- কষ্টের কিছু কথা ভালোবাসার
আমার প্রথম প্রেমিক বলেছিলো, আমায় একদিন না দেখলে সে অন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদের দেখা হয় না বছর কয়েক। না, সে অন্ধ হয়নি। বরং তার চোখ দিয়েই রোজ নতুন মেয়েটিকে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
দ্বিতীয়বার যে আমার জীবনে এসেছিলো সে বলেছিলো, আমায় ছাড়া বাঁচবে না।
কোনোরকম লাইফ সাপোর্ট ছাড়াই পাঁচ বছরের বৈবাহিক জীবনে সে দিব্যি বেঁচে আছে।
যার হাত ধরে সংসারে পদার্পণ করলাম সে বলেছিলো, আমি তার অর্ধাঙ্গিনী।
ডিভোর্সের দু'বছর পরেও সে বহাল তবিয়তে আছে।
সংসারের কাজকর্ম ও লেখাপড়ায় ভালো হওয়ায় বাবা বলেছিলো, তুই আমার ঘরের লক্ষ্মী।
আজ তার কাছেই আমি সংসারের বাড়তি বোঝা।
একটা সময় আমার আচরণে মা গর্ব করে বলেছিলো, আমার মেয়ে অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে শেখেনি।
আজ সেই মা-ই কথায় কথায় দোষারোপ করে, আমি কেন মানিয়ে নিলাম না।
নিজে সাধারণভাবে চলে যে ভাইকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ালাম তখন সে বলেছিলো, আমার অবদান সে কখনো অস্বীকার করতে পারবে না।
আজ সে আমার জন্য বন্ধুদের সামনে মুখ তুলে দাঁড়াতে পারে না।
ছেলের টিউশনের টাকা জোগাড় করতে না পারা কাকীমাকে বলেছিলাম টাকা দেয়া লাগবে না, আমি এমনিই পড়াবো। তখন কাকীমা হাতজোড় করে বলেছিলো, তোমার মত ভালো মানুষ হয় না।
আজ সেই কাকীমাই পড়শীদের কানে কানে বলে বেড়ায়, "ডিভোর্সি মেয়ে..."
যেই বন্ধুটাকে পরীক্ষার আগে হ্যান্ডনোট দিতাম সে বলেছিলো, চাকরি হলে সবার আগে আমায় জানাবে।
একের পর এক পদন্নোতি পেয়ে এখন সে মস্তবড় অফিসার, রাস্তাঘাটে আমায় চিনতেই পারে না।
আমার যে বান্ধবী বলেছিলো, আমি না উপস্থিত থাকলে বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না,
তার দ্বিতীয় সন্তান হবার খবরটাও শুনতে হয়েছে অন্যের মুখে।
আমিও একটা সময় অল্পেই ভেঙে পড়তাম, একের পর এক অবলম্বন আঁকড়ে বাঁচতে চাইতাম।
আজ আমায় ভাঙে কার সাধ্য?
আসলে মানুষ যখন কথা দেয় তখন সেই সময়ের কথা ভেবে কথা দেয়। আর এতে সেই সময়টা অনেক মধুর হয়তো হয়, কিন্তু জীবন সুন্দর হয় না। সময় বদলালে প্রতিশ্রুতিও বদলে যায়।
স্বার্থ অনুযায়ী আমরা সবাই সম্পর্ককে উল্টেপাল্টে সুবিধামত করে নিই। আসলে কারো জন্য কোনোকিছু পড়ে থাকে না। মানুষ কোনো না কোনোভাবে বাঁচতে শিখে যায়, শিখে নিতে হয়।
,,,, , , , সমাপ্ত , , , , ,
- সত্যিকারের ভালোবাসা মানে কি
কিশোরী বয়সে কাজিন ভাইয়ের প্রেমে পড়েছিলাম।রিজেক্ট করবে ভেবে কখনো বলতে পারিনি।
মনের কথা মনে চেপে রেখেই অন্য জনের সাথে বাবা বিয়ে দিলো।দুই ছেলে নিয়ে সুখের সংসার।"সুখের সংসার" কথাটার স্বীকৃতি আমি দেইনি,অন্যরা বলে।আমার কাছে হয়তো সুখী সংসারের অর্থ অন্যরকম।
আট বছর পর তার সাথে দেখা।এতোদিনে পাল্টে গেছে অনেক কিছু।ছোট কাকার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে সেই কাজিন ভাইকে দেখে কেমন যেন মায়া অনুভব হলো!মনে হলো লোকটা আমার আপন কেউ,প্রথম প্রেম কি এমনই হয়!
