হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প | রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

 বেস্ট রোমান্টিক স্ট্যাটাস

বেস্ট রোমান্টিক স্ট্যাটাস

--মেয়ে পছন্দ হয়েছে তোমার সৈকত?

--হ্যাঁ পছন্দ তো হয়েছে। কিন্তু মেয়ের সাথে কি ফ্রী পাবো?


বিয়ের জন্য কনে দেখতে আসা পাত্রের মুখে এমন অপ্রার্থিত কথা শুনে কনের পরিবার সহ খোদ কনে জিনিয়া বিব্রত হয়ে গেল। তারা একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। ছেলের কথায় সাগরের মা বাবাও কেমন বিভ্রান্তিতে পরে গেলেন। তাদের চেহারায় সেটার আভাস ভেসে উঠেছে। জিনিয়া ভ্রু কুঁচকে চোরা চোখে তাকালো তার সামনে সোফায় বসে থাকা ভদ্রলোক টার দিকে।  ফ্রী? ফ্রী বলতে কি বলতে চাইছে সে? দেখতে তো ভদ্রই মনে হয়। শিক্ষাগত দিক থেকেও শুনেছি অনেক ভালো। তাহলে এতো ভদ্র সুশীল সমাজের লোক হয়ে উনি কি যৌতুক দাবি করছে? ভাবতেই যেন মাথা গরম হয়ে গেল জিনিয়ার। দাঁত কিড়মিড় করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর বাবা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো। 

--দেখুন আমরা অতি ভদ্র সমাজের লোক।মেয়ের বিয়েতে কোন কিছুর কমতি রাখবোনা।তবে আপনারা যদি যৌতুক দাবি করতে চান তাহলে আমি দুঃখীত। আমাদের তাহলে মাফ করবেন। 


সাগরের ব্যাপার টা সামলে নিতে ওর মা কোনরকমে জোরপূর্বক হেসে বললো। 

--আরে না না ভাইসাহেব কি বলছেন আপনি এসব? আমরা এসব যৌতুকের মতো নিচু কাজ কখনোই করি না। আ আসলে হয়েছে কি আমার ছেলেটা একটু হাস্য রসিক ধরনের।সব জায়গায় কথায় কথায় মজা করা ওর একটা বদ অভ্যাস। আপনারা ওর কথায় কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আমাদের শুধু আপনাদের মেয়েটা চাই আর কিছুনা।


সাগর ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর মা সাগরের হাত চেপে ধরে ওর কথা বন্ধ করে দিলো। জিনিয়ার মা বাবার মুখে এবার স্বস্তির হাসি দেখা গেল। তবে জিনিয়ার ব্যাপার টা কেমন সন্দেহজনক মনে হলো। তবে কিছু বললোনা ও। ভাবলো হয়তো উনারা সত্যিই বলছেন। বিয়ে ঠিক হয়ে গেল তাদের। 


বিয়ের দিন কাজী সাগরকে কবুল বলতে বললে সে বলে উঠলো। 

--কবুল বললে কি হবে? 


--তোমাদের বিয়ে হবে। তুমি বউ পাবে।


--শুধু বউ পাবো? সাথে কিছু ফ্রী পাবোনা? মানে কোন ফ্রী অফার নেই? 


কাজী সাহেব সহ বিয়েতে আসা সব লোকজন তব্দা খেয়ে গেল। কোন বরের মুখে এমন আজগুবি কথা কখনো শুনেছে কিনা সন্দেহ। জিনিয়ার ছোটবোন সহ আরও কিছু কাজিন বোনেরা এসে মজা করে বললো। 

--আরে জিজু  অফার আছে তো।ফাটাফাটি অফার।বউয়ের সাথে এই সুন্দর সুন্দর শালী গুলোও ফ্রী পাবেন। 


সাগর এবার প্রসন্ন মনে বললো।

--হ্যাঁ তাহলে কবুল বলাই যায়। অফার টা মন্দ না। 

অতঃপর সে কবুল বললো।


বাসর ঘরে,

সাগর এসে জিনিয়ার ঘোমটা তুললো। জিনিয়া লাজুকলতা হয়ে গেল। তবে তার এই লাজুকতাকে বেলুনের মতো ঠুস করে ফাটিয়ে দিয়ে সাগর বলে উঠলো। 

--আচ্ছা এখন তো আমাদের বাসর তাইনা? তো বাসরের কোন অফার নেই? মানে বাসরের সাথে কি ফ্রী পাবো?


