আমার প্রতি তোমার অবহেলা | অবহেলার কষ্টের গল্প

 অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস

অবহেলার কষ্টের স্ট্যাটাস

পাশের ফ্ল্যাটের এক ভাই আর ভাবির সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।আমরা ৬মাস হলো এই বিল্ডিংয়ে ভাড়া এসেছি।আমার স্বামী অনিকের চাকরির বদলির জন্য গ্রাম থেকে শহরে আসা।


আমার ৩ সন্তান। বড় দুই ছেলে আর এক মেয়ে।

যমজ দুই ছেলের বয়স ৬ বছর আর মেয়ের বয়স ৪ বছর।এই প্রথম স্বপ্নের শহর ঢাকায় এসেছি।নতুন নতুন কোনকিছুই তেমন বুঝতামনা তবে তন্নি নামের এই ভাবিটা আমাকে বোনের মতো এই স্বপ্নের শহরে চলাটা শিখিয়েছে। 


ভাবির ১ছেলে আর তার স্বামী তন্ময় আহমেদ পেশায় একজন ব্যাংকার।


তো যাইহোক, ছুটির দিনগুলোতে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম আর অনেক মজা করতাম এমনকি আমরা অনেক রাত অবধি জেগে জেগে গল্প করতাম। 


দিনগুলো একপ্রকার ভালোই কাটছিলো তবে এরমধ্যে হঠাৎ একদিন আমার মেয়ে মিথি নিখোঁজ হয়ে যায়। সেদিন মিথি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেছিলো আমি ওকে নাস্তা দিয়ে একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম এসে দেখি আমার মেয়ে বাসায় নেই কিন্তু ঘরের দরজা খোলা। 

যে মেয়ে সারারাত আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে তাকে হারিয়ে আমি প্রায় পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলাম। 


সবাই এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছিলো আর মিথিকে খুঁজছিলো এরমধ্যে হঠাৎ আমার বড় ছেলে রাফসান দৌড়ে এসে বললো,


-- 'মা, মিথিকে একলোক রিক্সায় নিয়ে যাচ্ছে তখন সাথে সাথে মোটরসাইকেল দিয়ে সেই রিক্সা আমরা ধরে ফেলি।'


সেই লোকটা ছিলো বড্ড মানুষ সে নাকি মিথিকে নিয়ে আমাদের খুঁজছিলো কিন্তু মিথি ঠিকঠাক ভাবে ঠিকানা বলতে না পারায় অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। 


যাইহোক, সেই থেকে আমি আমাদের সন্তানদের নিয়ে খুব সচেতন ছিলাম।


এরমধ্যে হঠাৎ একদিন আনুমানিক রাত ১১ টার দিকে তন্নির গগনবিদারী চিৎকারে বুক কেঁপে উঠলো আমাদের, গিয়ে দেখি তন্ময় ভাইয়ার লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলছে। বুঝতে বাকি রইলো না ভাইয়া সু'ইসাইড করেছে তবে এর কারনটা আমাদের কাছে আজো অজানা। 


তন্নি ভাবিকে কি বলে সান্ত্বনা দিবো সেই ভাষা আমার জানা নেই। 


ছোটখাটো এক মফস্বল শহরে থাকতাম তাই বাড়িওয়ালা কেইস মামলার ভয়ে খুব দ্রুত গাড়ি ঠিক করে লাশ বিদায় দিলেই যেনো বেঁচে যায় এই অবস্থা। 


কিন্তু এই শহরে তাদের কোনো আত্মীয় না থাকায় ট্রাকে করে লাশ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার দ্বায়িত্ব পড়লো আমার স্বামী  অনিকের উপর।আসলে তাদের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা আমি জানতাম না পুরোপুরি আমার স্বামী অনিক জানে বিধায় সেটা নিয়ে আমি  কখনো তেমন মাথা ঘামাইনি।


এরমধ্যে হঠাৎ আমার মেয়ে মিথি আবার নিখোঁজ হয়ে যায় অবশেষে তাকে খুঁজে পেলাম ট্রাকের উপর লাশের বাক্সের পিছনে কান্না করছে।কে তাকে এখানে নিয়ে আসলো সে কিছুই জানে না।


