বাস্তব জীবন বড়ই কঠিন
"বি'ষ খেয়ে ম*রতে পারিসনা?"
"আচ্ছা ম'রে যাব। এখন দাওতো ২০ টাকা দাও।"
"তোর ম'রা বাপ কি আমাকে লাখ লাখ টাকার সম্পত্তি দিয়ে গেছে?"
পারু হেসে বলল,
"মা, টাকা দাওনা, কলেজে যাব দেরি হয়ে যাচ্ছে।"
পারু'র মা শাড়ির আঁচল থেকে গিট্টি খুলে ২০ টাকা দিয়ে পারুকে বলল,
"এক টাকা ইনকাম করার ক্ষমতা আছে? মধ্যবিত্ত হয়ে বড়লোকের চলাফেরা বন্ধ কর।"
পারু মায়ের যাবার পানে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। চোখে টলমল করছে পা'নি। পারুর মায়ের বড় আশা ছিল, ছেলে হবে। কিন্তু অ'ভা'গী পারুল পৃথিবীর আলো দেখেছিল সেইদিন। অবহেলা, অনাহারে বড় হয়েছে সে। অবশ্য তার বড় ভাই বেশ ভালভাবেই বেড়ে উঠেছে। কোনো কিছুর অভাব পায়নি। পেয়েছে কেবল পারু। পারুর জন্মের ২ মাস পরেই পারুর বাবা মা'রা যায়। ছোট থেকেই শুনে বড় হয়ে হয়েছে, "বাবাকে সে খেয়েছে।"
পারু কলেজে যাবে এমন সময় পারুর ভাবী নাক ভেংচি কে'টে বলল,
"আ'প'দ বিদেয় হলে বাঁচি। বয়সতো কম হলোনা, বিয়ে দিয়ে দিলে কি হয়? অবশ্য যা চেহারা, বিয়ের ঘর আসবে কেমন করে?"
এক কান দিয়ে কথাটা ঢু'কি'য়ে অন্য কান দিয়ে ঝেড়ে ফেলল পারু। মনকে বার বার বলছে, "তুই কিছু শুনিসনি পারু।" রাস্তা দিয়ে আনমনে হেঁটে যাচ্ছিলো সে। তখনি একটা গাড়ি পেছন থেকে এসে ধা'ক্কা মা'রে পারুকে। মুহুর্তেই আশেপাশে মানুষ ভীড় করে। পড়ে আছে পারুর র'ক্তা'ক্ত লা/শ। এইতো খিলখিল করে হেসে পারু বলছে, "মা, বি'ষ খেয়ে আমাকে আর ম*রতে হলোনা, দেখ, আজ আমি পড়ে আছি রাস্তায়। সে হেসে যেনো তার ভাবীকে বলছে, " এইবার আপদ বুঝি বিদেয় হয়েই গেল ভাবী।"
পারু
অনুগল্প
Writer:মারশিয়া_জাহান_মেঘ
মেয়েদের জীবন নিয়ে কিছু বাস্তব কথা
বড় ভাই মায়ের কাছে বাইকের আবদার করেছে। মা বললো,
"আগামীকাল কিনে দিবো।"
যা শুনে পাশে দাঁড়ানো ছোট আমি চকচক চোখে আম্মাকে বললাম,
"আম্মা...মার্কেটে নতুন একটা ড্রেস এসেছে। সবাই কিনছে, আমাকেও একটা কিনে দেও।"
"তোর কি জামা কাপড়ের অভাব আছে, বেলি? সেবার ও দু'টো জামা দিলাম।
বড় ভাই বাইক চাইলো আর তুই অমনি হিংসা করে জামা'র বায়না ধরলি। মেয়েদের এতো হিংসা ভালো নয়, বেলি।"
"আম্মা বিশ্বাস করো, আমি ভাইকে হিংসা করিনি। জামা গুলো ভীষণ সুন্দর.. "
"যা দেখোস তাই'ই কিনতে হবে তোর? মেয়েদের এসব স্বভাব একদম বাজে, বেলি। অনেক সময় পুরনো দুই সেট কাপড় দিয়েও নিজেকে বছরের পর বছর মানিয়ে নিতে হয়। বলা তো যায় না কপালে কেমন জামাই জুটে। এখন থেকে অভ্যাস কর,বুঝলি? তাছাড়া আমার কাছে ওতো টাকা নাই।"
ছোট ছিলাম। মায়ের কড়া কথা শুনে অভিমান হলো। এরপর আর কখনো আম্মার কাছে নতুন কাপড়ের বায়না করিনি। এখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। আজ স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখি আম্মা রান্না করছে। আমি পিছন থেকে আম্মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
"কি রান্না করো আম্মা?"
