমাকে বিশ্বাস করে টাকা" টা দিতে পারেন স্যার। যদি আপনাদের লোন পরিশোধ না করতে পারি, আপনারা আমার বাড়ি নিয়ে নিবেন। তবুও আমাকে লোন দিন স্যার। (কথা গুলো বলতে বলতে নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি চলে আসলো। তা দেখে হয়তো ব্যাংকের কর্মকর্তার ও আমার প্রতি একটু মায়া হয়েছিলো বোধহয়।) 


—আচ্ছা.! ঠিক আছে লোন দিবো কিন্তু আমাদের কিছু কাগজ পএ পূরণ করতে হবে। (আমি বললাম আচ্ছা সব করে দিচ্ছি।)


ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বাসায় এসে বললাম- 

বউ কোথায় গো এদিকে এসো দেখো আর তুমার পড়া-লেখা খরচ নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি টাকা পেয়ে গেছি। 


(আমার বউ এর নাম- হুমাইরা...আর আমার নাম- শ্রাবণ...)


হুমাইরা:- কি, গো সত্যি সত্যি টাকা পেয়ে গেছো কী? 

শ্রাবণ:- হে। পেয়েছি গো......

হুমাইরা:- কিন্তু এতো টাকা তুমি কোথায় পেলে? 

শ্রাবণ:- এ নিয়ে তুমি ভেবো না তো। তুমি এখন মন দিয়ে পড়াশোনা টা করো। পড়াশোনা করো বড় একটা চাকরি করবা। 

হুমাইরা:- হে, তা না হয় বুঝলাম। 


.

.


ভালো ফলাফল নিয়ে নার্সিং পাশ করার পড়- হুমাইরা একটা চাকরি পেলো। কিন্তু চাকরি পাওয়ার পর সে আর আমাকে আগের মতো ভালোবাসে না। কিছুদিন যাবৎ দেখি সে কার সাথে মনে হয় ফোনে কথা ও বলে। একদিন তো ফোনে জগরা ও করছিলো খুব....আমি তা দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলাম- 


"হুমাইরা কে ফোন দিয়েছে গো।"

দিয়েছে তো দিয়েছেই তাতে তোর কী? 


(আমি অবাক হয়ে গেলাম, হুমাইরা তো আগে এমন ছিলো না। কিছুদিন এমন ভাবেই চলতে থাকে আমাদের সংসার.....) 


কিছুদিন পর-

হুমাইরা:- এই নে। ডিভোর্স পেপার। সাইন কর?

আমি:- এগুলো কী বলছ তুমি। আমি তুমাকে ছাড়া থাকবো কীভাবে? 

হুমাইরা:- এতো কথা বুঝি না। জা বলছি কর। 

আমি:- পারবো না। 


(হুমাইরা জোর করেই আমাকে দিয়ে একটা সাইন নিয়ে নিলো....)

আর বললো- 

এই শুন। পরশু আমি আর আমার কলিগ বিয়ে করছি অবশ্যই আসবি।আর শুন টাকা দিতে হবে না ফ্রীতে খেয়ে জাস। 


(সেদিন আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। লোন নিয়ে বউকে নার্সিং পড়ালাম। আর সে এখন একটা চাকরি পেয়ে আমকে ডিভোর্স দিয়ে কলিগের সাথে বিয়ে করছে। কিন্তু আমি এখনো সেই লোন ই পরিশোধ করছি।) 😓😓😓


.

বি:দ্র:- সব মেয়ে এক নয়। কিন্তু কিছু কিছু এমন মেয়ের জন্য আমরা সব মেয়েকে সার্থপর ভাবি।

.

অনু-গল্প:- লোন

কাহিনি ও লেখনীতে:- ইরতিজা_আহমেদ_শ্রাবণ

-সমাপ্ত।


মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post