স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক | স্বামী স্ত্রীর ইসলামিক স্ট্যাটাস

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কেমন হওয়া উচিত

 তিন মাসের গর্ভবতী আকলিমা ভয়ে কাঁপছে থর থর করে।খানিক আগে তার স্বামী সজল একটা শার্ট দিয়ে গেছে ইস্ত্রি করে দিতে।এই শার্ট ইস্ত্রি হলেই সে অফিসে যাবে।ইস্ত্রি করতে গিয়ে সেই শার্টের অনেকখানিই পুড়ে ফেলেছে আকলিমা। এই জন্য তার ভীষণ ভয় করছে। সেই ভয়েই সে কাঁপছে।

ভয় করার কারণও আছে।স্বামী তার ভীষণ রাগী!  একটুকু ভুল হলেও আর রক্ষে নেই। চড় থাপ্পড় এমনকি বেত দিয়েও শরীরে আঘাত করতে সে ছাড়ে না!

গত তিন মাস আগে তরকারিতে সামান্য ঝাল বেশি হওয়ায় এমন চড় দিয়েছিল তাকে! গালে পাঁচ পাঁচটি আঙুল বসে গিয়েছিল ওর। দু'দিন ব্যথা ছিল গালের এক পাশে।

এরপর একদিন সাদা পাঞ্জাবি ধুয়ে নীল দিতে গিয়ে একটু‌ কড়া হয়ে গেল রং। এই জন্য আকলিমার চুল টেনে ধরেছিল সজল। খুব কষ্ট হচ্ছিল আকলিমার।তাই সে বলেছিল, আপনি এমন নিষ্ঠুর কেন? স্ত্রীর সাথে কোন স্বামী এমন খারাপ আচরণ করে?

সজলের মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল সেদিন। বাঁশের কাঁচা কঞ্চি দিয়ে কীভাবে যে মেরেছিল তাকে এই জন্য!মারতে মারতে বলেছিল,হারামজাদি,তোরে খাওয়াই,  পরায় কী জন্য? কোনো একটা কাজ ঠিক মতো করতে পারস না! আবার আমার মুখের উপর কথা বলস!তোরে আজ আমি উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো!

হ্যা একেবারে উচিৎ শিক্ষাই দিয়েছিল সজল তাকে। আকলিমা সেই মার খেয়ে চারদিন বিছানা থেকে উঠতে পারেনি। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেটে গিয়েছিল বেতের আঘাতে। রক্তাক্ত হয়েছিল শরীর। অনেক অনেক দিন ব্যথা তাকে কাবু করে রেখেছিল।

সেই থেকেই বাঘের মতো ওকে ভয় পায় আকলিমা। কিন্তু আজ যে এমন কান্ডটা হয়ে গেল! এখন কি হবে তার? 

আসলে বেশি স্বতর্ক হয়ে কিছু করতে গেলে ঝামেলা বাঁধে আরো বেশি। তাছাড়া তাড়াহুড়োও ছিল একটু। সজলের অফিসের সময় ঘনিয়ে এসেছে। বাথরুম থেকে বেরিয়েই কাপড় পরবে। তাড়াহুড়ো করছিলো আবার বার বার ভয়ও পাচ্ছিলো আকলিমা।যদি ভুলে পুড়ে যায় কাপড়!

যা ভেবেছিল ঠিক তাই হলো। কীভাবে কখন যে পুড়ে ঝলসে গেল অনেক খানি জায়গা!

সজল বাথরুমে ছিল। গোসল করেছে। বাথরুম থেকে ও যখন বের হয়ে এ ঘরে এলো তখন আকলিমা থরথর করে কাঁপছে।

ওকে এভাবে কাঁপতে দেখে এগিয়ে এলো সজল।

আকলিমার কাঁপুনি তখন আরো বেড়েছে।তার হাতের শার্টটা সে আরো লুকিয়ে ফেলতে চায়ছে ভয়ে।

সজল ওর একেবারে কাছে এসে বললো,'শার্ট ইস্ত্রি হয়েছে?'

আকলিমা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,'হয়েছে কিনন তু---

সজল বললো,'কিন্তু কী?'

আকলিমা শার্টের পুড়ে যাওয়া জায়গাটা দেখিয়ে বললো,'পুড়ে গেছে ভুলে।আর এমন হবে না কখনো!আল্লার কসম আর এমন হবে না।আমি বুঝতে পারিনি কীভাবে এমন হলো!আমি খুব স্বতর্কতার সাথে কাজ করেছি। তবুও কীভাবে যেন পুড়ে গেল!'