যাইহোক লাশের গাড়ি চলে গেলো। 


এমনি করে ১দিন ২দিন করে করে ৬মাস আমার স্বামীর কোনো খোঁজ নেই। 

সাথে তন্নি ভাবিরাও আমাদের থেকে অনেক অনেক দূরে হারিয়ে গেলেন,সবার ফোন নম্বর বন্ধ।এমনি করে দিন থেকে মাস আর মাস থেকে গড়াতে লাগলো বছরের পর বছর। 


সেই থেকে আমি হারালাম আমার স্বামী অনিককে।সে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তাও আমাদের কাছে আজো অজানা। 


এই বিশাল শহরে,ইট বালুর তৈরি দালানের ভীড়ে কত কষ্ট করে যে আমি আমার সন্তানদের মানুষ করেছি সেটা একমাত্র আমার মন জানে।

সারাদিন শেষে রাতটা ছিলো আমার কাছে বিভীষিকার মতো।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো একটা চাপা কষ্ট আমার বুকে বাসা বেঁধে বসতবাড়ি তৈরি করে নিলো অথচ আমি সেই একা একাই রয়ে গেলাম।


অনিকের

চাকরিটা হওয়ার আগে দু'জনে সন্তানদের নিয়ে অল্প খেয়ে দিন কাটিয়েছি, ভালো একটা শাড়ি পরলে আমাকে কেমন দেখাবে সেটাও কোনো দিন স্বপ্নে ভাবিনি অথচ যেই সুখের পথে পা বাড়ালাম অমনি জীবনটা অন্যদিকে মোড় নিলো।


'

'

'

'

এমনি করে কেটে গেলো ২০ বছর।

আজ আমার মেয়ে মিথির বিয়ে। মিথির জন্য যতটা না কষ্ট পাচ্ছি তারচেয়ে বেশী কষ্ট পাচ্ছি আমি অনিককে ভেবে। সারাজীবনের কষ্টগুলো যেনো আজ নতুন করে হানা দিচ্ছে, চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি বেয়ে নিচে নামছে। 


এরমধ্যে হঠাৎ মিথি আমাকে এসে বললো,

-- 'মা আমি আজ তোমাকে কিছু বলবো যা আজ ২০ বছর ধরে হৃদয়ে কঠিনভাবে গেঁথে আছে।


একদিন আমি মাহিনের সাথে খেলছিলাম তখন বাবা এসে তন্নি আন্টিকে নিয়ে পাশের রুমে ঢুকলো এরপর হঠাৎ তন্ময় আংকেল চলে আসে। পাশের রুম থেকে কিছুক্ষণ চিৎকার চেঁচামিচির পর তন্নি আন্টি আর বাবা বাহিরে চলে আসলো আমি একটুপরে রুমে ঢুকে দেখলাম তন্ময় আংকেল ফ্যানের সাথে ঝুলছে। 


বিশ্বাস করো মা সেদিন আমি মৃত্যু জিনিসটা বুঝিনি যেটা বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাকে ভীষণ যন্ত্রণা দিয়েছে। আমি যে ২ বার হারিয়ে গেছি তখন বাবা আমাকে নিয়ে নিয়ে লুকিয়ে রাখতো যেনো বাবা আমাকে তার সাথে নিয়ে যেতে পারে।বাবা কি আমাকে খুব ভালবাসতো মা?


তবে জানো মা?বাবা আমাদের ইচ্ছে করে ছেড়ে চলে গেছে তারকাছে তখন মনে হয় তন্নি আন্টি বেশি প্রিয় ছিলো।


এতদিন তোমাকে আমি এগুলো বলিনি নাহয় তুমি এতগুলো বছর কষ্ট পেতে পেতে পাথর হয়ে যেতে।আজ আমি তোমাদের ছেড়ে অন্য ঘরে চলে যাচ্ছি তাই সব বলে দিয়ে গেলাম, আর কতদিন এগুলো আমি মনে চেপে রাখতাম বলো?'


----


মিথির কথা শুনে বুকটা হালকা হয়ে গেলো কারণ তখন বাড়িওয়ালা আন্টি আমাকে বলেছিলো নিজের স্বামীর দিকে খেয়াল রেখো কিন্তু তখন এতকিছু আমি বুঝিনি।এই পরকীয়ার যাতা কলে আমি হারালাম আমার স্বামীকে আর তন্ময় ভাইয়ার মতো একজন ভালো ভাইকে।


আসলে যে নিজের ইচ্ছায় হারিয়ে যেতে চায় তাকে খুঁজে বের করা খুব কঠিন!


(সমাপ্ত)...

--------


মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post