গল্পের নাম: রিদয়ের প্রতিজ্ঞা
না পাওয়া ভালোবাসার কষ্টের গল্প
রিদয় ছিল ছোট শহরের এক সাধারণ ছেলে।
তার জীবনটা খুব আহামরি ছিল না—ছোট্ট একটা ভাঙা ঘর, মা একজন গার্মেন্টসে কাজ করেন, বাবা বহু আগেই মারা গেছেন।
তবুও তার স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া—একদিন বড় অফিসার হবে, নিজের পরিচয়ে নিজের মানুষকে গর্বিত করবে।
সেই জীবনে হঠাৎ করেই আসে মীম।
মেয়েটা ছিল শহরের ধনী পরিবারের সন্তান, সাজগোজে ঝলমলে, চোখে রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
প্রথমে রিদয় দূরে দূরে থাকলেও, মেয়েটা নিজেই এগিয়ে আসে।
“রিদয়, আমি তোমার মতো ছেলেকেই খুঁজছিলাম—যে ভালোবাসে মন দিয়ে, আগলে রাখে প্রাণ দিয়ে।”
রিদয় বিশ্বাস করে।
ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে যায় সে।
মীমের জন্য রিদয় সব ত্যাগ করে। তার টিফিনের টাকা জমিয়ে তাকে চকলেট খাওয়ায়, নিজের বইয়ের খরচ বাঁচিয়ে তাকে উপহার দেয়।
রিদয় মনে মনে ভাবতো, “আমি গরিব, ঠিক আছে। কিন্তু আমার মনের ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি নেই।”
একদিন মীম বলে,
“আমার মা তোমাকে খুব পছন্দ করে। মা নিজেই বলেছে, তোমার মতো ভালো ছেলের হাতে আমাকে তুলে দেবে।”
রিদয় মনে মনে স্থির করে ফেলে—এই মেয়েটাকেই সে বিয়ে করবে।
বাড়িতে জানায়, মা-ও বলে—“যদি তোমার মন থেকে ভালোবাসো, তবে আমি তোমার পাশে আছি।”
কিন্তু বাস্তব বড় নিষ্ঠুর।
মীমের জীবনে আসে এক ধনী ছেলেপক্ষ—নাজিম।
গাড়ি, বাড়ি, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স—সবকিছু আছে ছেলেটার।
আর মীম, যেই না টাকার ঝলক দেখে, ভালোবাসা ভুলে যায়।
রিদয়কে এড়িয়ে চলে, কথা বলা বন্ধ, দেখা করা বন্ধ।
রিদয় বুঝতে পারে না—“কেন এমন করছো তুমি?”
একদিন সে মুখোমুখি হয় মীমের।
মীম চোখে চোখ রেখে বলে—
“তুমি তো কিছুই দিতে পারো না রিদয়। শুধু ভালোবাসা দিয়ে সংসার চলে?”
রিদয় স্তব্ধ।
সে বোঝে, যে মেয়ে একদিন তার হাত ধরে স্বপ্ন দেখেছিল, সে এখন টাকার প্রেমে মগ্ন।
রিদয় একবার শেষ চেষ্টা করে।
সে গিয়ে বলে—
“আমি তোমায় ভালোবাসি মীম। আজ আমার কিছু নেই, কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা করি—একদিন বড় হবো, তুমি গর্ব করবে।”
মীম হাসে, বলে—
“তুই স্বপ্ন দেখিস না। তোকে দিয়ে কিছু হবে না।”
আরও দুঃসহ হয় সেই মুহূর্ত যখন নাজিম এসে রিদয়কে গায়ে হাত তোলে।
মীম পাশে দাঁড়িয়ে দেখে, কিছুই বলে না। বরং নিজেই বলে—
“এটা তো deserves করে!”
রিদয় সেইদিন মাটিতে পড়ে কাঁদে না—চোখে আগুন জ্বলে উঠে।
সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে—
“এই অপমানের জবাব আমি দেবো। ভালোবাসার নামে যে খেলা করেছে, তাকে আমি তার নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়েই উত্তর দেবো।”
এরপর শুরু হয় সংগ্রামের নতুন অধ্যায়।
দিনরাত পরিশ্রম করে রিদয় ভর্তি হয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বাড়ি থেকে দূরে, কিন্তু নিজের জেদকে আঁকড়ে ধরে।
সকালে টিউশনি, বিকেলে ক্লাস, রাতে আউটসোর্সিং করে খরচ চালায়।
তিন বছর পর সে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেয়।
অবশেষে—রিদয় সহকারী কমিশনার পদে নিয়োগ পায়।
আজ রিদয়ের নিজস্ব গাড়ি আছে, সরকারি ফ্ল্যাট আছে, এবং আছে হাজার মানুষের সম্মান।
একদিন হঠাৎ তার অফিসে আসে মীম।
চোখে কালি, চেহারায় ক্লান্তি, মুখে অনুশোচনার ছাপ।
“রিদয়... আমি ভুল করেছিলাম। নাজিম আমাকে ব্যবহার করেছে। আজ আমি একা, অসহায়। তুমি কি আমাকে ফিরিয়ে নিবে না?”
রিদয় শান্তভাবে তাকিয়ে থাকে।
তারপর ধীরে ধীরে বলে—
“তুমি বলেছিলে, ভালোবাসা দিয়ে সংসার চলে না।
তুমি বলেছিলে, আমার কিছু নেই।
আজ আমার সবকিছু আছে, কিন্তু তোমার মতো একজন নষ্ট মানুষ আমার জীবনে দরকার নেই।
তোমার মায়ের মতো লোভী নারীর কাছে আমি আর কোনো প্রতিজ্ঞা রাখবো না।
তুমি আমাকে আর নয় শুধু অপমান করেছো—তুমি আমার বিশ্বাস হত্যা করেছো।
তোমার জন্য এখন ভালো নারীদেরও লোকেরা খারাপ চোখে দেখে।
তুমি যেমন খেলেছো আমার অনুভূতির সাথে, আজ তোমার সেই খেলা শেষ।
তোমাকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
মীম কাঁদে, মাফ চায়, পায়ে ধরে—কিন্তু রিদয় পেছন ফিরে চলে যায়।
---
ছোট করে কিছু কথা
প্রেমে প্রতারণা হতেই পারে, কিন্তু যে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, সে-ই হারে।
রিদয় হারেনি, কারণ সে বিশ্বাস রেখেছিল নিজের ওপর।
প্রতিশোধ নেয়নি রক্ত দিয়ে, নিয়েছে সম্মান দিয়ে।
এই গল্প শুধুই রিদয়ের নয়—যে কোনো সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষের প্রতিচ্ছবি।
---
পাঠকের প্রতি প্রশ্ন
আপনিও কি রিদয়ের মতো কাউকে হারিয়ে জীবনে বড় হওয়ার শপথ নিয়েছেন?