স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অবহেলা | ভালোবাসার মানুষটিকে অবহেলা করোনা

 অবহেলার কষ্টের গল্প

অবহেলার কষ্টের গল্প

-কি গো এনেছো? আজ রাতে কিন্তু পিল নিতে পারবো না।

-হ্যাঁ এনেছি কিন্তু ফুঁটো থাকলে জানি না।

হেসে উঠল সায়ন। বিয়ের তিন বছর হল। কমলিকাও সুখে আছে। সায়ন শুধু টাকা পয়সাই নয় যৌনতা ভালবাসা সবই দিয়েছে। সংসার চলছে জলঙ্গি'র মতন। কমলিকা স্কুলে পার্টটাইম করে আর সায়ন টি.সি.এস'এ যব করে। ভাল মাইনে। দু'জনের ইনকামে বেশ ভাল ভাবেই সংসার চলে। হঠাৎ একদিন সায়ন অফিস থেকে আসার পর কমলিকা বেশ মিষ্টি হেসে বললো,

-কি গো..এই মাসে না প্রিওডসটা হয়নি.!

জুতো খুলতে খুলতে সায়ন বললো,

- কত দিন হলো?

- তা প্রায় দেড় মাস।

- ওহ..! টেস্ট করেছো?

- না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি বাবা হতে চলেছো।

সায়ন খবরটা শুনে খুব আনন্দিত। হা হা করে হেসে বললো,

- কন্ডমে ফুঁটো ছিল?

- ধুর ইয়ারকি মেরো না।। কি গো আমি মা হবো।। ভাবতে পারছো? আমার পেটে আমার বাচ্চা আছে। আমায় মা বলে ডাকবে।

- আর আমি বাবা।। আচ্ছা রাগি বাবা হবো না ভাল বাবা হবো?

সায়ন কমলিকা দুজনেই খুশি। সায়ন ঠিক করল পরদিন সে অফিসটা কামাই করে কমলিকাকে নিয়ে যাবে গাইনোর কাছে। কমলিকা লজ্জা পেল যখন ডক্টোর নীলিমা বললেন,

- আপনি মা হতে চলেছেন।

সায়ন ডক্টোর নীলিমাকে লজ্জিত অথচ বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

- কত দিন? কি কি করতে হবে? এখন আমি কি করবো? আমি যে বাবা হতে চলেছি...আমায় কি করতে হবে?

ডক্টোর নীলিমা সায়নের মনে অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন,

-শান্ত হন শান্ত হন। এখন আপনার কাজ বউ এবং আপনার সন্তানের দেখাশোনা করা। এই ওষুধ , প্রেশক্রিপসন। সবথেকে ইনপরটেন্ট কথা সায়ন বাবু ,"এই কয়েক মাস সেক্সটাকে কন্ট্রোল করতে হবে।

সায়ন সবিনয়ে উত্তর দিল "অবশ্যই" বলে ডাক্টোরের সামনেই কমলিকার মাথায় একটা চুমু দিল বাড়ির পথে।

রাত হলো। গত রাতেও নৃশংস যৌনতা চলেছে বিছানায়। বিছানা থেকে উঠছে বীর্যের গন্ধ। সায়ন রাতে কমলিকার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো,

- ও সোনা! একটু !

কমলিকা হেসে বললো,

- কি একটু! ডক্টোর কি বলল শোনো নি? এই ক'দিন হবে না।

-আচ্ছা চুমু খাই? নাইটিটা একটু নিচে নামাই?

কমলিকারও ইচ্ছা করছে সায়নের মত একটা সুপুরুষের ছোঁয়া পেতে। তাই হেসে বললো,

- আচ্ছা। কোমর ওবধি। তার নিচে না।

রাত কাটলো পরদিন সেই অফিস । সায়ন গেল টি.সি.এস-এ আর কমলিকা স্কুলে। রাতে অফিস থেকে ফিরে কথা হলো। রাতে খাবার পর শুতে যাবে,কমলিকা সায়নের ব্যাগ গোছাতে গিয়ে খুঁজে পেল কন্ডোমের প্যাকেট,স্ট্রবেরি ফ্লেবার।

- কি গো কন্ডোম কেন কিনেছো?