"ইলিশ মাছ আর কচুর লতি।"
"কিহ্... তুমি জানো না আম্মা, আমার ইলিশ মাছ খেলে এলার্জি হয়। আমার জন্য একটু মুরগী'র মাংস রান্না করো।"
" তোর এই খাম খাম স্বভাব আর গেলো না, বেলি! মেয়ে হয়ে এতো বাছবিচার করলে হয়, মেয়েদের সব খাওয়া শিখতে হয়। একদম ঢঙ করবি না। তোর জন্য প্রতিদিন আলাদা রান্না করার মতো এতো সময় আমার নেই।"
মায়ের কথায় চোখে জল আসলো আমার। এরিমধ্যে ভাই এসে বলে গেলো,
"আম্মা মুরগী ভুনা আর পরোটা খেতে ইচ্ছে করছে আজ।"
আম্মা সহসা হেসে বললো, "আচ্ছা তুই বোস আমি এক্ষুণি বানিয়ে দিচ্ছি।"
যা শুনে আমি ছলছল চোখে হাসলাম। মায়ের যত সমস্যা আমার বেলায়।
এরপর থেকে যখন প্রতি পদে পদে আমি বুঝতে শিখেছি আমি মেয়ে...
আর মেয়ে মানেই "মানিয়ে নেওয়া", নিজের শখ আহ্লাদ নিরবে বিসর্জন দেওয়া। আমিও নিজেকে গুটিয়ে নিলাম, মানিয়ে নিলাম।
এরপর যখন আমার বয়স হলো ষোলো। সমাজ ও পরিবারের কাছে হয়ে গেলাম বিয়ের উপযোগী পাত্রী। আব্বা-আম্মা আমার বিয়ের জন্য ছেলে ঠিক করেছে। বড় অনুষ্ঠান করে মেয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠাবে। কিন্তু, এরিমধ্যে আমার কিশোরী মনও অনেক স্বপ্ন বুনেছিলো। ভাই যখন বাইকে চড়ে ভার্সিটিতে যেতো, আমারও ইচ্ছে হয় তার পিছনের সিটায় বসে ভাইয়ের সাথে বড় বড় উঁচু দালানে পড়তে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন আমারও ছিলো। কিন্তু ওই যে আমি মেয়ে... মুখ ফুটে সে স্বপ্নের কথা আর বলা হলো না কাউকে।
এরপর যখন বিয়ে হলো, নিজের সংসার আর বাচ্চা হলো। আমি আবারও শিখে গেলাম, কি করে নিজে না খেয়ে স্বামী সন্তান'কে খাওয়াতে হয়, কি করে নিজে ভালো না পড়ে দু'টো টাকা জমাতে হয়।
এতো এতো স্যাক্রিফাইস করে আমি মেয়ে সেই অবহেলিত বেলিই রয়ে গেলাম। সংসার জীবনে কত দোষ আমার, সেসব না হয় নাই বললাম।
(সমাপ্ত)
-অবহেলিত_বেলি
লেখনীতে-সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
বাস্তব জীবনের স্ট্যাটাস
"ছেলে পক্ষের লোক ৫০০ জন যাবে "আপ্পায়নে কিন্তু কমতি রাখবেন না বেয়াই।
'কথাটি শুনেই মেয়ের বাবা মাথায় হাত দিলো!
কারন এতো লোকের আপ্পায়ন কিভাবে করবে। তিনি
একজন গরিব মানুষ।
'কি হলো বেয়াই মাথায় হাত দিলেন যে।
'নাহ বেয়াই এমনি দিলাম? ঠিক আছে আপনারা আসিয়েন আমি যতোটা পারি আপ্পায়ন করবো
ইনশাআল্লাহ।
'পারবেন তো।
'হ্যাঁ পারবো। একটি মাত্র মেয়ে যদি ধুম-ধাম করে
বিয়ে দিতেই না পাড়ি তাহলে এইটা কেমন না।
'সেটাই তো!
