মেয়ে গুলো খারাপ হওয়ার কারণ | খারাপ মেয়ে ২০২৫

 খারাপ মেয়েদের

খারাপ মেয়েদের

সে এক মেয়ে, নাম তার আফরোজা। স্বামী বিয়ের পর অন্য মেয়ের সঙ্গে চলে গিয়েছিল। আত্মীয়রা বলল, “তুমি ঠিকভাবে সংসার করতে পারোনি, তোমারও নিশ্চয় কিছু দোষ ছিল।” আফরোজা চুপ করে থাকল, কারণ সে জানত—নারীর ব্যথা কখনো যুক্তি দিয়ে বিচার হয় না, আর খারাপের তকমা আগে থেকেই গায়ে লেখা থাকে।

খারাপ মেয়েদের

রাতুলা নিজের জীবন নিজের মতো বেছে নিয়েছিল। নিজের মতো পোশাক, নিজের মতো চলাফেরা, নিজের মতো মত। সমাজের চোখে সে হয়ে উঠল ‘খারাপ মেয়ে’। অথচ কেউ জানল না—নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে চলাটাই তো সবচেয়ে বড় খারাপ কাজ, যা সে কখনো করেনি।

খারাপ মেয়েদের

ফারহিন ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। পরিবার চেপে যেতে বলেছিল, কারণ “মেয়েটার ভবিষ্যৎ আছে।” সে বলেছিল না, সে চুপ থাকেনি। তখন সমাজ বলল, “খারাপ মেয়ে, এসব মেয়েই বিপদ ডেকে আনে।” কেউ বলেনি—এই সমাজটাই তো আসলে আসল খারাপ, যেটা অপরাধীকে আড়াল করে, প্রতিবাদীকে নয়।

খারাপ মেয়েদের

তাসফিয়া সন্তান চায়নি। সে বলেছিল, “আমার শরীর, আমার সিদ্ধান্ত।” ডাক্তার, পরিবার, প্রতিবেশী—সবাই চোখ বড় করে বলেছিল, “খারাপ মেয়ের মতো কথা বলছ!” অথচ খারাপ কাজ তো সে নয় করেছে, যারা তার জীবনটা নিজেদের মতো করে গড়তে চেয়েছিল, তারাই।

খারাপ মেয়েদের

মাহিরা এক সময় দেহব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিল, পেটের দায়ে, জীবনের তাগিদে। কেউ জানতে চায়নি, সে আগে একটা কারখানায় কাজ করত, যেখানে ম্যানেজারটা তাকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছিল, কারণ সে না বলেছিল। সবাই শুধু বলল, “এই মেয়েটা খারাপ।” আর মাহিরা বলল, “আমি খারাপ নই, শুধু বাঁচতে চেয়েছি।”

খারাপ মেয়েদের

রুবিনা রাত ১১টার পর বাড়ি ফেরে, কলসেন্টারে কাজ করে। প্রতিবেশীরা ছেলেমেয়েদের বলেছে, “ওর মতো হইস না, খারাপ পথে যাওয়া মেয়েরা এমনই।” রুবিনা জানে, প্রতিদিন ভোর ৬টায় উঠে সে মাকে ওষুধ খাইয়ে কাজে যায়—যা সে করেও ‘ভালো মেয়ে’ হতে পারেনি।

খারাপ মেয়েদের

নাহিদা ভালোবেসেছিল, বিশ্বাস করেছিল, সব কিছু দিয়ে দিয়েছিল। ছেলেটা প্রতারণা করল, আর বন্ধুদের বলল, “ওই মেয়েটা খারাপ ছিল।” আর মেয়েটা একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলেছিল, “ভালোবাসায় দেওয়া যদি খারাপ হয়, তবে পৃথিবীর সব প্রেমিকাই খারাপ।”

খারাপ মেয়েদের

সাইমা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে প্রশ্ন করত, ছেলেদের মতো জোরে কথা বলত, নিজের মত দিত। শিক্ষক, ছাত্র, সবাই বলল, “এমন মেয়েরা নষ্ট করে পরিবেশ, চুপ থাকা শিখুক।” সাইমা বলেছিল, “আমি ভদ্রতার খোলসে বন্দি ভালো মেয়েদের দল থেকে সরে এসেছি, খারাপ হলে তাই-ই হই।”

খারাপ মেয়েদের

নুরজাহান পঞ্চাশ বছর বয়সে গান শেখা শুরু করল। স্বামী-মেয়ে সবাই বলল, “এই বয়সে এসব করাটা কি ভালো কথা?” আত্মীয়রা বলল, “বয়সের ভদ্রতা জানে না, খারাপ স্বভাব হয়েছে।” অথচ নিজের জন্য একটু বাঁচার সাধটাই তো ছিল তার সবচেয়ে নিরীহ স্বপ্ন।

খারাপ মেয়েদের

মুনতাহা মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাল নিজের উপার্জনে, কারণ স্বামী বেকার আর নির্যাতনকারী। সমাজ বলল, “স্বামী থাকা অবস্থায় স্ত্রী বাইরে চাকরি করছে—এই মেয়েটা আজকালকার খারাপদের দলে।” কেউ বলল না, সেই মেয়ে নিজের মেয়েকে একজন ভালো মানুষ বানানোর যুদ্ধ লড়ছে একা।

Previous Post Next Post