- ওহঃ সরি সরি। এতদিনের অভ্যাস তাই।

কমলিকা সংসার করছে তিন বছর হলো সে জানে যে , সায়ন বলতে পারছে না আসল কথাটা। সেরাতেও চুমু খেয়ে শুয়ে পরলো সায়ন। কমলিকা আগের মতন আর আদর করে না। সায়ন সারাদিন যৌনজ্বালায় ছটফট করে। খুঁটি নাটিতে ঝাগড়া বেঁধে যায়। সায়ন চায় ছেলে হোক , কমলিকা চায় মেয়ে। বিছানায় দুরত্ব বাড়তে থাকে। ঠিক পাঁচ মাস পরে, কমলিকা শোয় বিছানার একদিকে , অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শোয় সায়ন।

রাতে যৌনতার শব্দগুলো বদলে আসলো কান্নার শব্দ। বাচ্চা হবার আগে মেয়েদের সাইকোলজিকাল একটা আমূল পরিবর্তন আসে সেটা কি করে বুঝবে একটা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বাড়তে থাকলো দূরত্ব। মাঝে মাঝে রাতে বাড়ি ফেরে না সায়ন। ছ'মাসের মাথায় পেটটা বেশ ফুলে উঠলো কমলিকার। এক রবিবার সায়নের জামা কাঁচতে গিয়ে কমলিকা কলারের কাছে লিপ্টিকের দাগ ও একটা ফিমেল পারফিউমের গন্ধ আবিষ্কার করলো। কেমন যেন চুপ মেরে গেল কমলিকা। সেদিন দুপুরে ফোলা পেটটা নিয়ে বিছানায় বসে আছে কমলিকা আর সায়ন তাঁর দিকে পিঠ ফিরিয়ে আয়নায় চুল আচরাচ্ছে। সায়নের পিঠে নখের আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট হয়ে উঠলো। কমলিকা একভাবে তাকিয়ে আঁচড়গুলোর দিকে। চোখ থেকে বড় কষ্টে বড় দুঃখে একফোঁটা নোনা জল বেড়িয়ে,গড়িয়ে পরতে লাগলো গাল বেয়ে। আম্লান গলায় কমলিকা সায়নকে জিজ্ঞাসা করলো,

- কি গো..বাচ্চাটা নষ্ট করা যাবে? আমি মা ডাক শুনতে চাই না। অ্যাবরসন করা যাবে?


যৌনতা_আবশ্যক

সবার সাড়া পেলে সকালে দিব


যৌনতা_আবশ্যক

পর্ব--০২ এবং শেষ পর্ব


কি গো..বাচ্চাটা নষ্ট করা যাবে? আমি মা ডাক শুনতে চাই না। অ্যাবরসন করা যাবে?

সায়ন কমলিকার একথায় রেগে গিয়ে বলল,

- কেন? বাচ্চাটা কি শুধুই তোমার? বাচ্চাটা আমারও।এত স্যাক্রিফাইস করছি বাচ্চাটার জন্য আর তুমি আজ বাচ্চা নষ্ট করার কথা বলছো?

কমলিকা চেঁচিয়ে কেঁদে বললো,

- স্যাক্রিফাইস মানে? আমি প্রেগনেন্ট..পেটে ছ'মাসের বাচ্চা আমার..৪ মাস শুধু *** দি নি বলে তুমি বলছো স্যক্রিফাইস করছো তাও আবার আমার প্রেগনেন্সির সময়।

সায়ন চেঁচিয়ে বললো,

- একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো,যৌনতা বাদে ভালবাসা হয় না।

কমলিকা হেসে বললো,

- তবে তো তুমি আজকাল অনেকের ভালবাসা পাচ্ছো। নিজের শরীরের খিদে মেটাতে রাতে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটাচ্ছ।

- মানেটা কী? 