'এই দিকে মেয়ের বাবা কথা গুলা বল্লেও তার মন
নিজেকেই প্রশ্ন করতেছে "এতো মানুষ কে কিভাবে
আপ্পায়ন করবে তিনি।
'আপনার ছেলে একটি হিরার টুকরা। লাখে একটি।
'আপনার মেয়ে কোথায় কম শুনি।
দেখতে পুরাই পরির মতোন সুন্দর আমার ছেলের
চয়েস আছে বলতে হবে।
'তো বেয়াই সামনের শুক্রবার বিয়েটা হলেই ভালো
হয় নাকি।
'হ্যাঁ অবশ্যই।
'তো ওই কথাই থাকলো আমি এখন উঠি' সবাকে
জানাতে হবে তো।
'আচ্ছা।
'তো কথা বার্তা শেষ করে যখনি মেয়ের বাবা আসতে ছিলো ঠিক তখনী ছেলের বাবা পিছন থেকে
ডাক দিলো।
'এই যে বেয়াই একটু শুনেন।
'হ্যাঁ বলুন।
'এই নেন এখানে ৫ লক্ষ টাকা আছে! বিয়েটা সুন্দর ভাবে সম্পুর্ণ করবেন।
'আরে না-না লাগবেনা টাকা।
'আমি জানি আপনি লজ্জা পাচ্ছেন। এখানে লজ্জার
কিছু নেই। আপনার পরিবার একটু আর্তিক সমস্যা
আছে সেইটা আমি জানি
আপনি হাসি মুখে কথা বললেও আপনার ওই চোখ
বলে দিচ্ছে আপনি কতোটা কষ্টে আছেন। আমাকে
ছোট্ট ভাই ভেবে এই টাকাটি নেন দয়া করে।
আমি খুশি হবো।
'ছেলের বাবার এমন মনুষ্যত্ব কথা ও অনুরোধে মেয়েটির বাবা
টাকাটী নেয় এবং মুচকি একটি হাসি দেয়।
'আবার ছেলেটিল বাবা বলে "বেয়াই আপ্পায়ন কিন্তু
সুন্দর হতে হবে।
যাতে সবাই বলে মেয়ে পক্ষের লোকরা কোথাও একটুও
কমতি রাখেনি।
'হ্যাঁ বেয়াই!
আসি তাহলে এখন।
'সাবধানে যাইয়েন।
'আসলেই মানবতা এমনটি হওয়া উচিৎ "যদি আপনার
সামর্থ্য থাকে অন্যের পাশে দাড়ান।
-অনুগল্প:মনুষ্যত্ব
-কাহিনী ও লেখনীতে:মি_হাসিব
কিছু বাস্তব কথা ফেসবুক
তিন বছরের মেয়েটাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলাম খেতে। মেয়েটা আজ বাইরে ঘোরার বায়না ধরেছে ভীষন। অবশ্য ছোট মানুষ, ওদের এখন বয়সটাই তো বাহিরে ঘুরে বেড়ানোর অথচ সারাদিন মেয়েটা ঘরবন্দিই থাকে। মা নেই ওর, ওকে জন্ম দেওয়ার সময়ই আমাকে আর ছোট্ট মেয়েটাকে ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে পরকালে। পরবর্তীতে আমাকে অনেকে বিয়ের কথা বললেও বিয়ে করিনি আমি। কি করে করবো ওর মায়ের স্মৃতিগুলোই তো ভুলতে পারিনি। আমার মা ম'রা মেয়েটার দেখাশোনা করে ওর দাদি অর্থাৎ আমার মা। তারও বয়স বেড়েছে। হাঁটুর ব্যথায় হাঁটা চলা করতেই কষ্ট মেয়েকে নিয়ে আবার বাইরে ঘুরবে কিভাবে? আমিও থাকি সারাদিন অফিসে। মেয়েটারও তো একটু বাইরে ঘুরতে ইচ্ছে হয় তাই আজ ভাবলাম যাই রেস্টুরেন্টেও খেয়ে আসি আর ওকে ঘুরিয়েও নিয়ে আসি। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে গেলাম এক সুসজ্জিত বড় রেস্টুরেন্টে। দুই বাপ বেটি মিলে বসলাম একটা চেয়ার দখল করে। মেয়েটার চোখ মুখে যেন উপচে পড়া খুশি। আমি হাসলাম মেয়েটার খুশি দেখে। বললাম,
-"কি খাবে তুমি মা বলো আমি অর্ডার করে দিচ্ছি।"
মেয়ে আমার তার হাতের ছোট ছোট আঙ্গুল গুলো তুলে গুনে গুনে বলল,
-"চিপস, আইসক্রিম, চক্কেত আর কেক।"
আমি হেসে ফেললাম মেয়ের কথায়। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
-"এসব তো এখানে পাওয়া যায় না মা।"
মেয়ের মুখ মলিন হলো। মলিন কন্ঠে বলল,
-"তাহলে আমরা এখানে এসেছি কেন বাবা?"
