- ভালোবাসার কষ্টের স্ট্যাটাস
ডিভোর্সের দুই বছর পর প্রাক্তন স্ত্রীর বাড়িতে গেলাম।উদ্দেশ্য ছিলো ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে আসা।
আমায় আসতে দেখে শ্বশুর মশাই বিরাট খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করে ফেললেন।লোকটা শুরু থেকেই আমায় পছন্দ করতেন,এখনো করেন।
সব শেষে যখন বললাম " বাবু তো এখন বড় হয়েছে।নিজের কাছে রাখতে চাই "
শ্বশুর মশাই দুঃখী মুখ করে বললো " ঠিকই তো।তোমার ছেলে তুমি নিবে।তো কবে নিবে? "
" আইনি কাগজের একটু ঝামেলা আছে।এসব মিটিয়ে নিয়ে যাবো "
তারপর দু'একটা কথা বলে বাড়ি ফেরার আয়োজন করলাম।ব্যাগটা নিয়ে দরজার কাছে আসতেই নজরে পড়লো দূর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রাক্তন স্ত্রীর অশ্রুসিক্ত চোখ।
তারপর কি হলো জানিনা,সেই চোখকে আর কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারলাম না।পরের সপ্তাহেই ছেলেকে বাড়ি নিয়ে এলাম।সঙ্গে স্ত্রীকেও।যতোই হোক,ছেলের আগে ছেলের মাকে ভালোবেসেছি।মাকে ফেলে শুধু ছেলেকে নিয়ে আসি কিকরে?
দীর্ঘ কয়েকবছর অন্ধকারে নিমজ্জিত বাড়িটা যেন নতুন করে আবার প্রাণ ফিরে পেলো।বাচ্চার কান্না,স্ত্রীর মায়াবী হাসি,অভিমান আমার পুরনো সব কষ্ট এক মুহুর্তেই ভুলিয়ে দিলো।
গল্প নতুনত্ব
লেখক জয়ন্ত_কুমার_জয়
- ভালোবাসার কথা
রাস্তা পার হওয়ার জন্য অনেক্ক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি।সুযোগ পাচ্ছি না।পা বিহীন একজন হুইলচেয়ারে করে পাশে এসে থেমে বললো
" মা! "
বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে বললাম " মাফ করবেন,এখন টাকা নাই "
উনি স্নিগ্ধ হেসে বললেন " টাকা চাই না।চলো রাস্তা পার করে দেই "
হতভম্ব হয়ে গেলাম।লোকটা হাতে ঠেলে হুইলচেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে রাস্তায় নেমে আমায় রাস্তা পার করিয়ে দিলেন।বললেন
" সাবধানে যেও "
ব্যাগ থেকে পঞ্চাশ টাকার নোট ওনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম
" এটা রাখো।প্রতিদিন এই সময়ে এখানে আসবে,আমায় রাস্তা পার করানোর গুরুভার এখন থেকে তোমার "
লোকটা টাকা নিয়ে চলে গেলো।কথাটা বলেছি ওনার মন ভালো করে দেওয়ার জন্য।একটু আগে রেগে কথা বলার জন্য সামান্য অনুশোচনা হলো।
পরেরদিন মোড়ের কাছে এসে দেখি লোকটা অপেক্ষারত।এখন উনিই রোজ রাস্তা পার করিয়ে দেন।
গল্প অদৃশ্য_দায়িত্ব
লেখক জয়ন্ত_কুমার_জয়
- ভালোবাসার অনুভূতি
আমার স্ত্রী বন্ধা।১০ বছরেও বাচ্চার মুখ দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি।কোথাও গেলে শুনতে হয়
" এতোদিন বিয়ে,তাও বাচ্চাকাচ্চা নাই! "
" ডাক্তার দেখাচ্ছো না? "
" এসব বিষয়ে কবিরাজ ভালো কাজ করতে পারে "
আমার দাম্পত্য জীবন নিয়ে লোকমুখের এসব অখাদ্য,ঠেসমারা কথাগুলো শুনতে শুনতে মৃ"তপ্রায় আমি।
এসব প্রশ্ন লোকজনের সামনে জিগ্যেস করার কি আছে? যাদের বাচ্চা হয় না তারা কি ডাক্তার,কবিরাজ কম দেখায়?চেষ্টা কম করে?যেখানে সেখানে এই এক কথা মনে করিয়ে দিতে হবে?বাচ্চা ছাড়া কি ভালো থাকা যায় না?
