ওহে পুরুষ টাকা কামাও নারীর স্বপ্নে রাজা আসে ফকির নয় (গল্প)

 গল্পের নামঃ "স্বপ্নের রাজা, বাস্তবের ফকির"

টাকা ছাড়া পুরুষ

 টাকা ছাড়া পুরুষ

প্রথম অধ্যায়: অভাবের ছেলেবেলা

নাম তার রিয়াজ। জন্মেছিল এক গরিব পরিবারে, শহরের এক পাশে ছোট্ট টিনের ঘরে। বাবা ছিলেন দিনমজুর, আর মা অন্যের বাসায় কাজ করতেন। ছোটবেলায় যখন অন্য ছেলেরা স্কুল থেকে ফিরে খেলায় মেতে উঠত, রিয়াজ তখন মায়ের হাত ধরে বাসাবাড়িতে গিয়ে থালা-বাসন ধুত। কারও জমে থাকা বাসন ধুয়ে সবার শেষে এক কাপ ভাত আর এক চামচ তরকারি জুটত তার ভাগ্যে।

কিন্তু রিয়াজ স্বপ্ন দেখত। সে জানত, এই অভাব, এই কষ্ট কোনো দিন তার জীবনকে থামিয়ে দিতে পারবে না। তার চোখে ছিল জেদ—একদিন সে হবে বড় কিছু।

দ্বিতীয় অধ্যায়: জীবনের প্রথম প্রেম

কলেজে উঠেই পরিচয় হয় তাসনিম নামের এক মেয়ের সঙ্গে। তাসনিম ছিল সুন্দর, বুদ্ধিমতী আর অনেকটা শহুরে ছাঁচের। প্রথম দিনেই মেয়েটা বলেছিল, "তোমার হাতে কোনো দামি ঘড়ি নাই? বা তোমার মোবাইলটা তো পুরোনো!"

রিয়াজ তখন হেসেছিল—অর্থ নেই, কিন্তু হৃদয় ছিল। তারা ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব গড়েছিল, কিন্তু ভালোবাসায় পৌঁছাতে সময় লাগেনি। রিয়াজ প্রথম প্রেমে পড়েছিল নিজের সমস্ত মন নিয়ে। টিউশনি করে কিছু টাকা জোগাড় করে তাসনিমকে চকলেট, বই আর মাঝে মাঝে সস্তা একটা গোলাপ উপহার দিত।

তাসনিম বলত, "তুমি আমার ভালোবাসা, কিন্তু আমার পরিবার তো চাইবে একটা স্ট্যাবল ছেলে। তুমি তো এখনও কিছুই না।"

এই কথাটা রিয়াজের ভিতরে আগুন ধরিয়ে দিত। সে আরও বেশি পড়াশোনা করত, স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স করত, রাত জেগে অনলাইনে কাজ করত। ভালোবাসার টানে সে নিজের জীবনকে পাল্টে দিতে চেয়েছিল।

তৃতীয় অধ্যায়: প্রত্যাখ্যানের যন্ত্রণায় দগ্ধ হৃদয়

একদিন হঠাৎ তাসনিমের ফেসবুকে দেখা যায় তার এনগেজমেন্টের ছবি। পাশে এক হ্যান্ডসাম যুবক, গায়ে ব্লেজার, বিদেশফেরত চাকুরিজীবী। ক্যাপশনে লেখা: "Finally found someone who can give me a secured life."

রিয়াজ ভেঙে পড়ে। তার কষ্টটা শুধুই প্রেম হারানোর না, তার বিশ্বাস ভেঙে যাওয়া। সে বুঝেছিল, তার ভালোবাসা যতই গভীর হোক না কেন, টাকার অভাব তার সবকিছু ম্লান করে দিয়েছে। তার মতো ছেলের জন্য এই সমাজে ভালোবাসা নেই, শুধু টাকার হিসাব আছে।

চতুর্থ অধ্যায়: কষ্টকে রূপান্তর করো শক্তিতে

তাসনিমের বিদায় রিয়াজের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সে চুপ করে নিজের ভিতরে আগুন জ্বালিয়ে রাখে। দিনরাত পরিশ্রম করতে থাকে। ফ্রিল্যান্সিং, অনলাইন বিজনেস, কোডিং, মার্কেটিং—যা কিছু করা সম্ভব, সব শেখে।

বছর তিনেকের মধ্যে সে তৈরি করে নিজস্ব আইটি ফার্ম। দেশ-বিদেশের ক্লায়েন্ট, একাধিক কর্মচারী, ঢাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাট, এক জোড়া দামি গাড়ি। আজ সে সফল—অর্থ, সম্মান, সব আছে তার।

তবে তার পাশে নেই কোনো তাসনিম, কোনো পুরোনো বন্ধু। সবাই এখন আসে তার পেছনে, কারণ সে এখন "ব্যবসায়ী রিয়াজ সাহেব"।

পঞ্চম অধ্যায়: পুরোনো মুখ, নতুন রঙ

একদিন এক কর্পোরেট পার্টিতে দেখা হয় তাসনিমের সঙ্গে। চোখে ক্লান্তি, মুখে ম্লান হাসি। স্বামী বিদেশে আরেকটা পরিবার শুরু করেছে, তাসনিম এখন একা। সে কাছে এসে বলে,

"তুমি অনেক বদলে গেছো রিয়াজ। আমি ভুল করেছিলাম।"

রিয়াজ হাসে, শান্ত গলায় বলে,

"তুমি সেই সময় রাজা খুঁজেছিলে, আমি ছিলাম ফকির। আজ আমি রাজা, কিন্তু তোমার মতো রানির দরকার নাই।"

শেষ অধ্যায়: শিক্ষা

রিয়াজ জানে, জীবনে ভালোবাসা সুন্দর, কিন্তু টাকা ছাড়া ভালোবাসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। সমাজে, পরিবারে, এমনকি হৃদয়ের গভীর ভালোবাসার মধ্যেও একটা অদৃশ্য হিসাব থাকে—কত টাকা আয় করো তুমি, কতটা নিরাপদ ভবিষ্যৎ দিতে পারো।

তাই সে একাই হাঁটে, একাই গড়তে থাকে নিজের জীবন। আর মনে মনে বলে,

"ওহে পুরুষ, টাকা কামাও। কারণ নারীর স্বপ্নে রাজা আসে, ফকির নয়।"

---

এই গল্পটি বাস্তবের প্রতিচ্ছবি, যেখানে হাজারো রিয়াজের মতো ছেলে প্রতিদিন টাকার অভাবে হারিয়ে ফেলে ভালোবাসা, আত্মবিশ্বাস, আর সম্পর্ক। অথচ তারা চুপচাপ ঘুরে দাঁড়ায়, প্রমাণ করে দেয়, ভালোবাসা যদি ছুঁড়ে ফেলে দেয়, টাকাই তখন সবকিছুর জবাব হয়ে ওঠে।

Previous Post Next Post