আমি হাসলাম। মেয়েকে আস্বস্ত করে বললাম,
-"এখানে আমরা অন্য কিছু খাব মা। তারপর বাসায় যাওয়ার সময় তোমাকে চকলেট, চিপস, আইসক্রিম সব কিনে দেব।"
মেয়ে আমার উৎফুল্ল হলো। মাথা নাড়িয়ে বলল,
-"আচ্ছা।"
আমি একজন ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার করলাম। ওয়েটার জানালো একটু সময় লাগবে। আমি আর কিছু বললাম না। ওয়েটারকে হাসিমুখে বিদায় দিয়ে তাকালাম আশেপাশে। আমার পাশের টেবিলেই কতগুলো ছেলেমেয়েকে চোখে পড়লো। সবার ওষ্ঠে সুন্দর হাসি ফুটে রয়েছে। খেয়াল করলাম ছেলেমেয়েগুলোর সম্মুখে বড়সড় একটা কেক রাখা। হয়তো কারো জন্মদিন পালন করছে ছেলেমেয়েগুলো। আমরাও করেছি সেই ছাত্র জীবনে। ছেলেমেয়ে গুলোর দিক থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকালাম তাদের পাশের টেবিলে। চোখে পড়লো অল্প বয়সী এক দম্পতিকে। কি সুন্দর একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে তারা, মেয়েটা আবার লাজুক হাসছে। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আমার। আজ আমার স্ত্রী বেঁচে থাকলেও হয়তো মেয়েকে নিয়ে আমরাও আমাদের সময়টা ঐ ভাবেই উপভোগ করতে পারতাম। চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে আরও কয়েকটা টেবিলে তাকালাম সব টেবিলই মোটামুটি ভর্তি। কেউ মাকে নিয়ে এসেছে, কেউ বাবাকে নিয়ে, কেউ বন্ধু বান্ধব নিয়ে আবার কেউ কেউ স্বামী স্ত্রী এসেছে। কেউ খাচ্ছে তো কেউ আমার মতোই বসে রয়েছে। আমি আরেক বার পুরো রেস্টুরেন্টে চোখ বুলিয়ে ওয়েটারকে ডাকলাম। জিজ্ঞেস করলাম,
-"আমাদের অর্ডারটা কখন আসবে?"
ওয়েটার ছেলেটা নম্র কন্ঠে জবাব দিল,
-"এই তো স্যার একটু পরই চলে আসবে।"
আমি আবারও অপেক্ষা করতে লাগলাম হঠাৎ করেই প্রচন্ড বেগে একটা শব্দ এসে আমার কর্ণে আঘাত হানলো। মেয়েটা চিৎকার করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। মুহুর্তেই চারদিক থেকে চিৎকারের ধ্বনি ভেসে এলো,
-"আ'গু'ন, আ'গু'ন।"
আমি যেন মুহুর্তের জন্য থমকে গেলাম। আ'গু'ন! আ'গু'ন কোথা থেকে আসবে? মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালাম চারদিকে। আ'গু'নে'র লেলিহান শিখা দৃষ্টিতে পড়লো। কি ভয়ানক সে দৃশ্য। রেস্টুরেন্টের লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেছে ইতমধ্যে। কেউ প্রবেশদ্বার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে তো কেউ জানালা থেকে তবে ব্যর্থ সবাই। ইতমধ্যে চারদিক থেকে আগুন গ্রাস করে নিয়েছে পুরো রেস্টুরেন্টেকে। প্রবেশদ্বরে দাউ দাউ করে আ'গু'ন জ্বলছে। মেয়েটা আমার ভয়ে কাঁদছে ভীষন। আমারও ভয় হচ্ছে। নিজের থেকেও বেশি ভয় হচ্ছে ছোট্ট মেয়েটার জন্য। এই তো সেদিন মেয়েটা পৃথিবীতে এলো। এখনও পৃথিবীটাকে সে ভালোভাবে দেখার সুযোগটাই পেল না। মেয়েকে কোলে নিয়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম। সকলের সাথে আমিও ছোটাছুটি শুরু করলাম। যদি কোনোভাবে বের হতে পারি এখান থেকে। নিজে না বাঁচলেও হবে অন্তত মেয়েটাকে