জিনিয়ার মাথার ওপর মনে হচ্ছে কাক এসে কা কা করে ডাকছে। সেকি ঠিক শুনলো? এই লোকটা কি সত্যিই এইমাত্র এই বাক্যটাই বের করেছে? জিনিয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। তখনই মনে পড়লো তার শাশুড়ির বলা কথা। একটু আগেই ওর শাশুড়ী বলেছে সাগরের নাকি একটা সমস্যা আছে। আসলে ওর একটা বদ অভ্যাস আছে। সবকিছুতেই নাকি ও শুধু ফ্রী খুঁজে বেড়ায়। ফ্রী অফার ছাড়া নাকি সে কোন কিছুই করেনা। কথাটা মনে করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল জিনিয়া। তারপর সাগরের পাঞ্জাবির কলার টেনে ধরে বললো।

--পাবে তো। সবচেয়ে আকর্ষণীয় অফার। বাসর করলে বাচ্চা ফ্রী পাবে। সো বলো অফার লুফে নিতে চাও?


--হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। এটা তো আমার লাইফের বেস্ট অফার। লেটস গো ফর ইট।

__


বিরক্তির শীর্ষে চড়ে জিনিয়া হাতের জিন্সের প্যান্ট টা সাগরের মুখের ওপর ছুড়ে মেরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো। 

--এটা কি এনেছ? আমি তোমাকে শাড়ী আনতে বলেছিলাম তুমি জিন্স কেন এনেছ?


--আরে শাড়ীর সাথে কোন ফ্রী অফার ছিলো না। তবে এই জিন্সের সাথে জুতা ফ্রী পেয়েছি তাই এটাই আনলাম। পোশাকের সাথে জুতাও ফ্রী। দেখেছ আমি কতো স্মার্ট। 


জিনিয়ার মন চাচ্ছে এই জুতা দিয়েই সাগরের মাথা ফাটাতে। এই ফ্রী অসুখে আক্রান্ত রুগীর সাথে বিয়ে হয়ে জীবন তেজপাতা হয়ে গেল। সে দাঁত কিড়মিড় করে বললো। 

--তো আমার কাজিনের বিয়েতে কি এখন আমি এই জিন্স পড়ে যাবো? 


--হ্যাঁ কেন গেলে কি হবে? জিন্স পড়ে গেলে কি তোমাকে বিয়েতে খেতে দিবে না নাকি? 


জিনিয়া কপাল চাপড়াতে লাগলো। এই পাগলের সাথে কথা বলে নিজের মাথাই নষ্ট হয়ে যাবে। সবসময় এ এমনই করে। সেদিন কেক সাজানোর জন্য ক্রীম আনতে বলায় ফেইসক্রীম নিয়ে এসেছে। জিজ্ঞেস করলে বললো, ক্রীমের সাথে নাকি শাবান ফ্রী পেয়েছে তাই এই ক্রীম এনেছে। চুলের জন্য নারকেল তেল আনতে বলায় সোয়াবিন তেল এনে বলে, এই তেলের সাথে নাকি একশ গ্রাম ফ্রী আছে। পেট ব্যাথার জন্য ঔষধ আনতে বলায় জন্মনিরোধক বড়ি নিয়ে এসে বলে, এগুলো নাকি ফ্রী বিতরণ করছিল। একদিন বাইরে গিয়ে খাবার খেতে চেয়েছিলাম বলে সে আমাকে মাজারে নিয়ে বাইরে সবার সাথে বসিয়ে দিয়ে বলে, এখানে ফ্রী খাবার পাওয়া যায়। জিনিয়ার তখন হাত ছড়িয়ে গলা ছেড়ে কানতে ইচ্ছে করছিল। এমন নমুনা কি ওর কপালেই জুটতে হলো?


কিছুদিন হলো জিনিয়ার কেমন শরীর খারাপ করছিল।টক কিছু খাওয়ার খুব ইচ্ছে হচ্ছে। সে সাগরকে বললো টক কিছু আনতে। অতঃপর সাগর নিয়ে এলো টক খাবার। খাবারের প্যাকেট ভর্তি করা একটা ব্যাগ এনে জিনিয়ার হাতে দিয়ে বললো।

--এই নাও তোমার টক খাবার। 


ব্যাগ ভর্তি খাবার দেখে জিনিয়ার একটু খটকা লাগলো। সে একটা প্যাকেট খুলতেই তীব্র দুর্গন্ধ এসে নাকে প্রবেশ করলো। জিনিয়া সাথে সাথে নিজের নাক চেপে ধরে বললো। 

--ইয়াক, এসব কি এনেছ তুমি? এই বাসি পঁচা বিরিয়ানির প্যাকেট কেন এনেছ?


