না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প | না পাওয়া ভালোবাসা

তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রনা

তোমাকে না পাওয়ার যন্ত্রনা

দীর্ঘ তিন বছর পর প্রাক্তন প্রেমিকা কে দেখে থমকালাম। মেয়েটা আগের থেকে দেখতে কিছুটা সুন্দরী হয়েছে। আগে সুন্দরী ছিলো না এমন টা নয়। আগের তুলনায় মেয়েটা খানিক স্বাস্থ্যবতী হয়েছে। পরিপূর্ণ নারীতে রূপান্তর হয়েছে যে। পড়নে নীল রঙের শাড়ি একদম নীল পরীর মতো লাগছে। পাশেই হাসিমুখে একটা বাচ্চা কোলে করে দাঁড়িয়ে আছে প্রাক্তনের স্বামী। লোকটা নিসন্দেহে ভাগ্যবান নীলিমার মতন মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে। মেয়েটা ভীষণ দায়িত্বশীল, খুব তাড়াতাড়ি সবার মন জয় করতে উস্তাদ। নীলিমার মুখটা ভীষণ মায়াবী। দেখলে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে। নীলিমার মেয়েটাও দেখতে নীলিমার মতন। মুখের গড়ন অবিকল নীলিমার। গায়ের রং টা পেয়েছে বোধহয় বাবার মতন। কারন নীলিমা কিছুটা শ্যামলা,আর তার হাসবেন্ড সাদা ফর্সা। আজ তো শুক্রবার স্বামী সন্তান নিয়ে হয়তো নীলিমা ঘুরতে এসেছে এই টিএসসি চত্বরে। 


হঠাৎ হাতে টান লাগলো। ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম বউ আমার হাত টেনে ধরছে। চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম- কি হলো?

সে মুখে মুচকি হেঁসে সামনের দিকে ইশারা করে বলল-

-“ নীলিমা আপু।

আমি সামনে তাকালাম। চৈতীর মতো মুখে অবিকল হাসি টানিয়ে বললাম-

-“ হ্যাঁ দেখেছি।

চৈতী উৎসাহ নিয়ে শুধালো- 

-“ কথা বলবেন না?

আমি চৈতীর হাত টা শক্ত করে চেপে বললাম-

-“ মাইন্ড করবে না?

-“ ওমা মাইন্ড করবো কেনো? চলুন না কথা বলে আসি৷ দেখুন বাচ্চা টা কিউট নীলিমা আপুর মত।


আমি চৈতীর হাত ধরে এগিয়ে গেলাম। যতই এগোচ্ছিলাম ততই যেনো মনে হচ্ছিল পথ ফুরচ্ছে না। নীলিমা দের কাছে আসতেই চৈতী নীলিমা আপু বলে ডেকে উঠলো। নীলিমার দৃষ্টি সামনে থেকে পাশে আসলো। হাস্যোজ্জ্বল মুখটার হাসি গায়েব হলো। নীলিমার মুখ থেকে বের হয়ে আসলো আহনাফ। 

আমার মুখে লেপ্টে রইলো হাসি। মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলাম -

-“ কেমন আছো?

নীলিমা তটস্থ হলো। একবার স্বামীর দিকে তাকালো৷ নীলিমার স্বামী সাফওয়ান ইশারায় কিছু বুঝালো। সাথে সাথে নীলিমার মুখে হাসি ফুটলো। হাসি মুখে বলল-

-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

নীলিমার নজর ততক্ষণে আমার পাশে থাকা চৈতীর দিকে গেলো। দ্বিধা নিয়ে বলে উঠলো-

-“ তোমার বউ? 

আমি হেঁসে চোখে সম্মতি দিয়ে জানালাম হ্যাঁ। নীলিমা চৈতীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলল-

-“ বাহ ভীষণ মিষ্টি দেখতে তোমার বউ। কবে করলে বিয়ে? 

-“ এই তো মাস ছয়েক হলো। ওর নাম চৈতী। 

নীলিমা চৈতীর থুতনিতে হাত দিয়ে বলে- 

-“ ভাগ্যবতী মেয়ে সুখী হও।


ততক্ষণে নীলিমার স্বামী সাফওয়ান মেয়েকে কোলে নিয়ে নীলিমার কাছে আসে। নীলিমা সাফওয়ানের হাত ধরে বলে- 

-“ সাফওয়ান কে তো চিনোই। নতুন করে পরিচয় দিলাম না। ও হচ্ছে আমার আর সাফওয়ানের মেয়ে মাইশা। চৈতী এক দৃষ্টি তে মাইশার দিকে তাকিয়ে আছে। বিষয় টা লক্ষ করলাম৷ মেয়েটা বাচ্চা বড্ড ভালোবাসে। তাই কিছুটা সংশয় নিয়েই বললাম-

-“ মাইশা কে কি কোলে নেওয়া যাবে?