কমলিকা ফোলা পেট নিয়েই মেঝের গায়ে গা এলিয়ে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

- তুমি জান, আমি তোমার জামায় অন্য মেয়ের লিপস্টিকের দাগ পেয়েছি?বাচ্চা বড়ো হয়ে এমন বাবাকে শ্রদ্ধা করবে তো? বাবার পিঠে অন্য মহিলার আঁচড়ের দাগ মানবে তো তোমার ছেলে?

সায়ন চমকে গিয়ে বললো,

- অসম্ভব। কী বলছো এসব? আমি এমনটা করবো তুমি ভাবলে কী করে?

কমলিকা চোখ ভরা জল নিয়ে সায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

- তুমি স্বীকার করো। আমি কিচ্ছু বলবো না। প্রমিস । আমায় প্লিজ ঠকিও না। তোমায় খুব ভালবাসি।

কমলিকার এমন কথা আর কান্না শুনে যেন স্বীকার করতে গিয়েও করতে পারলো না সায়ন এবং স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল এসব কমলিকার মনের ধারনা। খাওয়া ঘুম বন্ধ হয়ে গেল কমলিকার। হতাসা,ডিপ্রেসন যেন আঁটকে ধরলো তাকে।

আলাদা হয়ে গেল দুটো বিছানা। আলাদা হয়ে গেল দুটো ঘর। কমলিকা ঠিক করে কথা বলে না সায়নের সাথে। সায়ন বুঝতে পারলো সে অন্যায় করছে । কিন্তু স্বীকার কোন মতে করা যাবে না।

সায়ন ভাবলো তার থেকে অ্যফেয়ার্স বন্ধ করা যেতে পারে। কথা বন্ধ দুজনের।অবশ্য দিনের শেষে কমলিকা সায়নের জামাটা শুঁকতে ভুলতো না। অন্য কোন পারফিউমের গন্ধ নেই তো? বিশ্বাস আজব জিনিস,চলে গেলে ফেরানো মুশকিল।

এক রাতে সায়ন ভাবল একমাস হয়ে গেল,যৌনতা থেকে দুরে আছে সে। আর যেন পারছে না সামলাতে নিজেকে।

ল্যপিতে পর্ন সাইট সার্চ করতে দেখলো,সব কটা পর্ন সাইট বন্ধ। সরকার বন্ধ করে দিয়েছে । সায়ন ভাগ্যকে দোষ দিয়ে হেসে উঠল ফিনকি দিয়ে।

হঠাৎ বডি ম্যাসেজের একটা বিজ্ঞাপন চোখে পরতে,বিজ্ঞাপন থেকে নম্বর নিয়ে একটা প্রস্টেটিউটের সাথে কথা বললো। দেখা করার সময় ঠিক হল অফিস ছুটির পর,বিকেল পাঁচটা.।.

অফিস ছুটির পর দ্যাখাও করলো ।দামি একটি হোটেলে জামা খুলতে খুলতে সায়ন বললো,

- শোন, পিঠে একফোঁটাও যেন আঁচড় না পরে।

উক্ত মহিলা ব্যাঙ্গ করে বললো,

- কেন বউ বুঝে যাবে ?

এটা সায়ন রাগে ভয়ে মহিলাকে এক চড় মারতে মহিলা বললো,

- শোন তোর মতো অনেক দেখেছি। নে তুই তোর দু'হাজার টাকা। আমিও তোকে শরীর দেবো না।

হতভম্ব সায়ন। নিজের উপর যেন ঘৃণা হচ্ছে তার। বাড়ি গেল সায়ন। দরজা খুলে দেখে কমলিকা ফোনে কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে।

সায়ন রাতে দরজার বাইরে আঁড়ি পেতে শুনলো। সারা রাত কমলিকা কার সাথে যেন কথা বলে । এখন ফোনটা একটুও হাতছাড়া করে না । সায়ন কমলিকার মুখে স্কুলের এক কলিগের নাম বেশ কয়েকবার শুনেছে। তার সাথেই কথা বলছে না তো?