ভিষণ মন খারাপ হয়ে গেলো।নদীর পাড়ে এসে বসলাম।এখন লুকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দেওয়ার সময়।ঘাসের খসখস শব্দ হলো।
তাকিয়ে দেখলাম, কাজিন ভাই আমার পাশে এসে বসলো।আলতো করে হাতে হাত রাখলো।বললেন " একটা কথা বলতে চাই "
" বলুন "
" একসময় তোমায় ভালোবেসে ছিলাম,পাগলের মতো চাইতাম।তুমি অসম্ভব রুপবতী হওয়ার দরুন বলার সাহস পাইনি "
কথাটা বলে উনি উঠে চলে গেলেন।আমি কাঁদছি।আফসোস হচ্ছে,সাহস করে কেন তখন ভালোবাসি বললাম না?বললে আজ জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো।
গল্প-আফসোস
লেখক-জয়ন্ত_কুমার_জয়
- স্বামী স্ত্রীর আদর ভালোবাসা
.সেদিন দেখি জামাই যেন কার সাথে ম্যাসেজিং করছে। ম্যাসেজ করা পযর্ন্ত ঠিক ছিল কিন্তু সে ম্যাসেজের পাশাপাশি মিটমিট করে হাসছে।বিষয়টা খুবই সন্দেহজনক।উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।তারপর আস্তে আস্তে পাশে গিয়ে বসলাম।
.পাশে গিয়ে দেখি সে একটা মেয়ের সাথে চাটিং করছে।আমাকে দেখে বলতে লাগলো-
বুঝলে সাদিয়া হাসবেন্ড -ওয়াইফ ওর মধ্যে সম্পর্ক থাকবে বন্ধুত্ব সুলভ।কখনও কোন কিছু গোপন থাকবে না।এই ধরো আমি কটা প্রেম করলাম কার সাথে ডেটে গেলাম। কাকে কি ম্যাসেজ করলাম সবকিছুই তোমার সাথে শেয়ার করব আর তুমি শুনে খুব মজা পাবে।
ওহ আচ্ছা।এই গুলো বুজি মজা পাওয়ার মতো কাজ।
হ্যাঁ। অবশ্যই। দেখো আমরা তো স্বামি-স্ত্রী।চাইলেই কি আর সহজে আলাদা হতে পারব বলো।কলেজে যেমন বন্ধু-বান্ধবি সম্পর্ক।কোন কিছু গোপন থাকে না।আমাদের সম্পর্কটা ঠিক তেমন হবে বুজেছো।
মনে মনে বললাম হুম খুব ভালো করে বুঝেছি।মজা আমিও দেখাতে পারি। শুধু অপেহ্মা করো।
আরে তুমি এখনো মন খারাপ করে আছো।কাছে আসো একটা জিনিস দেখাই।আমরাতো এখন বন্ধু।
তুমি সিওর আমরা এখন বন্ধু।
তা আবার বলতে।সম্পর্ক ভালো রাখতে হলে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত।
হুম।
এই দেখো এই মেয়েটা কয়দিন যাবৎ মেসেজ করছে।ভারি মিষ্টি মেয়েটা।কত সুন্দর ম্যাসেজ করে।
হুম তাইতো দেখছি।
তুমি আবার কষ্ট পেলে নাকি।আরে আমরাতো এখন বন্ধু।কলেজে থাকাকালিন একটা মেয়েকে দেখে ক্রাশ খেয়েছিলাম।মেয়েট
াকে পটানোর জন্য সারাদিন মেয়েটার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।পরে মেয়েটা তার পোশা কুকুর দিয়ে তাড়া করে বাড়ি থেকে বেড় করেছিল।বলেই জামাইয়ের কি হাসি।যেন সে কথাটা বলে খুব মজা পেয়েছে।আমিও তার সাথে তাল মেলানোর জন্য একটু হাসলাম।দেখি আরো কিছু বের হয় নাকি।
বুজলে সাদিয়া বন্ধু ছাড়া জীবনের কোন অর্থই নেই।
আমি আর কিছু বললাম না চুপ করে সব দেখছি।কত মেয়েকে লাভ লেটার লিখেছে কত মেয়ের হাতে থাপ্পর খেয়েছে সবকিছুই বলতে লাগলো।
বলা পযর্ন্ত বিষয়টা ঠিক ছিল এখন দেখি সে নতুন নতুন অনেক গুলো মেয়ের সাথে প্রেম করছে।আর প্রেম করার গল্পগুলোও আমাকে বেশ আগ্রহ নিয়ে বলছে।আমি যেন কিছু বলতে না পারি তাই কথায় কথায় আমরাতো এখন বন্ধু বানীটা শোনাচ্ছে।এতক্ষন সব সহ্য করেছি আর পারছি না।এবার মজা দেখাতেই হবে।
.রাতে খাবার টেবিলে ডাকতে লাগলাম-
ওই মেহেদি খেতে আয়-
দেখি জামাই আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
আরে তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আমরাতো এখন বন্ধু।নে ভাত খা।একটু কম কম করে খাবি তোর যা ভুড়ি।দেখলে মেয়েরা ভয়ে পালাবে।আরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন খা।ভাত খা।
জামাই কিছু বলছে না। তার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললাম।দেখছো তুমি রাগ করছো তুমিতো বললে আমরা এখন বন্ধু।
জামাই আমার দিকে জোড় করে একটা হাসি দিয়ে বললো হুম বন্ধু।
খাবার শেষে এবার ঘুমোতে যাবার পালা।আমি বালিশ আর একটা কোল বালিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
একি!তুমি বালিশ নিয়ে কোথায় যাচ্ছো।
আমি যাচ্ছি না তুমি যাচ্ছো।
মানে?