বাঁচানোর আশা নিয়ে ছোটাছুটি শুরু করলাম। ইতমধ্যে আগুনের দাপটে রেস্টুরেন্টের ভিতরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ মানুষেরই শ্বাস কষ্ট শুরু হয়েছে। আমারও নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও আমি প্রাণপন ছুটছি মেয়েটাকে বাঁচাতে। মেয়েটাও জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আমার ভীষন অসহায় লাগছে। বাবা হয়ে আজ নিজের ছোট মেয়েটার এই মৃ'ত্যু'ম'য় দৃশ্যটা দেখতে হচ্ছে। কান্না পেল আমার ভীষন। পুরুষ মানুষের নাকি কাঁদতে নেই। কিন্তু আজ আমি আমার কান্না আটকাতে পারলাম না। কেঁদে দিয়ে বললাম,
-"মা আর একটু সহ্য কর। বাবা তোকে বাঁচাবে, তোকে এই ভ'য়ং'ক'র আ'গু'ন থেকে নিয়ে বেরুবে।"
মেয়েটা আমার সহ্য করতে পারলো না। চোখ গুলো বড় বড় করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো, সাথে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়াতে খিঁচুনিও উঠেছে। মেয়েটার ছোট্ট শরীরটা ভাঁজ হয়ে উপরে উঠছে। আশেপাশে কারো কাছে সাহায্যও চাইতে পারছি না। আশেপাশের সবার অবস্থাই এক রকম। আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম। মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। একটু পর অনুভব করলাম মেয়েটার খিচুনি থেমে গেছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাসও নিচ্ছে না এখন আর। হয়তো আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়েছে। আমারও শ্বাস কষ্ট শুরু হয়েছে। পিঠটা ইতমধ্যে আ'গু'ন গ্রাস করে নিয়েছে। ভীষন জ্বলছে শরীরটা। তবুও সে আ'গু'ন নিয়েই আমি আবার ছুটলাম মেয়েটাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা চালাতে। চোখে পড়লো আমার পাশের টেবিলের ছেলেমেয়ে গুলোর জ্ব'লন্ত দেহকে। আ'গু'ন'কে শরীরে নিয়ে কা'টা মুরগীর মতো ছটফট করছে আর চিৎকার করছে। পাশের টেবিলের সেই দম্পতির অস্তিত্বও বিলীন, হয়তো আগু'নে ঝ'লসে তাদের দেহগুলো পড়ে আছে আশেপাশে কোথাও। আমিও বসে পড়লাম মেঝেতে। মাথার দিক ব্যতীত আমার পুরো শরীরটাই এখন আ'গু'নে'র দখলে। ছোট মেয়েটার শরীরটাতেও আ'গু'ন জ্বলছে। চোখ দুটো আমার ঝাপসা হয়ে উঠলো। ঢলে পড়লাম পোড়া মেঝেতে, অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে তবে সে অশ্রু ব্যর্থ হলো আমার মেয়েটার শরীর থেকে আগুন নেভাতে। আমি অনুভব করলাম আমার হৃদয় জ্বলছে। এই বোধহয় আমার জীবনের অন্তিমক্ষন উপস্থিত হলো। আ'গু'ন ধীরে ধীরে গ্রাস করলো আমার মাথার অংশও। চোখের সম্মুখে দেখতে পেলাম আমার মৃ'ত স্ত্রীকে। ডাকছে আমায়। হয়তো এই ভ'য়ং'ক'র পৃথিবী থেকে তার সাথে আমাদের বাপ বেটিকে নিতে এসেছে। এতটা ভ'য়ং'কর পরিস্থিতিতেও আমি হাসলাম। আ'গু'নে পুরোপুরিভাবে গ্রাস করা ওষ্ঠ নাড়িয়ে বললাম,
-"ওরা আমায় বাঁচাতে দিল না। এই ব্যস্ত শহরের অপরিকল্পিত নগরায়ন আমার ছোট্ট মেয়েটাকে বাঁচতে দিল না। দেখতে দিল না এই সুন্দর পৃথিবীকে।"
-অপরিকল্পিত_নগরায়ন
-অনুগল্প
-সাদিয়া_শওকত_বাবলি