কমলিকার আর মাত্র একমাস বাকি ডেলিভারির। সায়ন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে ইতিমধ্যে।

সায়ন একদিন মনে সাহস এনে বললো,

- কমলিকা কিছু কথা ছিল।

ফোন কানে দিয়েই কমলিকা হেসে বললো,

- বলো।

- ফোনটা রাখা যাবে?

-তুমি বলার হলে বলো।

- আমি তোমার সাথে খুব খারাপ করেছি। আমার অ্যাফেয়ার্স ছিল। আমি যৌনতায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম । স্বীকার করছি কিন্তু এখন আমি কিচ্ছু করি না। আমায় একটা বার ক্ষমা করতে পারবে? আমি শুধু ভাল বাবা হতে চাই।

কমলিকা বিজয়ের হাসি হেসে বললো, 

- এখন তোমার খারাপ লাগছে,আমি সারাদিন ফোনে কথা বলছি বলে। কি তাইতো?

- হ্যাঁ। সরি । ক্ষমা করে দাও একবার ।

- আমার ফোনটা চেয়েছিলে না তুমি? এই নাও।

- না ঠিকাছে।

- লজ্জা পেতে হবে না। নাও

সায়ন ফোন নিয়ে দেখলো ফোনে কোন সিম নেই। আসলে কমলিকা ফোন করার নাটক করছিল যাতে সায়নের খারাপ লাগে। কমলিকা আসলে বোঝাতে চেয়েছিল ভালবাসার অর্থ। গৌতম বুদ্ধও বলে গেছেন ভালবাসার অপর নাম স্যাক্রিফাইস।

সায়ন ফোনটা দেখে কি বলবে বুঝতে পারছে না, হঠাৎ প্রবল প্রসব ব্যাথা উঠলো কমলিকার । কিন্তু এখনও তো এক মাস বাকি ডেলিভারির । হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল দ্রুত। ও.টি র লাল আলোটা জ্বলে উঠলো। নিজের উপর রাগে দুঃখে ফেঁটে পরলো সায়ন। নিজেকে দোষারপ করলো বার-বার। অপেক্ষা আর অপেক্ষা। সায়নকে সত্যি খুব ভালবাসে কমলিকা। ওর কিছু হবে না তো? বাচ্চাটা ঠিক থাকবে তো? মাথায় হাজার চিন্তা যেন ফুটবল খেলছে। ঘন্টা খানেক পর ও.টি থেকে বেড়িয়ে ডক্টর বললো,

- সায়ন বাবু বাচ্চাকে বাঁচাতে পেরেছি কিন্তু সরি কমলিকা দেবীকে বঁচাতে পারলাম না।

পাথর হয়ে গেল সব..কমলিকা আর নেই...কান্নায় ফেঁটে পরলো সায়ন..যৌনতা কেড়ে নিল ভালবাসাকে । আসলে ভালবাসার পরিনতি কখনো ভালো হয় না। ...মৃত্যু অনিবার্য। অবশ্য কমলিকার মেয়ে হয়েছে যেমনটা সে চেয়ছিল। মেয়ের নাম দিয়েছে, 'ভূমিকা'। তাকে সম্বল করে বেঁচে আছে সায়ন। ভূমিকার মধ্যেই কমলিকাকে খুঁজে পায় সে। যে ভূমিকাকে নিয়ে এত কিছু হল,এমনকি অ্যাবর্সনের কথাও উঠেছিল সেই ভূমিকাই হল সায়নের বাঁচবার কারণ। কমলিকার সাথে যৌনতাও চলে গেল সায়নের জীবন থেকে,এল নতুন ভূমিকা ।

_______সমাপ্ত_______


মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প পড়ুন।

Previous Post Next Post