বন্ধুর সাথে কখনও বেড শেয়ার করা যায় বলো।
আরে আমরাতো আগে স্বামি-স্ত্রী। তারপর বন্ধু।
তাইতো হলো।স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলাম। তোমাকে রান্না করে খাওয়ালাম।এখন বন্ধুর দায়িত্ব।যা নিচে গিয়ে ঘুমা।বলেই বালিশটা তার দিকে এগিয়ে দিলাম।
পরেরদিন জামাইয়ের সাথে ঘুরতে বের হয়েছি।একটা ছেলেকে দেখে এই মেহেদি দেখ ছেলেটা কি সুন্দর।কি সুন্দর চোখ।সাথে চাপ দাঁড়ি টাও।ও মাই গড।ওর নাম্বারটা প্লিজ ম্যানেজ করে দে না।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
মেহেদি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
আরে এভাবে তাকানোর কি আছে আমরা তো বন্ধু না।আরে দেখ ওই ছেলেটাকে। কি স্মার্ট হয়েছে।
তুমি ওকে চিনো?
খুব চিনি।আমাকে প্রোপজ করেছিল।রিজেক্ট করেছিলাম।এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছিলাম।
চল না প্লিজ একটু কথা বলি।
আমি যাব না। তুমি যাও।
আরে চল না।বলেই হাতটা টানতে টানতে নিয়ে গেলাম।গিয়ে পুরানো বন্ধুর সাথে কথা শুরু করলাম।
আরে সাদিয়া এটা কি তোর হাসবেন্ড?
হুম সাথে আমার বন্ধুও তাই না।বলেই জামাইয়ের দিকে তাকালাম।
ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো হুম।
বেশ ভালো।এই রকমের জামাই কয়জনের হয়। জামাইয়ের সামনে এক্স এর সাথে কথা বলছিস।সাথে পরিচয় ও কিরিয়ে দিলি।সুন্দর খুব সুন্দর।
আচ্ছা থাক আসি আর একদিন কথা হবে।
বাসায় এসে জামাই চুপ করে বসে আছে।
কিরে কি হয়েছে তোর?
আমার দিকে তাকিয়ে জামাই বলতে শুরু করলে তুমি ওই ছেলেটার সামনে আমাকে তুই বললে কেন?
বাহ আমরা তো বন্ধু।তুমিতো বলেছিলে।
আর ওই ছেলেটার নাম্বার কেন আনতে বললে?
বাহ ছেলেটাকে ভালো লাগলো তাই বললাম।আর বন্ধুকেইতো সবাই বলে।তুমিও প্রেম করো আমি কি কিছু বলি।এখন তো আমরা বন্ধু।
জামাই ছুটে এসে আমার হাত দুইটা ধরে বললো -তোমার পায়ে পড়ি এইসব বন্ধ করো।আমার ভুল হয়ছে।আমরা বন্ধু না। স্বামি-স্ত্রী।
ওটা আমার হাত।পা না।
মানে তুমি কি এখন আমাকে পায়ে পড়তে বলছো?
আমি কেন বলবো তুমি তো বললে পায়ে পড়ি।
জামাই আমার দিকে আবেগ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
মনে মনে খুব আনন্দ পাচ্ছি।বেশ হয়েছে।আর জীবনে বন্ধু হতে চাইবে না।স্বামি-স্ত্রী সম্পর্কে বন্ধুত্বসুলভ আচারণ হওয়া উচিত তবে অতিরিক্ত না।
রম্যগল্প :জামাই যখন বন্ধু।