নীলিমার স্বামী সাফওয়ান হেঁসে বলল-

-“ অবশ্যই নেওয়া যাবে। 

আমি দু হাত বাড়ালাম । বাচ্চা মেয়েটা কোলে আসার জন্য হাত এগিয়ে দিলো। মেয়েটাকে কোলে নিলাম। দেখলাম চৈতী পাঞ্জাবি টেনে ধরেছে৷ ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম -কোলে নিবে?

সহসা চৈতী মাথা ঝাকালো। আমি বাচ্চা টাকে চৈতীর কোলে দিলাম। চৈতীর মুখে হাসি ফুটলো। বুকের সাথে চেপে ধরলো। গাল ভর্তি চুমু একে দিলো। নীলিমা সেটা দেখে মুচকি হেসে বলল-

-“ বাচ্চা ভীষণ পছন্দের তোমার বউয়ের তাই না?

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালাম। সাফওয়ান এবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলল-

-“ আমাদের বাসায় ফিরতে হবে নীলি,সন্ধ্যা হয়ে আসছে।

নীলিমা মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো। চৈতীর দিকে এগিয়ে গিয়ে মৃদুস্বরে বলল-

-“ মাইশা কে এবার দাও চৈতী। আবার দেখা হলে তখন না হয় আবার নিয়ো কোলে। বাসায় ফিরতে হবে সন্ধ্যার আগে।

চৈতীর মন খারাপ হয়ে গেলো। বাচ্চা টাকে নীলিমার কোলে দিয়ে বলল- 

-“ আবার দেখা হবে আমাদের?

নীলিমা চৈতীর মাথায় হাত রেখে আদুরে গলায় বলে- 

-“ অবশ্যই দেখা হবে। আজ আসি ভালো থেকো তোমরা।

নীলিমা চলে গেলো। চৈতী নীলিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর বলে উঠল-

-“ প্রাক্তন রা কি এমনই ভালো হয়? 

-“ নীলিমা কে ভালে লেগেছে?

চৈতী মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ জানালো। আমি চৈতী কে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে পেছন ফিরে ঘুরলাম।  

-“ নীলিমা অসাধারণ ব্যাক্তিত্বের অধিকারী। আচ্ছা তোমার খারাপ লাগছে না? 

-“ খারাপ কেনো লাগবে?

-“ এই যে তোমার স্বামী প্রাক্তন কে নিয়ে কথা বলছে বলে।

-“ আমি তো হিংসুটে নই। আচ্ছা নীলিমা আপুর স্বামী আপনাকে দেখে রেগে গেলেন না কেনো?

-“ কারন সেও তোমার মতো ভীষণ ভালো মনের। 

-“ আচ্ছা আপনার আফসোস হয় না নীলিমা আপু হারিয়ে ফেলার কারনে?

-“ মোটেও না। তাকে না হারলে তোমার মতো নিদারুণ মেয়েটা কে কি করে পেতাম?

চৈতী খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। আমিও ওর হাসি দেখে হেঁসে উঠলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম সাফওয়ান এক হাতে মেয়েকে কোলে নিয়ে অন্য হাতে নীলিমা কে জড়িয়ে ধরে হাঁটছে। স্মিত হাসলাম। মেয়েটা বড্ড সুখী। 

এই যে পৃথিবী শূন্যস্থান পছন্দ করে না।

কিছু না কিছু,কেউ না কেউ

শূন্যস্থান পূর্ণ করে দেয় কিংবা দখল করে নেয়। তেমনি আমার শূন্য স্থান পূর্ণ করে দখল করলো চৈতী নামক রমণী। তেমনি নীলিমার জীবন কে রাঙিয়ে দিয়েছে সাফওয়ান নামক পুরুষ। দিনশেষে সবাই সুখী। 


 -সমাপ্ত।

-অনুগল্প

-প্রাক্তন

-Raiha_Zubair_Ripti


মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post