আকলিমা কথাগুলো বলতে গিয়ে ভয়ে শব্দ করেই কেঁদে উঠলো।ওর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে দু গালের উপর।বড় মায়াবতী লাগছে ওকে। কিন্তু এভাবে ভীত সন্ত্রস্ত দেখতে তাকে মোটেও ভালো লাগছে না সজলের।

সজল নিজের কাছেই নিজে বড় কষ্ট পেলো।পুড়ে যাওয়া শার্টটির জন্য নয়। নিজের খারাপ মেজাজের জন্য।সে নিজেকে নিয়ে ভাবতে লাগলো।সে কতোটা নিষ্ঠুর হলে পরে আজ তার স্ত্রী তাকে ভয় পেয়ে এভাবে কাঁদছে।  তাও সামান্য একটা শার্ট পুড়ে যাওয়ার কারণে!

ছিঃ!বড় লজ্জিত হলো সে নিজের কাছেই। গতরাতে ফেসবুকে স্ক্রুলিং করতে করতে হুট করে একটি হাদিস চোখে পড়েছিলো তার। ওখানে লিখা 

'তোমাদের কাছে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।'

এটা দেখার পর তার খুব ইচ্ছে হলো ইসলামে স্ত্রীর অধিকার নিয়ে কী বলেছে তা দেখতে।সে ঘাঁটাঘাঁটি করতে শুরু করলো এ নিয়ে। এরপর সে দেখলো আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসায় বলেছেন,'আর নারীদের সাথে সদয় আচরণ করো।'

তারপর হযরত মুহাম্মদ সাঃ নিজের স্ত্রী গণের সাথে কেমন আচরণ করেছেন তা সে পড়ে দেখেছে। এবং অবাক হয়েছে একটা মানুষ এতো ভালো হয় কী করে?তার স্ত্রীদের সাথে এতো সুন্দর আচরণ করে কী করে?

এমনকি হযরত মুহাম্মদ সাঃ স্ত্রীদের সাথে বসে তাদের গৃহস্থালির কাজে সাহায্য করেছেন।ঘর পরিষ্কার করা, তরকারি কুটে দেয়া সহ আরো অনেক কাজ করেছেন। কাপড় ধুয়ে দিয়েছেন। স্ত্রীদের আনন্দিত রাখার জন্য জোৎস্না রাতে দৌড় প্রতিযোগিতায় নেমেছেন স্ত্রীর সাথে। অনেক সময় ইচ্ছে করেই তিনি স্ত্রীর কাছে প্রতিযোগীতায় হেরে যেতেন। স্ত্রীকে খুশি করতেন। এমন একজন মহা মানবের উম্মত হয়েও এতো দিন সে কী করে সব অনাচার করে গেছে তার স্ত্রীর সাথে?

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তার খেয়াল ছিল না।রাতেই সে ভেবে রেখেছিল আকলিমার কাছে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠেই তাড়াহুড়ো করে গোসল করতে হলো।হাতে সময় ছিল না তাই আকলিমাকে বললো কাপড় ইস্ত্রি করতে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আকলিমা কাপড় পুড়ে ফেলেছে।পুড়ে ফেলুক এতে তার আর বিন্দুমাত্র আফশোস নেই। এটা ভুলে হয়েছে।কেউ তো আর ইচ্ছে করে তার স্বামীর কাপড় চোপড় পুড়ে ফেলে না। রাসুল সাঃ এই বিষয়েও বলেছেন। স্ত্রীর কোন ভুল হলে ওই ভুলের দিকে না তাকিয়ে তার অন্য একটি ভালো গুণের কথা মনে করে তাকে মাফ করে দাও!

এই মুহূর্তে সজল সেই কাজটিই করলো।সে তার স্ত্রীকে মাফ করে দিলো। তারপর নিজে ক্ষমা পাওয়ার জন্য সে খপ করে আকলিমার একটা হাত ধরে ফেললো। তারপর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আকলিমাকে।ধরে বললো,আকলিমা,আমি তোমার কাছে অনেক সরি! অনেক ভুল করেছি আমি তোমার সাথে।তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি। তুমি আমায় মাফ করে দাও। এবং আমাকে তোমার উত্তম স্বামী হতে সাহায্য করো!