সেদিন বাড়ি ভর্তি আত্নীয়র সামনে এক মহিলা স্ত্রীকে বললো " কিগো বউ,শুনলাম তোমাদের নাকি বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছে না? "
কথাটা শুনে ইচ্ছে করছিলো জুতো খুলে ওনার মুখে মা"রি।ওনার কথা শুনে স্ত্রী তিনদিন অঝোরে কেঁদেছে।ওর কান্না দেখে আমি নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি,বাচ্চার জন্য আমার খারাপ লাগেনা।খারাপ লাগে সরল স্ত্রীকে যংন লোকজন এসব খোঁচা দিয়ে কথা বলে।
মানুষ কি এতটুকুও বুঝেনা?এসব প্রশ্নে একটা মেয়ের অদৃশ্য র"ক্তক্ষরণ হতে পারে!
কিছুদিন বাদেই ছোট ভাইয়ের বিয়ে।বাড়ি লোকে গমগম করছে।মাঝবয়সী এক মহিলা এসে আমায় বললো
" আমায় খুলে বলো,এক পরিচিত কবিরাজ আছে,উনার ঔষধে কাজ হয়।সমস্যা তোমার নাকি বউয়ের?কার সমস্যা?"
হাতে চায়ের কাপ ছিলো,রেগে সেটা মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে কঠিন স্বরে বললাম
" আমাদের কোনো সমস্যা নাই।আসল সমস্যা আপনাদের।আপনারা জাতির সমস্যা "
গল্প বন্ধা
লেখক জয়ন্ত_কুমার_জয়
- ভালোবাসা কাকে বলে
ঝগড়া হলে আমার স্ত্রী অন্য ছেলের সাথে প্রেম করে।বিষয়টা বুঝতে পারি বিয়ের একসপ্তাহ পর।
সেদিন সকালে স্ত্রী স্নান করার পর আয়নার সামনে দাড়িয়ে রংঢং করে আমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাতে লাগলো।যেমন ইচ্ছে করেই আঁচল ফেলে দেওয়া,সেই আঁচল মেঝে থেকে তুলতে গিয়ে আমার দিকে নেশালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করা,এসব আমি বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে ছিলাম।
সমস্যাটা হলো এই যায়গাতেই।স্ত্রী আমার উপর সেইরকম ক্ষেপে গেলো।ঠিক মতো কথা বলে না,কাছে আসতে চাইলে ফোরন কে'টে অন্যদিক চলে যায়।
অফিসে গিয়ে ভাবলাম একবার কল করে সরি বলবো।কল করতে গিয়ে দেখি নাম্বার ব্লক! সোসাল মিডিয়ার সব যায়গা থেকেই আমি ব্লক!
নতুন আইডি খুললাম,আইডির নাম দিলাম " রাগ করেনা সোনা বউ "।
স্ত্রী রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলো।ধুমছে সুরের কথাবার্তা চলতে লাগলো।এদিকে আমার বু" কের অর্ধেকটা খসে পড়ে যাচ্ছে।রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেলো।সামান্য আদর করিনি জন্য ফেসবুকে যার তার সাথে সে প্রেমালাপ শুরু করে দিবে!