--আরে তুমিই তো বললে টক খাবার খাবে। আর এই খাবার গুলো টক হয়ে গেছে। দোকানদার সবগুলো ফ্রী ফ্রী দিয়ে দিলো। আর এমন ফ্রী অফার কি আমি ছাড়তে পারি বলো।


জিনিয়ার এবার নিজের চুল নিজেরই টেনে ছিঁড়ে ফেলতে মন চাচ্ছে। এই নমুনা টাকে কোনকিছু আনতে বলাই ওর সবচেয়ে বড়ো ভুল।


জিনিয়া বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে ডক্টর আনা হলো চেকাপের জন্য। ডক্টর জিনিয়াকে দেখে বললো। সি ইজ প্রেগন্যান্ট। মিঃ সাগর আপনি বাবা হতে চলেছেন।


সাগর তখন বলে উঠলো। 

--শুধুই বাবা হচ্ছি? সাথে কিছু ফ্রী পাবোনা? 


ডক্টর বেহুঁশ। 


জিনিয়াকে হসপিটালে আনা হয়েছে। ডেলিভারি হবে তার। ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাগর সহ সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরেইনার্স বাইরে এসে হাসিমুখে বললো। 

--অভিনন্দন আপনার ছেলে হয়েছে।


সাগর বলে উঠলো। 

--এক্সকিউজ মি নার্স। আমরা কি শুধু বাচ্চাই পাবো? বাচ্চার সাথে অফারে কিছু ফ্রী পাবোনা? 


নার্স হতভম্ভ হয়ে বললো।

--ফ্রী মানে? বাচ্চার সাথে আবার কি ফ্রী চান?


--আরে কমছে কম একটা ইনজেকশন তো ফ্রী দিতেই পারেন।


নার্স বেচারি অক্কা পাবার উপক্রম। সাগরের মা বাবা কোনরকমে তার অপদার্থ ছেলেকে ওখান থেকে টেনে নিয়ে গেল।


বাচ্চার জন্য ট্রলি আনতে বলেছিল জিনিয়া। সুতরাং গ্রেট সাগর ট্রলি নিয়ে এসেছে। যা দেখে বরাবরের মতোই খেপে ভুত গ্রেস আছে জিনিয়া। চরম বিরক্ত হয়ে সে বললো।

--তুমি কি কখনো কোন জিনিস ঠিক করে আনতে পারোনা নাকি? এটা কি এনেছ?আমি তোমাকে বাবুর জন্য ট্রলি আনতে বলেছিলাম। আর তুমি এটা কি এনেছ? রাস্তার ময়লা তোলার ঠেলা গাড়ি? 


আরে তুমি ট্রলি আনতে বলেছিলে তো এটাও তো ট্রলি। আর এটা একদম ফ্রী পেয়েছি। তোমার তো আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। এমন একটা মহান হাসব্যান্ড পেয়েছ। রোজ নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কজনের কপালে এমন মহৎ হাসব্যান্ড জোটে। আর তুমি সেটা পেয়েও গুরুত্ব দেওনা।


ছেলে বাবাকে তার রেজাল্ট কার্ড দেখিয়ে বললো। 

--বাবা আমি ক্লাসে ফাস্ট হয়েছি।


সাগর বললো।

--শুধু ফাস্ট হয়েছিস? সাথে কিছু ফ্রী পাসনি?


ছেলের মুখ ফাটা বেলুনের মতো হয়ে গেল। 


বড়ো হয়ে সে আবার তার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে এসে বাবাকে বললো।

--বাবা ও আমার গার্লফ্রেন্ড।


--গার্লফ্রেন্ড ভালো কথা। তা গার্লফ্রেন্ডের সাথে কিছু ফ্রী পেয়েছ?


গার্লফ্রেন্ডও অনায়সে বলে দিলো।

--হ্যাঁ পেয়েছে তো। গার্লফ্রেন্ড এর সাথে রুমডেট ফ্রী পেয়েছে। 


--হ্যাঁ তাহলে ঠিক আছে। ফ্রী ছাড়া কোনো কিছু আবার আমার পছন্দ না। যাও জিলো আপনি জিন্দেগি।


পাশ থেকে জিনিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। এই কখনো শুধরাবে না। মরার সময়ও হয়তো যমরাজ কে বলবে, মরার সাথে কিছু ফ্রী আছে ফ্রি? 


সমাপ্ত


মন ছুঁয়ে যাওয়া অসাধারন গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post