আকলিমা কিছু বুঝতে পারে না। তবে সে এটা জানে সজল পরিবর্তন হয়েছে যে কোন ভাবেই হোক। পরিবর্তন না হলে এতোক্ষণে তাকে আদর না করে, তার কাছে ক্ষমা না চেয়ে তাকে প্রহার করার কথা!

আকলিমাকে চুপ করে থাকতে দেখে সজল ওর দিকে জল ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো,কী ক্ষমা করবে না আমায়? উত্তম স্বামী হতে দিবে না আমায়?

আকলিমা কাঁদছে। শব্দ করে। চোখের জল ছড়িয়ে।সে ক্রন্দনরত গলায় এবার বললো,একশো বার দিবো। আপনি হবেন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাঃ এর মতো একজন আদর্শবান স্বামী।আর আমি হবো আম্মাজান আয়েশা রাঃ এর মতো একজন উত্তম স্ত্রী। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।

সজল ভেজা তুলতুলে গলায় বললো, আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।

তারপর ওরা উভয়েই পড়লো,

আমিন।

আমিন।

আমিন।

'

-পরিবর্তন

-অনন্য_শফিক

স্বামী স্ত্রীর কষ্টের স্ট্যাটাস

-১৩ বছর বয়সে আমার বিয়ে হলো' আর এই বয়সে বাচ্ছা নিবো।


-হ‍্যাঁ তোমাকে বাচ্চা নিতে হবে। 


-বুঝার চেষ্টা করো স্বামী। আমি নিজেই এখনো অনেক ছোট্ট' একটু বয়স হোক তখন নিবো। 

-এতো কথা শুনতে চাইনা। 

-কিন্তু।

-শোন তুশা তোমার থেকে আরো অনেক ছোট্ট ছোট্ট মেয়ে বাচ্ছা নিচ্ছে। তুমি কেনো পারবেনা শুনি।

-আমার এখন ভয় করতেছে। 

-এখানে ভয়ের কোন কারন নেই। প্রথম তো তাই এমন হচ্ছে বুজলে। 

-তবুও!

-প্লিজজজ তুশা আমি তোমার স্বামী হই আমার কথা রাখো। আমি তোমার অনেক দেখা শুনা করবো তুমি কষ্টই পাবেনা। 

-ঠিক আছে স্বামী আমার।

___________________


-এর পরে আজ দির্ঘ ১০ মাস পরে' তুশা মা হতে চলতেছে। এই জন্যে তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে আসলে তুশা হাসিবের দুটি হাত ধরে কান্নাভেজা চোখে বলে।


-স্বামি আমার কেনো জানি খুব ভয় লাগতেছে। মনে হচ্ছে আমি বাছবো না। আমি কখনো ভূল করে থাকলে মাপ করে দিও। যদি মা'রা যাই আমার সন্তানকে কখনোই কষ্ট দিবানা। 

-এই পাগলি তোমার কিচ্ছু হবেনা। আমি আছি তো।

-আমার খুব ভয় হচ্ছে।

-ভয় করিওনা' ভয় করলে আর ভয় গ্রাশ করে?

-হুমম দোয়া করিও আমার জন্যে।

"ঠিক সেই মুহূর্তে ডাক্তার এসে তুশাকে ভিতরে নিয়ে যায় বাচ্ছা ডেলিভারির জন্যে। 

'আর বাহিরে সবাই অপেক্ষা থাকে'


'প্রায় ৪৫ মিনিট পরে ডাক্তার একটি ফুট ফুটে সন্তান নিয়ে এসে বলে!

-এই নেন আপনার মেয়ে সন্তান ' দেখতে বেশ সুন্দর। কিন্তু আমরা আপনার স্ত্রীকে বাছাতে পারিনি। বাচ্চাটি হ‍ওয়ার সময় সে মারা গিয়েছে?

'কথাটি শুনা মাত্রই হাসিবের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরলো? সঙ্গে সঙ্গেই ভিতরে এসে দেখে তুশার শরীর টা একটি সাদা কপর দিয়ে ঢেকে রাখা'' কারপটি সরাতেই দেখতে পায় তুশার মায়াবতি মুখ-খানা?


"আসলেই বিয়েটা অল্প বয়সে হলে সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা নেয়াটা ঠিকনা। কারন একটি বাচ্চারি যদি বাচ্চা হয় তাহলে বুঝেন তার অবস্থা কি হবে। 

"সচেতন হই।


-অনুগল্প: সচেতন 

কাহিনী ও লেখনীতে: মি_হাসিব


বাস্তব জীবনের সেরা গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post