দীর্ঘ দুইদিন পর দুইটা আইসক্রিম,একটা লাইটিং বেলুন,আর এক প্যাকেট হাওয়াই মিঠাই দিয়ে স্ত্রীর রাগ ভাঙ্গালাম।অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটলো তখন।স্ত্রী আমার ফেক আইডিতে মেসেজে লিখলো
" এতোদিন গাধা স্বামীটা আমার রাগ ভাঙ্গায়নি জন্য আপনার সাথে কথা বলছি।এখন আমার রাগ শেষ।সো গুড বাই "
এটা লিখে ব্লক করে দিছে।এমন ঘটনায় আমি হতভম্ব।এ কেমন মেয়ে! স্বামীর সাথে রাগ করে থাকলে অন্য কারো সাথে কথা বলে সেই রাগ প্রশমন করে!
কিছুদিন বাদে আমার কলিগ রুপম বড্ড মিল দিতে শুরু করলো।বারবার আমার স্ত্রীর সম্পর্কে জিগ্যেস করে।মনে খটকা বাড়তে লাগলো।স্ত্রী আবার আমার উপর রাগ করে কলিগের সাথে কথা বলতেছে নাকি!
অফিসের কাজ শেষে বাড়ি ফিরে গভীর ভাবে চিন্তা করতে লাগলাম যে স্ত্রীর সাথে লাস্ট কবে কথাকাটি হয়েছে কিংবা ও আমার উপর রেগে আছে কিনা।
অনেক ভেবে মনে পড়লো, তিনদিন আগের রাতে ও আমার হাতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলো।হাত ঝিমঝিম শুরু হয়েছিলো জন্য ওকে বালিশে মাথা রাখতে বলেছিলাম।অভিমানের সূত্রপাত বোধহয় এখান থেকেই শুরু!
সেই রাতেই রাস্তায় দীর্ঘক্ষন খুঁজে ঝালমুড়ি,ফুসকা,আচার আর লাল রঙ্গের লিপস্টিক কিনে দিয়ে স্ত্রীর অভিমান ভাঙ্গালাম।
রাগ ভাঙ্গিয়ে শুয়ে ঘুমের ভান করে চোখ বন্ধ করে রইলাম।স্ত্রী আমার বু'কে মাথা রেখে আচার খাচ্ছে।খাওয়া শেষে মেসেঞ্জারে ঢুকে সেই কলিগকে ব্লক করে দিলো।
ওর কর্মকান্ড দেখে হাসিও পাচ্ছে রাগও হচ্ছে।আমার সাথে অভিমান হলে অন্য ছেলের সাথে কথা বলে,অভিমান ভাঙ্গালেই তাকে ব্লক! মেয়েটা নিতান্তই বাচ্চা।তবে রাগ হলেও উপায় নেই।১৫ বয়সী মেয়েকে বিয়ে করেছি।পাগলামি তো সহ্য করতেই হবে!
তবে চালাক আমিও কম না।একজনের থেকে ২৫০ টাকা দিয়ে ১০০ টা আইডি কিনে নিলাম।সবগুলো আইডি দিয়েই স্ত্রীকে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে রাখলাম।
এখন অভিমান হলে ও আমার যেকোনো একটা ফেক আইডির রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করে।আমি কাজের ফাঁকে ওর সাথে ফেক আইডিতে কথা বলি।মজাই লাগে বিষয়টা।দুই তিনদিন পর চকলেট,ঝালমুড়ি, ফুল এসব দিয়ে রাগ ভাঙ্গাই।রাগ ভাঙ্গার সঙ্গে সঙ্গে ও ফেক আইডি ব্লক করে দেয়।
এই কয়দিনে ৫০ টা আইডি ও ব্লক করে দিয়েছে।আবার আইডি কিনতে হবে।ঘরের অভিমান ঘরের লোকের সাথেই মেটাচ্ছে মেয়েটা।অপেক্ষায় আছি কবে ও বড় হবে।
গল্প অবুঝ
লেখক জয়ন্ত_কুমার_জয়